somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চ্যাপলিনের ভিন্ন ঘরাণার ছবি : মসিয়ে ভের্দু

০৭ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৫:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মুক্তি : ১৯৪৬
দৈর্ঘ : ১২৪ মিনিট
রঙ : সাদাকালো
দেশ : আমেরিকা
ভাষা : ইংরেজি
পরিচালনা, প্রযোজনা, সঙ্গীত ও চিত্রনাট্য: চার্লি চ্যাপলিন
চিত্রনাট্য (মূল ভাবনা) : অরসন ওয়েলস
অভিনয় : চার্লি চ্যাপলিন
চিত্রগ্রহণ : রোনাল্ড টোথেরো, কুর্ট কুর্টান্ট
সম্পাদনা : উইলার্ড নিকো
কাহিনী সংক্ষেপ : ১৯২২ সালে গিলোটিনে মৃত্যু হওয়া খুনি দিজায়ার লন্দ্রে’র জীবন অবলম্বনে এ ছবির গল্প গড়ে উঠেছে। চ্যাপিলেনর অন্য সব চলচ্চিত্র থেকে এ ছবির কাহিনী, গল্প, চরিত্র সম্পূর্ণই ভিন্ন। মঁসিয়ে ভের্দু্য একজন সাধারণ ব্যাঙ্কার, বর্তমানে সে চাকুরীহীন। বিশ্বস্ত ও ন্যায় পরায়ণ কর্মী হয়েও তিনি তার স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে ঠিকভাবে চলতে পারেননি। পরে তিনি একের পর এক বিত্তশালী বিধবা নারীদের বিয়ে করেন এবং তাদের হত্যা করে অর্থ-সম্পদ আয়ত্ব করেন। এইভাবেই চলতে থাকে। কিন্তু দুই বিধবা নারীর কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি ধরা পড়েন এবং তার বিরুদ্ধে রায় হয় গিলোটিনে শিরোচ্ছেদের। পরে অবশ্য নাটকীয়ভাবেই তার মৃত্যু দন্ডাদেশ বাতিল হয়। যুদ্ধে বিনা কারণে সহস্র হত্যা করে যারা বীর হয়ে ওঠে তাদের তুলনায় যে ব্যক্তি জীবন ধারণের জন্যে দুয়েকটি হত্যা করে সে কিছুই নয়, এই উপসংহার দিয়ে কাহিনী শেষ হয়।
বিশেষত্ব : চ্যাপলিনের অতি বিখ্যাত ব্ল্যাক কমেডি। সাধারণত যে ভাঁড় ও ভবঘুরের চরিত্র তিনি করেন এই চরিত্রটি তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। হাস্যরস ছাড়াও যে চ্যাপলিন একজন বড় মাপের অভিনেতা এ ছবি তা প্রমাণ করে। চ্যাপলিনের সাথে সাথে এ ছবিতে মার্থা রে, উইলিয়াম ফ্রাউলি, ফ্রিৎজ লিবার-এর মতো হলিউডের তারকারা অভিনয় করেছেন। চ্যাপলিন নিজে এ ছবি সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমার জীবনের সবচেয়ে চমৎকার এবং বুদ্ধিদীপ্ত চলচ্চিত্র।’
বিশেষ তথ্য :
১. সিরিয়াল কিলার হেনরি দেসায়ার লন্দ্রে’র বিচার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এই ছবি তৈরি করার কথা ভাবেন সিটিজেন কেন এর পরিচালক অরসন ওয়েলস। অরসনের ইচ্ছা ছিলো চ্যাপলিনকে নিয়ে এই ছবি বানানোর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চ্যাপলিন নিজে বানাবেন বলে অরসনের কাছ থেকে চিত্রনাট্যটি কিনে নেন। চ্যাপলিন পরে চিত্রনাট্য নিজের মতো করে বদলান এবং অরসনকে শুধু মাত্র মূল ভাবনার স্বীকৃতি দেন।
২. মুক্তির পর এই ছবি আমেরিকায় ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়। চ্যাপলিনের চিরাচরিত ভাড়ের অনুপস্থিতি হয়তো এর কারণ। কিন্তু ছবির ঋণাত্নক ভাবনা চ্যাপলিনের ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার বছর খানেকের মাথায় এমন একটি গল্প এবং মার্কিন সমাজকে ঋণাত্মকভাবে তুলে ধরার জন্যে রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা চ্যাপলিনের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়। এমনকি প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় চ্যাপলিনের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিকরা এ ছবি বর্জন করতেও বলে। ১৯৬৪ সালে চ্যাপলিন ফ্যাস্টিভালে তার আর সব ছবির সঙ্গে যখন এটিকে পুনরায় মুক্তি দেয়া হয় তখন এটি দূর্দান্ত ব্যবসায়িক সাফল্য পায়।
৩. ‘একটি খুন একটি খলনায়কের জন্ম দেয়, লক্ষ খুন নায়কের’ - ভেদ্যুৃর্’র মুখের এই সংলাপ দাসপ্রথা বিরোধী আন্দোলনকারী বিশপ বিলবাই পোর্টেস (১৭৩১-১৮০৮)-এর করা একটি উক্তি।
৪. এই ছবির প্রচারণার জন্য বিখ্যাত সংবাদ এজেন্ট রাসেল বার্ডওয়েলকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন চ্যাপলিন। কলাম লেখক হেডা হুপারকে লেখা এক চিঠিতে বার্ডওয়েল লিখেছিলেন, ‘আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, চ্যাপলিনের মuঁসয়ে ভেদ্যুর্ হলিউড থেকে আসা সবচেয়ে মহৎ ও বিতর্কিত ছবি। যদি আমার বক্তব্য ভুল প্রমাণিত হয় তাহলে আমি চ্যাপলিনের স্টুডিওর সামনে দাঁড়িয়ে জন সমক্ষে এ ছবির সব নেগেটিভ খেয়ে ফেলবো।’ হুপার এই ছবি দেখার পর লিখেছিলেন, ‘প্রিয় বার্ড, খাওয়া শুরু করুন।’
৫. মুক্তির পর এ ছবি ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়। কিন্তু সমালোচকরা সবাই চ্যাপলিনের অভিনয়ের ব্যাপক প্রশংসা করে। লেখক-সমালোচক জেমস এগে’র মতে, চ্যাপলিনের চরিত্রায়ণ বিশ্বের সেরা একটি অভিনয়।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৫:৩২
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×