somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারীরা পতিতা হয় যে কারনে। ছেঁড়া ডায়রির পুরোনো পাতা হতে নেয়া।

০২ রা জুলাই, ২০১২ রাত ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সাইপ্রাসের রাজধানি নিকশিয়ার রাত একটা বাজে। বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছি আর পড়ছি। মজা করছি, হাতাহাতি করছি, আর পড়ছি। পড়ার চেয়ে আড্ডাবাজিই হতো বেশি। এতো সেই তারুণ্য সময় , একটা মেয়ের সামান্য মুখের হাসি হৃদইয়ে তোলপাড় করতো, ঝড় তুলতো, মুখে গান ধরাতো। উচু জায়গা হতে লাফ দেওয়া, জোরে গাড়ি রেইসে চালানো। হিরোইজমটাই প্রাধান্য পেতো তখন। সবারই ক্ষিদে পেয়েছে তখন। সিদ্ধান্ত হলো আমিই বাইরে যাবো, সাবমেরিন নামক এক স্বুসাদু চীজ স্যন্ডউইচ খরিদ করবো। আমি গাড়ি নিয়ে বের হলাম ডাউনটাউন নিকোশিয়ার দিকে। ফিরার পথে বন্ধুদের জন্যে সিগারেট কিনতে পুরাতন নিকোশিয়ার দিকে গাড়ি ঢুকালাম। সিগারেটের জন্যে আমি সুসু রোডে ঢুকলাম, দোকানটা সুসু রোডের একেবারে শেষপ্রান্তেই অবস্হিত। এই রোডটা নিকোশিয়ার রেড লাইট ডিস্ট্রিক। নিচু স্বভাবের লোকদের জন্যে সস্তা পারভার্ট আনন্দের রোড এটা। আমি গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি, আমার ডানে ও বামে কিছু মধ্য বয়সি, কেউবা বয়সী, কেউ অসুন্দরী, কেউ খুবই সুন্দরী (আসলেই সুন্দরী) বসে আছে খদ্দরের আশায়। গাড়িটা রাস্তার একেবারে শেষপ্রান্তে যেখানে সিগারেটের দোকান আছে তার একটু আগে পার্ক করলাম। সেখানে একটা মধ্যবয়সী নারী বসে বসে সিগারেট খাচ্ছে। হয়ত সে ভাবছে তার কাস্টোমার এসেছে, দোকান হতে কিছু কিনে তার সাথে কথা বলবে। কিন্তু না, আমি দোকান হতে আমার প্রয়োজনীয় জিনিসটা কিনে সোজা আমার গাড়ির কাছে গেলাম।

হায়! হায়! এখন কি হবে। আমি গাড়ির চাবিটা গাড়ির মধ্যে রেখে বাইর হতে লক করেছি। আমার এই অবস্হা আরোও অনেকবার হয়েছে, গাড়ির ভিতর চাবি রেখে বাইর হতে বন্ধ করে দিয়েছি। অবশ্য খুলতে পারি কোন তার বা স্ক্রু ডাইভার দিয়ে। কিন্তু সমস্যা হলো এই রেড রাস্তায় গাড়িতে কোন কিছু দিয়ে গুতাগুতি করছি, এটা দেখলে পুলিশ এসে প্রশ্ন করবে, চেক করবে। এই ঝামেলায় না গিয়ে আমি ভাবলাম পুলিশের জন্যে দাড়িয়ে থাকি, তারাই খুলে দিবে। পুলিশের টহল চলে খুব এই রাস্তায়। সাইপ্রেট পুলিশ খুবই হেল্পফুল।


হ্যালো! তোমার কি হয়েছে! সেই মধ্যবয়সী নারীটা বলে উঠলো। আমি শুরু হতেই তাকে ইগনোর করে চলছি।

আমিঃ গাড়ির চাবিটা ভিতরে রেখে বাইর হতে বন্ধ করেছি।

সেঃ তুমি চাইলে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি, আমি পুলিশে ফোন করি, ওরা এসে খুলে দিবে।
সেই মাঝ বয়সী নারীটা পুলিশে ফোন করলো।
আমিঃ ধন্যবাদ।

দশ পনের মিনিটের মতো চলে গেলো, পুলিশের দেখা নাই। প্রচুর ঠান্ডাও বটে।
সেঃ তুমি কফি খাবে?
আমিঃ হ্যাঁ
সে একটা চেয়ার টেনে এনে আমাকে বসতে দিলো। সামনেই কফি বানানো হিটার। শীতের মধ্যে কফি, দারুন! আমরা বসে আছি তার দরজার সামনে, রাস্তার পাশে। গাড়িগুলো সাই সাই করে যাচ্ছে, মোটরবাইক যাচ্ছে। আমরা কফি খাচ্ছি।
আমিঃ আমার জন্যে আপনি আপনার কাস্টোমার হারাচ্ছেন, তাছাড়া আমাকে দ্বারা আপনার কোনো লাভ ও হচ্ছেনা।

সেঃ একটা হাসি দিয়ে, কাস্টোমার কোন গুরুত্বপূর্ন নয় এই মূহুর্তে, তোমাকে সাহায্য করাটাই গুরুত্বপূর্ন এখন। বাইরে প্রচন্ড ঠান্ডা, তুমি অসুস্হ হলে তোমার মায়ের কাছে খারাপ লাগবে, সে অস্বস্তিবোধ করবে।

একথাটা আমার খুব লাগলো।

আমিঃ আচ্ছা আপনি এই কাজটা করেন কেন?

সেঃ তা শোনার জন্যে মন আছে তোমার?

আমিঃ হ্যাঁ!আছে।

সেঃ তুমি যদি পৃথিবীর সব পতিতাদের একত্রিত করে জিজ্ঞাসা করো, কেনো তারা এসব করে হয়ত দু বা একজন বলবে ওরা এটা পছন্দ করে। বাকি সবাই বলবে, কেউ তার ড্রাগের জন্যে, কেউ তার সন্তানদের লালন পালনের জন্যে, পরিবারের জন্যে, অনেককে জোর করে পতিতা বানানো হয়, প্রতারনা করে বানানো হয়। পরে এক সময় ওদের এসব করা ছাড়া আর কোন পথ থাকেনা। আমার চারটা ছোট ছোট শিশু আছে। একদিন আমার স্বামী কোথায় যেন চলে যায়, আমি তার দেখা পায়নি আর। এই শিশুদের জন্যে আমি জীবনে প্রথমে একটা কারখানায় কাজ শুরু করি। সেখানে আমার উপর কয়েকবার যৌননির্যাতন চালানো হয়, ধর্ষন করা হয়। আমার পড়ালেখা তেমন নেই। কেউ আমাকে ফ্রী শিক্ষা দিবেনা, তাছাড়া এখন আমার সময় ও নেই শিক্ষা গ্রহন করে তারপর চাকরী করবো। আমি গীর্জায় গিয়েছি, কিছুই পাইনি। আমি অনেক দরজায় দরজায় ঘুরেছি যাদের কাছ হতে সাহায্য পাবো মনে করতাম। কিছুই পাইনি। সর্বশেষ আমি এই পেশায় যোগ দিয়েছি কিছু না পেয়ে। এটলিস্ট আমি আমার সন্তানদের ভরনপোষন করতে পারবো।
আমি প্রথম তোমাকে যখন দেখি গাড়ি চালিয়ে এখানে আসছো, আমি মনে মনে বললাম হায়! খোদা এই ছেলেটা কেন তার লাইফটা ধংস করছে এই জায়গায় এসে। আমি খুশি হলাম এটা দেখে যে তুমি সোজা দোকানে গিয়ে ফিরে আসলে, আমি বা অন্য কোন নারীর দিকে তোমার ইন্টারেস্ট ছিলো না। তারপর দেখলাম তুমি সমস্যায় পড়েছো। আমি তোমার মায়ের কথা ভাবলাম, সে হয়তো তোমাকে নিয়ে চিন্তা করবে। তাই আমি সাহায্যের হাত বাড়ালাম। তারপর দেখলাম তুমি ঠান্ডার মধ্যে, আমি কফি বানালাম তোমার জন্যে।

এই সময়ের মধ্যে আমার কান্না চলে আসছে, আমি অনুভব করলাম আমি এক মগজহীন স্টুপিড।
মান্নাদের বিখ্যাত কফি হাউজ(২) গানটার কথা মনে পড়লো। কফি হাউজের প্রথম গানে জানি গ্রান্ডের গিটারিস্ট যিশু দা ঘুমিয়ে আছে কবরে। কফি হাউস(২) তে এসে মান্না দে বলছেন,

সব কিছু আগোছালো যিসু দার বেলাতে, নিজেদের অপরাধী মনে হয়,
পার্ক স্ট্রিটে মাঝ রাতে তার মেয়ে নাচে গায়, ইচ্ছে বা তার কোন শখে নয়।

এবং নচিকেতার "১২ টাকা"র গানটা।

সেঃতুমি তোমার মাকে ফোন করে বলো তুমি গাড়ির লক খুলবে, এবং একটু পরই চলে আসছো, তবে এই রাস্তায় যে আছো এটা বলোনা। তুমি জানো! আমার বড় ছেলের বয়স এখন ১৫।
আমি কান্নাকে আর চেপে ধরতে পারিনি, পানি গড়িয়ে পড়ছে।

আমিঃ আমি সাইপ্রিয়ট নই। আমি এখানে ছাত্র হিসেবে এসেছি।
সেঃ ও! তুমি বিদেশী ছাত্র। তুমিতো ভালই গ্রীক বলতে পারো।
আমিঃ না! আমি ভালো পারিনা এবং আমিতো বেশী কিছু বলিনি বরং আপনিই বলে গেছেন।

এরই মাঝে পুলিশ এসে গেছে। পুলিশ বলছে এটাতো তোমরাই খুলতে পারতে, আমাদের ডাকলে কেন? সে এসে বললো, তোমরা তাকে হয়রানী করবে দেখে সে খুলেনি। পুলিশ দরজা খুলে দিলো। ওদের ধন্যবাদ দিলাম।

আমার কফি শেষ হলো, আমি তাকে ধন্যবাদ দিলাম। বললাম খোদা তোমার মঙ্গল করুক। তুমি খুবই ভালো মানুষ। সেই নারীটার নাম ক্রিস্টিনা। বসয় হয়তো ৪০ এর আসে পাশে হবে। আমি আবার এখানে আসব বললাম।

সেঃ না! এই রাস্তাটা তোমার জন্যে নয়। তোমার কাজ হলো আরো ভালো কাজ করার।

আমিঃ না! আমি আসব এখানে আবার আপনার সাথে কফি খেতে। আপনিই এই রাস্তাকে দেখতে সুন্দর করেছেন। আমি চেস্টা করবো আপনার জন্যে একটা চাকরীর ব্যবস্হা করতে, যেন এই পেশাটা ছেড়ে দেন।

সেঃ তোমাকেও ধন্যবাদ, আমাকে এখান হতে বের করার চিন্তা করার জন্যে।

সেখান থেকে বের হয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি। আমি শিশুর মতো কাদতে থাকলাম। তার সাথে কথা বলার সময় আমি দেখেছি তার চোখের মধ্যে বেদনা, ব্যর্থতা, সন্তানের ভরনপোষন, তার একাকিত্ব, তার ভাঙ্গা স্বপ্নগুলো, সন্তানদের দায়িত্ব, তাদের শিক্ষা দেওয়া। সেওতো মানুষ, তারও কিছু স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু কেন এমন হয়। সে এমন জিনিস বিক্রি করে, যেটা কোন নারীই কোন ভিন পুরুষের সামনে দেখানোটা চিন্তাও করতে পারেনা। আমার সবচেয়ে বড় হতাসা হলো, আমার অজ্ঞতা। আমি এদের সব সময় অবজ্ঞা করি। অথচ! এক বেদনার্ত জীবন নিয়েও সে এখনো সজীব মায়ের মত মমতা নিয়ে এবং আসে অন্য কাউকে সাহায্য করার জন্যে।

অনেকদিন পর আমার হাতে কিছু টাকা হলো, আমি সেই জায়গায় গেলাম, গিয়ে দেখি সে আর নাই ওখানে। হয়তো ছেড়ে দিয়েছে এই জায়গা বা এই শহর বা ছেড়ে দিয়েছে এই পেশা।
(আমার বন্ধু জমীর আলীর ছেঁড়া ডায়রীর পুরান পাতা হতে কপি পেষ্ট)

৪৩টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×