গ্যাস তোলার দক্ষতা আমাদের নেই। এ কাজ করতে গেলে নয়ছয় বাঁধিয়ে বসতে পারি_এ রকমটাই বলতে চাচ্ছেন সরকারের বিভিন্ন মুখপাত্র। আসলেই কি তাই? বহুজাতিক কম্পানির রেকর্ডও যে এ খাতে খুব ভালো নয় সেটা তাদের ইতিহাস ঘাঁটলেই টের পাওয়া যায়। মাগুরছড়া-টেংরাটিলায় বিপর্যয়ের কাহিনী কিন্তু খুব পুরনো নয়। অধিক বিপর্যয় এড়ানোর জন্য আগেভাগেই সতর্ক হওয়া ভালো
কনোকো-ফিলিপস কম্পানির সঙ্গে ১৬ জুন গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন বিষয়ে একটি চুক্তি হয় পেট্রোবাংলার। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকের গ্যাস অনুসন্ধান করবে। কনোকো-ফিলিপস তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনকারী বহুজাতিক কম্পানি। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের টেঙ্াস অঙ্গরাজ্যে। ২০০২ সালে কনোকো ইনকর্পোরেটেড ও ফিলিপস পেট্রোলিয়াম কম্পানি একত্রিত হয়ে গঠন করে কনোকো-ফিলিপস। ৩০টির বেশি দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। নিজস্ব ওয়েবসাইটে নিজেদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম পেট্রোলিয়াম আহরণ ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান দাবি করলেও তাদের কাজের ইতিহাস ভালো নয়। এর মধ্যেই এদের গাফিলতিতে ঘটেছে ছোট-বড় অনেক দুর্ঘটনা। ২০০৭ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০১০-এর শুরু পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ এডমিনিস্ট্রেশনের (ওএসএইচএ) কাছ থেকে ১১৮ বার পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা ভঙ্গের নোটিশ পেয়েছে। কনোকো-ফিলিপসের কয়েকটি দুর্ঘটনা_
ওয়াশিংটনের বেলিংহামে বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন
বেলিংহামে এক লাখ সত্তর হাজার মানুষের বাস। ২৪ ফেব্রুয়ারি শহরটির লোকজন দেখল আকাশ ধোঁয়ায় ভরে গেছে। সঙ্গে শুরু হলো শ্বাসকষ্ট আর বুকজ্বালা। সেদিন মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে ছড়িয়েছিল ১,১০,০০০ পাউন্ড হাইড্রোফ্লুরিক এসিড। এটি একটি বিপজ্জনক এসিড, যা সরাসরি মানুষের শ্বাসযন্ত্র আক্রান্ত করে মৃত্যু ঘটাতে পারে। বেলিংহামের ১৪ কিলোমিটার এলাকার মানুষ এই বিষাক্ত কেমিক্যালের শিকার হয়। এই গ্যাস নির্গত হচ্ছিল শহরটির মাঝখানে অবস্থিত কনোকো-ফিলিপসের তেল শোধনাগার থেকে। ওয়াশিংটনের মধ্যে শুধু এই প্রতিষ্ঠানটিই তেল শোধনাগারে এই গ্যাস ব্যবহার করে। ওয়াশিংটনের পরিবেশকর্মীদের মতে, হাইড্রোফ্লুরিক এসিড হলো এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বিষাক্ত রাসায়নিক।
কানাডার ডসন ক্রিকে পুড়িয়ে ফেলে গ্যাসকূপ
ডসন ক্রিক থেকে ৪৫ কিলোমিটার পশ্চিমে প্রাকৃতিক গ্যাসের একটি কূপে কনোকো-ফিলিপস গ্যাস উত্তোলন করছিল। ২০০৮ সালের ১১ নভেম্বর রাত ৩টা ৫৫ মিনিটে কূপে আগুন ধরে যায়। দুর্বল কূপটি গ্যাসের চাপ সহ্য করতে না পেরে এরপর পুরোপুরি বিস্ফোরিত হয়। কূপটি জ্বলে টানা ১৩ দিন। বিস্ফোরণের ফলে দুই শতাধিক রকমের রাসায়নিক পদার্থ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। কনোকো-ফিলিপসের এক কর্ণধার স্বীকার করেছেন, ড্রিলিংয়ের সময় অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন হওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে, যা সহজেই এড়ানো যেত।
আলাস্কায় ছড়িয়ে পড়ে তেল
এটা আলাস্কার ইতিহাসে বড় ধরনের তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা। ২০০৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর সবাই যখন ক্রিসমাসের উৎসবে ব্যস্ত, তখনই ঘটল ঘটনা। জীর্ণ ও ক্ষয় হয়ে যাওয়া পুরনো পাইপলাইন ভেঙে ৯৪ হাজার ৯২০ গ্যালন তেল ছড়িয়ে পড়ে সাগরে। এতে ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়ে আলাস্কার জীববৈচিত্র্য। পাইপলাইন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এ ঘটনা ঘটে।
ভূগর্ভস্থ ট্যাংকার ফেটে ছড়িয়ে পড়ল পেট্রোল
ঘটনাটি যুক্তরাজ্যের প্লাইমাউথের মেফ্লাওয়ার টার্মিনালের। ২০০৭ সালের ৭ জুলাই ভূগর্ভস্থ ট্যাংকারের ফাটল থেকে ছড়িয়ে পড়ে ৮০ হাজার লিটারেরও বেশি পেট্রল। ফলে ওই এলাকার ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় কনোকো-ফিলিপস ৫০ লাখ ডলার জরিমানা দিতে বাধ্য হয়। ট্যাংকগুলো নিয়মিত পরীক্ষা করেনি বলেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।
কানাডার এডসনের কাছে গ্যাসকূপে বিস্ফোরণ
এই কূপের গ্যাসে অধিক পরিমাণে বিষাক্ত হাইড্রোজেন সালফাইড ছিল। বিষয়টি জানা সত্ত্বেও বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কনোকো-ফিলিপস। যার ফলে ২০০৬ সালের ৩ মে দুর্ঘটনার শিকার হয় কূপটি। দুইদিন জ্বলার পর নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।
যুক্তরাষ্ট্রের ডালকো প্যাসেজে তেল ছড়িয়ে পড়ে
২০০৪ সালের ১৩ অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডালকো প্যাসেজে হাজার গ্যালন তেল ছড়িয়ে পড়ে। এতে সাগরের পানিতে তেলের স্তর ভেসে ওঠে। জলজ প্রাণীরা মারা পড়ে অনেক। এ ঘটনায় ছাড়া পায় না কনোকো-ফিলিপস। ৫ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা গুনতে হয় তাদের।
এ ছাড়াও ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হাম্বার শোধনাগারে দুর্ঘটনা ঘটে। ১৬ এপ্রিলের এ ঘটনায় এক মিলিয়নেরও বেশি পাউন্ড জরিমানা গোনে কনোকো কম্পানি। ২০০০ সালে প্যাসাডেনায় রেজিনের ট্যাংকে আগুন লেগে ৬৫ জন কর্মী আহত হয়। এই কাজের দায়িত্বে ছিল ফিলিপস কর্পোরেশন।
Click This Link
আরও জানতে
ক্লিক করুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




