somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা মাস নিয়ে কিছু প্রাসঙ্গিক কথা

০৫ ই মে, ২০০৯ রাত ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পয়লা বৈশাখ এলেই আমরা বাঙালীরা একদিনের জন্য যেন খাঁটি বাঙালী হয়ে যাই। বৈশাখী পোশাক, বৈশাখী মেলা, বৈশাখী গান, বৈশাখী হাওয়ায় এবং খাওয়ায় আমরা সবাই মাতোয়ারা হয়ে যাই। ঢাকার রমনা বটমূলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়া দেশের সর্বত্রই পয়লা বৈশাখের নানা আমেজ পরিলক্ষিত হয়। রমনার বটমূলের অনুষ্ঠান তো ঐতিহাসিক। এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়েও একসাথে সবাই সমবেত হয়। ছেলে-মেয়ে, আবাল-বৃদ্ধার বর্ণিল পোশাকে চারদিক উজ্জ¦ল হয়ে ওঠে। মনের আনন্দে সবাই যেন একদিনের জন্যে বাঙালী হয়ে যায়। কথাটা বলার উদ্দেশ্য হলো যে, শুধু একদিনের জন্য এই মহামিলনে বাঙালীর বৈশাখের ঐতিহ্য রক্ষা হয় না। আমাদেরকে মনে-প্রাণে বাঙালী হতে হবে এবং আমাদের কাজ-কর্মেও তা প্রতিফলিত হতে হবে। দুঃখের বিষয় সেটা আমাদের জীবনে অনুপস্থিত এবং কর্মজীবনে অবিকশিত।

এই নিবন্ধক প্রায় তিনশত তরুণ-তরুণীর উপর বাংলার এই ঐতিহ্যময় মাসটির উপর একটা সমীক্ষা চালিয়েছিলো গত বছরের প্রথমদিকে। এরা সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি ধারী। পেশাজীবনে সবেমাত্র পা দিয়েছে। এদেরকে আকস্মিকভাবে বৈশাখ মাসের তারিখ জিজ্ঞেস করেছিলাম পয়লা বৈশাখ পালনের কয়েকদিন পরে। মাত্র দুজন প্রশিক্ষণার্থী সঠিক বাংলা মাসের তারিখটি বলতে পেরেছিলো। শতকরা হিসেবে ১%ও নয়। অথচ বৈশাখের প্রথমদিনে পায়জামা-পাঞ্জাবী পরে মাটির সানকিতে পান্তা-ইলিশ খেতে ভুলেনি। বাঙালী হয়ে আমরা বাংলা মাসের তারিখ বলতে পারি না। অথচ আড়াইশ বছর ইংরেজদের শাসনে থেকে ইংরেজী মাসের তারিখ একেবারে নখ-দর্পণে। এটা সত্যিই লজ্জাকর ব্যাপার। বাংলাদেশে বাঙালী বাংলা মাসের দিন-ক্ষণ বলতে পারবে না এটা কি কখনও ভাবা যায়? এমন কি কোন মাস কতদিনের তাও অনেকে বলতে পারে না। বাঙালীর এই দৈন্যতা সত্যি দুঃখজনক। ইংরেজী তারিখের সাথে সাথে বাংলা মাসের তারিখও জানা একান্ত প্রয়োজন। স্কুল-কলেজে বাঙালীর এই ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি বাধ্যতামূলকভাবে জানাবার ব্যবস্থা থাকা দরকার। এর চর্চা একান্ত আবশ্যক। বিষয়টি সরকার ভাবতে পারে।

বাংলাদেশে প্রয়াত ডক্টর মো: শহিদুল্লাহর নেতৃত্বে গঠিত বাংলা পঞ্জিকা কমিটি যে বাংলার দিন-পঞ্জি তৈরি করেছেন এবং সরকার কর্তৃক গৃহিত হয়েছে তা খুবই বৈজ্ঞানিক ও বাস্তবমুখী। যতদূর মনে পড়ে এই কমিটিতে ছিলেন পন্ডিত শতীশ চন্দ্র শিরোমনি এবং পণ্ডিত তারাপদ ভট্টাচার্য। পাকিস্তান আমলেই বাংলার এই দিনপঞ্জি তৈরি হয়। কিন্তু তৎকালীন শাসক এটার বাস্তবায়ন বন্ধ রাখে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এই বিজ্ঞানভিত্তিক দিনপঞ্জির কার্যকারিতা শুরু হয়। দুঃখের বিষয়, বেশির ভাগ বাঙালীই এই দিন-পঞ্জির কথা বলতে পারবে না। অথচ পয়লা বৈশাখ, পঁচিশে বৈশাখ, ৯ জৈষ্ঠ্য ঠিকই পালন করা হয়। পালনের এক সপ্তাহ পরে আকস্মিক- ভাবে যদি বাংলা মাসটির তারিখ জিজ্ঞেস করা হয় তা বলতে সরকারি আমলাদের তাদের দপ্তরে টানানো ক্যালেন্ডারের প্রতি নজর দিতে হবে। তাই বলছিলাম যে, হাজার বছর বাঙালী হয়েও বাংলা মাসের তারিখ বলতে পারি না। অথচ আড়াইশ বছর ইংরেজ শাসকদের অধীনে থেকে ইংরেজী মাস ও তারিখ ঠোঁটস্থ হয়ে গেছে।

দীর্ঘ সায়ত্রিশ বছর পার হয়ে গেল আমরা স্বাধীন হয়েছি। অথচ বাংলা মাসের তারিখ আমরা নিশ্চিত হয়েও বলতে পারি না। এই “না পারাটা” বন্ধের জন্য এখন থেকেই বাংলা চর্চা একান্ত আবশ্যক। ইংরেজীর সাথে সাথে বাংলা মাসের চর্চাও আবশ্যকীয় করা উচিত। অবশ্যি সরকারি দপ্তরে ইংরেজী ও বাংলা মাসের দুটো তারিখই লিখিত হয়। যাঁরা লিখেন তারা কিন্তু ইংরেজীর মতো মন থেকে লিখেন না, দপ্তরের রোজ-নামচা দেখে চিঠিতে তারিখটা বসান। এর পরিসমাপ্তি দরকার।

আশা করিসবাই সচেতন হবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০০৯ রাত ১২:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×