somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদর্শ গৃহিণী হওয়া!

১২ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মেয়েটির একটা ইন্টারভিউ দেখলাম, তাতে মেয়েটি খুব সাবলীলভাবে এবং নির্দ্বিধায়- অকপটে স্বীকার করেছে সে আদর্শ একজন গৃহিণী হতে চায়৷ আজকের দুনিয়ায় দাঁড়িয়ে এটা সত্যিই বিরল যে কেউ এখনও গৃহিণী হতে চায়, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির পৃথিবীতে কেউ ঘরের কাজকে সম্মানের সঙ্গে আপন করতে চায়। এটা সত্যিই প্রশংসনীয় একটা ব্যাপার৷

আজকের সমগ্র পৃথিবী আমাদের শেখাচ্ছে ঘরের কাজ নারীরা করা মানে পশ্চাদপদতা- প্রাচীনত্ব- মধ্যযুগীয় বর্বরতার সমতুল্য - নারীর উন্নয়নবিমুখতা- প্রগতিবিরুদ্ধ/প্রগতীবিমুখতা। নারীর ঘরের কাজকে নারীর উন্নয়নের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। আমাদের সমস্ত সিনেমা-নাটক-বিজ্ঞাপন-পাঠ্যবই-উন্নয়ন সংস্থাগুলো আমাদের দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা এটাই শেখাচ্ছে নারীর ঘরের কাজ মানেই নারীকে ছোট করা, নারীর উন্নয়নের পথকে রুদ্ধ করা, নারীর সন্মানকে খাটো করা ইত্যাদি।

সংসার সুখের হয় নারী-পুরুষ উভয়ের অংশগ্রহণে, দু'জন দু'জনের প্রতি পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকলে। ঘরের-বাইরের কাজ না, যেকোনো কাজই যেকেউ করতে পারে। কাজের কোন লিঙ্গ নেই, সব কাজই সবার জন্য। তবে আজকের দুনিয়ায় দাঁড়িয়ে কোন নারী যদি অকপটে স্বীকার করতে পারে সে আদর্শ গৃহিণী হতে চায় তাহলে এটা আমার কাছে একটা রেভ্যুলেশনারী ব্যাপার-স্যাপার। বলতে পারেন আমার মস্তিষ্কে পুরুষতন্ত্র!! হ্যাঁ তাতেই আমি খুশি। একজন পুরুষ যেমন ঘরের কাজ করলে তার ইজ্জত সন্মান যায় না, তেমনি একজন নারীও ঘরের কাজ করলে তার ইজ্জত সন্মান যায় না।

আসলে সবসময় নিয়মনীতি-প্রথা-কাস্টমস-নর্মস- ভ্যালুজ-দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি ব্রেক করা মানেই যে বিল্পবীয় ব্যাপার এমনও না অনেক সময় এটা সমাজের যে চিরন্তন ঐক্য-সম্প্রতি এবং শান্তি-শৃঙ্খলা রয়েছে সেটাকে ভেঙে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করে। এদেশের অধিকাংশ প্রগতিশীল এবং নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করা লোকগুলো ভয়ঙ্কর রকমের ভন্ড, টাউট ও বাটপার শ্রেনীর হয় এবং একই সঙ্গে অন্ধ ও বটে। সবকিছু অন্ধ অনুকরণ করে এরা। নারীরা কেন হাজার-হাজার বছর ধরে ঘরের কাজ করে এটার তো একটা নিশ্চয়ই মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখাও রয়েছে। নারীরা বরাবরই ঘরে থাকতে বেশি পছন্দ করে, ঘর নারীকে যেভাবে কাছে টেনেছে ঠিক তেমনিভাবে পুরুষকে বাহির কাছে টেনেছে। তারা যেহেতু শারিরীকভাবে পুরুষের থেকে ভিন্ন তাই তাদের কাজের ধরনও পুরুষের থেকে আলাদা হবে এটা ভ্যারি ন্যাচারাল এবং এটাই ইকুইটি আর নায্যতা। সবসময়ই পুরুষরা সমস্ত যুদ্ধ-বিগ্রহ-শারীরীক পরিশ্রমের কাজগুলো করে আসছে এবং এতেই সমাজের ভারসাম্য রক্ষা হয়েছে। আর এটাই ইকোসিস্টেম। এভাবেই সমাজ টিকে আছে। নারী যেভাবে পরম মমতায় সংসার টিকিয়ে রাখে, বাচ্চা মানুষ করে, ঘরের সমস্ত কাজ করে এটা পুরুষ পারে না। এটাই সহজাত সৌন্দর্য, এটাই শক্তি, এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। এই সুন্দর ব্যবস্থাটা নারী-পুরুষ উভয়ে উভয়ের সম্পূরক শক্তি হিসেবে বাঁচিয়ে রেখেছে। একজন অপরজনের সহায়ক শক্তি হিসেবে টিকে আছে। কেউ কারো শত্রু নয় বরং এই পৃথিবীর জটিল-কঠিন-বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে একজন অপরজনের পরম বন্ধু হিসেবে মমতায় জড়িয়ে পাশে থাকে। আর এটাকে পুরুষতন্ত্র বলে না রে, বোকাদোচা! এটাকে নারীর প্রতি বৈষম্য বলে না! এটা হলো সৌন্দর্যতা-নান্দনিকতা-ভারসাম্যতা-নায্যতা। নারী তার মেধা-মননশীলতা-প্রজ্ঞা-বিচক্ষন্নতা দিয়ে এগিয়ে যাবে তেমনিভাবে পুরুষও এগিয়ে যাবে।

এরপরও যদি কোন নারী সর্বোচ্চ জ্ঞানের আলোয় নিজেকে উদ্ভাসিত করে, সবকিছু করার পাশাপাশি নিজের ঘরকে আপন করে বুকে টেনে নেয় তাহলে তার জন্য অনেক অনেক বেশি সন্মান। যে নারী ঘর-সংসার-রান্নাঘর-বাচ্চা সামলানোটাকে ঘৃণা-অবজ্ঞার-কম গুরুত্বের চোখে দেখবে সে নারী সারাজীবন একধরনের মনঃকষ্টে ভুগবে। তথাকথিত প্রগতিশীলতার নামে নারীর প্রতি এমনসব অপ্রয়োজনীয় বোঝা চাপিয়ে দিবে, তার চাপে সে সব ভুলে যাবে। যে তথাকতিথ শান্তির জন্য সে ঘর-সংসার-বাচ্চা সামলানোকে এতোদিন ঘৃণা করেছে একটা সময় পর সে সবচেয়ে বেশি এই জিনিসগুলোকে ফিল করবে, সবচেয়ে বেশি সে ঘর-সংসার চাইবে। মুখে যতোই প্রগতিশীলতার কতা বলুক একটা সময় পর সে সবচেয়ে বেশি আফসোস করবে সংসারী না হওয়ার জন্য। না হয় Utmost Happiness ব্যাপারটা পাবে না। আমার খুব ক্লোজ একজন, জিনি বিশাল সব সার্টিফিকেটধারী। দীর্ঘদিন এমএনসিতে চাকরি করেছে। তারপর ছেড়ে দিয়ে উদ্যেগক্তা হয়েছে। দশঘাটে জল পান করতো, বেশ আরামেই দিন যাচ্ছিলো, এখন চামড়া যখন ঢিলা হওয়া শুরু হইসে। এবার শেষ বয়সে কিভাবে কাটাবে, কে দেখবে এসব নিয়ে বিষন্নতায় ভুগছে। কারন টাকা পয়সা যা যেসব নিরাপত্তা দিতে পারেনা, সংসার ঘর ঐ নিরাপত্তা দিতে পারে। এবং এই যে বাবা-মায়ের প্রতি আমাদের একধরনের অদ্ভুত টান-শ্রদ্ধা-ভালোবাসা-মায়া-মহব্বত কাজ করে এবং শেষ বয়সে বাবা-মাকে আমরা আমাদের বাচ্চাদের মতোই আদর-যত্ন করি যেভাবে ছোটবেলায় আমাদের বাবা-মা আমাদেরকে কেয়ার নিয়েছিলো এটা শুধুমাত্র ট্রেডিশনাল সমাজ ব্যবস্থায় সম্ভব। এটা শুধুমাত্র ঘর-সংসার-বাচ্চা সামলানো সমাজ ব্যবস্থাতেই সম্ভব। ঘর-সংসার-বাচ্চা সামলানো সমাজ ব্যবস্থার ভেতর যে ভ্যালুজ-নর্মস-কাস্টমস রয়েছে ঐটার বাইপ্রোডাক্টই হলো আমরা আমাদের বাবা-মা কে বৃদ্ধ বয়সে কখনো ছেড়ে যাইনা, তাদেরকে বাচ্চাদের মতোই কেয়ার করি। একটা সময় পর যখন শরীর হাত পা ভেঙে বিছানায় পড়ে তখন প্রস্রাব-পায়খানা করে বিছানায় ঐটাও পরম মমতায় আমাদের সন্তানরা পরিষ্কার-পরিছন্ন করে। কখনো একটুও ঘৃনা করে না এসব পরিষ্কার করতে বরং পরম আদর-মমতায় আগলে রাখে। এটাই হলো ট্রেডিশনাল সমাজের বাইপ্রোডাক্ট। অপরদিকটায় আছে বৃদ্ধাশ্রম আর অবহেলা এবং ছেড়ে যাওয়া। ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য ।

১২ মে, ২০২৩
ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:১৬
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×