somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২০১৬ সালে আমার পড়া সেরা ৫ টি বই

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত কয়েক বছরের মধ্যে ২০১৬ সালে আমি বোধহয় সবচেয়ে বেশি বই পড়েছি। এত বই পড়ার পেছনে অন্যতম ভূমিকা হলো বুকফাই ওয়েবসাইটের, তারা এ বছর ওয়েবসাইট আপডেট করার পর প্রায় সব ইংরেজি বইয়ের ইলেকট্রনিক পাবলিকেশন (ইপাব) পাওয়া যায় সেখানে। কাজেই যে সব বিদেশী বই দেশে বসে কিনতে পারতাম না, সেগুলো পড়তে পারি এখন ঝামেলা ছাড়াই। অবশ্য এখানের সবগুলো বই ইপাব নয়, কিছু বিদেশী বইয়ের নীলক্ষেত প্রিন্ট পড়তে হয়েছে।
যাই হোক, এ বছরে আমার পড়া সেরা পাঁচটি বইয়ের রিভিউ দিচ্ছি।

বই নং-৫
বই: The Steam House; the Demon of Cawnpore
লেখক: Jules Verne
দু’জন বিপরীত চরিত্রের বন্ধু থাকে। একজন খুব উড়নচন্ডী স্বভাবের মানুষ। ঘুরতে পছন্দ করে, এডভেঞ্চার পছন্দ করে। আরেকজন ঘরকুনো স্বভাবের। অযথা ঘোরাঘুরি না করে ঘরে বসে বই পড়তেই বেশি পছন্দ করে। এক্দিন প্রথম বন্ধু দ্বিতীয় জনকে প্রস্তাব দিল, চলো পৃথিবী ঘুরতে বেরোই। একসাথে দেশ-বিদেশ ঘুরব, দুনিয়াটাকে দেখব, কত কি জানার আছে, দেখার আছে, শেখার আছে দুনিয়াজুড়ে! জীবন থেকে লম্বা ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি চলো।
দ্বিতীয় জন গড়িমসি করে বলল, দেখতে কি আমার ইচ্ছে হয় না! খুবই ইচ্ছা হয়, ভালোও লাগে ঘুরতে। কিন্তু অজানা অচেনা পরিবেশে থাকতে ভালো লাগে না মোটেও। খুব ভালো হতো যদি নিজের বাড়িটা সঙ্গে নিয়ে নিয়ে ঘুরতে পারতাম।
তারা তখন এমন একটা বাড়ি নির্মান করল, যেটার সাথে চাকা লাগিয়ে দিব্যি চালিয়ে নেয়া যাবে। বাড়িটা পানিতেও ভাসবে। চাকাগুলো প্রপেলারের কাজ করবে পানিতে। জলে কিংবা স্থলে যে কোন জায়গায় চালানো যাবে বাড়িটাকে। একটা যান্ত্রিক হাতি তৈরি করা হয় সেই সাথে, কয়লায় চলবে হাতিটা। বাড়িটাকে টেনে নিয়ে যাবে। হাতিটার নাম দেয়া হয় বেহেমথ।
তারপর দু’বন্ধু পৃথিবী দেখতে বের হয়। প্রচুর এডভেঞ্চার করে এবং একসময় ব্রিটিশ-ভারতীয় আন্দোলনের দাঙ্গায় জড়িয়ে যায়। খুব রোমাঞ্চকর একটা গল্প।
রেটিং-৪/৫


বই নং-৪
বইঃ প্রজেক্ট প্রজেক্টাইল
জনরাঃ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
লেখকঃ শান্তির দেবদূত (লেখকের ছদ্মনাম।)
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১৭

এই বইটার রিভিউ লেখার পেছনে দু’টো কারণ আছে। প্রথম কারণ হলো, অনলাইনে কি পরিমাণ মেধাবী লেখক আছে সেটা দেশের অনেক পাঠকই জানে না। অনলাইনে প্রকাশিত যে ক’টা উপন্যাস আমি পড়েছি, এটা তাদের মধ্যে অন্যতম, সম্ভবত সেরা। দ্বিতীয় কারণ হলো, এদেশে যে সব লেখক সাইফাই লেখেন, তাদের অনেকেই বিজ্ঞান ভালো জানেন না, কিন্তু কল্পনাশক্তি অনেক প্রখর হওয়াতে তাদের গল্প অনেক ভালো লাগে পড়তে। তবে সেখানে বিজ্ঞানের প্রয়োগ থাকে অল্প। আবার অনেক লেখক আছেন, যারা অনেক ভালো বিজ্ঞান জানেন বটে, কিন্তু সেভাবে কল্পনাশক্তি না থাকায় ভালো প্লট তৈরি করতে পারেন না। তাই তাদের গল্প হয়ে যায় কিছুটা প্রবন্ধ ধাঁচের। কিছু লেখকের ভালো কল্পনাশক্তি, ভালো বিজ্ঞানের জ্ঞান এবং ভালো লেখার হাত রয়েছে। শান্তির দেবদূত তাদের একজন। আমার প্রিয় কল্পগল্প লেখকদের মধ্যে অন্যতম তিনি।

প্রজেক্ট প্রজেক্টাইলের গল্প একদল মহাকাশযাত্রীদের নিয়ে। যারা আমাদের মহাকাশের বাইরে কি আছে, সেটা জেনে একটা ইউনিফাইড থিওরি তৈরি করতে চায়, যে থিওরিতে পৃথিবীর সকল জ্ঞান থাকবে (যেমনটা বর্তমানে স্টিফেন হকিং করতে চাইছেন The Theory of Everything আবিষ্কারের মাধ্যমে)। সেই অভিযাত্রীরা মহাকাশে ছোট ছোট ওয়ার্মহোল তৈরি করে কম সময়ে অসীম দূরত্ব পার হয়ে ইউনিভার্সের বাইরে যেতে চায়। তাদের ধারণা এই যাত্রা সফল হলে তারা পেয়ে যাবে সৃষ্টির সকল প্রশ্নের উত্তর, সকল জ্ঞান, সকল তত্ত্ব। তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে কি না, সফল হলে কি পাওয়া যাবে সেটাই উপন্যাসের মুখ্য বিষয়।

এ ধরনের লেখায় যেটা দেখা যায়, লেখকরা ভালো প্লট তৈরি করতে পারেন না কিংবা পারেন না গ্রহণযোগ্য সমাপ্তি টানতে। কিন্তু এ বইটাতে আশ্চর্যজনক ভাবে ভালো প্লট, ভালো ফিনিশিং ছিল। ইউনিভার্সের বাইরে যাবার প্রযুক্তি কাল্পনিক হলেও বইয়ে সেটার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেখে মনে হবে আসলেই এটা সম্ভব। ব্রেন স্টর্ম তোলার জন্য এরকম একটা বই যথেষ্ট। প্রথম ৩০-৩৫ পৃষ্ঠা একটু এলোমেলো লেগেছিল আমার, তারপর হুট করে কখন পরের ৭০-৮০ পৃষ্ঠা শেষ হয়ে গেল টেরও পাইনি।
বইটাতে কিছু টাইপিং মিস্টেক এবং কিছু বানান ভুল আছে। যেহেতু লেখক নিজেই বইটার পিডিএফ বের করেছেন, প্রুফ রিডিং হয়নি, তাই এ বিষয়টা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাছাড়া কাহিনীর ভেতর ঢুকে পড়লে টেরও পাওয়া যায় না কোথায় কি ভুল আছে।
লেখক শান্তির দেবদূত সামহোয়ারইন ব্লগে লিখছেন দীর্ঘদিন ধরে। ব্লগের বেশ সম্মানিত একজন সাইফাই লেখক তিনি। আমি খুব কম লেখককে শ্রদ্ধা করি, উনি তাদের একজন।
প্রজেক্ট প্রজেক্টাইল ১১৯ পৃষ্ঠার বই কিন্তু পড়া শুরু করলে এক ঘণ্টাও লাগবে বলে মনে হয় না।

আমার রেটিং- ৪/৫

ডাউনলোড লিংকঃ Click This Link


বই নং-৩
বই: 3 A.M
লেখক: Nick Pirog

ভেবেছিলাম বইটার অনুবাদ পড়ব। সেকেন্ড হ্যান্ড ছাড়া মূল ইংরেজি বই কিনে পড়া বাঙালি পাঠকদের জন্য প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। অবশ্য নীলক্ষেতে ইংরেজি মূল বইয়ের দেশী প্রিন্ট বিক্রি হয় দেখেছি। দাম কমে আসে অনেক। কিন্তু যে কোন বই চাইলেই পাওয়া যায় না।
থ্রি এম বইটার অনুবাদ বের হয়েছে বাতিঘর প্রকাশনী থেকে। পড়া শুরুও করেছিলাম। কিন্তু এক জায়গায় অনুবাদক এরকম অনুবাদ করেছেন-“কারেন্ট লাগায় দিসে।” (পরে দেখেছি- He electrocuted us ছিল মূল বইয়ে।) লাগায় দিসে- কোন ধরনের অনুবাদের মধ্যে পড়ে বুঝি না। এত শস্তা বাক্য দেখে মেজাজ খারাপ হয়েছিল বেশ। তাই পরে মূল বইটার ইলেকট্রনিক পাবলিকেশন (ইপাব) সংগ্রহ করেই বাকীটা পড়েছি।

থ্রি এমের কাহিনী বেশ আগ্রহোদ্দীপক। দিনে ২৩ ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটানো একজন মানুষের গল্প বলার আইডিয়াটি অভিনব। সেই সাথে টান টান উত্তেজনাকর ঘটনার মধ্যে দিয়ে পুরো গল্পটা এগোয় বলে এক বসাতেই ১০৬ পৃষ্ঠার বইটি শেষ করা যায়। গল্পের বিভিন্ন জায়গায় অপ্রত্যাশিত সব টুইস্ট ছিল। অভিনব আইডিয়া আর অভিনব প্লটের গল্প/উপন্যাসিকা। এত অল্প পরিসরে এত বৈচিত্র্যময় গল্প বলার ক্ষমতা রবার্ট ব্লক ছাড়া অন্য কোন লেখকের মধ্যে দেখিনি।

গল্পে শুধু একটাই খুঁত আছে, সেটা হলো প্রধান চরিত্র হেনরি বিনসের সম্পৃক্ততা। প্রেসিডেন্ট খুনের দায়ে পড়েছে, এমন পরিস্থিতি এফবিআই, সিআইএ, পুলিশ, সিক্রেট সার্ভিস থাকতে সাধারণ একজন নাগরিক হেনরি বিনসের এত বেশি জড়িয়ে পড়া খুব বেশি চোখে লাগে। সেই সাথে পুলিশ –এফবিআই থাকতে হেনরি বিনসের গুগলে সার্চ দিয়ে দিয়ে রহস্য সমাধানের ক্ষমতা হাস্যকর রকম অবিশ্বাস্য।

তবে এ ব্যাপারটা বাদ দিলে বইটা একটা অসাধারণ বই। অনেক দিন পর এই ধরনের উপন্যাস একটানে পড়ে শেষ করেছি।

আমার রেটিং-৩.৫


বই নং-২
বই: Bloodline
লেখক: Sydney Sheldon
পৃষ্ঠা: ৪৬০
প্রকাশকাল: ১৯৭৮

নাম শুনে যা মনে হচ্ছে, বইয়ের গল্পও তাই। রোফে পদবীধারী এক ক্ষমতাশালী, ধনী পরিবারের উত্থান পতনের গল্প; পরিবারটির রোফে এন্ড সান্স নামের একটি বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কাড়ি কাড়ি টাকা, অগাধ সম্পত্তি, দুনিয়াজোড়া নামডাক এই পরিবারটির। কিন্তু পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই কোন না কোন ভাবে বিভিন্ন বিপদে ফেঁসে রয়েছে, প্রচুর টাকার প্রয়োজন তাদের প্রত্যেকের। সবাই চায় তিন পুরুষ ধরে চলে আসা ব্যবসায় যার যার অংশ বিক্রি করে অগাধ টাকার মালিক হতে। কিন্তু পরিবার-প্রধান স্যাম রোফে তা হতে দিতে চায় না। এই নিয়ে দ্বন্দ্ব, পারিবারিক টানাপোড়ন, চক্রান্ত, খুন এইসব নিয়ে বইয়ের গল্প এগোয়।

আমি এর আগে সিডনি শেলডানের শুধু The Doomsday Conspiracy পড়েছি। আমার পড়া অন্যতম থ্রিলার ছিল সেটা। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় থ্রিলার লেখক ড্যান ব্রাউন দাবী করে যে এই বইটা পড়েই সে থ্রিলার লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছে। এমনকি মাসুদ রানা সিরিজের একটি বইও (প্রলয় সংকেত) ডুমস ডে কন্সপিরেসি অবলম্বনে লেখা হয়েছে। কাজেই যেমন লেখা আশা করেছিলাম, তার থেকে একটু ভিন্ন স্বাদই পেয়েছি ব্লাডলাইন বইটাতে। কিছুটা রোমাঞ্চ, কিছুটা পারিবারিক দ্বন্দ্ব, কিছু অপরাধমূলক ঘটনা, মাঝে মাঝে ছোট বড় টুইস্ট... এসব ছিল পুরো বইয়ে।

শুরুর দিকে একটু কাটখোট্টা ভাবে গল্প বলা শুরু করেছেন লেখক; ইংরেজি শব্দ, ফরাসী শব্দ, ইটালীয় শব্দ, গালভাঙা রেস্তোরাঁর নাম, খাবারের নাম, প্রতিষ্ঠানের নাম ইত্যাদির সন্নিবেশে শুরুর দিকে দুয়েকটা অধ্যায় কিছুটা একঘেয়ে লেগেছিল। সামনের দিকে যেতে যেতে বর্ণনা সাবলীল হয়েছে, গোছানো হয়েছে। ধীরলয়ে খুব ভালো একটি সাসপেন্স তৈরি করতে পেরেছেন লেখক। যত পড়ছিলাম, লেখায় ডুবে যাচ্ছিলাম ততোই। সে জন্যই হয়তো শেষ অধ্যায়গুলো পড়ে একটু হতাশ হয়েছি। যেমন টুইস্ট আশা করেছিলাম, তেমনই হয়েছে। অপ্রত্যাশিত, চমকে যাবার মতো কিছু ছিল না। ছোটখাটো কিছু টুইস্ট ভালো লাগলেও ৫৮ টা অধ্যায় শেষে মূল গল্পটা লেজে গোবরে হয়ে গিয়েছে।

মোটের উপর, খারাপ লাগেনি। বরং ভালো লেগেছে যথেষ্ট। বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন ধরনের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে মুগ্ধ হয়েছি। বিস্মিত হয়েছি চরিত্রগুলোর অপরাধ করার ধরণ, প্রবণতা দেখে। অন্তত ধনী পরিবারগুলোর পারিবারিক বন্ধনের দুর্বল দিকগুলোও বেশ ফুটে উঠেছে গল্পে। তবে আরেকটু স্ট্রং প্লট থাকলে ভাল হতো।
আমার রেটিং- ৩.৫


বই নং-১
বই: One Indian Girl
লেখকঃ Chetan Bhagat

মেয়েটার নাম রাধিকা। তারা দুই বোন। তাদের প্রাচীনপন্থী বাবা-মা চেয়েছিল তাদের একটা ছেলে সন্তান হোক। তাই চার বার সন্তান নিয়েছে, যার মধ্যে এবরশন করিয়েছে দু’বার। ছেলে সন্তানের মুখ দেখা হয়নি। রাধিকা যখন মাকে জিজ্ঞেস করে, তুমি দু’বার এবরশন করিয়েছ? কেন করেছ? এটা কি ঠিক হয়েছে?
তার মা উদাস ভাবে বলত, আমার ঠিক মনে নেই।
একজন মহিলা কি পরিমাণ কুসংস্কারাচ্ছন্ন হলে বলতে পারে যে, আমি দু’বার এবরশন করিয়েছি, কিন্তু আমার মনে নেই সে কথা।
দুই বোনের ভেতর, বড়বোন খুবই সুন্দরী, বুদ্ধিমতী। ছোটবোন, রাধিকা, শ্যামলা-হাবাগোবা মেয়ে। বড়বোন বছর বছর ফেল করে, ছোটবোন স্কুল-কলেজে রেকর্ড নাম্বার পেয়ে পাশ করে, তারপরও বড়বোনের কদর সব জায়গায়; পরিবার-পরিজন হোক কিংবা হোক প্রেমিক পুরুষের দল।
বড়বোন কলেজে না উঠে এক বড়লোক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে, আর রাধিকা এমবিএ করে নিউইয়র্কে গিয়ে হাই স্যালারির চাকরী জুটিয়ে নেয়। চাকরীতে প্রমোশন নিয়ে আয় করে কাড়ি কাড়ি টাকা। এরই মধ্যে এক বাঙালি ছেলের প্রেমেও পড়ে। নিউইয়র্কে তার জীবন, সেখান থেকে চাকরীর সুবাদে চীনে যাওয়া, প্রেমিকের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়ন, দেশে বাবা-মায়ের বিয়ের জন্য চাপ...সব মিলিয়ে একজন কর্মজীবী ভারতীয় নারীর যাবতীয় প্রতিকূলতার গল্প।
এ ধরনের বই পড়ে আমি, সত্যি কথা, প্রথম বারের মতো মুগ্ধ। ফেমিনিজম নিয়ে অনেক গল্প-উপন্যাস আছে, কিন্তু এই উপন্যাসের পরিসর শুধু ফেমিনিজমের মধ্যে আটকে না থেকে জীবনের অনেকগুলো বিষয় আলোচনায় এনেছে। বাংলায় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা যারা পড়েছে, তারা জানে কি করে একটি গল্প একটা পরিসরে আটকে না থেকে কি করে জীবন-যাপন-সম্পর্ক সবকিছুতে ছড়িয়ে যায়। চেতান ভাগাতের লেখা নিঃসন্দেহে শীর্ষেন্দুর মতো শক্তিশালী নয়, কিন্তু কন্টেন্ট আর গল্প বলার ভঙ্গীর কিছু বিষয় তার সাথে মিল রয়েছে।
ইন্ডিয়া টুডে বলেছিল, Bhagat is the symbol of New India. একদম আজকের দিন নিয়ে, আজকের সময় নিয়ে ক্ল্যাসি লেখা লিখতে পারে, এমন লেখক খুব বেশি নেই। এই বইটা এখনকার জেনারেশনের অনেক বেশি ভালো লাগবে। কারণ হলো, এখনকার জেনারেশন এমন একটা বিষয়ের সঙ্গে জড়িত যেটা আমাদের আগের জেনারেশনে ছিল না। সেটা হলো কর্মজীবী স্ত্রী। উপমহাদেশে ছেলেরা আয় করবে, মেয়েরা ঘরোয়া কাজ করবে এই ধারণাই চলে আসছে শত শত বছর ধরে। এখনকার মেয়েরা শিক্ষিত হচ্ছে, চাকরী-বাকরী করছে, ব্যস্ত শহুরে জীবন কাটাচ্ছে। সেই সাথে প্রেমও করছে, বিয়ে করছে, মা হচ্ছে, সন্তান দেখাশোনা করছে, এই ধরনের একটা গল্প আমাদের দেশ কিংবা ভারতের পরিসরে খুব একটা লেখা হয়নি। দু’জন শিক্ষিত, কর্মজীবী, ব্যস্ত নর-নারীর মধ্যকার সম্পর্কে যে টোন থাকে, শহুরে প্রভাব থাকে, ইন্টেলেকচুয়ালটি থাকে, চাপা ইমোশন থাকে, সেটা উপন্যাসে বেশ চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে। সবচেয়ে চমৎকার বিষয় হলো, ফেমিনিস্ট উপন্যাসে যেমন জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও, ভেঙে ফেলো ভাব থাকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতি, সেটা এখানে নেই। গল্প এগিয়েছে খুব স্বাচ্ছন্দ্যে। এমনকি রোমান্টিসিজিম, লাভ মেকিং সিনও এমন ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যাতে লুতুপুতু ভাব না আসে, আবার কাটখোট্টা নারীবাদী বর্ণনাও না আসে। ফেমিনিজম নিয়ে লিখলেও মেয়েদের মধ্যকার হিপোক্রেসি, চারিত্রিক বৈপরীত্যও দেখানো হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়।
বইয়ের অনেকগুলো কথা ভাল লেগেছে আমার, দুয়েকটা বলি (হুবহু নয়, যেমন মনে আছে)-
**রাধিকার বোন রাধিকা সম্পর্কে বিয়ের অনুষ্ঠানে বলে, ও আমার বোন রাধিকা। আমি যদি সুখী গৃহিণী হই, ও তাহলে সফল ব্যাংকার। আমার যদি সুন্দর চেহারা থাকে, ওর আছে চমৎকার রেজাল্ট। আমার যদি দেহসৌষ্ঠব থেকে থাকে, ওর আছে তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক।
**রাধিকাকে প্রথম যখন কোন ছেলে ডেটে নিয়ে যাবার প্রস্তাব দেয়, রাধিকা ভাবে, আমি কি এখন রাজি হয়ে যাব? এত তাড়াতাড়ি কি রাজি হওয়া উচিত? নাকি ইতিমধ্যে আমি অনেক দেরী করে ফেলেছি? এখনই রাজি হলে কি ছেলেটা আমাকে খারাপ মেয়ে ভাববে? মেয়েদের কিভাবে আচরণ করা উচিত সে জন্য কেন কোন ইউজার ম্যানুয়াল নেই?
**At times girls want to be wanted, even when they deny it.

বইটার খুঁত বলতে, নারী চরিত্র যেহেতু একজন পুরুষ পোর্ট্রে করেছে, তাই দুয়েক জায়গায় খুব সূক্ষ্মভাবে বিচার করলে মনে হতে পারে মেয়েটার কথোপকথন কিছু জায়গায় আরও বেশি মেয়েলী হতে পারত। ফিনিশিং অবাস্তব লেগেছে। আরও সুন্দর ভাবে শেষ করা যেত।

আমার রেটিং-৪/৫
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×