রাস্তাা ধরে হাঁটছি, ব্যস্ত রাস্তা; মিনিটে শত শত গাড়ির আনাগোনায় পিচঢালা পথটা সূর্যের তাপ ও চাকার ভাঁপে বিগলিত প্রায়। তবু রাস্তা পার হতে হবে। খুব সতর্কতায় ডানে বামে তাকিয়ে, অতি সাবধানে একটু এগুনোর পর আবার পিছনে হটা।
বেশ কয়েকবারের চেষ্টায় একটা সময় ঠিক ঠিক একপাশ সফলতার সাথে অতিক্রম। বুক সমান উঁচু লেন বিভাজিকা অতিক্রম করতে হবে এবার। অতঃপর অনেক কষ্টে পার হওয়া গেলো রাস্তা। অথচ মাথার উপর ফুটওভার ব্রিজ। একটু হেঁটে পার হওয়ার শক্তি-সামর্থ্য কিংবা সময় নাই। কিন্তু জীবনটাকে বাজি ধরে অন্যায় করতে কোন দ্বিধা নাই। টপকানোই হলো মুল কথা। এখানে বুক ফুলিয়ে সফলতার মোড়ক মুখের উপর এঁটে দেই নির্লজ্জ ভঙ্গিতে।
যাক! টপকানো তো হলো।
একদিন চলন্ত বাসটা হঠাৎ হার্ডব্রেক করলো। সামনে বসা লোকজন ছিঁটকে সামনে পড়ে যাবে এমন ভাব। একটুর জন্য রক্ষা। পেছনে যারা ছিলেন তারাও প্রায় সিট থেকে ছিঁটকে পড়ার উপক্রম। সবাই হইচই শুরু করে দিলো। ড্রাইভারকে বাংলায় প্রসিদ্ধ বিশেষণ দিয়ে বিশেষায়িত করলো সবাই। ড্রাইভার ব্যাটা চুপ। এসব সয়ে গেছে তার।
সামনে বসা লোকটা সব দেখলো। যে লোকটা হুট করে বাসের সামনে এসে দাড়ালো এবং যার দরুন হার্ডব্রেক সেই লোকটা দিব্যি নবাবের মত হেঁটে যাচ্ছে; তার অভিব্যক্তি বোঝা যাচ্ছে, এমন একটা কর্মের জন্য তার চোখেমুখে সামান্যতম অনুশোচনাবোধ জাগ্রত হয়নি। রাস্তা টপকানো তো গেলো।
টপকানো এখানে মূল মন্ত্র।
সামানে বসা লোকটা পথচারির উপর খুবই বিরক্ত। মাথার উপর বিশাল একটা ফুটওভার ব্রিজ, আর সে কি না এভাবে হেঁটে পার হচ্ছে। আজব!
গতকাল কিন্তু এই লোকটাই রাস্তা টপকেছিল। আজ অন্যের টপকানো দেখে বেজায় বিরক্ত সে। আমরা এমনই নিজের টপকানো কে তেমন কিছু মনে না করলেও অন্যের টপকানো সহ্য হয় না।
অফিসে “মিস্টার এক্স” বসের সাথে যখন কথা বলেন তখন “স্যার”, “স্যার” বাক্যবাণে অস্থির হয়ে যান অথচ তার সামনে অন্য কেউ এই কাজটা করলে তোষামোদি বলে তোয়াক্কা করতে দ্বিধা করেন না। তখন ভুলে যান কিছুক্ষণ আগেই এই কাজটায় পারদর্শিতা দেখিয়েছেন তিনি।
পাশের বাড়ির ছেলেটা নাকি প্রশ্ন পেয়েছে। প্রশ ফাঁসের যখন রমরমা ঘটনা ঘটছে এখানে ওখানে সেখানে প্রশ পাওয়া তেমন কিছু না। পাশের বাড়ির ভাবির তীক্ষè নজর ছেলে আর ছেলের মায়ের দিকে।
“ভাবি, আজ কি কোন প্রশ পেয়েছেন? কালকেরটা কি কমন পড়েছিল? কোথা থেকে পেলেন?”
তারপর,
“এভাবে প্রশ্ন পেয়ে পরিক্ষা দেওয়া ঠিক না। আমি হলে এটা করতামই না। এটা ঠিক না ভাবি।”
পরের বছর সেই ভাবির মেয়ে পরিক্ষায় অবতীর্ণ হলো। যথারীতি তিনিও প্রশ্ন পেলেন। গতবছর পাশের বাড়ির ভাবির ছেলে প্রশ্ন পেয়ে এ+ পেয়েছে আজ কেন তার মেয়ে পাবে না। নিজের মেয়ের ব্যাপারটাও কিন্তু চিন্তা করতে হবে। তাকেও এ+ পেতে হবে। গোল্ডেন এ+ পাওয়া চাই। তাকে টপকাতে হবে। সেটা যেভাবেই হোক।
টপকানো হলো আসল কথা। কীভাবে টপকানে হলো সেটা মুখ্য নয়।
মাঠ পর্যায়ে রাজনীতি করেন ত্রিশ বছর ধরে। নমিনেশন চান তিনি। ঐ এলাকায় আরো অনেকেই আছেন যারা নমিনেশন চান। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা চান, যারা দলের অসময়ে দলের সাথে ছিলেন তাদেরকেই মূল্যায়ন করা হবে। বহিরাগতদের কোন প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। নির্বাচনের সময় টাকাওয়ালা অনেক ব্যবসায়ি হাজির হন, তাদের সকলের নমিনেশন চাই। সেন্ট্রাল বোর্ড তখন ত্যাগী নেতাদের কথা ভুলে যান। ত্যাগীরা এখানে টপকানোর স্বীকার হন। নেতারাও নিজেরা নিজেদের টপকে যান।
টপকানো হলো আসল কথা।
কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি, সংসারে মান মর্যাদা, সামাজিক দায়বদ্ধতা এমনকি বাবা মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিংবা ভালোবাসা দেওয়ার ক্ষেত্রে টপকানো একটা মহৌষধ।
সকল ক্ষেত্রে টপকানোর জয় হউক।
২০/০৩/২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:৩২