‘দারিদ্র্য ঘুচাও-বৈষম্য রুখো’ শ্লোগানকে সামনে রেখে সরকার দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (পিআরএসপি) সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছেন। দ্বিতীয় পিআরএসপিতে দারিদ্র্য বিমোচন করে বৈষম্য কমানোর বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আগামী ২০১৩ সালের মধ্যে দারিদ্র্যসীমা এবং চরম দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে ২৫ এবং ১৫ শতাংশ নামিয়ে আনার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীও দ্বিগুণ করা হবে। এছাড়াও গ্রামীণ অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান ও আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য ঋণ এবং প্রশিক্ষণ প্রদানে গুরুত্ব দেয়া হবে। উল্লেখ্য, বর্তমান পিআরএসপি দলিলে যেসব বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করা হবে; অর্থাৎ একটি সুগঠিত জাতীয় উন্নয়ন দলিল হিসেবে দ্বিতীয় পিআরএসপিকে সংশোধন করা হবে- এই মর্মে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে।
দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে পিআরএসপি’র কার্যকারিতা সম্পর্কে কারো মনে সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের যথার্থ সাফল্য বিভিন্ন কর্মসূচীর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের উপর নির্ভর করে। দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের প্রথম ও প্রধান পদক্ষেপ হতে হবে পল্লীর বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ও কৃষিকে আরো আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা। তবে সত্যিকার অর্থে দারিদ্র্য বিমোচন ও গ্রামীণ অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটাতে হলে আমাদের এমন একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে যেখানে পল্লীর সকল স্তরের জনগোষ্ঠীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা যায়।
এক সমীক্ষায় দেয়া যায়, পল্লী অঞ্চলের কৃষি পরিবারের সংখ্যা মোট পরিবারের শতকরা ৬৬.১৮ ভাগ। এই কৃষক পরিবারের মধ্যে ভূমিহীনের সংখ্যা শতকরা ৫২.৫৫, প্রান্তিক কৃষকের সংখ্যা শতকরা ২৩.৫৩ ভাগ, ক্ষুদ্র কৃষকের সংখ্যা শতকরা ১০.৫০ ভাগ, মাঝারি কৃষকের সংখ্যা শতকরা ১১.৬৫ ভাগ এবং বড় কৃষকের সংখ্যা শতকরা মাত্র ১.৬৭ ভাগ। এই কৃষক, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী এবং ভূমিহীন পরিবারের সিংহভাগ বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) ভুক্ত সমবায় বা উন্নয়ন প্রকল্পের সদস্য। তাই পিআরএসপি’র ভিশনগুলোর মধ্যে আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য ঋণ এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে স্বেচ্ছা প্রণোদিত ও আত্মনির্ভর আন্দোলন হিসেবে প্রসার ঘটাতে হলে বিআরডিবি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। অতীতের লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা শুধু এটুকুই বলতে পারি দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের অ্যাপ্রোচগুলোকে সরাসরি টার্গেট গ্রুপের উপর চাপিয়া দিলে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, তেমনি তার ফল হবে খুবেই সীমিত।
এ অবস্থায় আজকের বাস্তবতার আলোকে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে দেশকে খাদ্যে স্বনির্ভর করে তুলতে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে বিআরডিবি’র মাধ্যমে আরো দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। তাই নতুন পিআরএসপি’র সফল বাস্তবায়নে বিআরডিবি’র অগ্রণী ভূমিকা প্রত্যাশা করছি।