ছোটবেলায় জ্বর হলে খুব ভাল লাগত। রবীন্দ্রনাথ পড়া যেত, হুমায়ুন খুলে বসা যেত। মা একটুও বকত না। অসুখ হলে বোধ হয় বকা যায় না।
একসময় বড় হলাম। বড় হওয়ার পর থেকে আর কোনদিন অসুখ করলে, ভাল লাগেনি আমার। একটু অসুখ করলেই কাঁথার তলে ঢুকে যেতাম। ভয় ধরত, খুব অবেলায় ফুরিয়ে যাবো নাতো আমি!!!
এই ছেলেটির লিউকোমিয়া হয়েছে।
কত ওর বয়স? উনিশ বা বিশ। কত ছোট ও আমার!!! এ বয়সে কি হত আমার? একটা প্রেমিকের জন্য ভিতরে ভিতরে ছটফটানি হত। কখনও কখনও সেই অচেনা প্রেমিককে নিয়ে খুব ভাবতাম আমি। খুব ইচ্ছে করত সে এসে খপ করে হাতটা ধরুক আর খুব রাগ দেখিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নেই আমি।
কেউ বকলে, খারাপ কিছু বললে ন’খালার দেওয়া ফুল তোলা কাঁথাটা, কেঁদে কেঁদে ভিজিয়ে ফেলতাম আমি। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞ হতাম, নিশ্চয়ই পারব, ওরা যেরকম ভাবছে আমি তো সেরকম নই, নিশ্চয়ই ভাল কিছু করব আমি। সময় তো ফুরিয়ে যায়নি। পুরো জীবনটাই তো পড়ে আছে আমার।
এই ছেলেটি আমার মত করে ভাবত কিনা জানি না? তবে এখন কি ভাবে ও ?
ওর ও তো সারাটা জীবন পড়ে আছে!!!
কি করে ও এখন? নিশ্চয়ই সারাদিন শুয়ে থাকে। অসুখ হলে যে শুয়ে থাকতে হয়। আর ছুটি গল্পের ফটিকের মত কড়িকাঠ গোনে। অবেলায় ফুরিয়ে যাবার ভাবনা হয়ত ওর প্রায়ই আসে এখন। রবীন্দ্রনাথ হুমায়ুন একদমই পড়তে ইচ্ছে করে না আর। ক্লাসের কঠিন বইগুলোই আবার ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে।
ও নিশ্চয়ই আবার বইগুলো ছোঁবে, পড়বে। খুব ভাল ফল করবে ও। তারপর কোন একদিন ওর জিতে যাওয়ার গল্পটা সবাইকে বলবে।
ও নিশ্চয়ই ফুরিয়ে যাবে না। ও অনেক ভোর দেখবে, বিকেল দেখবে। প্রিয়তমার হাত ধরে অভিমানী সন্ধ্যায় হাঁটবে। অগোছালো স্বভাবটার জন্য অনেক বকুনি খাবে। অভিমান হবে ওর অনেক। অভিমান মিটলে কোন এক বৃষ্টির রাতে প্রিয়তমাকে ফিরিয়ে আনতে ছুটবে ও। মাঝ রাতে সিঙ্গাড়া খাবে বলে তাকে জাগিয়ে দেবে। একটা অসহ্য রকম যন্ত্রণাদায়ক স্বামী হবে ও।
ওর একটা মস্ত ‘সুখী মানুষ’ ভুঁড়ি হবে। ওর দু তিনটে ট্যাঁ ট্যাঁ বাবু হবে।
তারপর ......
আর একদিন খুব খুব বুড়ো হয়ে ও মারা যাবে।
কত কিছু করার না আছে এ পৃথিবীতে!!!
আমি জানি না পৃথিবীটাই আমার কাছে মাঝে মাঝে স্বর্গের মত মনে হয়। আমার স্বামীকে জিগ্যেস করেছি আচ্ছা বেহেশতে কি অনেক সুখ? সে বলল, “ সে তো বটেই। কত কিছু থাকবে সেখানে। সেসব তুমি তো সব জানোই”।
কিন্তু আমার যে এর থেকে আর বেশি চাই নে। এই হলেই চলবে আমার।
মাত্র এগারো লাখ টাকা জোগাড় হয়েছে যে। আরও উনত্রিশ লাখ!!!
আচ্ছা মরে গেলে কেমন লাগে?
মরে গেলে খুব খারাপ লাগবে আমার। ভাই বিলটুর কথা মনে হবে, বোন টুকটুকির কথা মনে হবে। বোকা স্বামীটার কথা মনে হবে। মৃত্যু নিয়ে অনেকবার ভেবেছি আমি। একবারও মরতে ইচ্ছে হয়নি আমার। শুধু মা বকলেই মরে যেতে ইচ্ছে হত।
তাজুলের যেন কিছু না হয়। ও যেন পৃথিবীর স্বর্গে অনেক অনেক দিন বেঁচে থাকে।
- আমিন
*** তাজুলের জন্য কিছু করতে চাইলে সংযুক্ত ছবিতে ঠিকানা দেওয়া আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৫৯