মানুষের ইতিহাস যতটা বাস্তবতার ততটাই মানবতার। সেই প্রেক্ষাপটে আসুন রোহিঙ্গাদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করি।
“এক সময় বার্মার আরাকান এবং বর্তমানে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের বাসিন্দা রোহিঙ্গাদের সে দেশের সামরিক সরকার বহিরাগত বাঙ্গালী বলে অভিহিত করে। যার ফলে এই সমস্ত নাগরিকরা একবার যদি বাংলাদেশে প্রবেশ করে, তাহলে ভবিষ্যতে মায়ানমারের কোন সরকার তাদের গ্রহণ করতে ইচ্ছুক হবে না, বরঞ্চ আগামিতে তারা আরো জোরালো ভাবে বাঙ্গালী অভিবাসনের অভিযোগ করবে এবং বিষয়টি দুটি দেশের সরকারের মাঝে জটিলতা আরো বৃদ্ধি করবে”।
“একই সাথে বাংলাদেশ জনসংখ্যার ভারে জর্জরিত একটি দেশ, এর আগেও এদেশে ১৯৭৮ সাল বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৫ লাখ-এর মত রোহিঙ্গা বাংলাদেশ প্রবেশ করে, কিন্তু পরবর্তীতে মায়ানমার সরকার বাংলাদেশর প্রদত্ত সংখ্যা মেনে নিতে অস্বীকার করে। এবং এই ঘটনার পর বেশ কিছু রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু বাংলাদেশে থেকে যায়”। এখন নতুন করে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর প্রবেশে দেশটির সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্য বিনষ্ট করবে”!
“ আবার অভিযোগ রয়েছে যে জামাত-এ –ইসলাম নামক সরকার বিরোধী দল রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে সশস্ত্র করছে, যার ফলে সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীর আর বাড়তে দিতে ইচ্ছুক নয়”।
আবার এর বাইরেও একটি বাস্তবতা রয়েছে,
“কিন্তু মায়নমারের বাস করা রোহিঙ্গার এই সব রাজনীতির অনেক বাইরে। একজন রাখাইন নারীকে রোহিঙ্গারা ধর্ষণ করেছে এই অভিযোগে আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণের মধ্যে রাখাইন এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে আরাকানী বাংলাভাষী এবং মুসলিম সংখ্যালঘু এই সব মানুষগুলোর জন্য নরকের দ্বার খুলে যায়।
“ তারা পালাচ্ছে, কারণ তারা জানে যে জীবন বাঁচাতে হবে আগে। সব সম্বল ত্যাগ করে কেবল একটা নৌকায় করে তারা এমন একটা রাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছে, যে রাষ্ট্রটি তাদের স্বদেশভুমি নয়, যেখানে তাদের কোন আত্মীয় নেই, কোন স্বজন নেই, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা পথ পাড়ি দেওয়া কষ্টকর, তাই নৌকায় করে নাফ নদী দিয়ে তারা আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে একমাত্র প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ আশ্রয়ের সন্ধানে পাড়ি জমাচ্ছে”।
জীবন বিপন্ন না হলে কেউ স্বদেশ ছেড়ে যেতে চায় না, তাই শূন্য হাতে তারা নৌকায় করে এদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। এখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে আরেক বাস্তবতা।
“তারা নৌকায় করে-এ পারে আসছে, কিন্তু পাড়ে ভিড়তে পারছে না, কারণ পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড, যারা মানবিক, কিন্তু রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের কাছে অসহায়। তারা যে টুকু পারছে নৌকায় কিছু খাবার দিয়ে আবার এই সব মানুষদের সমুদ্রে ঠেলে দিচ্ছে”।
“আর এ কারণে মানবতা আজ সমুদ্রে ভাসছে’ আমি জানি আমার এই বাক্যে অনেকে ক্ষুদ্ধ হবেন, এটা সত্যি যে এই ঘটনার জন্য বাংলাদেশ সরকার দায়ী নয়, মায়ানমারের দাঙ্গার জন্য বাংলাদেশের জনগণের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তোলা যাবে না। কিন্তু এখন আমাদের সামনে সুযোগ রয়েছে মানবতাকে তুলে ধরার, অথবা তাকে সমুদ্রে ভেসে যেতে দেওয়ার।