নেহরুর জোটনিরপেক্ষ নীতির কারণে ১৯৫০-র দশকে আমেরিকা ভারতকে পাশে না পেয়ে পাকিস্তানের সাথে CENTO, SEATO প্রভৃতি চুক্তির মাধ্যমে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলে যার ফলে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমেরিকা পাকিস্তানের সকল পদক্ষেপে সায় দিয়ে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর মিলিত হলো সোভিয়েত -ভারত বলয়ে। আমেরিকার সিআইএ ও পাকিস্তানের আইএসাই মিলে ষড়যন্ত্রকারী মোশতাকসহ মুজিব নগর সরকারের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব, প্রধাণমন্ত্রী তাজউদ্দিন, মন্ত্রীসভার সকল সদস্যকে হত্যা করে বাংলাদেশে তাদের অনুগত সরকার প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হয় যা ২০০৮ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ২০০৮ সালে ভারত-আমেরিকা নিউক্লিয়ার চুক্তি স্বাক্ষরের পর পেন্টাগণের নিরাপত্তা কৌশল পরিবর্তিত হয়। আমেরিকা বাংলাদেশের ব্যাপারে পাকিস্তানের পরিবর্তে ভারতের সংগে কাজ করতে শুরু করে
বিএনপিতে যেহেতু পাক ঘরানার মুসলিম জাতীয়তাবাদীদের প্রভাব বেশী তাই এ দলটি ১৯৭৫-২০০৮ সালের ঘোর এখনো কাটিয়ে উঠতে পারছে না যখন আমেরিকা তার কৌশলগত মিত্র পাকিস্তানের পরামর্শে বাংলাদেশ বিষয়ে নীতি নির্ধারণ করেছে, যার সুফল হিসেবে জিয়া,খালেদা ও এরশাদ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকেছেন। ২০০৮ থেকে পরিস্থিতি যে উল্টে গেছে এটা এখনো পাকি ব্লেস্ডদের বোধোদয় হয়নি। তাই খালেদাকে বারবার সিংগাপুর যেতে হয়েছে। সিংগাপুরচক্র বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে সক্ষম নয়, এ সত্য যদি খালেদা এখনো না বোঝেন তবে তার পুত্রের রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন কখনো সম্ভব হবে না।
আগামী নির্বাচনে বিএনপির ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়। তবে আইএসআই ও জংগী-মৌলবাদীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে যদি খালেদা তার গন্তব্য দিল্লিতে ঠিক করেন, ৫বছর পর তার বা তার পুত্রের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা থাকবে নয়তো জিয়া পরিবারের রাজনীতির অবসান খুব শিঘ্রী ঘটতে যাচ্ছে।
সরকার পরিবর্তনের বিষয়ে বাংলাদেশের সুশীল সমাজের একাংশ দ্বারা উৎসাহিত হয়ে মজেনা প্রথমে খালেদার সংগে শলা করলেন। পরদিন পংকজ শরণের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলেন। পংকজ সোজা দিল্লী দেখিয়ে দিলেন। স্টেট ডিপার্টমেন্টের অনুমতি নিয়ে মজেনা দিল্লী গিয়ে পররাষ্ট্র কর্তাদের সাথে কথা বললেন। কিন্তু তারা তো আর মজেনার মত অতি উৎসাহী নন, ভদ্রভাবে তাকে বুঝিয়ে দিলেন যে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার কোন মিশন তাদের নেই।
যারা শত্রু পাকিস্তানের ইশারায় পাক-চীনা মদদপুষ্ট ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দেয়, এখনো আইএসআই-র দ্বারা প্রভাবিত ও মৌলবাদী-জংগীরা তাদের ডানে-বামে। হতভম্ব মজেনা চীনে যেতে চাইলেন। তার উর্ধতন কর্তারা তার চেয়ে বেশী ধারণা রাখেন। মজেনার উৎসাহকে প্রশ্রয় দিয়ে দিল্লী যাবার অনুমতি দিলেও চীনে যাবার অনুমতি দিতে পারলেন না কারণ আমেরিকা বাংলাদেশ বিষয়ে চীনের সাথে কাজ করছে না।
তো এখন মজেনা কী করবেন, খালেদাকে তিনি কথা দিয়েছেন, তাই ওয়াশিংটন ডিসি ছুটলেন যদি কর্তাদের বুঝিয়ে কিছু করা যায়! তার হয়তো ধারণা নেই যে বিষয়টি স্টেট ডিপার্টমেন্টের এখতিয়ারে নেই, এটা পেন্টাগনের বিষয় যারা নিরাপত্তার কৌশল হিসেবে বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতের সাথে কাজ করছে। আগে তারা পাকিস্তানের সাথে কাজ করত, তাই আইএসআই ভক্ত বিএনপি-জামাত-জাপা দীর্ঘদিন ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছিল। এখন পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ পাচ্ছে। মজেনার দৌড়ঝাপ কেবলই সার।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:১৮