somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান চর্চা: পর্ব ১০ (এল নিনো ও লা নিনার এর যমজ ভাই ভারত মহাসাগরীয় দ্বিমেরু এর বাংলাদেশের মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপর প্রভাব

২৮ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এই পর্বে আমি আপনাদেরকে পরিচিত করে দিতে চাই মেডেন-জুলিয়ান স্পন্দন বা সংক্ষেপে এমজেও চক্র এর মতো আর একটি চক্রের সাথে যার সাথে সম্পর্ক রয়েছে ভারত উপ মহাদেশের মৌসুমি বৃষ্টিপাতের সাথে। এই চক্রটির নাম হলও ভারত মহাসাগরীয় দ্বিমেরু বা Indian Ocean Dipole (IOD) নামে পরিচত। ভারত মহাসাগরীয় দ্বিমেরু বলার কারণ হলও পূর্ব ভারত মহাসাগরের সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে সেই সময় পশ্চিম ভারত মহাসাগরের সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে। কয়েক বছর পর-পর পূর্ব ও পশ্চিমের পানির তাপমাত্রার বিনিময় হয়। যেমন বর্তমানে পূর্ব ভারত মহাসাগরের সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় শূন্য দশমিক ৫ থেকে ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি রয়েছে। অথচ, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে একই স্থানের সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা প্রায় ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস কম ৩০ বছরের গড় তাপমাত্রা অপেক্ষা।



যেহেতু কয়েক বছর পর-পর সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রার পার্থক্যের মান পরিবর্তিত হয় তাই এটাকে ভারত মহাসাগরীয় দোলন বা স্পন্দনও বলা হয়ে থাকে। আমরা হাইস্কুলের বইতে পড়েছি এল নিনো (পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা ঐ স্থানের ৩০ বছরের গত তাপমাত্রা অপেক্ষা বেশি) ও লা নিনা (পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা ঐ স্থানের ৩০ বছরের গত তাপমাত্রা অপেক্ষা কম) সম্বন্ধে। এলনিনো ও লা নিনাকে একত্রে এল নিনো সাউদার্ন ওসিলেশন (El Niño–Southern Oscillation (ENSO)) বলে। আবহাওয়া বৈজ্ঞানিকরা Indian Ocean Dipole (IOD) কে El Niño–Southern Oscillation (ENSO) এর যমজ ভাইও বলে থাকে।

Indian Ocean Dipole (IOD) ও বাংলাদেশের উপর বৃষ্টিপাতের প্রভাব:



পজিটিভ আইওডি (Indian Ocean Dipole (IOD) ) দশা: স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা পশ্চিম ভারত মহাসাগর ও আরব সাগরে এবং স্বাভাবিকের চেয়ে কম সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা পূর্ব ভারত মহাসাগরে (ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা উপকূল)

ফলাফল: বেশি বাষ্পীভবন, বেশি মেঘ, বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা পশ্চিম ভারত মহাসাগর সংলগ্ন দেশগুলোতে ( পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে)। পক্ষান্তরে এই দশার সময় অস্ট্রেলিয়া ব্যাপি খুবই কম বৃষ্টিপাত হয় ও প্রচন্ড খরা ও বনে আগুন লাগা অবস্হা দেখা যায়।

কৌশল: ওয়াকার সার্কুলেশন এর মাধ্যমে। শক্তিশালী ইস্টারলি (পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত বায়ু) বায়ু প্রবাহের কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের গরম পানি পশ্চিম ভারত মহাসাগর ও আরব সাগরের উপকূলে জমা হয়ে বেশি বাষ্পীভবন, বেশি মেঘের সৃষ্টি করে।



নেগেটিভ আইওডি (Indian Ocean Dipole (IOD)) দশা: স্বাভাবিকের চেয়ে কম সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা পশ্চিম ভারত মহাসাগর ও আরব সাগরে এবং স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা পূর্ব ভারত মহাসাগরে (ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা উপকূল)

ফলাফল: বেশি বাষ্পীভবন, বেশি মেঘ, বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা পূর্ব ভারত মহাসাগর সংলগ্ন দেশগুলোতে। পক্ষান্তরে এই দশার সময় পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে (ইথিওপিয়া, কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে, ইত্যাদি) খুবই কম বৃষ্টিপাত হয় ও প্রচন্ড খরা ও বনে আগুন লাগা অবস্হা দেখা যায়।

কৌশল: ওয়াকার সার্কুলেশন এর মাধ্যমে। নিরক্ষ রেখা বরাবর প্রবাহিত ইস্টারলি (পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত বায়ু) বায়ুর গতি কমে যাওয়ার কারণে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী পশ্চিমা বায়ু প্রবাহের কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের গরম পানি পশ্চিম ভারত মহাসাগর ও আরব সাগরের উপকূল থেকে পূর্ব ভারত মহাসাগরে (ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা উপকূল) জমা হয়ে বেশি বাষ্পীভবন, বেশি মেঘের সৃষ্টি করে।



নিউট্রাল আইওডি (Indian Ocean Dipole (IOD) ) দশা: সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা দীর্ঘদিনের গড় অবস্হায় থাকে পশ্চিম ভারত মহাসাগর ও আরব সাগর এবং পূর্ব ভারত মহাসাগরে (ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা উপকূল) এর মধ্যে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: Indian Ocean Dipole (IOD) ও El Niño–Southern Oscillation (ENSO) এর মধ্যে পজিটিভ সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ, যখন El Niño–Southern Oscillation (ENSO) পজিটিভ দশায় থাকে (El Niño) তখন IOD ও পজিটিভ দশায় থাকে। একই ভাবে যখন El Niño–Southern Oscillation (ENSO) নেগেটিভ দশায় থাকে (La Niña) তখন IOD ও নেগেটিভ দশায় থাকে। তবে ENSO ও IOD এর সম্পর্কের মধ্যে কিছুটা সময় গ্যাপ রয়েছে। ENSO একটি দশায় পৌছার কয়েক সপ্তাহ পরে IOD সেই দশায় পৌছায়।


এই বিষয়ের বিস্তারিত জানার জন্য নিম্নোক্ত ওয়েবসাইটগুলোতে গুরুত্বপূর্ন তথ্য পাওয়া যাবে:

Indian Ocean Dipole (IOD)


Meet ENSO’s neighbor, the Indian Ocean Dipole

The Indian Ocean Dipole (IOD)

Indian Ocean Dipole: What is it and why is it linked to floods and bushfires?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:৩১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×