শচীন ভক্তদের মন খারাপ? আসেন শচীনের বিদায়ে ব্যকুল না হয়ে একটু আনন্দ করা যাক।
প্রথমেই দেখা যাক ক্রিকেট জগতের এই মহান ইতিহাস সৃস্টিকারিকে টিমমেটরা গার্ড অব অনার দিয়ে বিদায় জানালেও আমাদের দেশের রাজ্নীতিক, সুশীলরা কে কী ভাবছেন।
শেখ হাসিনা :
শচীন ক্রিকেটের দেবতা। আমরা যেমন সমুদ্রজয় করেছি, শচীন তেমন বিশ্বজয় করেছে। আমরা যেভাবে হাজার-হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি, শচীন সেভাবে হাজার-হাজার রান করেছে। মহাজোট সরকারের প্রদর্শিত পথেই শচীন আজ শচীন হয়েছে। আমরা যে সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে চাচ্ছি, এর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেই বিশ্বের সর্বদলীয় লোকজন শচীনের বিদায়ে অশ্রুসিক্ত হয়েছে। মূলত মহাজোট সরকারের অবসরের লগ্ন ঘনিয়ে এসেছে বলেই এই শোকে শচীন অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
খালেদা জিয়া :
অ্যাই সরকার মোশরেক সরকার! ইনারা একজন কাফেরকে ক্রিকেটের দেবতা বলছেন। কোনো মুসলমান কাউকে দেবতা বলতে পারেন না। অ্যাই সরকার শচীনকে দেবতা বলে দেশের তৌহিদি জনতার ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিয়েছে। অ্যাই জালেম খেলোয়াড় একশোটি সেনচুরি করেছে। একশোটি চুরির পরেও সরকার তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অথচ আমার তারেক মাত্র কয়েকটি টাকা চুরি করায়ই সরকার তারেকের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে! শচীন নাকি পঞ্চাশ হাজার রান করেছে, অথচ সে পঞ্চাশ হাজার রানের 'টেন পার সেন্ট' পাঁচ হাজার রান তারেকের কাছে পাঠায়নি। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ট্রাইবুনাল গঠন করে আমরা এই রানখেলাপি তাঁবেদার নাস্তেক ফ্যাসিবাদী খেলোয়াড়ের সুষ্ঠু, নেরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের বিচার করব, এনশা আল্লাহ্!
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ :
হু ইজ শচীন? কে এই শচীন? ক্রিকেটে ওর ডেবু হয়েছে আমার শাসনামলে। ইনডিয়া সরকারকে রিকমেন্ড করে আমি ওকে টিমে ঢুকিয়েছি। এখন সে নাকি দেবতা হয়ে গেছে। ও কীভাবে দেবতা হয়? এই সাব-কন্টিনেন্টে দেবতা তো শুধু আমি। আমি আসল পুরুষ, ও আসল পুরুষ না। ও মাঠের খেলোয়াড়, আমি খাটের খেলোয়াড়; খাটের খেলোয়াড়রাই আসল খেলোয়াড়। ও হাজার-হাজার রান করেছে, আমি হাজার-হাজার রান দেখেছি। রান করার চেয়ে রান দেখায় ক্রেডিট বেশি। আউট হয়ে গেলে আম্পায়ারের সিগনালের অপেক্ষা না করেই শচীন মাঠ ছেড়ে যেত, আর আউট হয়ে যাওয়ার পরও আমি খাট ছাড়ি না। আসল পুরুষ কে, এবার বুঝে নিন। আসল পুরুষরা কারো জোটে থাকে না, নেক্সট ইলেকশন আমি এককভাবে করব।
আনিসুল হক:
আমি যখন রংপুর থেকে প্রথম ঢাকায় আসি, এর কয়েক বছর পরই ক্রিকেটে ষোলো বছরের একটি ছোট্ট ছেলের অভিষেক হয়। ছেলেটির নাম শচীন, ভালো নাম শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। অত্যন্ত মিষ্টি একটি ছেলে। ছেলেটির চেহারা মনে পড়লে ভেউভেউ করে আমার কান্না পায়, আমার চোখে অশ্রু রেডি থাকে। আমি যখন বুয়েটে ভর্তি হই, তখন ও প্রথম সেঞ্চুরি করে। মনে আছে -- ওর সেঞ্চুরির আনন্দে আমি বুয়েটের মাঠে গড়াগড়ি খেয়েছিলাম। বুয়েট নিয়ে আমার অনেক গল্প আছে, সে গল্প নাহয় পড়ে করব। আজ ছেলেটা অবসর নিয়েছে। টিভিতে দেখেছি ওর মা-ও ওর খেলা দেখতে এসেছিলেন। আসলে মা প্রসঙ্গ এলেই আমার একটা কথা খুব মনে পড়ে। 'মা' নামে আমার একটা উপন্যাস আছে। 'হে ফেস্টিভালে' এটা ২০% ছাড়ে প্রথমার স্টলে বিক্রি হচ্ছে, আপনারা সবাই এটা কিনবেন। 'মা' উপন্যাসটি কিনে আপনারা শচীনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে ভুলবেন না যেন!
আসিফ নজরুল :
আসলে আমরা জাতি হিশেবে বরাবরই আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগি। দলীয় ভিত্তিতে একেকজনকে অতি মূল্যায়ন করাই আমাদের জাতিগত টেনডেনসি। এই বায়াসড টেনডেনসিই আমাদেরকে বিশ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। শচীনকে আজ ক্রিকেটের দেবতা বলা হচ্ছে, কিন্তু দেবতা একজন থাকতে পারেন না। আমি বলছি না যে, ক্রিকেটের দেবতা হবার যোগ্যতা ওনার নেই। ওনার প্রতি আমি যথেষ্ট সম্মান রেখেই বলছি -- এখন সময় এসেছে দেবতার ক্লাসিফিকেশন করার। শচীনকে আমরা ক্রিকেটের রাম বলতে পারি, জয়সুরিয়াকে আমরা ক্রিকেটের রাবণ বলতে পারি, জাভেদ মিয়াদাঁদকে আমরা ক্রিকেটের যুধিষ্ঠির বলতে পারি, আফ্রিদিকে দুর্যোধন, ইমরান খানকে রাবণ বলতে পারি ব্লা ব্লা ব্লা। পাকিস্তানের খেলোয়াড়দেরকে খেতাবের বাইরে রেখে আপনি তো নিরপেক্ষ হতে পারেন না; নিরপেক্ষ হতে গেলে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হলে পাকিস্তানি খেলোয়াড়কে আপনার অবশ্যই সাথে রাখতে হবে!
মুহম্মদ ইউনূস :
শচীন ক্রিকেটের লিটল মাস্টার, বাংলায় বললে ক্ষুদ্র শিক্ষক। ক্ষুদ্ররাই পারে বৃহত্ কিছু করতে, যেমন ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে আমি বাংলাদেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করেছি। এজন্য আমি নোবেল পেয়েছি, শচীনেরও নোবেল পাওয়া উচিত এবং নোবেল পাওয়ার জন্য শচীনের উচিত গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নেয়া। শচীন আজ অবসরে যাচ্ছে, অর্থাত্ তার ক্যারিয়ার এখন জাদুঘরে; এভাবে দারিদ্র্যকেও আমরা জাদুঘরে পাঠাব। দারিদ্র্য যদি জাদুঘরে যেতে না চায়, তা হলে আমরা দারিদ্র্যের হাত ভেঙে দেব।
আহমেদ শফি :
শচীন একজন মালাউন। এই মালাউনরে দ্যাকলেই মেয়েগো দিলের মধ্যে লালা ঝরে। ও হইতেছে পুরুষ তেঁতুল। মেয়েরা তারে দেকলে 'ম্যারি মি, শচীন' বইলা চিল্লায়া ওঠে। মেয়েরা তারে লাভ মেরিজ করতে চায়, কোর্ট মেরিজ করতে চায়, তার লগে অবাধ মেলামেলা করতে চায়। এই শচীন ইমান-আকিদার জইন্য হুমকি। এখন থেকে আমি শফি স্টেডিয়ামে মাইয়া প্রবেশ নিষিদ্ধ করলাম আর শচীনরে বোরকা পরাইয়া মাঠে নামাবার হুকুম দেলাম!
-----------------------------------------------------
ডিসক্লেইমার ঃ লেখাটির ধারনা ফেসবুকের নিউজফীড (azadinlaw) থেকে সঙ্কলিত। সাক্ষাৎকারের চরিত্রগণ আসল হলেও বচন কাল্পনিক। চরিত্রগণের ভক্তকূলের গোস্যা হবার কোনো কারন নাই। ইহাকে নিছক আনন্দ হিসেবে নেওয়ার অনুরোধ থাকলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫২