বেরসিক অথবা রসিক পানি কোম্পানি।
বছর পাচেক আগের কথা, চাকুরী সুবাদে তখন রাজশাহীতে। হঠাৎ একজন সহকর্মী হন্তদন্ত হয়ে দুটা গ্লাস নিয়ে রুমে ঢুকলো, স্যার কিসের পানি খাচ্ছি দেখসেন? সাপ্লাইওয়ালারা তো আমাগো মাইরা ফেলাইবে, জন্ডিস,আমাশয়ে তো মারা যামু!!
দেখি একটা গ্লাসে শ্যাওলার মত কি জমে আছে, আরেক গ্লাস পরিষ্কার টলটলে।
ব্যাপার কি জিজ্ঞাসা করায়, সহকর্মীর ইশারায় আরেকজন ভদ্রলোক রুমে ঢুকলেন। তার হাতে ছোট্ট একটা যন্ত্রমত জিনিষ, পেটের মধ্য থেকে চারটা পা বেরিয়ে আছে। গ্লাস দু'টার পানি ফেলে দিয়ে আমার পানি খাবার বোতল থেকে আবার পানি ভরা হল। যন্ত্রের দুইপা এবার দুই গ্লাসে ঢুকিয়ে ইলেক্ট্রিসিটির সাথে সংযোগ দেয়া হল।
কিছুক্ষন পর আমার চোখও কপালে, বলেকি, বউ আমারে পানি ভরে দেয় প্রতিদিন অফিসে আসার সময়, একদম নিয়ম মেনে ফুটানো পানি!!তার এই অবস্থা!!!
শ্যাওলা জমে কালচে মত হয়ে গেছে গ্লাসের পানি!!
তবে ওই ভদ্রলোক আশ্বস্ত করলেন, স্যার যত পানিই আপনি পাবেন, এমনকি বোতলের মিনারেল ওয়াটারও, সব গুলার একই অবস্থা!!
তবে এটার প্রতিকার আছে, আমাদের কাছে যে যন্ত্র আছে এটার পরিশুদ্ধ পানি কখনো এরকম হবেনা।
প্রমান করেও দেখালেন।
তা দাম কত যন্ত্রটার?
১৫০০০/টাকা, আপনারা যদি একসাথে কয়েকটা নেন তবে আরও কম পড়বে।
কিন্তু আমার মনে খুচখাচ করতে থাকল। ফুটানো পানি,মিনারেল ওয়াটার,সাপ্লাই এর পানি সব এরকম অদৃশ্য শ্যাওলা দিয়ে ভরা??
মনে হতে থাকল কোথাও যেন গরবর আছে। পানিতে যে অদৃশ্য মিনারেল থাকে তা কোনভাবে কন্ডেন্সেটেড হয়ে এরকম হচ্ছে না তো?
সময়ের অভাবে তখন বিশদ যাচাই করা হয়নি এবং সন্দেহের কারনে নেওয়াও হয়নি।
আজ আবার এতদিন পর আরেকজন সহকর্মী বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করায় মনে পড়ল। সে আবার ইতিমধ্যে তাদের প্রমোশন করা 'পানি বিশুদ্ধ করন' যন্ত্রটি কিনেও ফেলেছে এবং সবাইকে উদ্বুদ্ধও করছে!!!
এধরনের পরীক্ষা কে বলে 'জ্যাম জার টেস্ট' অথবা টিডিএস টেস্ট (TDS- Total dissolve salt test)। এটা এক ধরনের খুব বেসিক টেস্ট। ছোটবেলায় আমরা অনেকেই গাড়ীর ব্যাটারি বা ডায়নামো দিয়ে একধরনের খেলা খেলতাম। আমার গোলাম নবী মামার খুব দুষ্টামি বুদ্ধি ছিল। বাসায় গেলেই হাতে দুটা লোহার পাত/ লিড ধরিয়ে দিত আর উনি ডায়নামোর ছোট্ট হুইল ঘুরাতেন। বিদ্যুৎ তৈরি হয়ে আমরা শক খেতাম। মামার সিদ্ধান্ত ছিল,যা তোদের জীবনেও আর নানির মতো বাত হবেনা!!!
জ্যাম জার টেস্ট অনেকটা সেরকম। ইলেক্ট্রাকেমিক্যাল সার্কিট বা প্রিসিপিটেটর।এটি পানিতে দ্রবীভূত প্রাকৃতিক লবন সমুহকে প্রিসিপিটেট করে বাদামী শ্যাওলা রং এর আঠালো গু(goo) তৈরি করে ফেলে।(এটি আসলে স্বাভাবিক বিক্রিয়া) আর যারা দেখছি তাদের মনে হয় ওয়াক থু, এই পানি খাচ্ছি??
তবে (RO), রিভার্স অসমোসিস,পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ করা পানিতে যেহেতু খুব অল্প প্রায় না থাকার মতো মিনারেলস থাকে সেহেতু এই পানিতে প্রিসিপিটেট পরবে না। এবং তাদের যন্ত্র কেনার জন্য আপনি উদ্বুদ্ধ হবেন সহজেই।
পানি বিশুদ্ধ করন যন্ত্র কেনায় আমার আপত্তি নেই। বরংচ উদ্বুদ্ধই করবো। আপত্তি হচ্ছে তাদের পদ্ধতিতে। বিশুদ্ধ পানিকে তারা বানিয়ে দিচ্ছে অবিশুদ্ধ। আপনার মনে একধরনের অনিরাপত্তা বোধ, কোন কোন ক্ষেত্রে বিবমিষা তৈরি করে দিচ্ছে।
সহকর্মীর সামনেই 'বিশুদ্ধ' ঘোষিত পানিতে একটু খাবার লবন মেশানোর পর 'মহান' যন্ত্রটা চালু করলাম....শ্যাওলা বাদামী রং এর 'গু' (goo) এ গ্লাসটা ভরে গেল!!!!
সংবিধিবদ্ধ সতর্কিকরন: পানিতে আর্সেনিক, লোহা, ম্যাংগানিজ, সোডিয়াম ছাড়াও অনেক ক্ষুদ্র মিনারেল থাকতে পারে। কিছু মিনারেল শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়, কিছুর উপস্থিতি অতিরিক্ত মাত্রায় হলে ক্ষতিকর। ব্যাক্টেরিয়ার উপস্থিতি বিশেষত কলিফর্ম ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাস অবশ্যই ক্ষতিকর।এজন্য পাবলিক হেলথে অথবা আইসিডিডিআরবি থেকে পানি পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত। ইলেক্ট্রালাইসিস যন্ত্র
ছবি: অন্তরর্জাল
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:৫১