সেই বহুবছর আগে থেকেই শুধু শুনি ডিভি ডিভি। ডিভির মৌসুম বলে একটা বস্তুর প্রচলনও এদেশে হয়ে গিয়েছে। কম্পিউটার ট্রেইনিং সেন্টার থেকে শুরু করে কম্পিউটার মেরামতের দোকানেও ডিভি নিয়ে জমে ওঠে বিশাল আয়োজন। কোটি কোটি মানুষ সেই আয়োজনে অংশগ্রহণ করে। বিষয়টা করা পর্যন্ত সীমিত থাকলে সমস্যা ছিল না, সমস্যা শুরু হয় যখন কেউ ডিভি পেয়ে যায়। পেয়ে যাওয়া মানে কিন্তু আমেরিকা চলে যাওয়া নয়, পরপর তিন ধাপে টিকে অতঃপর মিলবে তথাকথিত সোনার হরিনের দেখা। আমি একটা বিষয় বুঝি না, আমেরিকা যাওয়াটা (পড়ালেখার জন্য বাদে) সোনার হরিন হয় কিভাবে? আমার ফ্যামিলির শতাধিক লোক আমেরিকা থাকে; তাদের কাছে যে গল্প শুনি তাতে আমেরিকা যাওয়াটা খুব সুখের কিছু কখনোই মনে হয়নি। যাহোক, ডিভিতে প্রথম ধাপে টিকে ঠিক কতজন মানুষ তা আমার জানা নাই কিন্তু এই সংখ্যাটা বিশাল। দ্বিতীয় ধাপেও আরো বিশাল (বা ঐ সমসংখ্যক) মানুষ পার পেয়ে যায় এবং আমেরিকান এ্যাম্বাসিতে দাঁড়ানোর সুযোগ পায়। সবকিছুই ঠিক থাকত যদি না ডিভি ভিসার জন্য এ্যাম্বাসিতে দাঁড়ানোর জন্য আমেরিকা তাদের স্বাভাবিক ইন্টারভিউ ফির চাইতে প্রায় পাঁচ গুন বেশি ফি না নিতো, এবং স্বভাবতই এটা ফেরতযোগ্য নয়। টাকায় অঙ্কটাও নেহায়েত কম নয়, ১ হাজার ডলারের কাছাকাছি। কত হাজার বা লাখো বাংলাদেশী মানুষ এই হাজার ডলার পরিশোধ করে তার হিসেব আমার কাছে নেই, কিন্তু তৃতীয় ধাপে টিকে আমেরিকা যাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে খুবই নগণ্য সংখ্যক। পুরো পৃথিবীতে শত কোটি মানুষ ডিভির জন্য আবেদন করলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই এবং তাদের ভেতরে প্রথম দুই ধাপে কয়েক কোটি মানুষকে নির্বাচিত করা হলেও বিস্মিত হওয়ার কিছু নাই। এই কোটি কোটি মানুষগুলো থেকে খুব সামান্য সংখ্যকই শেষ পর্যন্ত আমেরিকা যেতে পারে। কিন্তু তার আগেই কোটি গুনন হাজার ডলার = হাজার কোটি ডলার বাণিজ্য হয় আমেরিকা প্রশাসনের।
উপরের তথ্যগুলো আজগুবি ও ভিত্তিহীন মনে হতে পারে, তাই এই লেখাটার প্রেক্ষাপট ও কিছু ঘটনা বলা প্রয়োজন মনে করছি। সেই বহুবছর আগে যখন প্রথম ডিভি লটারির আয়োজন দেখি তখনি আমার পরিচিত অনেকে ডিভির প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ পর্যন্ত গিয়ে শেষ পর্যন্ত ভিসা পায়নি। তখন জানতাম না বিষয়টাতে মাঝখানে টাকা পয়সার লেনদেন আছে। তারপর গত কয়েক বছরে আরো অনেক মানুষকে আমেরিকান এ্যাম্বাসিতে টাকা জমা দিতে দেখেছি এবং এরা সবাই রিজেক্টেড। এদের রিজেক্টেড হওয়ার কারণগুলো খুবই হাস্যকর রকমের। কারো নামের বানান নিয়ে সমস্যা, কারো জন্মদিনের তারিখে উনিশ-বিশ বা কারো স্থায়ী ঠিকানায় গলদ, কারো ছবির মাপ ঠিক নাই হ্যান ত্যান ইত্যাদি ইত্যাদি। এই গলদগুলো নাকি কোন ভাবেই টলারেট করার মত নয়। তা হলে কথা হচ্ছে প্রথম দুই ধাপে কিভাবে তারা এদের এপ্রুভ করেন? গতবছরও দেখেছি কিছু মানুষ দিনের পর দিন দৌড়াদৌড়ি করলো, টাকা পয়সা সবই জমা দিলো কিন্তু এরকম খুঁটিনাটি গলদের কারণে ভিসা পেল না। এবছরও এরকম কিছু মানুষকে দেখলাম, লাখ লাখ টাকা দিয়ে বসে আছে আমেরিকাকে। এদের একজনকে আমি অনেকবার নিষেধ করেছিলাম এভাবে টাকা অপচয় না করতে, কিন্তু বাঙালির আমেরিকা যাওয়ার শখ কি এত সহজে মেটে? তারা দৌড়াদৌড়ি করলেন, আড়াই লক্ষ টাকাও জমা দিলেন এবং এ্যাম্বাসিতে ঢোকার ১ মিনিটের ভেতরে কেন তাদেরকে ভিসা দেওয়া হবে না তার বিবরণ পেয়ে গেলেন। বিবরণটা তৈরি করে ছাপিয়ে সিল-সাইন দিয়ে বহু আগেই প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে বোঝা গেল। তার মানে আমেরিকান এ্যাম্বাসি বহু আগেই এদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। তা হলে এদেরকে খামোখা এভাবে হয়রানী করে টাকা পয়সাগুলো হাতিয়ে নেওয়ার মানে কী?
প্রতিবছর যতসংখ্যক লোক নেওয়া হবে তার কয়েকগুন বেশি লোককে নির্বাচিত করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার আইডিয়্যাটা আসলেই চমৎকার! আর পুরো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে কোটি কোটি মানুষের সাথে এটা করা হচ্ছে বলে বিষয়টা কখনোই বড় হয়ে কারো চোখে পড়েনি হয়তো। আমেরিকা এমন একটা দেশ যেখানে আপনি কাউকে পাঁচটাকা ঠকিয়ে পার পাবেন না, স্যু খাবেন। কিন্তু তারা যখন পুরো পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষকে ঠকায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ স্যু করে না কেন সেটাই ভাবি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




