somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানবতার মহান শিক্ষকের জীবনী

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৮ম কিস্তি
প্রথম স্তর :
গোপন দাওয়াত নবুয়্যাতের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হবার পর হযরত(স)-এর সামনে প্রথম সমস্যা ছিলোঃএক খোদার বন্দেগী কবুল করার ও অসংখ্য মিথ্যা খোদার অস্তিত্ব অস্বীকার করার দাওয়াত প্রথম কোন ধরণের লোকদের দেওয়া যাবে?দেশ ও জাতির লোকদের তখন যে অবস্থা ছিল,তার একটি মোটামুটি চিত্র ইতঃপূর্বে পেশ করা হয়েছে। এহেন লোকদের সামনে তাদের মেজাজ,পসন্দ ও অভ্যাসের সম্পূর্ণ বিপরীত কোন জিনিস পেশ করা বাস-বিকই অত্যন- কঠিন কাজ ছিল। তাই যে সব লোকের সঙ্গে বতেদিন হযরত(স) এর খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং যারা তার স্বভাব প্রকৃতি ও নৈতিক চরিত্র সম্পর্কে সারাসরি অবহিত ছিলেন, তাদেরকেই তিনি সর্ব প্রথম দাওয়াতের জন্যে মনোনীত করলেন। কারণ, এরা হযরত(স)-এর সততা ও বিশ্বস্ততা সম্পর্কে নিঃসংশয় ছিলেন এবং তিনি কোন কথা বললে তাকে সরাসরি অস্বীকার করা এদের পক্ষে সম্ভবপর ছিল না। এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন হযরত খাদীজা(রা)। তারপর হযরত আলী(রা), হযরত জায়েদ(রা), হযরত আবু বকর(রা) প্রমুখের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। আলী(রা) হযরত(স)-এর চাচাতো ভাই,জায়েদ(রা) গোলাম এবং আবু বকর(রা) ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।এরা বছরের পর বছর ধরে হযরত(স)-এর সাহচর্য লাভের সুযোগ পেয়েছিলেন। তাই সর্ব প্রথম হযরত খাদীজা(রা) এবং পরে অন্যান্যদের কাছে তিনি দাওয়াত পেশ করেন। এরাই ছিলেন ঊম্মাতের মধ্যে পয়লা ঈমান্দার -ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত প্রথম ভাগ্যবান দল। এরা হযরত(স)-এর কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গেই তার সত্যতা স্বীকার করেন।এদের পর হযরত আবু বকর(রা)-এর প্রচেষ্টায় হযরত উসমান(রা), হযরত জুবাইর(রা), হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ(রা), হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস(রা) হযরত তালহা(রা) প্রমুখ ইসলাম গ্রহণ করেন। এভাবে গোপনে গোপনে ইসলামের দাওয়াত ছড়াতে লাগলোএবং মুসলমানের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পেতে লাগলো।

কুরআনের অনন্য প্রভাব

এপর্যায়ে কুরআনের যে অংশগুলো নাযিল হয়েছিল, তা ছিল আন্দোলনের প্রথম স্তরের উপযোগী ছোট-খাটো বাক্য সমন্বিত। এর ভাষা ছির অতীব প্রাঞ্জল, কবিত্বময়, ও হৃদয়গ্রাহী। পরন্ত এতে এমন একটা সাহিত্যিক চমক ছির যে, শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তা শ্রোতার মনে প্রভাব বিস্তার করতো এবং এক একটি কথা তীরের ন্যায় বিদ্ধ হতো। এসব কথা যে শুনতো তার মনেই প্রভাব বিস্তার করতো এবং বারবার তা আবৃত্তি করার ইচ্ছা জাগতো।

আকিদা-বিশ্বাসের সংশোধন

কুরআন পাকের এই সূরাগুরোতে তওহদি ও আখিরাতের তাৎপর্য বর্ণনা করা হচ্ছিল। এ ব্যাপারে এমন সব প্রমানাদি পেশ করা হচ্ছিল, যা প্রতিটি শ্রোতার মনে বদ্ধমূল হয়ে যাচ্ছিল। এসব দলিল প্রমাণ শ্রোতাদের নিকটতম পরিবেশ থেকেই পেশ করা হচ্ছিল। পরন্ত এসব কথা এমন ভঙ্গিতে পেশ করা হচ্ছিল, যে সম্পর্কে শ্রোতারা পুরোপুরি অভ্যস্ত ও অবহিত ছিল। তাদেরই ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ও ঐতিহ্যের পরিপ্রেক্ষিতে এসব কথা বোঝাবার চেষ্টা করা হচ্ছিল। আকিদা-বিশ্বাসের যে সব ভ্রান্তি সম্পর্কে তারা ওয়াকিফহাল ছিল, সেগুলো সম্পর্কেই আলোচনা করা হচ্ছিল্‌ এ কারণেই খোদার এই কালাম শুনে কেউই প্রভাবিত না হয়ে পারছিল না। খোদার নবী প্রথমে একাকীই এই আন্দোরন শুরু করেছিলেন। কিন্তু কুআনের এই প্রাথমিক আয়াতসমূহ এ ব্যাপারে অত্যন্ত কার্যকর হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে। ফলে গোপনে গোপনে আন্দোলন অত্যন্ত দ্রুততার সাথে বিস্তার লাভ করতে থাকে।

এ পর্যায়ে দাওয়াত প্রচারের জন্যে তওহীদ ও আখিরাতের দলিল-প্রমাণের সঙ্গে সঙ্গে এই বিরাট ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ আঞ্জাম দেওয়ার জন্যে খোদ হযরত(স)-কে কিভাবে আত্মপ্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে এবং কি কি পন্থা তাকে অবলম্বন করতে হবে সে সম্পর্কেও তাকে সরাসরি শিক্ষাদান করা হচ্ছিল।

চুপিসারে নামায

এ পর্যন্ত সবকিছু গোপনে গোপনেই হচ্ছিল্‌ নেহাত বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য লোক ছাড়া বাইরের কারো কাছে কোন কিছু যাতে ফাঁস না হয়ে যায়, সেজন্যে হামেশা সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছিল। নামাযের সময় হলে হযরত(স) আশেপাশের কোন পাহাড়ের ঘাঁটিতে চলে যেতেন এবং সেখানে নামায আদায় করতেন। একবার তিনি হযরত আলী(রা) কে সঙ্গে নিয়ে কোন এক জায়গায় নামায পড়ছিলেন। এমন সময় তার চাচা আবু তালিব ঘটনাক্রমে সেখানে এসে হাজির হলেন।তিনি অনেকক্ষণ ধরে ইবাদতের এই নতুন পদ্ধতি তাজ্জবের সাথে লক্ষ্য করলেন। নামায শেষ হলে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘এটা কোন ধরণের দ্বীন।’ হযরত(স) জববি দিলেনঃ‘আমাদের দাদা ইবরাহীম(আ)-এর দ্বীন।’ আবু তালিব বললেনঃ‘বেশ, আমি যদিও এটা গ্রহণ করতে পারছি না, তবে তোমাকে পালন করার পুরো অনুমতি দিলাম। কেউ তোমার পথে বাদ সাধতে পারবে না।’

এ যুগের মুমিনের বৈশিষ্ট্য

এই প্রারম্ভিক যুগের বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, এ সময় ইসলাম গ্রহণ ছিল প্রকৃতপক্ষে জীবন নিয়ে বাজী খেলার নামান্তর। কাজেই এ যুগে যারা সামনে অগ্রসর হয়ে ইসলামের দাওয়াত কবুল করেন, তাদের মধ্যে অবশ্যই কিছু অসাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল,যার ভিত্তিতে তারা এ বিপদ সঙ্কুল পথে অগ্রসর হবার সাহস পেয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই :এসব লোক আগে থেকেই মুশরিকী রসম রেওয়াজ ও ইবাদত বন্দেগীর প্রতি বীতশ্রদ্ধ এবং সত্যের জন্যে অনুসন্ধিৎসু ছিলেন। স্বভাব-প্রকৃতির দিক দিয়ে এরা ছিলেন সৎ ওসত্যের অধিকারী।

প্রায় তিন বছর যাবত দাওয়াত ও প্রচারের কাজ এভাবে গোপনে গোপনে চলতে লাগলো।কিন্তু কতদিন আর এভাবে চলা যায়!যে সূর্যকে আপন রশ্মি দ্বারা সারা দুনিয়াকে আলোকময় করে তুলতে হবে, তাকে তো লোকচক্ষুর সামনে আত্মপ্রকাশ করতে হবেই। তাই আন্দোলন এবার দ্বিতীয় পর্যায়ে পদার্পণ করলো।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×