somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃ কাদামাখা পথ

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১)
একটা নুয়ে পড়া মরা মেহগনির উপর বসেছিলাম আমি, দি আর সিমা আপা। পুকুরের এই পাড়টায় শীতের মিহি রোদে আমরা এমনিই বসতাম। সেদিন কেউ মাছ ধরছিল না, আমরা তিনজনই ছিলাম। মরা মেহগনিটা ছিল আমার দাদাবাড়ির পুকুরঘাটে। শানবাঁধানো পুকুর নয়, তবে মাটির পাড় ঢালের মত হয়ে শক্ত করে বাঁধা। পাড়টার চারপাশ ঘিরে দু সারি করে কলাগাছ আর মাঝখান দিয়ে পায়ে চলা পথ। মাঝে মাঝে দু একটি তাল খেজুরের গাছকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেত। গ্রামে আমাদের এ পুকুরটি বেশ, দীঘির মত আয়তন প্রায়। পুকুরের একবারে মাঝখানটা যেখানে খুব গভীর হবার কথা সেখানে ছিল উঁচু শক্ত সমতল মাটি। শুনেছি হাতের টাকায় টান পড়ায় দাদা আর শেষ নামাতে পারেননি। তবে মাঝখানে মাটির অংশটা থাকার কারনেই পুকুরটা বেশ হয়েছিলো দেখতে। বর্ষায় পানির তোড়ে উঁচু অংশটা ঢেকে যেত আর শরতে খুব কাশফুল ফুটত ওখানে। খুব বেশি গ্রামে আসিনি আমি, এবার শীতে এসেছি। পুকুরের পানি কমে গেছে অনেক। পুকুরের ঐ উঁচু জায়গাটায় ফুলকপি আর মুলো লাগিয়েছে মেজো চাচা। মেজো চাচার একটা ছোট্ট ডিঙ্গি আছে। ঐ ডিঙ্গিতে করেই চাচা ফুলকপির পরিচর্যা করত। আমি, দি আর সিমা আপা বিকেলে সেটা দেখতাম, কোনোদিন কোনোদিন কোঁচড় ভরে মুড়ি নিয়ে বসে যেতাম।

আমার মা ছিলেন খুব ডাটি মহিলা। মা কুঁচি দিয়ে শাড়ি পরে সেজেগুজে আমাদের খোলাটে বসত। কেউ একজন চেয়ার পেতে দিত। আর সাপটা শাড়ি পরা মেয়েরা তখন কুলোয় ধান উড়াত। মা ওদের সাথে অনেক গল্প করত, জীবন সম্পর্কে নানা উপদেশ দিতো। ওরা খুব মনোযোগ দিয়ে সে শুনত আর ধানের কাজ করত। এরা সবাই ছিল মজুর মহিলা। ধানের এ ব্যস্ত সময়টায় মা আমার দিকে খুব নজর দিতেন না। সন্ধ্যায় গ্রামগুলো যখন খুব শব্দহীন হয়ে পড়ত আর শেয়ালগুলো হঠাৎ হঠাৎ ডেকে উঠত তখনই কেবল মায়ের কাছে ভিড়তাম।

এ গ্রামের বর্ণনা করা আসলে খুব কঠিন। শহরের মত খুব সাজানো গোছানো ছিল না, মাটির ঘরগুলো এখানে ওখানে ছড়ানো ছিটানো। বেশিরভাগ ছনের চাল। টিনের চালকে তখন বড় গেরস্থ বাড়ীর চিহ্ন ধরা দিত। গ্রামের দুই এক ঘর পাকা দালানের মালিকদের মধ্যে দাদা ছিলেন একজন। তবে সে দালান আধাপাকা বলাই ভাল। মেঝে মাটির ছিল, সেই মেঝে দাদা বাড়ির ঝি আলেয়া দাগহীন ভাবে নিকিয়ে রাখত। বাড়ির এক পাশে ছিল গাছে ঢাকা জঙ্গল,অন্য পাশে সেজদাদার বাড়ি। এসব বাড়িগুলোর কোন সীমানা প্রাচীর ছিল না, বাড়িগুলো ছিল খুব লাগোয়া। ওরা এমনভাবে হেঁসেল, গোয়াল আর ঘর তুলত সীমানার কাজ হয়ে যেত। গ্রামে গেলে দি আর সিমা আপার সাথেও থাকা হত আমার । মাঝে মাঝে গ্রামের ছেলেমেয়েদের সাথে বাড়ির পিছনে পড়ে থাকা ভেটুল ফল, তুলে তুলে গুনতাম। সজনে গাছের রস শুকিয়ে যখন জমে যেত সেই দিয়ে মাংস রেঁধে খেলতাম। দুপুরবেলাটায় আমি থাকতাম খোলাটের খড়ের গাদায়। গাদার একেবারে উপরে উঠে বসে থাকতাম। প্রথমদিকে খড়ের গাদায় ওঠা খুব কঠিন ছিল আমার জন্য। কিন্তু কামাল ভাই একদিন শিখিয়ে দিল। তারপর থেকে খুব ভাল পারতাম। কেউ বকলে বা যখন খুব হারাতে ইচ্ছে করত ঐ গাদাটার উপর বসে থাকতাম। মাঝে মাঝে ঘুমিয়েও পড়তাম। নাক গুজে ধানী গন্ধ নিতাম, মাঝে মাঝে গাদার বিচালি থেকে খুটে খুটে ধানের দানা খেতাম।

শীতের ধান কাটা শেষ হয়ে গিয়েছিলো। তখনও মাড়াই মেশিন আসেনি, গরু দিয়ে রাতের বেলায় সেগুলো মাড়াই চলত খোলাটে, গাদায় বসে সে দেখতাম । ধান মাড়াই হলে একটা একটা করে গাদা বাড়ছিল, যেন গাদা নয় আমার খেলার জায়গাটাই বাড়ছিলো। আমি এ গাদা থেকে ও গাদায় উঠতাম। আর ততদিনে খুব দক্ষও হয়েছি গাদায় ওঠায়। একদিন রাতে আমাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। সবাই নাকি খুব খুঁজছিল। তারপর কে যেন আমাকে চুল ধরে হড়হড় করে টেনে নামালো গাদা থেকে। সেদিন বাবা এসেছিল শহর থেকে। বাবা প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে আসতো। আর নামানোর পর মা আমাকে দিয়েছিল জোরে চড়। চড় খেয়ে সেদিন খুব অভিমান হয়েছিল, চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখেছিলাম আমার এই চড় খাওয়াটা বাড়ির সবাই হা করে দেখছিল। ভীষণ লজ্জা করছিল সবার সামনে যেতে। আমরা দাদীর ঘরে ঘুমাতাম। ঘরে এসে লেপের ভেতর ঢুকে পড়লাম। তখন ঘরে কেউ ছিল না, দাদীর একটা খাসী বাঁধা ছিল সে ঘরে। আমি খাসিটার দিকে তাকিয়ে অনেক্ষন কেঁদে ঘুমিয়ে গেলাম। দাদী এরকম অনেক গরু ছাগল হাস মুরগী পুষত। এসব হাস মুরগির আবার ভাগ ছিল। খাসিটা ছিল চাচাতো ভাই ফরিদের। আমার জন্য দাদী লাল রঙা চিনে হাঁস রেখেছিল।

গ্রামের সে সময়টায় সকালে উঠে রোজ চলে যেতাম পুকুরের মেহগনির পাড়ে। আমাদের স্কুলের ছুটি ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসছিল আর আমার খুব ভয় করছিল ফলাফল নিয়ে। আমার সমাজ পরীক্ষা খুব বাজে হয়েছিল। কিন্তু বাড়িতে এসে বলেছিলাম ভাল হয়েছে। প্রতিদিন ভাবছিলাম আজ নামাজ পড়ে আল্লাহ্‌কে বলব আমাকে যেন বেশি নম্বর পাইয়ে দেয়। কিন্তু সে সময়ই হচ্ছিল না, আমাকে খড়ের গাদায় খুব ব্যস্ত থাকতে হত। সন্ধ্যায় কোন কোন দিন ফরিদ রহমান ছোলা পোড়াতো। ছাইয়ের ভেতর থেকে খুটে খুটে ওদের সাথে সেই ছোলা খেতাম। দি আর সিমা আপু একসাথে ঘুরত। দি ছিল আমার বড় বোন। আমি সিক্সে আর দি নাইনে পড়ত সেসময়। সিমা আপা ছিল আমাদের চাচাতো বোন। দি এর থেকে এক বছরের বড়। তবুও সিমা আপা কোন এক অদ্ভুত কারণে ক্লাস সেভেনে পড়ত। কামাল ভাইয়ের কথা বলা হয়নি। কামাল ভাই বাবার চাচাতো বোনের ছেলে, কামাল ভাই তখন ক্লাস টেনে। কামাল ভাইদের বাড়ি বেশ কাছেই ছিল। দাদীর সাথে আমরা মাঝে মাঝে রাতে কামাল ভাইদের বাড়িতে যেতাম। কামাল ভাইয়ের বাবা গান করতেন। আমরা গান শুনতে যেতাম। আমাদেরকে হেঁটেই যেতে হত। ভীষণ অন্ধকার পথ মাড়িয়ে যেতাম আমরা। অজানা ভয়ে চোখ বন্ধ করে দাদীর হাত শক্ত করে চেপে রাখতাম। রাস্তার পাশে অনেক পুকুর পড়ত, দূর থেকে দেখলে ওর মাঝে কে যেন হ্যারিকেন জ্বালিয়ে রেখেছে এরকম মনে হত। দাদী বলত ওগুলো নাকি জ্বীন। কামাল ভাইদের বাড়ি গেলে এরকম জীন চোখে পড়ত আর আমি জ্বীনদের দেখলেই চোখ বন্ধ করে ফেলতাম। বড় হয়ে অবশ্য জেনেছি ওগুলো মিথেন গ্যাস ছিল।

সেদিন রোববার ছিল,সন্ধ্যেই বিচালি গাদায় শুয়ে আছি। খেজুরের পাতা দিয়ে আমার খেলার ছোট পাটি বুনছি। হঠাৎ খুব হুটোপুটি শুনলাম। ভয়ে স্থির হয়ে গেলাম। বিচালি গাদাটা খুব নড়ছিল আর ফিসফিস শব্দ শুনছিলাম। একসময় মনে হল, এটি অবশ্যই জীন নয়। আমি একটু নিচু হয়ে দেখলাম। তারা দুজন মানুষ দুজনের উপর শুয়ে খুব ধস্তাধস্তি করছে । এদের একজন সবুজ শার্ট পরা। সবুজ সার্টের কারনে ছেলেটিকে কামাল ভাই মনে হল কিন্তু মেয়েটিকে আমি কিছুতেই চিনতে পারলাম না। ওরা আমাকে দেখে ফেলতে পারে এই ভয়ে আমি গাদার উপর শুয়ে রইলাম। সকালে উঠে আমার কৌতূহল খুব বাড়ছিলো। আমার তখন এগারো বয়স, আমি কুঁচি দেওয়া ফ্রক পরতাম। মা একদিন দেখি আমার সব ফ্রকে হঠাৎ ঝালর বসিয়ে দিল। এরপর থেকে ঝালর বসানো ফ্রকই আমার ভাল লাগত, ঝালর ছাড়া বরং খুব অস্বস্তি হত। আমি মনে মনে খুঁজছিলাম মেয়েটি কে হতে পারে। এর কদিন পর আমরা মেহগনির গুড়িটায় বসেছিলাম। দি আর সিমা আপা বসেছিল। আমি একটু দূরে বসে কলার খোলে ভেটুল ভাসিয়ে খেলছিলাম, আসলে আমার কান খাঁড়া ছিল প্রচণ্ড । আমি শুনতে পাচ্ছিলাম সিমা আপা কামাল ভাইকে নিয়ে বলছিল। কামাল ভাই গ্রামের সেরা ছাত্র। কামাল ভাই নিশ্চয়ই ফার্স্ট ডিভিশন পাবে। কামাল ভাই ভাল ফুটবল খেলে। তারা কামাল ভাইকে নিয়ে বলছিল আর হেসে গড়িয়ে পড়ছিল। আমার মনে হল সীমা আপা কামাল ভাইকে ভালবাসে। খুব রাগ হচ্ছিল সেদিন আমার। বিকেলে যখন আবার মেহগনির উপর বসে পুকুরের জল দেখছিলাম, মেজো চাচা তখন সেদিনের ঐ খড়ের গাদার ঘটনার মত সবুজ শার্ট পরে ফুলকপিতে পানি দিতে ডিঙিতে চড়েছিল। আমার ভীষণ খটকা লাগলো। আমি কিছুতেই মেলাতে পারছিলাম না। নারী পুরুষের রহস্যময় সম্পর্ক নিয়ে আমার কিছুটা আন্দাজ হত, তবে খুব পরিষ্কার কোন ধারণা ছিল না । গ্রামের আর কার কার অমন সবুজ শার্ট আছে মনে মনে খুঁজছিলাম। নিজেকে ভীষণ একটা ডিটেকটিভ মনে হচ্ছিল। এই গোয়েন্দাগিরি নিয়ে পরেরদিন গুলো আমি খুব ব্যস্ত হয়ে পড়লাম আর মাঝে মাঝে সময় পেলেই পরীক্ষার ফলের জন্য দোয়া চাইছিলাম। দশদিন পর পরিক্ষার ফল, বাবা এসে বললেন সামনের শনিবার আমাদের নিয়ে যাবে। চলে যাবার কথা শুনে খুব মনে খারাপ হল। বাড়ির পাশেই মেজো চাচা টমেটো লাগিয়েছিল। সেগুলো সবে পাকতে শুরু করেছে। আমি মাঝে মাঝেই খিদে পেলে ক্ষেতে শুয়ে সেগুলো খেতাম আর এক একটা টমেটো মাখনের মত নরম হয়ে মুখের ভেতর যখন গলে যেত, পৃথিবীটা ভারী সুন্দর মনে হত। টমেটো গাছগুলো ছেড়ে চলে যেতে হবে ভেবে ভীষণ খারাপ লাগছিল।

আমার গোয়েন্দাগিরি এর মাঝে চলছিল। কামাল ভাইয়ের দিকে খুব নজর রাখতাম। কামাল ভাই ছিল অনেক লম্বা, গোঁফের রেখা ছাড়িয়ে দাঁড়ি হয়েছে। কামাল ভাইকে আমার গ্রামের সবচেয়ে সুপুরুষ মনে হত। কামাল ভাইয়ের বুকের ছাতিও ছিল খুব চওড়া। মাঝে মাঝেই মনে হত কামাল ভাইকে জড়িয়ে ধরি আর ঐ ছাতিটাকে তক্তপোশ ভেবে ওর উপর ঘুমিয়ে পড়ি। এসব ভাবনা আমার কেন আসত জানি না। আর ভাবলেই রক্তরা খুব চঞ্চল হয়ে যেত। ম্যাট্রিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কামাল ভাই প্রাইভেট পড়তে যেত আর মাঝে মাঝে দি আর সিমা আপুর সাথে গল্প করত। দি আর সিমা আপুই বেশি হেসে কথা বলত। কামাল ভাই কিছুটা গম্ভীর, সে বেশি কথা বলত না। কামাল যেদিন কথা বলত সেদিন মনে হত কামাল ভাইয়ের সবুজ শার্ট ধরে টেনে নিয়ে আসি। এই সবুজ শার্ট নাকি এক এনজিও থেকে দিয়েছিল। গ্রামের অনেক ছেলেরই এই শার্ট ছিল । এইসব গল্পের দলে আমাকে ওরা নিত না, ওরা আমাকে খুব ছোট ভাবত। কাছে গেলে অকারনেই বকা ঝকা করত। সবচেয়ে বেশি বকত আমাকে মা। মা বকলে যখন আমার কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করত না, আমি ক্ষেতে চলে যেতাম। এই শীতের দিনেও গায়ের মেয়েরা সেখানে ব্লাউজ আর পায়জামা পরে হাঁটত। ওরা রাস্তায় পড়ে থাকা ধান খুঁটিয়ে আনত। কোন কোন দিন সকালে মা উঠতে দেরি করলে ওদের সাথে বেরিয়ে যেতাম আমি। সকালে বিলে শামুক কুড়াতাম। খুব আশ্চর্য এ গ্রামে কোন নদী ছিল না। বিলটাকে গাঁয়ের লোকেরা গাঙ বলত। শামুকগুলো ইট দিয়ে ছেঁচে হাঁসকে খাওয়াতাম আমরা। আর এসবের জন্য বাড়ি এসে আমাকে মার খেতে হত। একদিন মাকে খুশি করতে আমি ওদের সাথে বেরিয়েছিলাম। ওরা ছোলার ক্ষেতে যেয়ে ডাল কেটে শাঁক তুলছিল। ছোলা শাঁক মা খুব ভালবাসত। আমি যতটা পারি, কোঁচড় ভরে শাক নিলাম, তারপর সারাদিন ওদের সাথে ঘুরে বাড়িতে আসলাম। আমার ধারনা ছিল মা খুব খুশি হবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই দেখি একজন মহিলা আর পুরুষ আমাদের উঠোনে এসে খুব ঝগড়া শুরু করল। আমি নাকি তাদের সব গাছ উপড়ে তুলে এনেছি। মা ওদের সব গাছ ফেরত দিল, কটা নোট গুঁজে ক্ষতিপূরণও দিল আর আমাকে বলল আর কোথাও না যেতে। আলেয়াকে বলল আমাকে চোখে চোখে রাখতে। সেদিন মা আমাকে মারল না, মাকে খুব উৎফুল্ল দেখাচ্ছিল। একটা আসমানি রঙ জর্জেট শাড়ি পরেছিল মা । মা সবসময় জর্জেট পরত, আর হাওয়ায় শাড়ি উড়ে মায়ের ফর্সা পেট বেরিয়ে যেত, মখমল পেট ভীষণ সুন্দর লাগত দেখতে। মনে হত মায়ের পেটে চুমু খায় আর ভুম ভুম খেলি। মায়ের পেটে শব্দ করে অনেক ভুম ভুম খেলতাম আমি। তবে এখন খুব লজ্জা করে, আর মাও সরিয়ে দেয়।

আমার মাঠে যাওয়া নিষেধ, তাই তখন সময় কাটত ঐ মেহগনির গুড়িটায় আর খোলাটের খড়ের গাদায়। ধান মাড়াই শেষ, তাই রাতে দিনে কাউকে দেখা যেত না খুব খোলাটে। মাঝে মাঝে ধান মেলত আর হই হই বলে দূরে বসে কেউ পাখি তাড়াতো। সেদিন দুপুরে কবুতরের মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে খড়ের গাদায় আমার খাতা নিয়ে বসেছি। আমি একটা মাছের ছবি আঁকছিলাম সেদিন। আমি সেদিনের আওয়াজ পেলাম, গাদার উপর থেকে একটু উঁকি দিয়ে দেখি, মেজো চাচা আর আলেয়া। মেজো চাচাকে খুব ভালবাসতাম, চাচার উপর সেদিন খুব ঘেন্না হলো আমার। ওরা চলে গেলে আমি নামলাম আর মেজো চাচা-আলেয়া এইসব নিয়ে ভাবছিলাম। বিকেলে বাড়িতে এসে দেখি উঠোনে আলেয়া নির্বিকারভাবে রাতের তরকারি কাটছিল। আর মেজো চাচা চাচি দাওয়ায় বসে হেসে হেসে গল্প করছিল, যেন আজ দুপুরে কিছুই ঘটেনি। আমাদের চলে যাবার দিন এগিয়ে আসছিলো। আমি কামাল ভাইকে একটা চিঠি লিখলাম। তারপর সেটি আমার নোট বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখলাম। যেদিন চলে যাব, সেদিন কামাল ভাইয়ের টেবিল ক্লথের তলায় রেখে যাবো এরকম ভাবনা। রোজকার মত আমি, দি আর সিমা আপা শুয়েছিলাম। ওরা ভাবছিল আমি ঘুমিয়ে গেছি। আসলে আমি সব শুনছিলাম। দি বলছিল কামাল ভাইয়ের সাথে তার নাকি প্রেম হয়েছে। কামাল ভাই দি কে চুমু খেয়েছে। দি আরও অনেক বলছিল, আমি শুনছিলাম আর ক্রমেই অবাক হচ্ছিলাম। আমার খুব কান্না পাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল সবাই আমার সাথে লুকোছাপা খেলছে আর পুরো পৃথিবীর সবার প্রেমিক আছে শুধু আমি ছাড়া। দু দিন পর বাবা এসে আমাদের নিয়ে গেল। এ দুদিন কামাল ভাইয়ের সামনে যাইনি আর চিঠিটা টুকরো টুকরো করে পুকুরে ভাসিয়েছি।

২)
আমরা শহরে চলে এলাম। আমার ফলাফল ভাল হল, দি এর ফলাফলও ভাল হচ্ছিল। আমি দি কে ভীষণ হিংসে করা শুরু করলাম। তবে সে তার স্কুলের ফলের জন্য নয়। দি যেখানেই যেতো বন্ধু জুটিয়ে ফেলত। ছেলেরা সুন্দর রঙিন কাগজে চিঠি লিখে দি কে পাঠাতো। বাড়ির দরজায় বারান্দায় বাথরুমে ছাদে ছুড়ে মারত সেসব চিঠি। আমাদের বাড়ির দেয়াল জুড়ে দি প্লাস কতগুলো নাম লেখা ছিল। আমার গায়ের রঙ ছিল চাপা আর ব্রণগুলও বাড়ছিল খুব অদ্ভুতভাবে। আমার দিকে কেউ খেয়াল করত না। সবাই দি কে নিয়ে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু নিজেকে দেখতে ভাল লাগত আমার। আমি মাঝে মাঝে উদোম হয়ে আয়নার সামনে নিজেকে দেখতাম। আমি কুৎসিত না সুন্দর নিজে বিচার করতাম আর একটা ছাইচাপা আগুন বুকে নিয়ে রাত্রে ঘুমিয়ে যেতাম। আমার বান্ধবীদের অনেকেরই ছেলে বন্ধু ছিল। সেসময় প্রায়ই এ ও পালিয়ে যাচ্ছিল। পরে বুঝেছি যাদের সাথে পালাত এরা কেউ ভাল ছেলে ছিল না, এরাও আমার মত এ সময়টায় এক অদ্ভুত শুন্যতায় ভুগত। আর ছেলেগুলোও সে সুযোগে ওদের শুন্য হৃদয়ে ঢুকে পড়ত। রেবা দিপ্তি ভীষণ মেধাবি ছিল, একদিন ওরা আর ক্লাসে এলো না। এক মাস পর রেবা ফিরল কিন্তু ততদিনে বৃত্তির কোচিং থেকে ওর নাম কাটা গেছে। আর পালিয়ে যাওয়া মেয়ে মানে খুব বাজে মেয়ে এই ভেবে আমরা কেউ ওর সাথে কথা বললাম না।

খুব মন খারাপ হলে সে শুন্য সময়ে কামাল ভাইয়ের কথা ভাবতাম আমি। একদিন স্বপ্ন দেখলাম কামাল ভাইয়ের সাথে একটি পাহাড়ে উঠে আমি নাচছি । আর সেখানে কামাল ভাই আমাকে সিনেমার নায়কদের মত জড়িয়ে ধরছে। কামাল ভাইকে খুব দেখতে ইচ্ছে করত কিন্তু ধান আনা ঝামেলা বলে বাবা সব বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলেন। তাই কামাল ভাইকে আর দেখতে পেতাম না। এদিকে মা আর বাবার ঝগড়াটা ক্রমশ বাড়ছিল, শব্দের মাত্রা আমাদের বাড়ি ছাড়িয়ে আশেপাশের দু তিন বাড়ি অবধি পৌঁছে যেত। তখন খুব অসহায় বোধ করতাম। মা আমাকে একদিন দোকানে চিনি আনতে পাঠালেন। মা বরাবর ভীষণ দরদস্তুর করে বাজার করতেন। আমিও শিখেছিলাম কিছুটা। মায়ের মত চেষ্টা করলাম, আর মনমত দামে চিনি পেয়ে নাচতে নাচতে বাড়ি আসছিলাম। এই ছুড়ি তোর চিনি সব পড়ে গেলো বলে কেউ আমাকে কোন বাড়ির ছাদ থেকে কিছু বলছিল। কেউ ছুড়ি বললে আমার ভীষণ রাগ হত। আমি বিরক্ত হয়ে তাকালাম, আর ঠিক তখনি দেখি একটি ছেলে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে। চিনি ফেলার জন্য মা সেদিন খুব বকল আর বলল আমি নাকি একটা ধাড়ি মেয়ে হয়েও খুকিদের মত আচরণ করছি। আমার সেদিন নিজেকে ছুটি গল্পের ফটিক মনে হচ্ছিল আর ইচ্ছে করছিল গ্রামে চলে যাই আর সে খড়ের গাদায় লুকিয়ে থাকি।

ছেলেটি প্রায় আমার স্কুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। সে আমার পিছনে পিছনে আসত, হাসি দিত। কিন্তু কথা বলত না। ছেলেটির সাথে দেখা হলে খুব ভাল লাগতো। ছেলেটির নিয়েও একদিন সপ্ন দেখলাম আমি পাহাড়ের উপর তার সাথে নাচছি। এরকম স্বপ্ন দেখার কারনে আমার ক্রমশই নিজেকে চরিত্রহীন মনে হচ্ছিল কিন্তু চরিত্র হননের এই কথা শুধু আমিই জানতাম। ছেলেটির সাথে আমার চোখাচোখি বাড়ছিল, বাবা-মায়ের ঝগড়া উদাসীনতাও বাড়ছিলো। কিন্তু বাইরে বাইরে আমরা ছিলাম সুখি পরিবার। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ভয়াবহ শূন্যতা ছিল। বাবা যখন মাকে কুৎসিত গালি দিত আমার মনে হত আমি এক্ষুনি মরে যাই অথবা ঐ ছেলেটির সাথে পালিয়ে যাই। আমি ছেলেটির সাথে সংসারের নানা ছবি আকঁতাম, আজ ছেলেটি আমাকে বকেছে তারপর আদর করে মান ভাঙিয়েছে এরকম গল্প সাজাতাম। কিন্তু ক্রমেই বড় ক্লাসে উঠছিলাম আর পড়ার এত ব্যস্ততা ছিল যে ছেলেটির সাথে আমার আর পালানো হল না।

তারপর অনেকদিন কেটে গেল। আমি কলেজ থেকে ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসেছি। দি তখন কলেজ শেষে মেডিক্যাল ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে। কামাল ভাই এসেছে আমাদের বাড়িতে, ড্রইংরুমে অনেক্ষন বসে ছিল, আমরা কেউ যাইনি দেখা করতে। দি ও নয়। দি এর তখন সলিমুল্লাহ মেডিক্যেলের রবিন ভাইয়ের সাথে প্রেম। কামাল ভাই বলল, সে কলেজ থেকে সরাসরি এখানে এসেছে। ঝিনাইদাহ কেসি কলেজে পড়ে কামাল ভাই। আমাদের একটা জমি বর্গার ব্যাপারে তার মা তাকে পাঠিয়েছেন। কামাল ভাইয়ের গাতক বাবা অনেক আগেই কোথায় জানি নিরুদ্দেশ হয়েছেন। এসব শুনে মা দুঃখ প্রকাশ করছিলেন আর আমি পাশের ঘর থেকেই সবটা শুনছিলাম। একবার উঁকি দিয়ে দেখতে ইচ্ছে করল। ততদিনে ঢাকায় থেকে আমার চোখ অনেক ফুটেছে। কামাল ভাইকে সত্যি আমার গায়ের চাষা লোকগুলো শহরে আসলে যেরকম জবরজং জামা পরে প্রস্তুতি নিয়ে আসে, সেরকম মনে হল। তার যে বাচনভঙ্গি আর গলার স্বরে এতদিন মুগ্ধ হয়েছিলাম, সেটাও খুব বাজে আর গ্রাম্য মনে হল। আমি ভেবে অবাক হচ্ছিলাম এরকম একটি ছেলের প্রেমে আমি, দি আর সীমা আপা কিভাবে পড়েছিলাম। দি এর ঘরে উঁকি দিলাম, বললাম কামাল ভাই এসেছে। দি শুধু বলল কোন কামাল, যেন সে এ নাম কখনও শোনেইনি।
৩)
কামাল ভাইকে আমি আরেকবার দেখি আমার বিয়েতে। আমার বিয়েতে বাবা সব আত্মীয়কেই দাওয়াত করেছিলেন। নিচের তালায় ভাড়াটিয়া খালি করে তাদের থাকবার জায়গা করা হয়েছিল। আমি দেখলাম যবুথবু একটা মেয়েকে নিয়ে কামাল ভাই এলো। মেয়েটির পাশে আর কোলে একটি বাচ্চা। বাচ্চাটি খুব কাঁদছে, সর্দি গড়াচ্ছে। কে যেন বলল ভাজা খাবে, ভাজা দেও তো। একটা কটকটি ভাজার প্যাকেট পেয়ে বাচ্চাটি শান্ত হয়ে গেল। কামাল ভাইয়ের সাথে শেষ দেখাটা হয়েছিল বাবা মারা যাওয়ার পর। বাবা মারা যাওয়ার পর সম্পত্তি ভাগের বিষয়টি আসলো। আমাদের দু বোনের কারোরই এ ব্যাপারে খুব আগ্রহ ছিল না। তবু মায়ের পিড়াপিড়িতে যেতে হল। আমি, মা, বোন, আমাদের স্বামী আর বাচ্চারা রওনা দিলাম। এতদিন পরেও দাদা বাড়িতে খুব বেশি পরিবর্তন দেখলাম না। সেই আধাপাকা দালান, উঠোনের উপর বাধাঁনো শ্যাওলা জমা টিউবওয়েল সব সেরকম আছে। তবে পাড়ের রোয়াক কিছু খুইয়েছে টিউবওয়েলের। আমাদেরকে কে যেন ভিতর থেকে চেয়ার এনে দিল কিন্তু তার সংখ্যা যথেষ্ঠ ছিল না। আমরা মেয়েরা পিড়ির চৌকিতে বসলাম। মেজো চাচার ছেলে ফরিদ একটা বস্তায় করে কি আনল কোথা থেকে কে জানে। বস্তার ভারে ফরিদের পিঠটা একেবারে নুয়ে আসছিল, আমি অনেকক্ষণ ধরে ফরিদকেই দেখছিলাম। কামাল ভাই আসার শব্দে নজর ফিরল। আমাদের শৈশবের নায়ক কামাল ভাইয়ের সাস্থ্য ভেঙ্গেছে। কামাল ভাই যখন কথা বলছিলেন তার লাল দাঁতগুলো বেরিয়ে আসছিল । আলোচনায় আমাদের জ্ঞাতির সকলেই ছিল। আমরা দুবোন অনেক কিছু ছেড়ে দিলাম। পুকুর আর বাড়ির কিছুটা রাখতে চাইলাম, আমাদের এ উদারতার কারণ ছিল মেজো চাচা সেজো চাচা আরও গরিব হয়েছে। ফরিদরা কেউ লেখাপড়ায় এগোতে পারেনি, ব্যাবসাও জমাতে পারেনি। ওদের অবস্থা সত্যি করুন মনে হল। ছেলেগুলোর বিয়ে হয়েছে কিন্তু থাকার ঘর নেই, তাই দাদার ভিটের পাশেই সার সার লম্বা মাটির ঘর বেঁধে নিয়েছে ওরা। ওদের বউরা সেই ঘরের ফাক দিয়ে উঁকি দিয়ে আমাদের দেখছিল। খাওদাওয়া সেরে গ্রাম দেখতে বেরোলাম। আমাদের যাবার কথা সন্ধ্যে নাগাদ। তাই হাতে কিছু সময় ছিল। আমি ঘুরে ঘুরে সব দেখছিলাম। দি দেখলাম পুকুর পাড়ের মেহগনি গুঁড়িটার উপর বসল। মেহগনিটা এতদিনে পচেনি অবাক লাগছিল। নাকি অন্য একটা গুড়ি বসিয়েছে কেউ। অনেক ঘুরে আমরা খোলাটে এলাম। আমন উঠেছে, অনেক খড়ের গাদা সেখানে। আমার খুব ইচ্ছে করছিল ঐ গাদায় উঠে শুয়ে থাকতে। কিন্তু আমার মেয়ে মিঠি বাড়ি চলো বলে খুব জালাতন করছিল । বাড়ি ফিরলে ফরিদের বউ আমাদের চা দিল। খাবার জন্য আসলেই ওদের অনেক খরচা হয়েছিল। মাকে বললাম চাচা এলে দিয়ে দিতে। মা একটু রেগে বলল, আমাদের খেয়ে পরেই যখন বেঁচে আছে, এইটুকু খরচতা তো ওদেরই করবার কথা। মায়ের সাথে তর্ক না করে আমি দাদীর ঘরে শুয়েছিলাম। এ ঘরে এখন রহমান থাকে। বেশ সাজিয়ে নিয়েছে, পাঠার গন্ধ নেই। একটা কাচের আলমারির উপর রহমান আর ওর বউয়ের চুল ফুলিয়ে তোলা একটা ছবি দেখলাম। আমার স্বামী কাকে যেন মাছ আনতে পাঠিয়েছিল, আমরা তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সন্ধ্যেটা তখন উঠোনে পড়েছে। এর মধ্যে সন্ধ্যের লাইট জালিয়ে দিয়েছে এরা। এ গ্রামে এখন কারেন্ট এসেছে। যাবার সময় এক বস্তা সবজি, মাছ আর চালের ভিতর ডিম গুজে দেওয়া হল আমাদের। গাড়ির কাছে কামাল ভাইও এসে দাঁড়িয়ে ছিল। আমার স্বামীর পাশে কামাল ভাইকে অসম্ভব খাটো লাগছিল সেদিন আর তার বুকের ছাতিটাও যথেষ্ট প্রশস্ত মনে হচ্ছিল না। আমি ফরিদের মেয়ে রিম্পার হাতে কিছু নোট গুজে গাড়িতে উঠে পড়লাম।

৪)
শহরে এসে আমি কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ইদানিং আমার মেয়ে মিঠির আচরণ ক্রমশই সন্দেহজনক মনে হচ্ছিল । ও কিছু লুকাচ্ছিল দিব্যি বুঝতে পারছিলাম । সন্ধ্যায় ঘুমাতো আর রাতে জেগে থাকতো ও। ঘটনা উদ্ধারে আবার আমাকে ডিটেকটিভ হতেই হল। সোফার ফোমের ভেতর থেকে মিঠির সব চিঠি উদ্ধার করলাম। কিন্তু চিঠি গুলো যেভাবে ছিল সেভাবেই আমাকে রাখতে হল। আমি চাচ্ছিলাম মিঠি নিজেই সব বলুক কিন্তু সে তা করছিল না আর কিছু জিগ্যেস করলেও খুব বিরক্ত হচ্ছিল। আমি মিঠির উপর কড়া নজর রাখছিলাম। একদিন আমার পিয়ন এসে জানালো, গলির মোড়ে যে ছেলেটি সবসময় হুন্ডা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তার সাথে সে মিঠিকে দেখেছে। একদিন গোপনে ছেলেটিকে দেখতে গেলাম, ছেলেটি দেখতে অনেকটা আমার স্কুলে দাঁড়ানো সেই প্রেমিকের মতন, দাঁড়ানোর ভঙ্গিটা সেরকমই। আমার সেই প্রেমিককে পরে একদিন আমি দেখেছিলাম বড় বাজারের কাপড়ের দোকানে। মস্ত একটা ভুঁড়ি হয়েছে তার আর একটা কাঠের জল চৌকিতে বসে দোকানদারি করছে।

৫)
অনেকটা সময় কেটে গেছে তারপর। আমার মেয়ে মিঠি এখন ইঞ্জিনিয়ার। অনেক কষ্টে মিঠিকে সেবার ফিরিয়েছিলাম, মিঠি আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে চেয়েছিল। কি ঝক্কিটা যে গিয়েছিল সেসময়! মিঠি আমেরিকার লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে এম এস করছে, ওর স্বামী রাশেদ ও করছে। সহপাঠী ছিল ওরা। মিঠি যেদিন এসে সবটা বলল, সেদিনই হ্যাঁ বলেছি আমি। খুব মানিয়েছে ওদের, না বলবার কোন কারণই ছিল না। দি রা এখন কানাডা সেটলড হয়েছে। স্বামী সন্তান নিয়ে দি এখন খুব সুখী। দুলাভাই কামাল ভাইয়ের মত কেরানী নয়, রবিন ভাইয়ের সাথেই বিয়েটা হয়েছিল। আর আমিও আমার স্বামী ফরহাদকে নিয়ে বেশ সুখী।

রিটায়ারমেন্ট হয়ে গেছে আমার। পুরনো বন্ধুদের সাথে আলাপ করে কিছু সময় কাটে এখন। তবে রেবা দীপ্তি ওদের কাউকেই আর খুঁজে পাইনি। শুনেছি দীপ্তি ম্যাট্রিক পর্যন্তও যেতে পারিনি। রেবার তো কোন খবরই পেলাম না। ক্লাসে সবসময় আমার আগের রোল ছিল রেবার। ফেসবুক টেসবুক কত কি হয়েছে, সবাইকে কত সহজে পাওয়া যায়। তবু রেবাকে পেলাম না আর, ওকে খুব মনে পড়ে। কৈশোরের উদ্দাম রক্ত চঞ্চল অনুভুতিকে প্রশ্রয় দিতে যেয়ে, হারিয়ে গিয়েছে হয়ত রেবা। ভাবছি একটু লিখব এবার, সময়টাও কাটবে। মিঠি ও স্কাইপ করে না রোজ, ব্যস্ত থাকে। রেবার গল্পটাই ভাবছি লিখব। লিখব রেবার সে কাদামাখা পথে আটকে যাবার কথা। কৈশোর খুব রহস্যময়, আর যেন একটা কাদামাখা পথের মত। একবার যদি ছাড়ানো যায়, বাকিটা পথ অনায়াসেই হাঁটা যায়, কিন্তু পাকে একবার আটকে গেলে, শেষপর্যন্ত আটকেই থাকতে হয়।
রেবা তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে। ভাল থাকিস তুই। বইটা লেখা হলে উৎসর্গ পাতায় তোর নাম লিখে দেব। আর নীতিকথাও লেখা যাবে দু একটা।

“When we make choices, our life changes

নির্ঘণ্টঃ
সাপটাঃ এক প্যাচে শাড়ি পরা।
খোলাটেঃ বাড়ির পিছন দিক, যেখানে ধান শুকানো, মাড়াই হয়।
পিড়ি, দাওয়াঃ বারান্দা।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:৪৩
১৭টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×