somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানবতার মহান শিক্ষকের জীবনী

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৪র্থ কিস্তি

ব্যবসায়ে আত্মনিয়োগ

আরবদের, বিশেষত কুরাইশদের পুরানো পেশা ছিল ব্যবসায় হযরত(স)-এর চাচা আবু তালিবও একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। এ কারণেই হযরত(স)-যখন যৌবনে পদার্পন করেন, তখনও তিনি ব্যবসায় কে অর্থোপার্জনের উপায় হিসাবে গ্রহণ করেন।কিশোর বয়সে চাচার সঙ্গে তিনি ব্যবসায় উপলক্ষে যে সফর করেন,তাতে তার যথেষ্ঠ সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।এ ব্যাপারে তিনি লোকদের কাছে অত্যন্ত বিশ্বস্ত প্রতিপন্ন হলেন।লোকেরা তার ব্যবসায়ে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে নিজ নিজ মূলধন তার কাছে জমা করতে লাগলো।পরন্ত ওয়াদা পালন,সদাচরণ ন্যায়পরায়ণতা,বিশ্বস্ততা ইত্যাদি কারণেও তিনি লোকদের অত্যন্ত শ্রদ্ধা অর্জন করলেন। এমনকি, লোকেরা তাকে ‘আস-সাদিক’(সত্যবাদী) ‘আল-আমীন’(বিশ্বস্ত) বলে সাধারণভাবে অভিহিত করতে লাগলো।ব্যবসায় উপলক্ষে তিনি সিরিয়া,বসরা, বাহরাইন ও ইয়েমেনে কয়েকবার সফর করেন।
খাদীজার সাথে বিবাহ
তখন খাদীজা নামে আরবে এক সম্ভ্রান্ত ও বিত্তশালী মহিলা ছিলেন।তিনি হযরত(স)- এর দূর সম্পর্কের চাচাতো বোন ছিলেন।প্রথম বিবাহের পর তিনি বিধবা হন এবং দ্বিতীয় বিবাহ করেন। কিন্তু কিছুদিন পর তার দ্বিতীয় স্বামীও মৃত্যুবরণ করেন এবং পুনরায় বিধবা হন।তিনি অত্যন্ত সম্মানিত ও সচ্চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। লোকেরা তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে ‘তাহিরা’(পবিত্রা) বলে ডাকতো।তার আগে ধন-দৌলত ছিল। তিনি লোকদের কে পুঁজি এবং পণ্য দিয়ে ব্যবসায় চালাতেন।
হযরত(স)-এর বয়স তখন পঁচিশ বছর। ইতোমধ্যে ব্যবসায় উপলক্ষে তিনি বহুবার সফর করেছেন। তার সততা,বিশ্বস্ততা ও সচ্চরিত্রের কথা জনসমাজে ছড়িয়ে পড়েছিল।তার এ খ্যাতির কথা শুনে হযরত খাদীজা তার কাছে এই মর্মে পয়গাম পাঠান : আপনি আমার ব্যবসায়ের পণ্য নিয়ে সিরিয়া গমন করুন। আমি অন্যান্যদের কে যে হারে পারিশ্রমিক দিয়ে থাকি, আপনাকেও তা-ই দেবো। হযরত(স)- তার এই প্রস্তাব কবুল করলেন এবং পণ্যদ্রব্য নিয়ে সিরিয়ার অন্তর্গত বসরা পর্যন্ত গমন করলেন।

খাদীজা হযরত(স)-এর অসামান্য যোগ্যতা ওঅতুলনীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে মুগ্ধ হয়ে প্রায় তিন মাস পর তার কাছে বিয়ের পয়গাম প্রেরণ করেন। হযরত(স)-তার পয়গাম মন্‌জুর করলেন এবং বিয়ের দিন-ক্ষণও নির্ধারিত হলো। নির্দিষ্ট দিনে আবু তালিব, হযরত হামযা এবং খান্দানের অপরাপর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে হযরত(স) খাদীজার বাড়িতে উপস্থিত হলেন। আবু তালিব বিয়ের খোতবা পড়লেন। পাঁচ শো তালায়ী দিরহাম (স্বর্ণ-মুদ্রা) বিয়ের মোহরানা নির্ধারিত হলো।

বিবাহকালে হযরত খাদীজার বয়স চল্লিশ বছর এবং তার পূর্বোক্ত দুই স্বামীর ঔরসজাত দুই পুত্র ও এক কন্যা ছিল।

অসাধারণ ঘটনাবলী
দুনিয়ায় যতো বিশিষ্ট লোকের আবির্ভাব ঘটে তাঁদের জীবনে শুরু থেকেই অসাধারণ কিছু নিদর্শনাবলী লক্ষ্য করা যায় । এ দ্বারা তাঁদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা সহজেই অনুমান করা চলে । একথা অবশ্য এমন সব লোকের বেলায়ই প্রযোজ্য,যারা পরবর্তী কালে কোন বিশেষ খান্দান,কওম বা দেশের উল্লেখযোগ্য সংস্কার সাধন করে থাকেন। কিন্তু যে মহান সত্তাকে কিয়ামত অবধি সারা দুনিয়ার নেতত্বের জন্যে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং যাকে মানব জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগের পূর্ণ সংস্কারের জন্যে প্রেরণ করা হয়েছে,তার জীবন-সূচনায় এমন অসাধারণ নিদর্শনাবলী তো প্রচুর পরিমাণে দৃষ্টিগোচর হওয়ায় স্বাভাবিক। তাই স্বভাবই তার জীবনী গ্রন্থগুলোয় এ ধরণের নিদর্শনাবলীর প্রচুর উল্লেখ দেখা যায়। কিন্তু যে সকল ঘটনা প্রামাণ্য বিশুদ্ধ রেওয়ায়েতসহ উল্লিখিত হয়েছে, তার কয়েকটি নিম্নে উদ্ধৃত হলোঃহযরত(স) বলেছেনঃ ‘আমি যখন আমার মায়ের গর্ভে ছিলাম, তখন তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, তার দেহ থেকে একটি আলো নির্গত হয়েছে এবং তাতে সিরিয়ার রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত আলোকিত হয়ে গেছে।’বহু রেওয়ায়েত থেকে এ-ও জানা যায় যে, তখন ইহুদী ও খ্রিষ্টান এক নতুন নবীর আগমন প্রতিক্ষায় ছিল এবং এ ব্যাপারে তারা নানা রকম ভবিষ্যত বাণী করেছিল।
রাসূল (স)-এর বাল্যকালের একটি ঘটনা। তখন কা’বা গৃহ কিছুটা সংস্কার কার্য চলছিল এবং এ ব্যাপারে বড়োদের সাথে ছোট ছোট ছেলেরাও ইট বহণ করে নিয়ে যাচ্ছিল।এই ছেলেদের মধ্যে হযরত (স) এবং চাচা হযরত আব্বাসও ছিলেন। হযরত আব্বাস তাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ‘তোমার লুঙ্গি খূলে কাঁধের ওপর নিয়ে নাও, তাহলে ইটের চাপে ব্যথা পাবে না।’তখন তো বড়োরা পর্যন্ত নগ্ন হতে লজ্জানুভব করতো না।কিন্তু হযরত(স) যখন এরুপ করলেন, নগ্নতার অনুভূতিতে সহসা তিনি বেহঁশ হয়ে পড়লেন।তার চোখ দুটো ফেটে বের হয়ে যাবার উপক্রম হলো। সম্ভিত ফিরে এলে তিনি শুধু বলতে লাগলেনঃ“আমার লুঙ্গি আমার লুঙ্গি ”। লোকেরা তাড়াতাড়ি তাকে লুঙ্গি পরিয়ে দিল। কিছুক্ষণ পর আবু তালিব তার অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বললেনঃ‘আমি সাদা কাপড় পরিহিত এক লোককে দেখতে পাই। সে আমাকে বললো, শিগগির সতর আবৃত কর।’সম্ভবত এই প্রথম হযরত(স) গায়েবী আওয়াজ শুনতে পান।

আরবে তখন আসর জমিয়ে কিসসা বরার একটা কুপ্রথা চালু ছিল। লোকেরা রাত্রি বেলায় কোন বিশেষ স্থানে জমায়েত হতো এবং কাহিনীকাররা রাতের পর রাত তাদের নানারুপ উদ্ভট কিস্‌সা-কাহিনী শোনাতো।বাল্য বয়সে হযরত(স)একবার এই ধরণের আসরে যোগদান করার ইরাদা করেন।কিন্তু পথিমধ্যে একটা বিয়ে মজলিস দেখার জন্যে তিনি দাঁড়িয়ে যান এবং পরে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন। অতঃপর চোখ মেলে দেখেন যে ভোর হয়ে গেছে। এরুপ তার জীবনে আরো একবার সংঘটিত হয়। এভাবে আল্লাহ তা’আলা তাকে কুসংসর্গ থেকে রক্ষা করেন।

রাসূল(স) যে যুগে জন্মগ্রহণ করেন, তখন মক্কা মূর্তি-পূজার সবচেয়ে বড়ো কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছিল।খোদ কা’বা গৃহে তখন তিন শ’ ষাটটি মূর্তির পূজা হতো এবং তার নিজ খান্দানের লোকেরা অর্থাৎ কুরাইশরাই তখন কা’বার মুতাওয়াল্লী বা পূজারী ছিলেন।কিন্তু এতদ সত্ত্বও হযরত(স) কোনদিন মূর্তির সামনে মাথা নত করেন নি এবং সেখানকার কোন মুশরিকী অনুষ্ঠানেও অংশ নেন নি। এছাড়া কুরাইশরা আর যে সব খারাপ রসম-রেওয়াজে অভ্যস্ত ছিল, তার কোন ব্যাপারে হযরত(স) কোনদিন তার খান্দানের সহযোগিতা করেন নি।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:৩০
১১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×