বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিচার আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চার বিচারককে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আমি নিশ্চিত করেই জানি এই চার জনের কমপক্ষে ১ জনের আইন বিষয়ে অনার্স ডিগ্রী নাই। আপিল বিভাগ হলও রাষ্ট্রের ৩ টি সর্বোচ্চ স্তম্ভের ১ টি। মানুষ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, সংবিধান বিষয় নিতি-নির্ধারনীয় বিষয়ে শেষ সিদ্ধান্ত নেয় যে কয়জন বিচারক। এই বিষয়টা একটা দেশের জন্য কতবড় লজ্জার বিষয় যে আইন বিষয়ের প্রাথমিক উচ্চশিক্ষা ডিগ্রীটাও নাই এমন একজনকে দেশের সর্বোচ্চ বিদার আদালতের বিচারক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি পালন করা দেশটিতে। এই দেশরই এক নির্লজ্জ মন্ত্রীর লজ্জায় গাল লাল হয়ে যায় কেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণা করে না; গবেষণার ফান্ড খরচ করতে পারেন না।
পল্লী চিকিৎসক পাতলা পায়খানা, আমশায় ইত্যাদির চিকিৎসা দেওয়ার যোগ্যতা রাখে। কিন্তু পল্লি চিকিৎসক কি হার্ট কিংবা ব্রেইন এর অপারেশন করার যোগ্যতা রাখে? কিংবা আপনি যদি রোগী হন তবে পল্লী চিকিৎসকের কাছে যাবেন আপনার হার্টে রিং পড়ানোর জন্য?
ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অইন বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করা হাজার-হাজার আইনজীবী থেকে ৪ জন যোগ্য আওয়ামীলীগ দলীয় আইনজীবী খুঁজে পেলো না বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদার আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিয়োগ দেবার জন্য????
আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩ হাজারের অধিক। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১০০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৭০ টিরও অধিক আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরেও আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ করা হয় ঘুরে-ফিরে মাত্র ১০ টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ক্ষমতায় ডেমোক্রেট কিংবা রিপাবলিকান যেই দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন। আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টেও বিচারক নিয়োগ করা হয় লিবারেল কিংবা কনজারভেটিভ মতাদর্শের ভিত্তিতে তবে যাদের নিয়োগ করা হয় সেই আইনজীবীরা বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে সবচেয়ে ভালো ফালফল করে পাশ করা আইন বিষয়ক ছাত্র-ছাত্রীটিকেই বেছে নেওয়া হয়।
আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ৯ জন। বর্তমানে এই ৯ জনের মধ্যে ৬ জনকে নিয়োগ দিয়েছে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট ও ৩ জনকে ডেমোক্রেট পার্টির প্রেসিডেন্ট। এই ৯ জন বিচারপতি তাদের জীবনে অর্জিত অনার্স, মাস্টার্স ও পিএচডি ডিগ্রীগুলো অর্জন করেছেন মাত্র ৭ টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে: Harvard University, Oxford University, Yale University, Stanford University, Princeton University, Columbia University, and University of Notre Dame).
ডেমক্রাট ও রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শগত মতপার্থক্য থাকতে পারে তবে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগের সময় তাদের যোগ্যতা নিয়ে কোন রকম আপোষ করেন নাই। বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে পাশ করা ছাত্রদেরই সেই পদে নিয়োগ দিয়েছেন। লিস্টের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর বিচারপতিকে নিয়োগ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প।
আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখে বাংলা ভাষায় একটা প্রবাদ মনে পড়ে গেল "রতনে রতন চিনে .............................(শুন্যস্হানের অংশটা লিখলে চাকরি থাকবে না)।
1) John Roberts, Chief Justice (Harvard University)
2) Clarence Thomas (Yale University)
3) Stephen Breyer (Stanford University and Harvard University)
4) Samuel Alito (Princeton University and Yale University)
5) Sonia Sotomayor (Princeton University and Yale University)
6) Elena Kagan (Princeton University, Oxford University, and Harvard University)
7) Neil Gorsuch(Columbia University, Oxford University, and Harvard University) [প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কতৃক নিয়োগকৃত]
8) Brett Kavanaugh (Yale University) [প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কতৃক নিয়োগকৃত]
9) Amy Coney Barrett (University of Notre Dame) [প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কতৃক নিয়োগকৃত]
বটলতার কলেজ থেকে ডিগ্রী পাশ করে জামতলার আইন কলেজ থেকে নামক ওয়াস্তে উকিল হওয়া ব্যক্তিরা হলও উগান্ডার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি হওয়ার সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি।
আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির লিস্টের সর্বেশেষ ৩ জন বিচারপতি নিয়োগ করেছেন আমেরিকার কুখ্যাত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই কুখ্যাত প্রেসিডেন্টও যে ৩ জন বিচারপতি নিয়োগ করেছেন তারা যথাক্রমে Harvard University, Yale University, University of Notre Dame থেকে আইন বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স ও কেউ কেউ পিএচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:৩২