somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইঁচড়ে পাকা ছেলেবেলা ৩- নীল ছবির গল্প ( ১৮ পিলাচ, বাচ্চারা দূরে থাকো):D

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্বের লিঙ্ক এইখানে
১ম পর্ব নিষিদ্ধ জ্ঞান অর্জন ও চটি পর্ব :D
২য় পর্ব বাল্যপ্রেম এবং একজন ব্যর্থ প্রেমিক :((

নিষিদ্ধ জ্ঞান অর্জন করতে গিয়ে প্রাপ্তবস্কদের বই নিয়ে বমাল ধরা খাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিলাম এই লাইনে আর না । দুষ্টু বই পড়ার কারণে আমার ওপর যে দমন পীড়ন চালানো হয়েছিল তাতে আমার জীবন মোটামুটি ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছিল । তাই জ্ঞানার্জনের বাসনাকে জালাঞ্জলি দিয়ে দিলাম ।

কিন্তু অজানাকে জানবার এবং অদেখারে দেখবার যে এক অদম্য বাসনা আমাদের ভিতরে থাকে তাকে এত সহজে দমন পীড়ণ চালিয়ে ক্ষান্ত করা যায় না । বিশেষ করে যদি তা হয় নিষিদ্ধ কিছু সম্পর্কিত তাহলে ত কথাই নেই ।
আমি যখনকার কথা বলছি তখন টিভি,ভিসিআর এত সস্তা ছিল না । তখন আমাদের এলাকায় কয়েকটি বাড়িতেই শুধু টিভি ছিল,তাও সাদাকালো ।

আমাদের বাসায় ঠ্যাংওলা কাঠের বাক্সের ভেতর বিশাল গোবদা সাইজের একটা টিভি ছিল,ওইটার বডিও ছিল কাঠের । তাতে মাঝে মাঝে ছবি না আসলে চড় থাপ্পড় মারা হত । রান্নাঘর থেকে ডালের চামচ এনেও মাঝে মাঝে গুঁতানো হত । যাইহোক এরপর একটা ‘ফুনাই’ ব্র্যান্ডের ভিসিপি কেনা হল । সেটার হেড আবার একটু পর পরই স্যাভলনে ভেজানো ন্যাকড়া দিয়ে মুছতে হত । টিভি এবং ভিসিপির ওপর মুরুব্বিদের কড়া নজরদারি থাকায় নিজের ইচ্ছামত কিছু দেখা ছিল অসম্ভব ব্যাপার । অবশ্য বিটিভি ছাড়া অন্য কিছু দেখাও যেত না ।

তখন ফুটবল খেলার প্রতি মারাত্মক ঝোঁক ছিল সবার । কায়সার হামিদ,আসলাম,সাব্বির এরা তখন ছিল সাঙ্ঘাতিক জনপ্রিয় । আবাহনী মোহামেডান খেলা হলেই পাড়ায় পাড়ায় বিভিন্ন শ্লোগান শোনা যেত,যেমন-

পানির তলে ট্যাংরা,আবাহনী ল্যাংড়া ’ অথবা

ইলিশ মাছের তিরিশ কাঁটা বোয়াল মাছের দাড়ি, মোহামেডান ভিক্ষা করে আবাহনীর বাড়ি

এরকম ফুটবল ম্যানিয়ার সময়ে পাড়ায়-মহল্লায় প্রায়ই বিভিন্ন ফুটবল টুর্নামেন্ট হত । এগুলোতে আবার পুরস্কার হিসেবে কাপ,শীল্ড ইত্যাদি দেয়া হত । তবে সবচে মজা হত কিছু কিছু সময় এইসব খেলাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের খাওয়া দাওয়া ও আনন্দ-ফুরতি যেমন মাইকে গান বাজানো, আনন্দ মিছিল ইত্যাদি । তবে খেলাকে কেন্দ্র করে যে পড়া-মহল্লায় মারামারি এবং বাড়াবাড়ি হত তাও কিন্তু কম না ।

যাই হোক যে প্রসঙ্গে ছিলাম । একবার আমরা পোলাপাইনরা একটা খেলার টুর্নামেন্ট ছাড়লাম,এলাকার বড় ভাইদের সহায়তায় । খেলা ভালই জমল । ফাইনালে কলেজ পাড়াকে হারিয়ে আমাদের টিম চ্যাম্পিয়ন হল । শীল্ডের পাশাপাশি বোনাস পুরস্কার যেটা পেলাম তা হচ্ছে এলাকার বিশিষ্ট চাউলের আড়ৎদার মকবুল হাজী খুশী হয়ে আমাদের খানাপিনার জন্য একটা খাসী দেবার ঘোষণা দিলেন ( কয়দিন পরই পৌরসভার নির্বাচন ছিল,আর তার সেখানে কমিশনার প্রার্থী হবার কথা ছিল ) । যাই হোক খাসী পেয়ে আমরা আনন্দে যাকে বলে একেবারে আত্নহারা হয়ে গেলাম । একটা খানাপিনার আয়োজন করার পরিকল্পনা নিলাম । সাথে সাথে বিনোদনের ব্যাবস্থা করার মহা পরিকল্পনা নিলাম ।

মাইক ভাড়া করলাম তাতে গান বাজানো হবে । বাবুর্চি ঠিক করা হল । ভেন্যু ঠিক করা হল আমার বন্ধু রোকনদের বাসায় । কারণ তার বাবা মা দুইজনই চাকরি করে আর তার কোন ভাই বোনও নাই । নিরিবিলি ফ্যামিলি ।
সেই সময় দোকানে টিভি ভিসিপি ভাড়া পাওয়া যেত । বিনোদনের জন্য আমরা যথারীতি টিভি এবং ভিসিপি ভাড়া করলাম । প্ল্যান হল যে রান্নাবান্না চলার সময় আমরা ভিসিপিতে ছবি দেখবো,তারপর দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর আরেক প্রস্থ সিনেমা দেখা হবে । প্রতিটি ভিডিও ক্যাসেটের ভাড়া ছিল দশ টাকা করে । তিনটি নিলে বিশ টাকা । আমরা দুইটা হিন্দি আর একটা ইংরেজী সংলাপ বিহীন চলচ্চিত্র নিলাম । আমি এই ঘটনার আগে কখনও এই ধরনের চলচ্চিত্রের সাথে পরিচিত হউয়ার সু্যোগ পাইনি । কাজেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলাম সেই মাহেন্দ্র ক্ষণের জন্য ।

কিন্তু কাবাবের মধ্যে হাড্ডির মত উটকো ঝামেলা হয়ে ওইদিন সকালেই গ্রাম থেকে রোকনের বড় চাচা এসে হাজির । আমরা প্রায় পনের - ষোলজন পোলাপাইন যখন হই হুল্লোরে মত্ত, ঠিক ওইসময় বগলের তলে ছাতা নিয়ে উনি এসে হাজির । কাজেই খালি বাড়ীতে নীল ছবি দেখার যে পরিকল্পনা তা বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়লাম ।
তিনি এসেই হাঁকডাক শুরু করলেন । মাংস রান্নার অইখানে গিয়ে টেস্ট করার নামে বাবুর্চির কাছে থেকে একগাদা মাংস নিয়ে মজা করে খেলেন । বাসায় কেউ না থাকায় আমরা ভিডিও ক্যাসেটগুলি লুকানোর প্রয়োজন মনে করিনি । এখন বড়চাচার আগমনে ভাল বিপদে পড়লাম । তিনি বাসার ভিতরে গিয়ে টিভি ভিসিপি দেখে ব্যাপক খুশি হলেন । রোকনকে ডেকে ভিসিপি চালু করতে বললেন ।
এখন রোকন পড়লো বিপাকে । ভিসিপির ওপরেই তিনটি ক্যাসেট সাজানো। বড়চাচা খুশি হয়ে ক্যাসেট গুলি নিয়ে নড়াচাড়া করতে লাগলেন । মনে হয় এর আগে উনি ভিসিপিতে কোন সিনেমা দেখেন নাই । রোকনকে ভিসিপি চালু করতে বলে উনি আয়েস করে বসলেন । রোকন তার চাচাকে বলল যে এইটার হেডে ময়লা জমছে । পরিষ্কার করতে হবে । স্যাভলন আর ন্যাকড়া আনার ছুতায় সে চাচাকে বসিয়ে বাইরে এল আমাদের সাথে পরামর্শ করতে ।

এমন সময় আমাদের ব্যাচের সবচে আবুল হিসেবে পরিচিত মালেক ঢুকল ওই ঘরে । আমাদের সাথে মিশলেও ওর বোকামীর জন্য ওকে সবসময় একটু দূরে রাখতাম আমরা । আর ডাকতাম মাল+এক বলে । ওইদিন ওকে আমাদের মুভি দেখা দলের সঙ্গে না রেখে পাম্প পট্টি দিয়ে বাবুর্চির সাথে হেল্পার হিসেবে লাগিয়েছিলাম । আমাদের মনে ভয় ছিল যে ওই ব্যাটা এসব দেখে গিয়ে সবাইকে বলে দিতে পারে ।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে রোকন বের হয়ে আসার একটু পরই বেকুবটা রোকনদের রান্নাঘরে যাচ্ছিল, লবণ আনার জন্য । বারান্দা দিয়ে ফেরত যাবার সময় তার চোখে পড়ল চাচা টিভির সামনে বসে আছেন । কৌতূহলী হয়ে উকিঝুঁকি মারতেই চাচার কাছ থেকে সমস্যা জানা গেল । সে ম্যাকগাইভারের মত চাচাকে বলল এইটা কোন সমস্যাই না,সে এখনই ঠিক করে দিবে ।
বেকুবটা ভিসিপি চালু করে দিল । দিবি তো দিবি সেই নীলছবির ক্যাসেটটাই দিল । রোকনের চাচা চশমা ছাড়া চোখে ভাল দেখতেন না। ওইটা চালু করার পর গরম দৃশ্যের অবতারনা ঘটল টিভিতে । সাথে বিকট আওয়াজে আহ উহ ইত্যাদি শব্দ শোনা গেল ।

আমরা যারা বাইরে এতক্ষণ রোকনের সাথে চাচাকে কিভাবে ম্যানেজ করব এই ব্যাপারে পরামর্শ করছিলাম তারা এই ধরনের আওয়াজে একেবারেই ভড়কে গেলাম । মালেক বেকুবটাও ঘটনার আকস্মিকতায় এমন হতভম্ব হয়ে গেছে যে ওইটা বন্ধ করতেও ভুলে গেছে । সবকিছু ছাপিয়ে শুনলাম চাচার গলা –
ওই রোকন,এইগুলা কি চাটেরে , এইরকম আওয়াজ কইরা কি চাটে ???”

রোকনের চোখে কম দেখা বয়স্ক চাচার প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য ওইখানে ততক্ষণে কেউ নাই । অবস্থা বেগতিক দেখে বেশির ভাগই পিটটান দিয়েছে । পরে শুনেছিলাম রোকনই দৌড়ে গিয়ে কোনরকমে ভিসিপিটা বন্ধ করে দিয়েছিল । চাচাকে সাতপাঁচ বুঝিয়ে কোনরকমে ঠাণ্ডা করা গেলেও আসল ঘটনা আর ধামাচাপা দেয়া যায়নি ।

এলাকায় বিদ্যুতের মত এই খবর ছড়িয়ে পড়ল । এলাকার খালা,চাচি,আন্টিরা একজন আরেকজনের ছেলের দোষ দিতে লাগলেন আর বলতে লাগলেন
আমার ভাল ছেলেটা অমুকের ছলের সাথে মিশে খারাপ হয়ে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি ……” ।

এই ধরনের অসামাজিক কর্মকাণ্ডে মদদ দেয়ার জন্য মকবুল হাজীর প্রতিপক্ষ সামসু কমিশনার হাজী সাহেবের নামে বিভিন্ন স্থানে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়ে বেড়াতে লাগলেন । হাজী সাহেবের ইলেকশনের বারোটা বাজল । আমরা আয়োজকরা বাড়িতে ব্যাপক উত্তম মধ্যম খেলাম । আর এই ধরনের আয়োজনের ব্যাপারে এলাকায় অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি হল।

সবচে বিপদে পড়ল রোকন । বাসার উত্তম মধ্যম,বকাঝকার পরও সে শান্তি পেল না। কারণ তাকে দেখলেই এলাকার পোলাপাইন অনেকদিন পর্যন্ত বলত

ওই রোকন,এইগুলা কি চাটেরে , এইরকম আওয়াজ কইরা কি চাটে? ??”

(চলবে-পাঠক ভাইয়েরা চাইলে আরও কিছু পর্ব লেখার ইচ্ছা আছে)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৩
৩১টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×