গত চব্বিশ ঘণ্টা ধরে কোরিয়ান জাতীয় টিভিতে কয়েকজন বাংলাদেশির খবর বারবার আসছে। সেদেশের প্রেজিডেন্টও এতোটুকু প্রেস কাভারেজ পায় না! তারা রীতিমতো বিখ্যাত হয়ে গেছেন, নেতিবাচক খবর নিয়ে।
বিশেষ ফ্লাইটে একদল বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সিমেস্টার ধরার জন্য কোরিয়া গিয়েছিলো গত পরশো। যথারীতি সুস্থতার যাবতিয় প্রত্যায়নপত্র নিয়ে। কিন্তু কোরিয়ায় গিয়ে চারজন 'করোনা পজিটিভ'। তারা কোরিয়ায় নেমে কোথায় গিয়েছে, কোথায় বেড়িয়েছে, কোথায় শপিং করেছে, কোথায় ...ইয়ে করেছে সব খবর হালনাগাদ টিভিতে হচ্ছে ঘণ্টায় ঘণ্টায়। (উল্লেখ্য, "৩১ নম্বর রোগীর" চলাফেরাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ কোরিয়া করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কৃতীত্ব দেখিয়েছে।)
খবরে পেয়েছি, ঢাকা বিমানবন্দরে যে 'নেগেটিভ' দেখিয়ে বিমানে ওঠেছে তাইওয়ানে গিয়ে সে 'করোনা পজিটিভ'! দেখুন আমরা কত পজিটিভ একটি জাতি! বলি, করোনার ক্ষেত্রে এতো 'ইতিবাচক যারা' তাদেরকে বাইরে পাঠাবার কী দরকার?
একই অবস্থা জাপান ফ্লাইটে। করোনা নেগেটিভ প্রত্যয়নপত্র নিয়ে যারা জাপানের বিশেষ ফ্লাইট ধরেছেন তাদের বেশ কয়েকজন 'পজিটিভ'। ফলাফল, বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট আসাযাওয়া বাতিল।
বলা বাহুল্য জাপান বাংলাদেশের অন্যতম সহযোগী। দুর্দিনের তাদের সাথে যোগাযোগ আরও জরুরি। দক্ষিণ কোরিয়ার সাথেও, কারণ বিমানবন্দরের এক্সটেনশনসহ দেশের অবকাঠামোর সাথে তারা জড়িত।
খবরে পেয়েছি যে, যাত্রীরা অনেক কষ্ট করে টেস্ট করিয়ে প্রত্যয়নপত্র যোগাড় করে কিন্তু বিমানবন্দরে কেউ তাদেরকে জিগায় না! শুধু একটু তাপমাত্রা চেক করে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। (এবিষয়ে বিমানবন্দরের দক্ষতার বিবরণ এখানে বলে শেষ করা যাবে না।)
টেস্ট কম হচ্ছে, দেরিতে হচ্ছে অথবা হচ্ছে না। করোনা রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে না অথবা হসপিটালগুলো তাদেরকে ভর্তি নিচ্ছে না। এসব দেখে আমরা অভ্যস্ত। হার্ড ইমিউনিটি অথবা সামাজিক প্রতিরোধ তত্ত্ব কোন কাজে আসে নি বাংলাদেশে। অঞ্চলভিত্তিক অবরোধের উদ্যোগও সিস্টেম দুর্বলতার কারণে বিলম্বিত হচ্ছে। ...এসবই আমাদের দেশের ভেতরের খবর!
কিন্তু দেশের বাইরে আমাদের অযোগ্যতা, সামর্থ্যহীনতা আর অস্বচ্ছতার খবরগুলো কি খুব দেওয়া প্রয়োজন? আমাদের টেস্টগুলো যে আইওয়াশ এসব প্রমাণ কি দেশের বাইরে পাঠাবার দরকার আছে? দেশের বাইরের বিমানবন্দরগুলোতে বাংলাদেশি পাসপোর্টের যে চমৎকার মূল্যায়ন হয়, সেটি আর বাড়াবার কী প্রয়োজন?
কর্তৃপক্ষের উচিত, এবিষয়ে বিমানবন্দরকে আরও কার্যকর করা এবং বিদেশগামীদের সবারই (দেশি এবং বিদেশি নাগরিক) টেস্টগুলো আরেকটু যত্নের সাথে করা। না হলে ক্ষতির আকৃতি ও প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে (যদি ইতোধ্যেই সেটি না হয়ে থাকে)।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:০৪