somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ডা. মোহাম্মদ মোমিনুজ্জামান খান
আমি, নিতান্তই একজন সাধারণ বাংলাদেশি। এই ব্লগে আমি আমার গল্প বলি — আমার কথা, আমার ভাবনা, একজন সাধারণ মানুষের, যে তার আয়নায় অসাধারণ স্বপ্ন দেখে। চলুন, একসঙ্গে খুঁজে দেখি আমার আয়নার সেই প্রতিচ্ছবি, যেখানে আমি শুধু আমি নই, আমি আমার বাংলাদেশ।

ঢাকার জীবনযুদ্ধ: রাস্তার জ্যামের কষ্ট না ফুড অ্যাপের ট্র্যাজেডি?

০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা শহর। এই নামটা শুনলেই মনে আসে একটা বিশাল ক্যানভাস, যেখানে জীবনের রঙিন ছবি আঁকা হয়, কিন্তু ব্রাশটা যেন সবসময় জ্যামে আটকে থাকে। এই শহরে বেঁচে থাকা মানে একটা অদ্ভুত দ্বৈত জীবন; একদিকে অফলাইনের ধকল, রাস্তার জ্যাম, রিকশার হর্ন আর ঘামে ভেজা শার্ট; অন্যদিকে অনলাইনের মায়া, ফুড ডেলিভারি অ্যাপের প্রতিশ্রুতি, আর সেই প্রতিশ্রুতি ভাঙার ট্র্যাজেডি। কোনটা বেশি কষ্টের? পান্থপথের জ্যামে আটকে থাকা, নাকি পাঠাও ফুডে অর্ডার ক্যানসেলের নোটিফিকেশন? আসুন, এই দুই জগতের গল্প শুনি, হাসি, কান্না, আর একটু সাসপেন্স মিশিয়ে।

অফলাইন ঢাকা: জ্যামের জীবন, একটা মহাকাব্য
সকাল ৯টা। আপনি অফিসে যাওয়ার জন্য রাস্তায় নেমেছেন। পান্থপথের সিগন্যালে দাঁড়িয়ে আছেন, পাশে কয়েকটা রিকশা, কয়েকটা সিএনজি, অগণিত গাড়ি, আর অজস্র মোটর সাইকেল একসঙ্গে হর্ন বাজাচ্ছে। ঘড়ির কাঁটা এগোচ্ছে, কিন্তু আপনি এগোচ্ছেন না। ঘামে শার্ট ভিজে গেছে, আর মনে মনে ভাবছেন, “এই জীবন কেন আমার?”
ঢাকার রাস্তার জ্যাম শুধু ট্রাফিক নয়, এটা একটা দর্শন। এখানে আপনি শিখে যান ধৈর্য কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি। পাশের রিকশাওয়ালা ভাইয়ের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলেন, জানতে পারলেন তার গ্রামের গল্প, বউয়ের রান্নার প্রশংসা ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এই রোমান্টিক মুহূর্তও বেশিক্ষণ থাকে না। হঠাৎ বাসের হর্নে কান ঝাঁ ঝাঁ, আর আপনি ফিরে আসেন বাস্তবে।
জ্যামের জীবনে সাসপেন্স আছে। আপনি জানেন না কখন জ্যাম ছাড়বে। ১০ মিনিট? ১ ঘণ্টা? নাকি আপনি এখানেই বুড়ো হয়ে যাবেন? এই অপেক্ষার মাঝে আপনি ফোন বের করে ফেসবুকে ঢুকে পড়েন, মিম দেখেন, রিল দেখেন, আর ভাবেন, “অনলাইন জীবন কত সহজ!” কিন্তু সত্যিই কি তাই?

অনলাইন ঢাকা: ফুড অ্যাপের মায়া ও বিশ্বাসঘাতকতা
এবার দৃশ্যপট বদলান। আপনি ঘরে, সোফায় বসে, আর পেটে খিদের জ্বালা। ফোনটা হাতে, পাঠাও ফুড বা ফুডপান্ডা খুলে বিরিয়ানির ছবি দেখে মুখে জল চলে এসেছে। আপনি অর্ডার করলেন, আর অ্যাপটা বলছে, “৩০ মিনিটের মধ্যে ডেলিভারি!” আপনি খুশি, ভাবছেন, “আহা! এই তো জীবন!”
কিন্তু ঢাকার অনলাইন জীবন এত সহজ নয়। ৩০ মিনিট পার হয়ে গেল, ডেলিভারি রাইডারের লোকেশন দেখাচ্ছে সে এখনও বনানীতে, আর আপনি গুলশানে। আপনি ফোন করলেন, রাইডার বলে, “ভাই, জ্যামে আটকা পড়ছি!” আরে, এই জ্যাম তো অফলাইনের শত্রু ছিল, এখন এটা অনলাইনেও এসে গেল?
তারপর আসে ক্লাইম্যাক্স। হঠাৎ একটা নোটিফিকেশন: “আপনার অর্ডার ক্যানসেল হয়েছে।” কেন? কেউ জানে না। রেস্টুরেন্ট বন্ধ? রাইডার হারিয়ে গেছে? নাকি বিরিয়ানি শেষ? আপনি ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছেন থ মেরে, যেন এটা আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা। পেট খিদেয় চোঁ চোঁ করছে, আর আপনি ভাবছেন, “এর চেয়ে তো জ্যামে আটকে থাকা ভালো ছিল!”

তুলনা: কোনটা বেশি কষ্টের?
এবার আসল প্রশ্ন। পান্থপথের জ্যামে আটকে থাকা না পাঠাও ফুডে অর্ডার ক্যানসেল, কোনটা বেশি কষ্টের? আসুন, একটু বিশ্লেষণ করি, গল্পের ছোঁয়া দিয়ে।

জ্যামের কষ্ট: শারীরিক ও মানসিক যুদ্ধ
জ্যামে আটকে থাকা একটা ফিজিক্যাল চ্যালেঞ্জ। গরমে ঘাম, ধোঁয়ায় কাশি, চোখ জ্বালাপোড়া, আর হর্নের আওয়াজে মাথা ধরা। কিন্তু এর মাঝেও একটা অদ্ভুত কমিউনিটি ফিল আছে। পাশের অপরিচিত মানুষের সঙ্গে দুটো কথা হয়, হয়তো একটা হাসি শেয়ার করা। জ্যামে আপনি একা নন, সবাই একই নৌকার মাঝি।
কিন্তু মানসিক কষ্টটা কম নয়। আপনি জানেন না কখন জ্যাম ছাড়বে। এই অপেক্ষা আপনাকে দার্শনিক বানিয়ে দেয়। আপনি ভাবতে শুরু করেন, “জীবন কি এমনই একটা জ্যাম, যেখানে আমরা সবাই আটকে আছি?”

ফুড অ্যাপের কষ্ট: ইমোশনাল রোলারকোস্টার
অনলাইনের কষ্টটা আলাদা। এটা একটা ইমোশনাল যাত্রা। প্রথমে আশা, বিরিয়ানির ছবি দেখে মন ভরে যায়। তারপর অপেক্ষা, রাইডারের লোকেশন দেখে আপনি টেনশনে। আর শেষে ধাক্কা, অর্ডার ক্যানসেলের নোটিফিকেশন। এই তিন ধাপের যাত্রা আপনার হৃদয় ভেঙে দেয়।
ফুড অ্যাপের কষ্টে আপনি একা। ঘরের মধ্যে বসে আপনি ফোনের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। কাস্টমার সার্ভিসে ফোন করলে একটা রোবট বলে, “আমরা দুঃখিত।” কিন্তু আপনার খিদে কে বোঝাবে? আর আপনার মেজাজের কথা নাই বা বললাম। এই কষ্ট ব্যক্তিগত, আর তাই আরও গভীর।

কে জিতল? জ্যাম না অ্যাপ?
আমার মতে, এই যুদ্ধে কেউ জেতে না। জ্যাম আপনার ধৈর্য পরীক্ষা করে, আর ফুড অ্যাপ আপনার আবেগ। জ্যামে আপনি শারীরিকভাবে কষ্ট পান, কিন্তু অন্তত আপনি বাইরে মানুষের মাঝে থাকেন। ফুড অ্যাপে আপনি আরামে চার দেয়ালের মাঝে বসে থাকলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
কিন্তু একটা জিনিস পরিষ্কার, মোহনীয় ঢাকার এই দুই জীবনই আমাদের শক্ত করে। জ্যামে আটকে থেকে আমরা শিখি কীভাবে অপেক্ষা করতে হয়। ফুড অ্যাপের ধাক্কা খেয়ে আমরা শিখি কীভাবে হতাশা সামলাতে হয়। আর এই দুইয়ের মাঝে আমরা খুঁজে পাই হাসির মুহূর্ত; যেমন, জ্যামে পাশের ভাইয়ের সঙ্গে গল্প, বা ফুড অ্যাপে ক্যানসেল হওয়ার পর বাসার রান্নার দিকে ছুটে যাওয়া।

আপনার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ
তো, আপনি কোন দলের? জ্যামের কষ্ট নিতে পারেন, নাকি ফুড অ্যাপের ট্র্যাজেডি আপনার জন্য বেশি কষ্টের? কমেন্টে বলুন, আপনার জীবনের সবচেয়ে হাস্যকর জ্যাম বা ফুড অ্যাপের গল্প। আর যদি দুটোই আপনার জীবনের অংশ হয়, তাহলে স্বাগতম মায়াবী ঢাকার এই অদ্ভুত, কিন্তু রঙিন জীবনে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:১৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×