somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাল্মীকি

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(রামায়ণ রচনা করছেন বাল্মীকি)

বাল্মীকি রামায়ণ
বাল্মীকি ছিলেন দস্যু রত্নাকর। দস্যু অর্থে ক্রিমিনাল, খারাপ লোক। একদিন তমস্যা নদীর ধার দিয়ে যাচ্ছিলেন নারদ মুনি। নারদমুনির সঙ্গে ছিলেন ব্রহ্মা। তাদের দেখে রত্নাকর আক্রমন করে এবং তাদের বেঁধে ফেলে।

তখন নারদমুনি রত্নাকরকে বললেন, “তুমি একবার তোমার বাড়ির আত্মীয়-স্বজনকে জিজ্ঞাসা কর তো, আমাদের মেরে যে পাপ তুমি করবে, সেই পাপের ভাগী কেউ হবে কি না?”

রত্নাকর বাড়িতে এসে সবাইকে জিজ্ঞেস করল। কিন্তু একজনও তার পাপের ভাগী হতে রাজি হল না।

নারদ বললেন, তাকে ৬০ হাজার বার ‘রাম’ নাম জপ করতে হবে। তবেই সে মুক্তি পাবে। রত্নাকর যত বার চেষ্টা করল রাম বলার, তার মুখ দিয়ে শুধু মরা বেরুলো, 'মরা'। কারণ এতো খুন সে করেছে, এতো পাপ সে করেছে। তাই নিবিষ্ট মনে রাম, রাম, রাম বলতে বলতে তার সারা শরীর উঁইয়ের ঢিবিতে ভরে গেল! উঁইকে আমরা ভাল কথায় বলি ‘বল্মী’। সেই জন্যই তার নাম হয় "বাল্মীকি"

একদিন বাল্মীকি তমস্যা নদীর ধার দিয়ে যাচ্ছিলেন। আর আকাশে উড়ছিল দুটো বক। হটাৎ উনি দেখেন, একটা ব্যাধ ঐ বক দুটিকে বান মারার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে। উনি বক দুটিকে বাচাতে যাওয়ার আগেই ব্যাধ বান মেরে দেয়! বক দুটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আর ঠিক তখনই বাল্মীকির মুখ দিয়ে প্রথম বেরিয়ে আসে_____

"মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতী সমঃ।
যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনদেকমবধীঃ কামমোহিতম।।"


অর্থঃ হে ব্যাধ, তুমি যে কামমোহিত ক্রৌঞ্চমিথুনকে (বকযুগলকে) বধ করলে, তার ফলস্বরূপ জীবনে কখনও শান্তি পাবে না।

এই শ্লোক দুটোই রামায়নের প্রথম শ্লোক।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'বাল্মীকি-প্রতিভা'
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাত্র ২০ বছর বয়সে লিখেছিলেন গীতিনাট্য বাল্মীকি প্রতিভা। তিনি মহর্ষি বাল্মীকির রামায়ণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দুর্ধর্ষ দস্যু রত্নাকরের কথা এ নাট্যে তুলে ধরেন।এই কাহিনি মূল বাল্মীকি রামায়ণে পাওয়া যায় না। আবার নাট্যকার বাংলা রামায়ণ থেকেও হুবহু আখ্যানবস্তু গ্রহণ করেননি।

বাল্মীকি প্রতিভার পুরোভাগে রয়েছে দস্যু রত্নাকরের গল্প। রত্নাকর মহাদেবী কালীর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে একটি বালিকাকে উৎসর্গের জন্য তাঁর অনুসারীদের নির্দেশ দেন। ওই বালিকার হৃদয়ছোঁয়া আকুতি দস্যু রত্নাকরের মনকে আমূল পরিবর্তন করে। সে বালিকাকে বলির মঞ্চ থেকে মুক্তি দেয়। এ ঘটনা দস্যুর অনুসারীরা মেনে নিতে পারেনি। এরপর মৃগয়ার আয়োজন করে বাল্মীকি তাঁর অনুচরবর্গকে নিয়ে মৃগয়ায় গেলেন। কিন্তু তাঁর এক অনুচর এক হরিণশাবককে হত্যা করতে গেলে দয়াপরবশ হয়ে তিনি বাধা দিলেন। এতে বাল্মীকির অনুচরবর্গ তাঁকে উন্মাদ মনে করে পরিত্যাগ করে।তারপর একদিন এক ব্যাধকে ক্রৌঞ্চমিথুন বধ করতে দেখে শোকার্ত দস্যুসর্দারের মুখ দিয়ে নির্গত হল প্রথম কবি প্রতিভা:

মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ।
যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃ কামমোহিতম্।।


এই লাইন উচ্চারণ করেই শিহরিত হলেন বাল্মীকি। নিজের অজান্তেই দস্যুপতি কিভাবে দেবভাষা উচ্চারণ করলেন তা বুঝতে পারলেন না। তখন তাঁর সম্মুখে আবির্ভূত হন দেবী সরস্বতী। সরস্বতীর দর্শন পেয়ে দস্যুপতির পাষাণ হৃদয় বিগলিত হল। তিনি কালীপ্রতিমা পরিত্যাগ করলেন। সরস্বতী অন্তর্হিত হলে বাল্মীকি তাঁর অনুসন্ধান করে ফিরতে লাগলেন। লক্ষ্মী তাঁকে ধনসম্পদের প্রলোভন দেখিয়েও ব্যর্থ হন। তখন তাঁর ও বনদেবীদের করুণ প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে পুনরায় আবির্ভূত হলেন সরস্বতী। বাল্মীকি সঙ্গীতের মাধ্যমে তাঁর বন্দনা করলে তিনি উত্তরে বললেন:

দীনহীন বালিকার সাজে,
এসেছিনু এ ঘোর বনমাঝে,
গলাতে পাষাণ তোর মন –
কেন বৎস, শোন্, তাহা শোন্।
আমি বীণাপাণি, তোরে এসেছি শিখাতে গান,
তোর গানে গলে যাবে সহস্র পাষাণপ্রাণ।
যে রাগিনী শুনে তোর গলেছে কঠোর মন,
সে রাগিনী তোর কণ্ঠে বাজিবে রে অনুক্ষণ।

বসি তোর পদতলে কবি-বালকেরা যত
শুনি তোর কণ্ঠস্বর শিখিবে সঙ্গীত কত।
এই নে আমার বীণা, দিনু তোরে উপহার
যে গান গাহিতে সাধ, ধ্বনিবে ইহার তার।





মানুষের প্রতি দয়াবোধের কারণে দেবী সরস্বতী তাকে আশীর্বাদ করেন, আর রত্নাকর দস্যু থেকে মহর্ষি বাল্মীকির উদ্ভব ঘটে।

গীতিনাট্য বাল্মীকি প্রতিভার প্রথম মঞ্চায়ন হয় ১৮৮১ সালে কলকাতার বিদ্যাভাজন সমাগম সম্মিলনী মঞ্চে। রবীন্দ্রনাথ নিজেই সেখানে বাল্মীকির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।


বাল্মীকিপ্রতিভা নাট্যাংশে রবীন্দ্রনাথ এবং ইন্দিরাদেবী


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'বাল্মীকি প্রতিভা'র 'গীতিনাট্য' টির লিখিত রূপ দেখতেঃ এই খানে ক্লিক করুন

নিচের কবিতাটি বিষ্ণুপ্রিয়া সাহিত্যের কবি শিবেন্দ্র সিংহ’র। তাঁর জন্ম ভারতের শিলচরের পূর্ব সিঙ্গারিতে।

যতদিন বাল্মীকি হইনি

ক্ষমা করো না মা এই রত্নাকরকে
যতদিন বাল্মীকি হতে পারিনি
তোমার ছেঁড়া শাড়ি, মরিচাধরা কানের ঝুমকা
আর মলিন নোলক দেখেও বসে আছি অথর্ব সন্তান
ক্ষমা করো না মা এই রত্নাকরকে
তোমার অনাদরে বেড়ে ওঠা দীর্ঘ নখ
শরীরের ময়লা আর জটাধরা রুক্ষ চুলের দিকে
চেয়েও নিরব আছি, এখনো
ক্ষমা করো না মা এই রত্নাকরকে
বাল্মীকি হইনি যতদিন
কোটরে ঢুকে যাওয়া তোমার দুটো চোখ
বুকের কঙ্কাল, হাড়, চুপসে যাওয়া স্তন
একদিন এ জগতে অমৃত ঢেলেছে প্রাণে;
কোন কিছুই পারল না আগুন ধরাতে এই মনে
ক্ষমা করো না মা এই রত্নাকরকে
যতদিন বাল্মীকি হইনি।



সংযুক্তিঃ
●ইমন জুবায়ের_এর একটি ব্লগ পোস্টঃ বাল্মীকি: প্রাচীন ভারতের সচেতন এক পরিবেশবাদী।
●ভারতীয় বাংলা সিনেমা “মুক্তধারা”
উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৩৭
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×