বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২৫৫৪ ডলার!
গ্রাম্যমেলাতে হঠাৎ করে মিষ্টির বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় ময়রা তার ১৩ বছরের ছেলে পিন্টুকে পাঠিয়েছে বাড়ি থেকে আরো মিষ্টি আনার জন্য। মেলা থেকে বাড়ির দুরত্ব বেশ!
পাতিল ভরে মিষ্টি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় রহিমের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় পিন্টুর। রহিম পিন্টুর বন্ধু। রহিম ১ টাকা নিয়ে বের হয়েছে মেলায় যাবে বলে। পিন্টুও খুশি হয়। দূরের পথে একজন সঙ্গী পেলে মন্দ হয় না।
রহিমের পকেটে এক টাকা আর পিন্টুর মাথায় মিষ্টির হাড়ি। একটু হাঁটার পরে রহিমের খিদে পায়। সে বন্ধুর কাছে থেকে এক টাকা দিয়ে একটি মিষ্টি কিনে খেয়ে নেয়। আরেকটু হাঁটার পরে পিন্টু রহিমকে বলে- বন্ধু অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছি, তুই একটু পাতিলটা মাথায় নিবি। আমি একটু জিরোবো! বন্ধুর বিপদে তো বন্ধুই এগিয়ে আসবে, তাই এবার রহিম পাতিল মাথায় নিয়ে হাঁটতে থাকে।
এবার রহিমের কাছে মিষ্টির হাড়ি, পিন্টুর পকেটে এক টাকা। পিন্টুরও খিদে লেগেছে। যেহেতু পিন্টুর পকেটে টাকা আছে, তাই সেও রহিমের কাছ থেকে এক টাকা দিয়ে একটি মিষ্টি কিনে ক্ষুধা নিবারণ করে।
রহিম ক্লান্ত হয়ে পড়লে পিন্টু তার কাছ থেকে হাড়িটা নিজ মাথায় নিয়ে হাঁটতে থাকে। এবার রহিমের পকেটে এক টাকা। পিন্টুর কাছে মিষ্টি।
একটু দূরে গিয়ে রহিম আবার এক টাকা দিয়ে পিন্টুর কাছে থেকে মিষ্টি কিনে খায়। পিন্টু ক্লান্ত হয়ে বন্ধুর মাথায় মিষ্টির হাড়ি চাপিয়ে দেয়। রহিমের মাথায় মিষ্টির হাড়ি, পিন্টুর পকেটে এক টাকা।
দুই বন্ধু এভাবে পালাক্রমে মিষ্টির হাড়ি বয়ে নিয়ে যেতে থাকে। এক টাকা দিয়ে একটু পরপর মিষ্টি কিনে খেতে থাকে। একবার রহিমের মাথায় হাড়ি আরেকবার পিন্টুর মাথায়। একবার পিন্টুর পকেটে এক টাকা, আরেকবার রহিমের পকেটে। মেলার যত কাছাকাছি যেতে থাকে, হাড়ির ওজনও তত কমতে থাকে। মেলার গেটে গিয়ে দেখে- হাড়িতে কোনো মিষ্টি নেই, শুধু রয়ে গেছে মিষ্টির রস আর একটি টাকা!
অর্থনীতির ভাষায় হয়তো পিন্টু আর রহিমের মধ্যে ১০০ টাকা বিনিময় হয়েছে। মিষ্টি বিক্রির ভালো দামও পাওয়া গেছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দিনশেষে তারা পেয়েছে একটি টাকা আর ফাঁকা হাড়ি!
বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়টাও এমনই। অর্থনীতির চাকা ঘুরছে, লেনদেন বাড়ছে, জনগন নিজের অজান্তেই বড়লোক হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের হাড়ি খালি হয়ে যাচ্ছে।