somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি একটি খোলা চিঠি।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি সকলের কাছে যদি আমার এই পোষ্ট পড়ে কেউ ব্যাক্তিগত ভাবে কষ্ট পেয়ে থাকেন। একটা অ-জনপ্রিয় কথা লিখতে বাধ্য হলাম। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও পদে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিবেক দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিবর্তে আবেগ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে এমন মানুষদের এমন পদে বসিয়েছেন বা দায়িত্ব দিয়েছেন যে পদে দায়িত্ব পালনের জন্য ঐ সকল মানুষের কোন অভিজ্ঞতা ছিলও না কিংবা অভিজ্ঞতার যথেষ্ট ঘাটতি ছিল। যেমন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাধরন সম্পাদক নির্বাচন।

৫ ই আগস্টের পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া সবচেয়ে সঠিক একটি সিদ্ধান্ত ছিলও জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনে নিহত শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসনের জন্য জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন গঠন করা। আমি জানি আমার মন্তব্যটি অনেক সমালোচিত হবে তার পরেও বলি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া সবচেয়ে ভুল একটি সিদ্ধান্ত ছিলও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে শহীদ মুগ্ধ এর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ ও পরবর্তীতে ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমকে নিয়োগ দেওয়া।

মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ ও সারজিস আলমের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি যদি আমার মতামতের কারণে আপনারা কষ্ট পেয়ে থেকেন।আপনাদেরকে নিশ্চিত করতে চাই যে আপনাদের দুইজনের প্রতি আমার ব্যাক্তিগত কোন ক্ষোভ নাই। বরং শ্রদ্ধা রয়েছে যে আপনারা দুই জন গুরু দায়িত্ব পালন করার সাহস দেখিয়েছেন। আপনাদের সাহস ও চেষ্টার প্রতি আমার শ্রদ্ধা জানবেন। আমি কেন বলছি যে আপনারা দুইজন আপনাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন যথাযথ ভাবে পালন করতে সক্ষম না তার জন্য ভিন্ন একটি উদাহারণ দিতে চাই।

জৈবিকভাবে, একটি নারি যখন বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছায় তখন তিনি একটি সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম হন, যা সাধারণত ১০ থেকে ১৬ বছর বয়সের মধ্যে ঘটে। যাইহোক, সম্ভাব্য গর্ভধারণের প্রথম বয়সটি প্রথম মাসিক চক্র দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যা সাধারণত ৯ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে ঘটে। যদিও একজন মেয়ে বয়ঃসন্ধিকালে গর্ভধারণ এবং সন্তান জন্মদানে শারীরিকভাবে সক্ষম হতে পারে, তার শরীর নিরাপদে গর্ভধারণ পরিচালনা করার জন্য সম্পূর্ণরূপে বিকশিত নাও হতে পারে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে নিম্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকির জন্য আদর্শ প্রজনন বয়স সাধারণত ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। খুব অল্প বয়সে (প্রাথমিক কিশোর) বা ৩৫ বছরের পরে গর্ভধারণ মা এবং শিশু উভয়ের জন্য উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকি বহন করে।

নিরাপদে একটু সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান সন্তান জন্মদানের জন্য যেমন একটি নির্দিষ্ট বয়স সীমার নারীর দরকার, তেমন কোন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য একজন ব্যবস্থাপক দরকার যার থাকবে স্বাতন্ত্র্য ভাবে কোন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞা। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ ও সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলমের কোন নন-প্রফিট সংস্থা পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলও না। ফলে এই দুই জন ব্যক্তিকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাধারণ সম্পাদক পদে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিলও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি আবেগই সিদ্ধান্ত কোন বিবেকই সিদ্ধান্ত না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই ভুল সিদ্ধান্তের জন্য শুধু নিহত ও আহত পরিবারের সদস্যদের কাছেই অ-জনপ্রিয় হচ্ছেন তা না, বরং পুরো দেশের মানুষের কাছে সমালোচিত হচ্ছেন যার সুবিধা নিতে চাচ্ছে পালাতক স্বৈরাচারের নেতা-কর্মী ও দোসররা।

আমি আমি আবারও ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি সকলের কাছে। আমি দুঃখের সাথে বলতেছি জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনে নিহত প্রায় ৯ শত (সরকারি গেজেট অনুসারে) ও আহত ২০ হাজার মানুষের পুনর্বাসনের জন্য একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা যে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দরকার তার কোনটাই ছিলও না শহীদ মুগ্ধ এর ভাই ও সমন্বয়ক সারজিস আলমের। শহীদ মুগ্ধ এর ভাই ও সমন্বয়ক সারজিস আলমকে কোন দোষ দিতে চাই না। তারা নিশ্চয় নিজে থেকে গিয়ে ঐ সকল পদে বসেনি। একটি শিশু শৈশবে পোলিও রোগে আক্রান্ত হলে যেমন অবশিষ্ট জীবনে খুঁড়িয়ে চলে; ঠিক একই ভাবে যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন চলতেছে। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পরিচালনা-গত ব্যর্থতার জন্য মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনে নিহত প্রায় ৯ শত (সরকারি গেজেট অনুসারে) ও আহত ২০ হাজার পরিবার। প্রতিদিনই সামাজিক গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে আহত মানুষগুলোর চিকিৎসার দুর্দশার চিত্র ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর চিকিৎসা চালাতে আর্থিক সংগ্রামের কাহিনী।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আবেগের পরিবর্তে বিবেক কাজে লাগাত তবে গত ৬ মাসে আরও বেশি সফলতা অর্জন করতে পারত ও আরও কম সমালোচিত হতো বলে আমি বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভাগ্য অনেক ভালো। কানাডা মাত্র সাড়ে ৩ কোটি মানুষের দেশ। এই দেশে ৫ থেকে ১০ টির মতো জরিপ সংস্থা রয়েছে যে সংস্থাগুলো সাপ্তাহিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, ও বার্ষিক ভাবে সরকারে জনপ্রিয়তা ও ও সরকার প্রধানের এপ্রুভাল রেটিং প্রকাশ করে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত অনেক পরিচিত মানুষ রয়েছেন আমার ফেসবুক বন্ধু লিস্টে। আমি বিনীত ভাবে অনুরোধ করতে চাই, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা বোর্ড পৃথক করুন। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা বোর্ডে ১০ থেকে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পেশাদার ব্যবস্থাপক নিয়োগ করুন যাদের নন-প্রফিট সংস্থা পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা বোর্ডে আবেগের পরিবর্তে বিবেক দিয়ে যোগ্য ম্যানেজার নিয়োগ করুন।

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের একটি পরিচালনা বোর্ড তৈরি করুন যে বোর্ডের কাজ হবে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা বোর্ডের কাজের পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন। এই পরিচালনা বোর্ডের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে আলংকারিক দায়িত্ব পালন করতে পারেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনুস ও বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন শহীদ মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। সেই সাথে পরিচালনা বোর্ডে রাখা যেতে পারে এক বা একাধিক ছাত্র সমন্বয়ক, নিহত ও আহত পরিবারের ৩ থেকে ৫ জন সদস্য (বিভিন্ন শ্রেণির), বিভিন্ন চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অন্য সকল ক্ষেত্রে যতই সফল হউক না কেন, জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনে নিহত ও আহত প্রত্যেকটি পরিবার যদি সরকার ঘোষিত আর্থিক ও চিকিৎসা সহায়তাগুলো না পায় তবে সরকারের চূড়ান্ত অর্জন হবে শূন্য ঠিক যেমন করে কোন সংখ্যাকে শূন্য দিয়ে গুন করলে ফলাফল হয় শূন্য।

আমি মনে-প্রানে চাই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের সময়কালে একটি মাত্র কাজে ১০০% সফল হলে সেই কাজটি যেন হয় জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনে নিহত ও আহত সকল মানুষকে পুনর্বাসন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সফলতা কামনা করছি।


সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ২:০৬
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আমারও লিখতে ইচ্ছে করে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩



বইয়ের ঘ্রাণে মাতাল হাওয়া
আমার মনেও দোলা দিয়ে যায়, আমি অবসর খুঁজি
এক ফালি অবসর আমারও চাই,
তোমরা কতটা স্বাধীনতায় গা ভাসিয়ে বই বুকে আঁকড়ে
সুর উঠাও সুখের আর আমি
তোমাদের সুর কলরব... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাপানি জীবনদর্শন: ৮টি কার্যকরী টেকনিক

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:০৭

এই টেকনিকগুলো প্রতিদিনের জীবনে অনুসরণ করলে জীবনযাপন আরও সহজ হবে।



নিচের এই জাপানি টেকনিকগুলো আমি প্রতিনিয়ত মনে রাখার চেষ্টা করি। সবগুলো একসাথে গুছিয়ে রাখলাম। আশা করি, আপনাদের কাজে লাগবে।

১.... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আ. লীগ নিষিদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৫২




আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে সারাদেশে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আজ বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

সব কিছুরই একটা সাইড ইফেক্ট থাকে...

লিখেছেন অপলক , ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:০৫

অভিনেত্রীদের শরীরের খোলা শহর সকল দর্শকদের জন্যে, আর ঢাকা শহর 'উনাদের' জন্যে। তেনাদের সাথে উনাদের বনিবনা না হলে, তখন সেটা কাস্টিং কাউচ। অত:পর কেউ অন্তরালে চলে যায়, কেউ সময়ের সমান্তরালে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগকতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:৫২



আম্লিগের ১৬ বছরের খুন, গুম, হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজী, জমিদখল, নদী দখল, আয়নাঘর, ব্যাংকলুট এবং বিদেশে দেশের টাকা পাচার এমন হেন অপকর্ম নেই যে আম্লিগ করেনি। মানুষের পিঠ যখন দেয়ালে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×