স্মৃতি মনে হয় মানুষের আদর আর যত্নে রাখা এক বড় সম্পদ।সবচেয়ে কম কত বছর বয়সের স্মৃতি মানুষ মনে করতে পারে? মানুষ ভেদে ২ থেকে শুরু করে ৩,৪ আবার অনেকে আরো বেশী বয়স পর্যন্ত যেতে হয় প্রথম স্মৃতির সন্ধানে। আমি স্মরণ করতে পারি আমার ৩ বা ৩.৫ বছরের স্মৃতি যখন আব্বু আম্মু সহ অস্ত্র মেলা দেখতে গিয়েছিলাম পুরাতন বিমানবন্দরে।কোন আইসক্রিম খেতে গিয়ে শুধু আইসক্রিম খেয়ে “কোন” টা ফেলে দিয়েছিলাম।আম্মু বলল “ফেলে দিলে কেন আম্মু!এটাও খেতে হয়। সবটুকু খাওয়া যায়।” একটু পরই আব্বু অবশ্য আরেকটা কিনে দিয়েছিল।
প্রথম সন্তান কে কথা শেখানো, অক্ষর চিনিয়ে দেয়ার ব্যাপারে মা-বাবাদের বোধহয় আগ্রহ একটু বেশীই থাকে।বড় হবার পর শুনেছি আমি প্রথম কথা শেখার পর যখন বলতে চাইতাম কাকা, বাবা ,দাদা, তখন আম্মু আমাকে বলাতো “বলো, অ তে অজগর। আ তে আপেল।” যেন তখনই স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবে। দেরী হয়ে যাচ্ছে অনেক!!
অতি আগ্রহের কারনে বেশ আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল আমার শিক্ষাজীবন। কিন্টারগার্ডেন স্কুলে সাদা শার্ট আর নেভী ব্লু রঙের স্কার্টের সাথে ইলাস্টিকের টাই।তখন কমন দুস্টামি ছিল টাই ধরে টান দিয়ে ছেড়ে দেয়া। উফফফফ.।গলায় যে কি ব্যাথা লাগতো।
জ়ীবনের প্রথম পরীক্ষায় আম্মুর সে কি উৎকন্ঠা! "সব ঠিক মত লিখবে। বারবার পেন্সিল শার্প করবে না।সময়ের আগে লেখা শেষ করার জন্য তাড়াহুড়া করবে না" ইত্যাদি। সবই শুনলাম এবং পরীক্ষার খাতায় অথবা সহ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা যা ছিল সব উত্তর দিলাম।কিন্তু খাতা যে জমা দিতে হয় সেটাই তো জানি না। আর কি! খাতা ভাঁজ করে শার্টের পকেটে করে বাসায় নিয়ে আসলাম!!!
স্কুলের সহপাঠি বা প্রতিবেশী প্রায় বন্ধুদের কারো সাথে সেভাবে সখ্যতা গড়ে ওঠেনি কখনো। বেস্ট ফ্রেন্ড শব্দ টার কোন অস্তিত্ব আমার কাছে নেই, ছিল না । অনেকের মধ্যে সাধারণ একজন হিসেবে স্কুলে ক্লাসে যাওয়া আসার মাঝে কেটেছে নিয়মতান্ত্রিক ভাবলেশহীন দিনগুলো। তবুও কিছু দোষারোপে সংজ্ঞায়িত হয়েছি বারবার। মনে পড়ে ক্লাস নাইনে পদার্থ বিজ্ঞানের তরঙ্গ অধ্যায় শেষে ম্যাডাম চলে যাওয়ার পর কয়েক মিনিটের বিরতিতে গুনগুনানি গল্প। সবার মুখে একটু আগে পরিচিত হওয়া চিহ্ন ল্যামডা (λ)।ক্লাসের সবচেয়ে লম্বা মেয়েটিকে দেখে ল্যামডার সাথে সাদৃশ্য পাওয়ায় বলেছিলাম “তুমি বাঁকা হয়ে দাড়ালে ল্যামডার মত দেখায়।”দুষ্টামির প্রকারভেদ চিন্তা করলে নিরীহ ধরনের ই মনে হয়।
ব্যস...আর যাই কোথায়। “কেন আমাকে খারাপ কথা বলেছ তুমি?”।পুরো ক্লাস চুপ, হতবাক।তারপর হন্তদন্ত ভাবে
বই খুঁজে উত্তর “তুমি তো থিটা,আলফা ,বিটা ,ফাই, ওমেগা (θ ,α , β, ø, Ω) ।” এবার সবার উচ্চস্বরে হাসি।এতে আরো রেগে গিয়ে আমাকে বললো “ চল এক্ষুনি ক্লাস টিচার এর কাছে বিচার দিব যে তুমি আমাকে ল্যামডা বলে গালি দিয়েছ।” ঘটনা ওখানে না থেমে গড়ালো ক্লাস টিচার , ক্লাস টেন এর আপুরা এবং টিচার্স রুম পর্যন্ত।হতবাক, নির্বাক আমি। বাসায় ফেরার পর সব শুনে আব্বু ডেল কার্নেগীর “প্রতিপত্তি ও বন্ধুলাভ” বইটি দিয়ে বইয়ে যেভাবে বলা আছে তা মেনে সেভাবে চলতে বলল যাতে মানুষ আমাকে শত্রু না ভাবে।ডেল কার্নেগীর ভাব ধারার সাথে ওটাই আমার প্রথম পরিচয়।
অনেক কথা লিখে ফেললাম নিজের সম্পর্কে। আজ আর লিখতে ইচ্ছা করছে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




