somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৫ ই অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস ও শিক্ষার্থী মূল্যায়ন সম্বন্ধে কিছু অভিজ্ঞতা

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ ভোর ৪:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শিক্ষা জীবনে আজ যে পর্যায়ে এসেছি তার বেশিভাগ কৃতিত্বের জন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ শিক্ষকদের কাছে, যারা আমাকে দিয়েছেন অসাধারণ পাঠদান, নৈতিক উপদেশ, ও অনুপ্রেয়না। আমি নিজে এই সেমিস্টারে কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা কোর্সে Teaching Assistant + Instructor হিসাবে কাজ করতেছি। গত সপ্তাহে প্রথম আসাইনমেন্ট এর নম্বর প্রদান করেছি। গতকাল এক শিক্ষার্থী (আসাইনমেন্টে ৯০% নম্বর পেয়েছে) আমাকে ই-মেইল করেছে যা পুরোটাই তুলে দিলাম বন্ধু লিস্টে থাকা প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সকল শিক্ষকদের জন্য।

"Hi Mostofa,

I got my grade for the place story and I really appreciated your helpful feedback. I didn't receive any negative feedback, so I'm just wondering what I could've done to receive full marks. I have class during your office hours on Wednesday so I'm unable to meet, but if you could email back with what I missed and why I didn't receive full marks, that'd be great!

Thank you so much,"

আমার ব্যক্তিগত মতামত হলও শিক্ষক জীবনে শিক্ষা দানের পরে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলও শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ন প্রদান করা। এই মূল্যায়ন হতে পারে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন কিংবা শিক্ষার্থীর নৈতিক আচরণের মূল্যায়ন। কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ভবিষ্যতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গুনগত শিক্ষক তৈরির জন্য মাস্টার্স ও পিএইচডি ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষ ট্রেনিং প্রদান করে থাকে। কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র থাকাকালীন এই রকম একটা ট্রেনিং করেছিলাম যার নাম ছিলও "Foundations in University Teaching "। ঐ কোর্সে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হয় কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মনোযোগ ধরে রাখবে, ক্লাসে পড়ানো বিষয় গুলোর প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে। ঐ কোর্সে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হয় কিভাবে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করতে হবে। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করার পরে কিভাবে মন্তব্য প্রদান করতে হবে যাতে করে শিক্ষার্থী খারাপ ফলাফলের পরেও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরবর্তী কোর্স গুলোতে ভালো করার অনুপ্রেরণা পায় কিংবা যারা ইতিমধ্যেই ভালো ফলাফল করেছে সেই ফলাফল ধরে রাখে কিংবা আরও ভালো ফলাফল করার চেষ্টা করে।

গত সপ্তাহে ৫৫ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে পৃথক-পৃথক মূল্যায়ন প্রদান করেছি। কোন শিক্ষার্থীকে কি মূল্যায়ন প্রদান করেছি তা লিখে রেখেছি নিজের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের কথা ভেবে। মূল্যায়ন গুলো যোগ করে দেখি আকারে ২০ পৃষ্ঠা ও শব্দ সংখ্যায় ৯ হাজার। নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিকদের বেশিভাগই তাদের জীবনের সফলতার কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে পাওয়া শিক্ষকদের ভালো শিক্ষা দান ও অনুপ্রেরণা। নির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয় বিভিন্ন শিক্ষকের মূল্যায়ন তাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাই আমি চেষ্টা করি সুযোগ পেলেই শিক্ষার্থীর পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করার সময় সঠিক দিক নির্দেশনা ও মূল্যায়ন প্রদান করার যাতে করে খারাপ ফলাফলে অনুপ্রেরনা হারিয়ে না ফেলে। ভালো ফলাফল করলে ভবিষ্যতে যেন আরও ভলো করার চেষ্টা করে।

ছবি: আমার উচ্চ শিক্ষা জীবনের প্রথম সুপারভাইজার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল হান্নান স্যার ও তার মহীয়সী সহধর্মী-নি সিলেটের সরকারি অগ্রগামী স্কুলের শিক্ষিকা রোকেয়া ম্যাডাম।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের গবেষণা প্রজেক্টে আমার সুপারভাইজার ছিলেন স্যার। আমার গবেষণা কাজটি করেছিলাম বাংলা একাডেমীর পাশে অবস্থিত বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনে। সেখানে আমার সুপারভাইজার ছিলেন ডাঃ দিলিপ কুমার শাহ (পরবর্তীতে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন)। ঢাকার আণবিক শক্তি কেন্দ্রের পরীক্ষাগারে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে রেজাল্ট নিয়ে থিসিস লেখা শেষ করে সেই থিসিস পাঠালাম হান্নান স্যারকে। স্যার আমাকে বললেন সিলেটে আসো থিসিসে অনেক সংশোধন করতে হবে। আমি ঢাকা থেকে সিলেটে আসলাম। রবি থেকে বৃঃপতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যারের রুমে বসে থিসিস সংশোধন করলাম। শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে জাগার পূর্বে স্যারের ফোন। স্যার বুঝতে পেরেছে যে আমি ঘুম থেকে তখনও উঠিনি। স্যার বলেছেন বাসায় চলে আসো একসাথে সকালে নাস্তা করে থিসিসের অবশিষ্ট সংশোধন গুলো করি। আমিও কোন মতে দাঁত ব্রাশ করে সারের বাসায় উপস্থিত হতাম। সকালের নাস্তার পরে কাজ শুর করে দিন গড়াতে থাকে, এর পর দুপুরের খাওয়াও সারের বাসায় করি; খাওয়ার পরে আবারও থিসিস সংশোধনের কাজ চলতে থাকে; এভাবে সন্ধ্যা গড়ায় আমাদের কাজ চলতে থাকে; রাতের খাবারও সারের বাসায় করে ম্যাচে ফিরি ঘুমানোর জন্য। পরের দিন শনিবারও একই ভাবে সারাদিন সারের বাসায় থিসিসের অবশিষ্ট সংশোধন শেষ করি। স্যার আমার থিসিসের প্রত্যেকটি বাক্যের গঠন, গ্রামার চেক করে দিয়েছেন। শুধু ঠিক করে দেওয়াই না, ভুল কোথায় সেটাই বলে দিতেন। ঢাকা থেকে থিসিস প্রিন্ট করে সিলেটে পাঠাই। থিসিসের ভাইবার তারিখ নির্ধারিত হওয়ার পরে স্যার ফোনে নির্দেশ দেন স্লাইড তৈরি করে তাকে পাঠাতে ও ভাইবার দুই দিন পূর্বে সিলেটে আসার জন্য। স্যার আবারও প্রেজেন্টেশনের স্লাইড ঠিক করে দেন। থিসিস প্রেজেন্টেশন এর পূর্বের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সারের রুমে ৩ বার প্রাকটিস করি সারের সামনে। স্যারের একটাই লক্ষ যে তার ছাত্রটির উৎকর্ষতা নিশ্চিত করা। আমার পরে স্যার ধ্রুব এর থসিসি সুপারভাইজ করেন। তার কাছ থেকে শুনেছি স্যার একই ভাবে তার থসিসি সংশোধন করেন। ধ্রুব পরবর্তীতে নেদেল্যান্ডে মাস্টার্স ও জার্মানির বিশ্ববিখ্যাত ম্যাক্সপ্লাক ইন্সিসটিটিউট থেকে পিএচডি ডিগ্রী শেষ করে বর্তমানে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেছে। বাবা হিসাবেও হান্নান সারকে আমি অনুসরণ করি। স্যারের দুই জমজ ময়ের একজন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সাইন্সে ও অন্যজন বিশ্ববিখ্যাত Massachusetts Institute of Technology (MIT) এ অনার্সে অধ্যায়ন করছে। স্যারের স্ত্রীও এখন শিক্ষিকা অসাধারণ গুনি মানুষ। স্যারের বাসায় যখন সারাদিন থিসিস সংশোধন করতাম ম্যাডাম উৎসাহ দিতেন ও এখনও স্যারের কাছে আমার শিক্ষা সম্বন্ধে খোজ নেন।

আমার শিক্ষা জীবনে হান্নান সারের মতো একাধিক গুনি শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষা পাওয়া সৌভাগ্য হয়েছে, বিশেষ করে ম্যাডাম ও স্যারের শিক্ষাদান, শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দান ও বিশ্ববিদ্যালয় পরবর্তী জীবনেও যারা শিক্ষাথীদের নিয়মিত অনুপ্রেরণা দেন ও সাহায্য করেন। পরবর্তীতে সেই সকল শিক্ষকদের নিয়ে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে রয়েছে।

পরিশেষে বন্ধু লিস্টে থাকা প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সকল শিক্ষকদের অনুরোধ করবো রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্ম ও বর্ণ বিদ্বেষ, নিজ জেলা বা অঞ্চল প্রীতি, কিংবা আবেগ ও অনুরাগের বশবর্তী না হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান, নৈতিক উপদেশ, ও অনুপ্রেয়না প্রদান করে তাদের শিক্ষার্থীদের উন্নত জীবন গঠনে ভূমিকা রাখবেন।

৫ ই অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস, এই শিক্ষক দিবসে আমার জীবনে পাওয়া সকল শিক্ষক ও অন্য সকল শিক্ষকদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শুভেচ্ছা ও সেই সাথে সকলের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।


সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৩
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×