শান্তির বদলে সংঘর্ষের ঘটনাই বর্তমান সভ্যতায় বেশি লক্ষ্য করা যায়। মানুষ তো নিজেদের সৃষ্টির সেরা হিসেবে বিবেচনা করে থাকে, কিন্তু বাস্তবে এই শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিফলন কতটা ঘটে সে ব্যাপারে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে ছোট্ট সৃষ্টির পাখি সংঘর্ষ এড়ানোর ক্ষেত্রে উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। আকাশে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ এড়াতে পাখিরা আগে থেকেই মৌলিক আইন ও কৌশল মেনে চলে। পাখিরা যখন দেখতে পায় তারা সংঘর্ষের দিকে এগুচ্ছে, তখন তারা একই পথে পেছনের দিকে ঘুরে যায়। বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, পাখিদের পরস্পরের মধ্যে কখনোই কোনো সংঘর্ষ ঘটেনি। তারা দৃশ্যত সব সময়ই সঠিক পথে ওড়ে। ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের দুর্ঘটনা এড়াতে সড়কে ডান পাশ দিয়ে মোটর গাড়ি চালানো হয়। পাখিরাও ডানদিক দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। আর সংঘর্ষ ঘটার উপক্রম হলে তারা একই দিকে ঘুরে যায়। কোটি কোটি বছর ধরে অনুসৃত পাখিদের নিরাপদ উড্ডয়নের এ ‘মৌলিক নিয়ম’ মেনে চললে আকাশে বিপুল ড্রোন উড্ডয়নের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ এড়াতে সহায়ক হতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে যে গবেষণা হয়েছে তার নেতৃত্ব দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মান্দিয়াম সিরিনিভাসন। তিনি বলেন, সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রোধে পাখিরা আগেভাগেই উড্ডয়নের মৌলিক নিয়ম মেনে চলার বৈপ্লবিক চাপের ভেতর ছিল্ তবে দুটো পাখি পরস্পরের বিপরীতে ওড়ার সময় কি ঘটে তা আগে কখনও পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। তিনি আরো বলেন, আমাদের নমুনায় দেখানো হয়েছে পাখিরা ডান দিকে চলে এবং পূর্ব নির্ধারিত অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কখনও কখনও তারা তাদের উচ্চতার পরিবর্তন করে। সিরিনিভাসন বলেন, যেহেতু দিন দিন বিমান চলাচল ব্যাপকভাবে বাড়ছে, সেহেতু মনুষ্যচালিত বা মানুষবিহীন বিমান পরিচালনায় স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করা জরুরি হয়ে পড়েছে এবং আমরা প্রকৃতির কাছ থেকে এ ব্যাপারে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। একটি টানেলে দুই বিপরীত মুখ থেকে দুটি পাখিকে ছেড়ে দেয়া হলো এবং অতি দ্রুত গতিসম্পন্ন ক্যামেরার সাহায্যে তাদের উড্ডয়ন ধারণ করা হলো।
বিভিন্ন ধরনের দশটি পাখির সাহায্যে এমন শতাধিক ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়, কিন্তু সেখানে কোনো ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করা গেছে যে, পাখিরা কদাচিত একই উচ্চতায় ওড়ে। তারা ভিন্ন ভিন্ন উচ্চতা দিয়ে ওড়ে। প্রতিটি পাখির উঁচু বা নিচু দিয়ে ওড়ার যেন নিজস্ব অগ্রাধিকার রয়েছে। হয়তো উত্তরাধিকার সূত্রেই তারা নিজস্ব উড্ডয়ন পথের উচ্চতা নির্ধারণ করে থাকে।
পাখিদের নিয়ে গার্ডিয়ানে প্রকাশিক এই গবেষণাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে হয়েছে আমাদের কাছে। মনুষ্য সমাজে তো বর্তমান সময়ে সড়কে, নৌপথে ও আকাশ পথে লক্ষ্য করা যায় নানা সংঘর্ষের ঘটনা। এতে মানবজীবনে অশান্তির মাত্রা বাড়ছে এবং বাড়ছে আমাদের প্রিয় এই পৃথিবীর সংকটও। বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, অনাকাক্সিক্ষত নানা সংঘাত ও সংঘর্ষের মূলে রয়েছে মৌলিক নীতিমালা ও আইনকানুন না মানার প্রবণতা। অথচ পাখিরা মৌলিক আইন ও কৌশল মেনে চলার কারণে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতে সক্ষম হচ্ছে। এখন তো পাখিদের জীবন-যাপন থেকে মানুষদের অনেক কিছুই মেখার আছে। ফলে এখানে একটি প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে- সংঘাতময় বর্তমান সভ্যতায় মানুষকে কি পাখির চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলা যায়?
বিঃদ্রঃ- ছবিগুলু ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৭ দুপুর ১:৫৬