somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ডা. মোহাম্মদ মোমিনুজ্জামান খান
আমি, নিতান্তই একজন সাধারণ বাংলাদেশি। এই ব্লগে আমি আমার গল্প বলি — আমার কথা, আমার ভাবনা, একজন সাধারণ মানুষের, যে তার আয়নায় অসাধারণ স্বপ্ন দেখে। চলুন, একসঙ্গে খুঁজে দেখি আমার আয়নার সেই প্রতিচ্ছবি, যেখানে আমি শুধু আমি নই, আমি আমার বাংলাদেশ।

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২: নতুন আলোর প্রতিশ্রুতি

১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলা নববর্ষ আমাদের জন্য শুধু একটি উৎসব নয়, এটি আমাদের পরিচয়ের একটি অংশ। বাংলা নববর্ষ, আমাদের সংস্কৃতির এক অমূল্য ধন, প্রতিবছর আমাদের হৃদয়ে নতুন আশার সঞ্চার করে। ১৪৩২ বঙ্গাব্দের এই নববর্ষ এসেছে এক বিশেষ তাৎপর্য নিয়ে। এই নববর্ষ আমাদের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরে, যা আমাদের ভাবতে বাধ্য করে। বিগত বছরগুলো আমাদের জন্য ছিল চ্যালেঞ্জের, কিন্তু সেই সঙ্গে শিক্ষার। এই নতুন বছর আমাদের সামনে উন্মোচিত করছে সম্ভাবনার দ্বার, একটি সুযোগ, যেখানে আমরা পুরোনো ক্ষত ভুলে নতুন স্বপ্ন বুনতে পারি। বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ শুধু একটি তারিখ নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য, ঐক্য, এবং অদম্য চেতনার প্রতীক। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা বাঙালি, যারা ঝড়ের মুখেও হাসতে জানে, ভাঙনের মাঝেও গড়তে পারে।

ঐতিহ্যের আলোয় নতুন শুরুঃ
বাংলা নববর্ষের উৎসব আমাদের কৃষিনির্ভর সমাজের গভীর শিকড়ে প্রোথিত। একদিনে এটি ছিল নতুন ফসলের উৎসব, ব্যবসায়ীদের নতুন হিসাবের শুরু। আজ এটি আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ, যেখানে পান্তা-ইলিশের সরল আনন্দ মিশে যায় মঙ্গল শোভাযাত্রার রঙিন উচ্ছ্বাসে। ১৪৩২ সালের এই নববর্ষে আমরা শুধু ঐতিহ্য পালন করছি না, আমরা আমাদের শিকড়ের সঙ্গে পুনর্মিলন করছি। এই মুহূর্তে আমাদের নিজেদেরই প্রশ্ন করা উচিত যে আমরা কি আমাদের ঐতিহ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যৎ গড়তে প্রস্তুত?

ঐক্যের ডাকঃ
আজকের বিশ্বে বিভেদ ও বিভ্রান্তি আমাদের চারপাশে। কিন্তু বাংলা নববর্ষ আমাদের শেখায় ঐক্যের গান। মঙ্গল শোভাযাত্রায় যখন হাজারো মানুষ একসঙ্গে হাঁটে, তখন ধর্ম, জাতি, বা শ্রেণির সীমানা মুছে যায়। ১৪৩২ সালে এই ঐক্যকে আমাদের আরও গভীর করতে হবে। আমাদের সমাজে যে অসমতা, অবিচার, বা বিদ্বেষ আছে, তাকে দূর করতে হবে প্রেম ও সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে। নতুন বছর আমাদের সুযোগ দিচ্ছে একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতেঃ আমরা কি এমন এক সমাজ গড়তে পারি, যেখানে প্রতিটি মানুষের স্বপ্নের মূল্য দেওয়া হবে?

প্রকৃতির সঙ্গে পুনর্মিলনঃ
বাংলা নববর্ষ প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের অটুট বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দেয়। বৈশাখের উষ্ণতা, ফুলের মঞ্জরী, এবং কোকিলের সুর আমাদের হৃদয়ে জাগায় প্রাণের উৎসব। কিন্তু আজ আমাদের প্রকৃতি ক্ষতবিক্ষত। জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ, এবং বন ধ্বংস আমাদের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ১৪৩২ সালে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক, আমরা প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধ হব। একটি গাছ লাগানো, প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো বা পরিবেশ রক্ষার কথা ছড়িয়ে দেওয়া; এই ছোট পদক্ষেপগুলো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উপহার হতে পারে।

নিজেকে নতুন করে আবিষ্কারঃ
নববর্ষ শুধু বাইরের উৎসব নয়, এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ জগতের পুনর্জাগরণ। ১৪৩২ সাল আমাদের সামনে প্রশ্ন তুলছেঃ আমরা কী হতে চাই? আমাদের স্বপ্ন কী? আমরা কি আমাদের ভুল থেকে শিখেছি? এই বছর আমাদের নিজেদের মধ্যে খুঁজে বের করতে হবে সেই শক্তি, যা আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। হয়তো একটি নতুন দক্ষতা শেখা, একটি পুরোনো সম্পর্ক মেরামত করা, বা নিজের জন্য সময় বের করা; এই ছোট ছোট পদক্ষেপ আমাদের জীবনকে নতুন অর্থ দেবে।

উৎসাহের আহ্বানঃ
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ আমাদের জন্য একটি আহ্বান, উঠে দাঁড়ানোর, স্বপ্ন দেখার, এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার। আমাদের বাঙালিয়ানার চেতনা আমাদের শেখায়, আমরা যুদ্ধের মাঝেও কবিতা লিখতে পারি, দুঃখের মাঝেও হাসতে জানি। এই বছর আমরা প্রতিজ্ঞা করি, আমরা ভয়কে জয় করব, বিভেদকে অতিক্রম করব, এবং ভালোবাসার হাত ধরে এগিয়ে যাব। প্রতিটি দিনকে আমরা রাঙাবো নতুন সম্ভাবনার রঙে, প্রতিটি রাতকে আলোকিত করব স্বপ্নের তারায়।

চিন্তার বীজঃ
এই নববর্ষে আমরা নিজেদের কাছে কিছু প্রশ্ন রাখি। আমরা কি আমাদের সমাজকে আরও ন্যায্য করতে একটি পদক্ষেপ নিতে পারি? আমরা কি আমাদের প্রকৃতির ক্ষত সারাতে একটি গাছ লাগাতে পারি? আমরা কি আমাদের হৃদয়ে লুকানো স্বপ্নকে একটি সুযোগ দিতে পারি? বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবন একটি উৎসব, এবং আমরা সবাই এই উৎসবের অংশ। আমাদের হাতে রয়েছে দুর্নিবার শক্তি — নিজেকে, সমাজকে, এবং পৃথিবীকে নতুন করে গড়ার।

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ আমাদের জন্য শুধু একটি নতুন পঞ্জিকার শুরু নয়, এটি একটি নতুন স্বপ্নের জন্ম। বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ আমাদের জন্য একটি আয়না। এটি আমাদের দেখায় আমরা কোথা থেকে এসেছি, এবং আমরা কোথায় যেতে চাই। এটি আমাদের প্রশ্ন করে, আমরা কি এমন একটি পৃথিবী গড়তে প্রস্তুত, যেখানে ভালোবাসা, শান্তি, এবং ঐক্য প্রতিটি হৃদয়ে জায়গা পাবে? আসুন, এই নববর্ষে আমরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজি, এবং একটি নতুন পথের শুরু করি। এই বছর আমরা একসঙ্গে হাঁটবো, একে অপরের হাত ধরে। আমরা ভালোবাসার গান গাইবো, সত্যের পথে এগিয়ে যাবো। আসুন, এই নববর্ষে আমরা প্রতিজ্ঞা করি — আমরা হবো আলোর বাহক, স্বপ্নের স্রষ্টা, এবং একটি সুন্দর পৃথিবীর স্থপতি। শুভ নববর্ষ!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৮
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×