২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে
কিছু কথা বলেছিলেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান মঈন ইউ.আহমেদ
২১ আগস্ট ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার ঘটনা সম্পর্কে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) মঈন ইউ. আহমেদ।
তিনি বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। ওয়ান ইলেভেনের কারণে আলোচিত-সমালোচিত ছিলেন এই সেনাপ্রধান। ২০১৮ তে যুক্তরাষ্ট্রে বাঙালি কমিউনিটির এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছিলেন সেসময়ের সেনাবাহিনীর সিজিএস (চিফ অব জেনারেল স্টাফ) মঈন ইউ. আহমেদ।
জেনারেল মঈন জানিয়েছেন, ২ আগস্ট ২০০৪ এ তিনি চট্টগ্রামের জিওসি থেকে সেনাসদরে সিজিএস পদে বদলি হয়ে আসেন। তিনি জানিয়েছেন, ’২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় শুধু তারেক নন বেগম জিয়াও জড়িত।’
তাঁর মতে, তৎকালীন ডিজিএফআই এর মহাপরিচালক জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। হয়তো বেগম জিয়ার সম্মতি নিয়েই তারেক জিয়া রেজ্জাকুল হায়দারকে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
জেনারেল মঈন জানিয়েছেন, বেগম জিয়া কোন একযাগায় বলেছিলেন, যদি অপারেশন সফল হয়, তাহলে রেজ্জাকুল হায়দারকে সেনাপ্রধান করা হবে। মূলত: সেনাপ্রধান হওয়ার লোভে বা তারেকের প্রলভনে জেনারেল হায়দার ঐ গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন, কিন্তু, পরবর্তীতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার সঙ্গে রেজ্জাকুল হায়দারের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি সেনাবাহিনীতে জানাজানি হয়ে যায়। জেনারেল রেজ্জাকুল এর আগে ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচার মামলায়ও জরিত হয়েছিলেন। এসব নিয়ে সেনাবাহিনীর পেশাদার সেনা কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ ছিলেন। দ্রুত জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার সেনাবাহিনীতে সমালোচিত এবং বিতর্কিত হতে থাকলেন।
জেনারেল মঈন এর ভাষ্য অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রত্যেকেই জানতেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার সঙ্গে সেনাবাহিনীর কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জড়িত থাকার কথা। এই ঘটনার ১০ মাসের মধ্যে নতুন সেনাপ্রধান (১২তম) নিয়োগের কথা। তারেক জিয়া সবসময় সেনাপ্রধান হিসেবে রেজ্জাকুল হায়দারকেই চেয়েছিলেন। বেগম জিয়া কোন একযাগায় বলেছিলেন, যদি অপারেশন (হাসিনা হত্যা) সফল হয়, তাহলে রেজ্জাকুল হায়দারকে সেনাপ্রধান করা হবে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার পরও জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার ছিলেন তারেক জিয়ার প্রথম পছন্দ। বেগম জিয়াও হয়তো সেটাই করতেন। কিন্তু সেনাবাহিনীতে (তারেক বিরোধী) একটি চাপা অসোন্তোষ কানাঘুষা এবং জল্পনা-কল্পনা চলছিল।
কিন্তু বিদায়ী সেনাপ্রধান হাসান মসহুদ চৌধুরী ছিলেন অত্যন্ত সৎ, নিষ্ঠাবান এবং নিবেদিত প্রাণ সামরিক কর্মকর্তা। সেনাবাহিনীতে তিনি সবার শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন।
জেনারেল মঈন এর ভাষ্যমতে, তাঁর সততা ও নিষ্ঠার কারণে, বেগম জিয়াও তাঁকে সমীহ করে চলতেন। সেনাপ্রধান হিসেবে যখন নানারকম কানাঘুষা এবং জল্পনা-কল্পনা চলছে, সেসময়ই জেনারেল হাসান মসহুদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। বিভিন্ন আলাপের পর তিনি নতুন সেনাপ্রধানের ব্যাপারে সরকারের মনোভাব জানতে চান। এ সময় বেগম জিয়া জেনারেল হাসান মসহুদ কে জিজ্ঞেস করেন, তাঁর কোনো চয়েস আছে কিনা? এসময় জেনারেল প্রথমে বলেন যে, তাঁর কোনো চয়েস নেই, তবে তাঁর রিজার্ভেশন (আপত্তি) আছে। হাসান মসহুদ জানান, আর যে কাউকে সেনাপ্রধান করলে তার আপত্তি নেই, তবে জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দারকে যেন না করা হয়। তাঁকে দিয়ে যা যা করানো হয়েছে, তাতে তাঁর ‘কোর্ট মার্শাল’ হওয়া উচিৎ। বেগম জিয়া এরপর চুপ হয়ে যান।
জেনারেল মইন বলেছেন, ‘২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ব্যর্থতার জন্যই আমি সেনাপ্রধান হতে পেরেছি। না হলে জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দারই হতেন।
২০০৫ সালের ১৫ জুন মঈন ইউ. আহমেদ সেনাপ্রধান হিসেবে দেন। ২০০৭ সালে তার সমর্থনে ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জেনারেল মঈন এর একক আগ্রহেই জেনারেল হাসান মসহুদ চৌধুরীকে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয়েছিল।
সুত্র - আজকের সূর্যোদয় পত্রিকা
বাংলা ইনসাইডার ১৭ অক্টোবর, ২০১৮
এছাড়া আমার ১১ বছর আগের এ বিষয়ে একটি লেখা পড়ে দেখতে পারেন।
গ্রেনেড হামলার মুল হোতা যারা
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




