somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেরসিক অথবা রসিক পানি কোম্পানী

১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেরসিক অথবা রসিক পানি কোম্পানি।

বছর পাচেক আগের কথা, চাকুরী সুবাদে তখন রাজশাহীতে। হঠাৎ একজন সহকর্মী হন্তদন্ত হয়ে দুটা গ্লাস নিয়ে রুমে ঢুকলো, স্যার কিসের পানি খাচ্ছি দেখসেন? সাপ্লাইওয়ালারা তো আমাগো মাইরা ফেলাইবে, জন্ডিস,আমাশয়ে তো মারা যামু!!
দেখি একটা গ্লাসে শ্যাওলার মত কি জমে আছে, আরেক গ্লাস পরিষ্কার টলটলে।
ব্যাপার কি জিজ্ঞাসা করায়, সহকর্মীর ইশারায় আরেকজন ভদ্রলোক রুমে ঢুকলেন। তার হাতে ছোট্ট একটা যন্ত্রমত জিনিষ, পেটের মধ্য থেকে চারটা পা বেরিয়ে আছে। গ্লাস দু'টার পানি ফেলে দিয়ে আমার পানি খাবার বোতল থেকে আবার পানি ভরা হল। যন্ত্রের দুইপা এবার দুই গ্লাসে ঢুকিয়ে ইলেক্ট্রিসিটির সাথে সংযোগ দেয়া হল।
কিছুক্ষন পর আমার চোখও কপালে, বলেকি, বউ আমারে পানি ভরে দেয় প্রতিদিন অফিসে আসার সময়, একদম নিয়ম মেনে ফুটানো পানি!!তার এই অবস্থা!!!
শ্যাওলা জমে কালচে মত হয়ে গেছে গ্লাসের পানি!!
তবে ওই ভদ্রলোক আশ্বস্ত করলেন, স্যার যত পানিই আপনি পাবেন, এমনকি বোতলের মিনারেল ওয়াটারও, সব গুলার একই অবস্থা!!
তবে এটার প্রতিকার আছে, আমাদের কাছে যে যন্ত্র আছে এটার পরিশুদ্ধ পানি কখনো এরকম হবেনা।
প্রমান করেও দেখালেন।
তা দাম কত যন্ত্রটার?
১৫০০০/টাকা, আপনারা যদি একসাথে কয়েকটা নেন তবে আরও কম পড়বে।
কিন্তু আমার মনে খুচখাচ করতে থাকল। ফুটানো পানি,মিনারেল ওয়াটার,সাপ্লাই এর পানি সব এরকম অদৃশ্য শ্যাওলা দিয়ে ভরা??
মনে হতে থাকল কোথাও যেন গরবর আছে। পানিতে যে অদৃশ্য মিনারেল থাকে তা কোনভাবে কন্ডেন্সেটেড হয়ে এরকম হচ্ছে না তো?
সময়ের অভাবে তখন বিশদ যাচাই করা হয়নি এবং সন্দেহের কারনে নেওয়াও হয়নি।
আজ আবার এতদিন পর আরেকজন সহকর্মী বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করায় মনে পড়ল। সে আবার ইতিমধ্যে তাদের প্রমোশন করা 'পানি বিশুদ্ধ করন' যন্ত্রটি কিনেও ফেলেছে এবং সবাইকে উদ্বুদ্ধও করছে!!!
এধরনের পরীক্ষা কে বলে 'জ্যাম জার টেস্ট' অথবা টিডিএস টেস্ট (TDS- Total dissolve salt test)। এটা এক ধরনের খুব বেসিক টেস্ট। ছোটবেলায় আমরা অনেকেই গাড়ীর ব্যাটারি বা ডায়নামো দিয়ে একধরনের খেলা খেলতাম। আমার গোলাম নবী মামার খুব দুষ্টামি বুদ্ধি ছিল। বাসায় গেলেই হাতে দুটা লোহার পাত/ লিড ধরিয়ে দিত আর উনি ডায়নামোর ছোট্ট হুইল ঘুরাতেন। বিদ্যুৎ তৈরি হয়ে আমরা শক খেতাম। মামার সিদ্ধান্ত ছিল,যা তোদের জীবনেও আর নানির মতো বাত হবেনা!!!
জ্যাম জার টেস্ট অনেকটা সেরকম। ইলেক্ট্রাকেমিক্যাল সার্কিট বা প্রিসিপিটেটর।এটি পানিতে দ্রবীভূত প্রাকৃতিক লবন সমুহকে প্রিসিপিটেট করে বাদামী শ্যাওলা রং এর আঠালো গু(goo) তৈরি করে ফেলে।(এটি আসলে স্বাভাবিক বিক্রিয়া) আর যারা দেখছি তাদের মনে হয় ওয়াক থু, এই পানি খাচ্ছি??
তবে (RO), রিভার্স অসমোসিস,পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ করা পানিতে যেহেতু খুব অল্প প্রায় না থাকার মতো মিনারেলস থাকে সেহেতু এই পানিতে প্রিসিপিটেট পরবে না। এবং তাদের যন্ত্র কেনার জন্য আপনি উদ্বুদ্ধ হবেন সহজেই।
পানি বিশুদ্ধ করন যন্ত্র কেনায় আমার আপত্তি নেই। বরংচ উদ্বুদ্ধই করবো। আপত্তি হচ্ছে তাদের পদ্ধতিতে। বিশুদ্ধ পানিকে তারা বানিয়ে দিচ্ছে অবিশুদ্ধ। আপনার মনে একধরনের অনিরাপত্তা বোধ, কোন কোন ক্ষেত্রে বিবমিষা তৈরি করে দিচ্ছে।

সহকর্মীর সামনেই 'বিশুদ্ধ' ঘোষিত পানিতে একটু খাবার লবন মেশানোর পর 'মহান' যন্ত্রটা চালু করলাম....শ্যাওলা বাদামী রং এর 'গু' (goo) এ গ্লাসটা ভরে গেল!!!!

সংবিধিবদ্ধ সতর্কিকরন: পানিতে আর্সেনিক, লোহা, ম্যাংগানিজ, সোডিয়াম ছাড়াও অনেক ক্ষুদ্র মিনারেল থাকতে পারে। কিছু মিনারেল শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়, কিছুর উপস্থিতি অতিরিক্ত মাত্রায় হলে ক্ষতিকর। ব্যাক্টেরিয়ার উপস্থিতি বিশেষত কলিফর্ম ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাস অবশ্যই ক্ষতিকর।এজন্য পাবলিক হেলথে অথবা আইসিডিডিআরবি থেকে পানি পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত। ইলেক্ট্রালাইসিস যন্ত্র


ছবি: অন্তরর্জাল
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:৫১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×