অনেকদিন পর ব্লগে শান্তিপূর্ণ ক্যাচালের পরিবেশ দেখতে পাচ্ছি। শান্তিপূর্ণ ক্যাচাল হলো 'ফ্রেন্ডলি ফায়ার' এর মতো। বন্ধুর সাথে বন্দুক যুদ্ধ। ফাইটিং ফর রিক্রিয়েশন অথবা হাত সোজা করার জন্য গুলাগুলি। মনে করুন, মাঝখানে একজন অদৃশ্য তৃতীয়পক্ষ সত্যিই শুট করে দিলো! ফ্রেন্ডলি ফায়ারে অর্ধমৃত অপর বন্ধু! তো... সেই তৃতীয় পক্ষ কে? যে উভয়ের সাথেই বৈরি অথবা উভয়ের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করতে চায়। আর যায় কই, এবার অর্ধমৃত বন্ধুটি নিশানা করেই বন্ধুকে গুলি করে বসে! শুট টু কিল! ফলাফল: একজন নিশ্চিত মৃত, আরেকজন প্রায়-মৃত। বন্ধুত্বের পরাজয়। বিজয়ী তৃতীয় পক্ষ!
অবশ্য... আগেকার দিনে যখন অধিকাংশ ব্লগার বেনামে অথবা ছদ্মনামে ব্লগিং করতো, তখন শান্তিপূর্ণ চ্যাকাল বলতে কিছুই ছিলো না। কারণ ভুল-বানানে হোক, ভুল ভাষায় হোক, ভুল রেফারেন্সে হোক, চ্যাকাল চলতেই থাকতো। একটি নিক ব্যান হলে, স্বাভাবিকভাবেই ক্যাচাল নিক সক্রিয় হতো। বলতে পারেন, এক নিক দেশান্তরে লক্ষ নিক ঘরে ঘরে! সামান্য উস্কানিতেই সিরিজ ব্লগ পোস্ট। দশ লাইনের লেখায় শত শত মন্তব্য! সাহিত্য চর্চা? কবিতা? প্রবন্ধ? ওহ নো! এসবের বালাই ছিলো না তখন। দরকারও ছিলো না হয়তো।
ক্যাচালের প্রধান বিষয় ছিলো, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় (ফেমিনিস্ট পোস্ট, প্রাইভেট-পাবলিক ভার্সিটি বিতর্ক, মা বড় না বউ বড়... এসব ক্যাচাল তো ছিলোই)। ব্লগ ছিলো বাংলার কুরুক্ষেত্র! কী ভয়ানক দিন ছিলো তখন! সামু গর্বিত এজন্য যে, বাংলা ভাষায় ভারচুয়াল ক্যাচালের একমাত্র নির্ভরযোগ্য স্থান ছিলো এটি। বাকিরা সব দ্বিতীয় কাতারে। এরজন্য ব্লগমাতাকে কী বিষের পেয়ালা হাতে নিতে হয়েছিলো, সেসবে গেলাম না।
ওসব ক্যাচালের কারণে বাংলা ভাষায় যুক্ত হয়েছিলো 'সুলেমানি ব্যান' নামক ভয়ংকর সব শব্দাবলী (অথবা শাস্তির বিধান)। ব্লগীয় পরিভাষার তালিকাটি বেশ দীর্ঘ। সেসবেও গেলাম না। (যেমন, সহব্লগার চাঁদগাজি ভাই অথবা সোনাবীজ ভাই অথবা শায়মাকে যদি স্বীকার করানো যায় এগুলো তাদের কততম ব্লগ নিক, তবে কিছু কাঁচা গল্প বের হয়ে আসতে পারে।)
সেসব দিনকে আমরা বাংলা ব্লগের সোনালি দিন বলি। বলতে ভালোবাসি! স্মৃতিতে শুধু কাতর হই না, আরামও পাই। শত শত একটিভ ব্লগার থাকতেন অনলাইনে। ব্লগ কখনও শুধু সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্র ছিলো না।
প্রথম পৃষ্টায় লেখা আসতো চ্যাটবক্সের মতো অগণিত। চোখের সামনে নতুন পোস্টগুলো নিচে চলে যেতো!
আর এখন?
এখন যখন ব্লগাররা বলেন ব্লক ওয়াচ জেনারেল সেইফ এসবের মানে তারা জানেন না, বলা যায় ক্যাচালের দিন শেষ! সহি ব্লগাররা ঠিক একারণেই ব্লগে আর পা মাড়ান না। এখানে সবকিছু এতো মনোরম, গ্রহণযোগ্য, রাজি হবার মতো। বেরাজি হবার কোন পোস্ট নেই!
এভাবে ব্লগিং চলতে পারে, কিন্তু কোয়ারেন্টিন চলতে পারে না!
তারপরও অমুকের মুক্তি চাই, অমুকের জেনারেল পদের উন্নয়ন চাই, বিদায় ব্লগ... ইত্যাদি পোস্ট দেখলে কিছুটা আশা জাগে মনে। এই ক্যাচাল সেই ক্যাচাল নয়। তবু ব্লগারদেরকে বাংলা টাইপিংয়ে ব্যস্ত রাখার জন্য শান্তিপূর্ণ ক্যাচাল মন্দ নয় (খেয়াল রাখবেন টাইপিং যেন বিজয় কিবোর্ডে হয়!)।
ক্যাচালের রিসিপি: মধ্যযুগীয় সহব্লগার ম্যাকিয়াভেলি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে...
১ জনপ্রিয় ব্লগারকে ব্যান করে দিন, শুধু তাই নয়, নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দিন (কিছুদিন পরপর বদলে দিন)
২ অজনপ্রিয় লেখকের বিদ্বেষী লেখাকে টানিয়ে দিন স্টিকি পোস্টে (কিছুদিন পরপর বদলে দিন)
৩ ক্যাচাল-ফ্রেন্ডলি মডারেশন করুন (ভালো লেখাকে যথাসম্ভব চাপিয়ে রাখুন, নিচে রাখুন, ভুলে যান)
৪ শান্তিপূর্ণ ব্লগারদেরকে ক্যাচালবাজ ব্লগারে রূপান্তরিত করুন (পোস্ট আটকে দিন এবং কিছুক্ষণের মধ্যে একটি ক্যাচাল পোস্টের জন্য প্রস্তুত থাকুন, অন্যথায় সামাজিক মাধ্যমে খবর নিন!)
৫ পুরাতন কিছু সহি ব্লগারকে জামাই আদরে (স্ত্রীলিঙ্গ হবে না) নিয়ে আসুন (তারা ক্যাচালের পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করুক)
আর কী কী যোগ করা যায়? (আহেম!)
পোস্ট এডিট করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। তা না হলে, ব্লগারকুলের মান থাকে না - লেখকেরও খবর থাকবে না।
[ মহামান্য হাসান মাহবুব-এর সংযুক্তি]
৬ ক্যাচালের মূল অস্ত্র হলো স্ক্রিনশট। এতদিন ধরে ব্লগিং করাতে অনেকেরই কিছু না কিছু পাপ জমেছে। সেগুলিকে সামনে তুলে আনা হোক ছদ্মনিক দিয়ে।
৭ কোন পুরুষ ব্লগার খালি নারী ব্লগারদের বেশি বেশি এবং বড় বড় কমেন্ট করে এসবের নথি সহ উপস্থাপন করে তাকে লুল উপাধি দেয়া হোক।
৮ নতুন নিক খুলে গালাগালি করে ব্যান খেয়ে অন্য নিক থেকে পোস্ট দেয়া হোক, "কী অপরাধ ছিলো তার! মডুরা কী বেরহম!"
[ মহামান্য অপু তানভীর ]
৯ কিছু নির্দিষ্ট ব্লগারদের কে বাড়তি সুবিধা দিন । চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিন সেই সুবিধা গুলো । যেমন তাদের যে কোন পোস্টই নির্বাচিত পাতায় দিয়ে দিন, তাদের বিরুদ্ধে যে কোন পোস্ট মুছে দিন ।
১০ বারবার কিছু কিছু নিয়ম ভাঙ্গা দেখেও না দেখার ভান করুন!
[ মহামান্য ডি মুন ]
১১ লুল ব্লগার ও লুল কবিকে উৎসাহ। তাদের লুল কাব্য স্টিকি করুন এবং লুল প্রতিভা নিয়ে আলোচনা করুন। কেন কি কারণে সমাজে তাদের সংরক্ষণ প্রয়োজন এ নিয়ে তুমুল আলোচনা হতে পারে।
লেখাটি কোয়ারেন্টিন সময়ের বিরক্ত মস্তিষ্ক থেকে সৃষ্ট। দায়িত্বশীল পাঠকের জন্য পোস্ট করা হলো (যদি পোস্টটি ছাড়া পায়)। মন্তব্যে আরও কিছু রেসিপি যুক্ত করার অনুরোধ রইলো।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:৫৮