ঢাকায় ফিরবো বলে ব্যাগ গুছিয়ে বসে আছি। বাইরে তুমুল বৃষ্টি। বৃষ্টি থামার পর জানালা দিয়ে নীচে তাকিয়ে দেখি নদী বইছে। চামড়ার স্যান্ডেল পলিথিনে ভরে স্পঞ্জ পায়ে বের হলাম। বৃষ্টির পানিতে পা দেবার আগেই বুঝলাম, সামথিং ইজ ভেরি রং!
বৃষ্টির পানিতে আরও কি মিশেছে বুঝে নিন। এই গা ঘিনঘিনে পানিতে হাঁটছি তো হাঁটছিই, পথতো আর শেষ হয়না। আমি অবশ্য একা নই, সাথে আরও অনেকেই আছে। এ অবস্থায় একটি খালি রিকশা আর একটি ছয় দরজার লিমোসিন পেলে আপনি সমান খুশি হবেন!
হঠাৎই যেন পানি ফুঁড়ে উদয় হলো এক খালি রিকশা, আমার কাছ থেকে বেশ দূরে, ধীরে ধীরে পানি ঠেলে এগিয়ে আসছে, কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার কেউ তাকে ডাকলো না। এখানকার মানুষের বোধহয় এ পানির সাথে সম্পর্ক বেশ পুরনো!
অবশেষে মুক্তি। বললাম, মামা আগে কান্দিরপাড় যাও, ওখান থেকে তিশা কাউন্টার। কান্দিরপাড়ে মেডিকেলের বন্ধু হিমেলের কাছে তার
পেনড্রাইভটা দীর্ঘ কতদিন পর ফেরত দিলাম দুজনেই হয়তো ভুলে গেছি। শাসনগাছা যাবার পথে পুলিশলাইনের কাছের মসজিদটায় মনের মাধুরী মিশিয়ে পা ধুলাম। বাস ছাড়তে বেশি দেরি করলো না, তবে তার আগে বরাবরের মতই 'এশিয়া লাইনে'র সাথে 'টাগ অফ ওয়ার' চললো। দেখলে মনে হবে ছোট দুটো বাচ্চা তাদের খেলনা বাস দিয়ে একজন আরেকজনকে ওভারটেক করতে দিচ্ছে না ...
আগে কি বলেছি, বাসে আমি সবসময় দু'টা সিট নিয়ে বসি! না না! একটায় হয়না এমনটা না
পেছনেও যাত্রী না থাকায় সীটটা যতটুকু সম্ভব নামিয়ে দিয়ে জানালাটা খুলে দিলাম। বৃষ্টি ধোয়া বাতাস এসে মুখে লাগলো, এ অনূভুতি এসির বাতাসে পাওয়া যায়না, লিখেও প্রকাশ করা যায়না। আহ! অল দ্য ওয়ে বিজনেস ক্লাস ...
হঠাৎ মনে হলো বাইরে কে যেন ছবি তুলছে! তাকিয়ে দেখি বিরাট প্রান্তর দেখা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো।থেকে থেকে বিজলী চমকাচ্ছে আকাশে। সেগুলোর ধরনও অদ্ভূত, কোনটা দেখা গেল কি গেলো না, কোনটায় আকাশের একপাশ পুরো সাদা হয়ে গেলো, কোনটা এতটাই তীব্র যে, চোখ কিছুক্ষনের জন্য বন্ধ করে দিলো, আবার কোনটা মাটিতে বজ্র পাঠালো, কারো মাথায় পড়লো কিনা কে জানে !!!
রাস্তা মোটামুটি খালি বলা যায়, যারা বাড়ি যাবার তারা হরতালের আগেই চলে গেছে। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মিষ্টির দোকানগুলোর বেশিরভাগই বন্ধ, এগুলো সবগুলোই নকল 'মাতৃ ভান্ডার'। প্রায় একই নামে পাশাপাশি এতগুলো দোকান। আমি কখনও এরকম নির্লজ্জ নকলবৃত্তি দেখিনি। কিন্তু মানুষ খুব একটা সচেতন নয়, না হলে এতগুলো দোকান বছরের পর বছর ধরে টিকে আছে কি করে! কিন্তু বাসের সেদিকে মনযোগ নেই, সে ছুটে চলেছে ঝড়ের গতিতে...
এতক্ষন রাস্তা ছিলো ভেঁজা, এবার শুকনো রাস্তা শুরু হলো, দূরের আকাশে তখনও বিজলী চমকাচ্ছে। কিছুদূর যাবার পর হঠাৎ বাস ঢুকে পরল ঝুমঝুম বৃষ্টির ভেতর, জানালা বন্ধ করে দিলাম, আবার যেন কিছুই হয়নি এমন শুকনো রাস্তায় শুরু হলো, ঠিক যেন অটোমেটিক কার ওয়াশ সার্ভিস! এই ১০০ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে প্রকৃতির কত রঙবদল!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১২ রাত ১০:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




