somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হল জীবনের তিন বছর পূর্তি ও চার বছরে পদার্পণ

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডিপার্টমেন্টের হিসাবে কিছুটা গরমিল থাকলেও হলের হিসাবে তিন বছর শেষ করে অমর একুশে হলের ২০১১-১২ সেশনের বন্ধুরা আজ চার বছরে পা দিচ্ছি
এখনও মনে আছে ,২০১২ সালের ৯ জানুয়ারী রাতে আমরা প্রায় ১০০ জন গেস্টরুমে হাজির হই হলে উঠার প্রতীক্ষায়।রাত ৯ টা থেকে গেস্টরুমে আমাদের জমায়েত শুরু হলেও ইমিডিয়েট সিনিয়ররা আসতে আসতে ১০টার কিছুটা বেশী!

পরাগ ভাই,কৌশিক ভাই,সুমন ভাই,জামান ভাই,লিমন ভাই, নাহিয়ান ভাই,রিফাত ভাই,মুক্তার ভাই, শোয়েব ভাই সহ অনেক ভাইই একসাথে গেস্টরুমে ঢুকে।এরপর ব্যাচ ভিত্তিক সিনিয়ররা একে একে গেস্ট রুমে ঢুকে।

স্মৃতিশক্তি যদি প্রতারণা না করে তাহলে গেস্টরুমে প্রথম কথা বলছিলেন কৌশিক ভাই।একে একে সবার নাম,ডিপার্টমেন্ট,হোম ডিসট্রিক্ট,রেফারেন্স বলে গেলাম আমরা।এরপর ভাইরা আমাদের ব্রিফ করল,হলে থাকতে হলে বিভিন্ন রুলস মেনে চলতে হবে।প্রটোকল,ক্যান্টিন-ডাইনিংয়ের রুলস,লনে কি করা যাবে,কি করা যাবে না ইত্যাদি।
এরপর সবার নামের লিস্ট করে ভাইদের হাতে দেওয়া ।ভাইরা নিজেদের মধ্যে ডিসকাস করে আমাদেরকে ২ টা রুম দিল,সাথে কথা হুঁশিয়ারি,সবাইকে একসাথে লনে মুভ করতে হবে,একজন কোন সমস্যায় পড়লে ইমিডিয়েট ভাইদের জানিয়ে সবাইকে একসাথে যেতে হবে,রুম মেম্বারদের মধ্যে ইন্টারচেইঞ্জ করতে হবে মাঝেমধ্যে।

সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমরা যখন আমাদের নিজেদের রুমে,তখন রাত প্রায় ১.৩০ এর কাছাকাছি। জীবনের প্রথম গেস্টরুমের অভিজ্ঞতা নিয়ে এই ক্লান্ত আমরা নিজেদের রুম পেয়ে সব ক্লান্তি ভুলে লেগে গেলাম সদ্য সিনিয়রদের ছেড়ে দেওয়া রুমগুলো পরিষ্কারে। সব কাজ শেষ করে আমরা যখন ঘুমাতে যাই,তখন অনেক রাত।

সকালে আমরা সব বন্ধুরা উঠে ফ্রেশ হয়ে-নাস্তা করে দ্রুত লনে হাজির,সিনিয়রদের সাথে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রোগ্রামে যাওয়ার জন্য। সিনিয়ররা আসলে মিছিল বের হয়,সেই তখন থেকে এখন পর্যন্ত দেখছি মিছিলগুলোতে শ্লোগান ধরে কৌশিক ভাই,বিভিন্ন সময়ে রাহাত ভাই,রোহান ভাই,মুক্তাদির ভাই,পরাগ ভাই,লিমন ভাই,টুলু ভাইকে শ্লোগান ধরতে দেখলেও কৌশিক ভাইই শ্লোগানের জন্য পরিচিত মুখ।

অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমাবেশ,সমাবেশ শেষে সবাই একসাথে ফিরে আসা।দুপুরের খাবার শেষে নিজেদের রুমে নিজেদের জগত বানিয়ে কেউ খেলেছি কার্ড,কেউ পড়াশুনায় ব্যস্ত,কেউ মুভি দেখেছি,এর মধ্যে কেউ কেউ আবার ঘুমে ব্যস্ত।

রাত হলেই আমরা বেরিয়ে পড়তাম ক্যাম্পাসে।সেটা প্রথম কয়েকদিনের কথা।এরপর কেউ কেউ টিউশনিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল,কেউ ছাত্র পড়ায়,কেউ বা আবার স্টুডেন্ট পড়ায় আর,আতেল সাহেবরা পড়াশুনায় ব্যস্ত। আর,ভবঘুরেরাতো তাই থেকে গেল।

সবার দেখা হত,রাতে ঘুমানোর সময়।ঘাদা ঘাদি করে ঘুমাতে হত,অনেকে আবার ঘুমানোর জায়গা না পেয়ে ঘুরতে বেরিয়ে যেত,একদল যদি হাটতে হাটতে নবাবপুর যেত,আরেকদল চলে যেত পলাশীর দিকে।

এইভাবেই চলে গেল আমাদের প্রায় চার মাস।এরপর ২ রুম থেকে ৩ রুম,৩ রুম থেকে আস্তে আস্তে আমাদের ইমিডিয়েট সিনিয়রদের প্রচেষ্টায় রুমের সংখ্যা বৃদ্ধি...

এইভাবেই আমরা পার করে ফেললাম তিন বছর,এখন থেকে আমাদের চার বছরে পদার্পণ...

‪#‎গণরুমের‬ সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার ছিল একজনের জুতা অন্যজন নিয়ে যাওয়া,একজনের জিনিস অন্যজন নিজের সম্পত্তি ভেবে ইউজ করা,এমনকি অন্তর্বাসও বাদ যায়নি অবশ্য,এগুলোর মাধ্যমেই আমাদের মাঝে বন্ধন অনেক মঝবুত হয়েছে...

‪#‎আমরা‬ যখন হলে আসি তখন হলে অনেক সিট সংকট ছিল (তখনও ছয়তলা হয়নি!) আমাদের ইমিডিয়েট সিনিয়রদের অবশ্যই কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে এই কারণে যে,তারা আমাদের জন্য ব্যক্তিগত দায়ভার নিয়ে রুমের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন,এমনকি সাংস্কৃতিক সংঘের তালা ভেঙ্গে সেখানে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন।যখনই কোন সমস্যায় পড়েছি তখনি তাঁদেরকে পাশে পেয়েছি,শুভ যখন আহত হয় প্রত্যেকটা ইমিডিয়েট সিনিয়র তাঁদের সাধ্যমত শুভর পাশে এসে দাড়ায়।বিভিন্ন টেস্ট করতে হবে,শুভর খাবার লাগবে সবই ভাইরা নিজেদের থেকে চাঁদা দিয়ে মিটিয়েছিল।এখনো যে কোন প্রয়োজনেই ভাইদেরকে পাশে পাই।

‪#‎নানা‬ কারণে বিভিন্ন সময় প্রথমে আমরা যে বন্ধুরা হলে উঠেছিলাম তাঁদের অনেকেই আজ হলে নেই,আবার অনেকেই পরে আমাদের সাথে অ্যাড হয়েছে। কিন্তু,আমরা এতটুকু নিশ্চিত করে বলতে পারি,মতপার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু আমাদের মধ্যে আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই।

#আমরা এখন ছড়িয়ে পড়েছি হলের তিনটা ভবনে,অনেকের সাথে মাসে একবারও দেখা হয় না!এই তালিকায় আমাদের অনেক সিনিয়রও আছেন অবশ্য। দূরত্ব যতই হোক,বন্ধন আমাদের অটুট।

#আমরা দেখিয়েছি ২০১১-১২ ব্যাচ সব দিক থেকেই স্বয়ংসম্পূর্ণ।এই ব্যাচ থেকে যেমন ডিপার্টমেন্ট ফার্স্ট বয়ের সংখ্যাও অনেক,রিঅ্যাডমিসনে হ্যাটট্রিকের সংখ্যাও যথেষ্ট।ভালো খেলোয়াড়,ভালো ফটোগ্রাফার,ভালো সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব,ভালো ব্যবসায়ী,ভালো রাজনীতিবিদ কি নেই আমাদের...

যেই মমতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরিবার ছেড়ে আমরা নতুন একটি পরিবার গড়ে তিন বছর পার করলাম,আশা করি বাকি জীবনও আমরা যেখানেই থাকি না কেন সবার মাঝে সেই মমতার বন্ধন বজায় থাকবে।

সবার সুদৃষ্টি প্রত্যশা করি...
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×