somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেহেরজান ও আমাদের ঘৃণা-ভক্তির সংস্কৃতি

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিনেমাটা আমার দেখার সুযোগ হয় নাই। তবে আলোচনা-সমালোচনা-পর্যালোচনা ব্লগে ফেইসবুকে বেশ পড়লাম। আমাদের নিজেদের আইডিওলজির বিরূদ্ধে গেলে আমরা নিষিদ্ধ করার আওয়াজ তুলি। কারও কথা ধর্মের বিরুদ্ধে গেলে ধর্মপন্থিরা যখন নিষিদ্ধ করার দাবী তোলে, তখন আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলি। আবার প্রচলিত-প্রতিষ্ঠিত মতের বিপরীতে বাঙালী জাতীয়তাবাদ বা মুক্তিযুদ্ধ নিয়া কেউ কিছু করলে, নিষিদ্ধ করতে হবে--এমন মনোভাব আন্যের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করে এটা আমরা বেমালুম ভুলে যাই। যদি কারও মনে হয় মেহেরজানে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটছে, তাহলে সেটা নিয়া পর্যালোচনা হতে পারে। কোন কিছু নিষিদ্ধ করার দাবী রক্ষণশীলতার লক্ষণ। লিবারেল ডেমক্রেসির দাবী পর্যালোচনা। নানা মাত্রিক পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে গণমানুষ নিজেরাই ঠিক করে নিতে পারে কোনটা তারা গ্রহণ করবে আর কোনটা বর্জন করবে। তাতে গণমানুষের চেতনা পরিশীলিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের একটা গভীর আবেগর বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের আবেগের সাথে মিলিয়ে একটা ঘৃণার সংস্কৃতি গড়ে তোলা হয়েছে। আমরা পাকিস্তানিদের ঘৃণা করি। ভুলে যায় পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হতো (এখনো হয়) সামন্তবাদী এলিট ক্লাশের হাতে। একাত্তরের যুদ্ধে পাকিস্তানের জনগনের কোন স্বার্থ ছিলনা, সেটা ছিল রুলিং এলিট ক্লাশের স্বার্থ ও আভিজাত্যের গোড়ামি। যাহোক ওয়ার ক্রিমিনালদের বিচারতো হয় নাই। বিচারের উদ্দ্যোগও নাই। আমরা ওয়ার ক্রইমের আন্তর্জাতিক আদালতে যাইতে পারতাম। যাই নাই। ক্রিমিনালদের বিচার না করে কোলাবোরেটরদের (দালাল) বিচারের মুখোমুখি করে বলা হচ্ছে যুদ্ধপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে। প্রকৃত ক্রিমিনালদের যৌক্তিক বিচার না করে অযৌক্তিক ঘৃণার সংস্কৃতি জারি রাখা হয়েছে সর্ব কালের সব পাকিস্তানিদের জন্য। নাৎসীদের বর্বরতার জন্য আজকের জার্মানদেরও ইউরোপীয়রা ঘৃণা করে এমন কোন কথা আমরা শুনি নাই। বিপরীতভাবে মুক্তিযুদ্ধে সাহয্যের জন্য আরেকটা অযৌক্তিক ভারত-ভক্তির সংস্কৃতির জন্ম দেয়া হয়েছে। ভারত যদি কোন জাতিগুষ্ঠির স্বাধীনতার আকাঙ্খার প্রতি এতই শ্রদ্ধাশীল হত তাহলে পূর্ব ভারতের জাতিগুষ্ঠিগুলারে স্বাধীনতা দিয়া দিতো। কাশ্মীরিদের ভাগ্যকে জুলাইয়া রাখত না। হত্যা-ধর্ষণের যে বর্বরতা ভারতীয় আর্মি সেখানে প্রতিনিয়তই করছে, তার সাথে পাক আর্মির বর্বরতার কোন ভেদ নাই। পূর্ব পাকিস্তানরে পশ্চিম পাকিস্তান যেভাবে উপনিবেশ বানিয়ে রাখছিল পূর্ব ভারতও তেমনি পশ্চিম ভারতের উপনিবেশ। আর ভারত আমাদের কতটুকু বন্ধু সেটাতো নির্বাচার সীমান্ত হত্যা দিয়াই বুঝা যায়। রাষ্ট্র হিসেবে ভারত তার নিজ স্বার্থেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছে। সেটা ছিল আমাদের ও ভারতের যৌথ স্বার্থের যুথবদ্ধতা। আমাদের লক্ষ্য ছিল পশ্চিম পাকিস্তান হতে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন। আর ভারতের স্বার্থ ছিল পূর্ব পাকিস্তানকে আলাদা করে পাকিস্তানকে দূর্বল করে দিয়ে আঞ্চলিক রাজনীতিতে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে দাদাগিরি করা। কাজেই ভারতের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার ঋণ ভারে ন্যুজ হয়ে থাকার দরকার নাই। ঘৃণা-ভক্তির এ সংস্কৃতি দ্বারা ভারতের আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী রাজনীতিই লাভবান হয়।

আমরা ভারত-পাকিস্তান প্রভাব মুক্ত, ঘৃণা-ভক্তির সংস্কৃতি মুক্ত একটা স্বাধীন, সার্বভৌম, সম্মানজনক রাষ্ট্র চাই।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×