somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুজব ছড়াচ্ছে জামাত বিএনপি

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশে-বিদেশে বসে জামায়াত-শিবির আর বিএনপির একটি অংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সরকারবিরোধী নানা গুজব ছড়িয়েই চলেছে। মাঠের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে এখন গুজব ছড়িয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে মাধ্যমটিকে ভালভাবেই কাজে লাগাচ্ছে তারা। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউকে থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সাইট থেকে প্রতিনিয়ত ছড়ানো হচ্ছে সরকারবিরোধী নানা গুজব। সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে নিয়ে এমন কিছু গুজব ছড়ানো হয়েছে, যা তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের অবাক করে দিয়েছে। দেশের বেশ কয়েক দৈনিক পত্রিকাকে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে নকল করে। যার কোনটাই আসল কাগজ ছিল না। এবারই এটা প্রথম বলে তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা মনে করছেন। তবে তারা বলেছেন, এখন এমন সব সফটওয়্যার আছে যেগুলো ব্যবহার করে নানা অপপ্রচার চালানো সম্ভব। গুজব ছড়ানো ৭৮ আইডির সন্ধান পেয়েছে সরকারের একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা। এই আইডিগুলো মধ্যপ্রাচ্য ও ইউকে থেকে পরিচালিত হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, গুজব যারা ছড়াচ্ছে তাদের অনেকেই শনাক্ত হয়েছে। তবে দেশে তাদের কোন এডমিন নেই। দেশে তাদের প্রচুর ফলোয়ার রয়েছে। যারা ওই সব গুজবে লাইক কমেন্টস করে দেশের মানুষকে গুজবে বিশ্বাস যোগ্য করে তুলছে। কিছু ফেক আইডি খুলে দেশের মধ্যেই একটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা না গেলে সমাজে নানা সন্দেহ ও সংশয় বাড়বে। বিশ্বাস-অবিশ্বাস ও সন্দেহের দেয়াল আরও বেশি শক্ত হবে। এমনকি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য তা হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। নিকট অতীতে যার একাধিক উদাহরণ রয়েছে। নাসিরনগরে তা-ব, কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা ও জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পর চাঁদে তাকে দেখা যাওয়া। এমন অনেক গুজব মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছিল। একই স্টাইলে আবার এমন সব গুজব ছড়ানো হচ্ছে। গুজব থেকে রেহাই পাইনি দেশের গণমাধ্যমও। গত শনিবার যার সর্বশেষ নজির ফেসবুকে দেখা গেছে। সমকাল, প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমের মাস্টহেডের স্ক্রীনশট নিয়ে অনলাইনে প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে ১৪ অক্টোবর প্রকাশিত পত্রিকার ভুয়া খবর প্রচার করা হয়। সেখানে প্রধান বিচারপতি ও সরকারকে জড়িয়ে সংবাদের মনগড়া শিরোনাম দিয়ে ছড়ানো হয় বিভ্রান্তি। গণমাধ্যমের এসব ভুয়া পাতা মুহূর্তেই লাখ লাখ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসি ও পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট তাৎক্ষণিকভাবে কাজ শুরু করে দেয়। পরে যেসব গণমাধ্যম এমন অবস্থার শিকার হয় তারাও বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশ করে। তারা আসল ও নকল পত্রিকার ছবি পাশাপাশি দিয়ে খবর প্রকাশ করার পর বিষয়টি নিয়ে জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে।
সরকারের প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, ফেসবুক, ইউটিউব ও টুইটারে এমন কিছু আইডি পাওয়া গেছে, যেখান থেকে বিরামহীনভাবে রাষ্ট্রের অত্যন্ত স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য বিকৃত করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। ফেসবুকের অন্তত ৭৮টি পেজ ও আইডি এরই মধ্যে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই আইডিগুলো যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে। যে সব কম্পিউটারের মাধ্যমে এমন সব গুজব ছড়ানো হচ্ছে তা দেশে ব্যবহার হয় না। এমন কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। তারা বলছেন, জামায়াত-শিবির ও বিএনপির কর্মীরা মাঠে সরকারবিরোধী কোন আন্দোলনে সফল না হয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করছেন। এই মাধ্যমগুলোকে আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে মানুষকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলছেন। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য (ইউকে) থেকে পরিচালিত সাইটগুলো থেকে বেশি গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এখানে বিএনপি সিনিয়র ভাইসচেয়ারম্যান তারেক রহমান বসে আছেন। আর অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ী বিএনপির উচ্চপর্যায়ের এক নেতার ছেলে নওফেল জমিরও রয়েছে। নওফেল জমির বিটিসিএলের সাড়ে ৪শ কোটি টাকা লুটে নিয়ে গেছেন। ইউকে থেকে তিনি বাঁশের কেল্লার এডমিন হিসেবে কাজ করছেন। তার ওই সাইট থেকে প্রতিদিন কোন না কোন গুজব ছড়ানো হচ্ছে। দেশে তার সাইটের ফলোয়ার রয়েছে ১০ লাখের বেশি। আর এই ফলোয়াররা প্রতিদিন গুজব আরও মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে নিয়ে এবার যে গুজবটি ছড়ানো হয়েছে তা তারেক জিয়ার নির্দেশই হয়েছে।
বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক কিছু ফিল্টারিং করা হচ্ছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষও অনেক কিছু নিজে থেকেই ফিল্টার করে দিচ্ছে। তারপরও নানা মাধ্যম ব্যবহার করে জামায়াত-শিবির, বিএনপির কর্মীরা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। যেসব মাধ্যমে এসব হচ্ছে বিটিআরসির পক্ষ থেকে খুঁজে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু লিংক বন্ধ করা হয়েছে। যে সব সাইট থেকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট কাজ করছে। বিটিআরসিরও একটি কমিটি আছে। এই কমিটি সব সময় ইন্টারনেটের ওপর নজরদারি রাখে, তারাও খুঁজে দেখছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, ফেসবুকে প্রধান বিচারপতিসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে গুজব ছড়ানোর বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে এসেছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের শনাক্ত করতে কাজও শুরু করা হয়েছে। তবে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যারা এসব মিথ্যা তথ্য প্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে তাদের ধরা সহজ নয়। কারণ অধিকাংশ আইডির আইপি ঠিকানা দেশের বাইরে। বিদেশ থেকে পরিচালিত আইডিগুলো বন্ধ করা কঠিন। তাদের ধরাও কঠিন। ফেসবুক বা গুগলের কাছে তথ্য চাওয়া হলে তা সহজে পাওয়া যায় না। যেটা নাসিরনগরের বেলায় দেখা গেছে। ফেসবুকে কথিত যে ছবি ব্যবহার করে ইসলাম অবমাননার কথা বলা হয়েছে, সেটা সরাতে অনুরোধ করা হলেও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তা সরায়নি।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, এসব আইডির অধিকাংশের ইন্টারনেট প্রটোকল ঠিকানা (আইপি) দেখা যায় মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে। খুব অল্প অর্থে ডোমেইনের জন্য এসব সাইটের হোস্টিং কেনা যায়। কখনও একটি সাইটের পেছনে নাম মাত্র টাকা লাগে। অল্প অর্থের বিনিময়ে কথিত খবর ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব। এটাকে বলা হয় বুস্ট। মানুষের মধ্যে এতে দ্রুত বিশ্বাস যোগ্যতা ও বিভ্রান্তি দানা বাঁধে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, জনপ্রিয় তারকাদের ছবি (বিশেষ করে নায়িকাদের) ব্যবহার করে ভুয়া পরিচয়ে ফেক ফেসবুক পেজ খোলা হয়। ওই সব পেজ থেকে নানা রকম গুজব বা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। অনেক সময় মহিলা ডাক্তারদের ছবি দিয়ে আইডি খুলে হেলথ টিপস নামে অপপ্রচার চালানোর ঘটনাও রয়েছে। এসব আইডি দেখে অনেকেই তাদের ফ্রেন্ড লিস্টে চলে যান। এভাবে ফলোয়ার ও বন্ধু সংখ্যা বাড়িয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। মূলত এসব পেজ থেকে যারা গুজব ছড়ায়, তাদের ৮০-৯০ শতাংশের টার্গেট সরকার, প্রশাসন ও মুক্তিযুদ্ধ। এসব আইডি থেকে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকেও বিতর্কিত করে যাচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জামায়াত-শিবির বিএনপির হাত রয়েছে। নিজের পরিচয় লুকাতে অনেক কুৎসা রটনাকারী ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করছে। অনলাইনে গুজব, অপপ্রচার ও ব্যক্তিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করলে ৫৭ ধারায় মামলার বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অপরাধীরা কখনই এই ৫৭ ধারার আওতায় আসেনি বরং ৫৭ ধারাকে নানাভাবে অপব্যবহার করা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:০২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×