স্যার সকালে আমাকে বাঁকা চোখে কয়েক বার জিজ্ঞেস করেছেন;
এই, তোর লেখা পড়া নাই? চলে যাসনি কেন?
‘কয়দিন পর তো পরীক্ষা। লাড্ডু পাশ দিবি’। লাড্ডু পাশ কাকে বলে জানি না। বাক্যটা আমার জন্য নতুন। কথা গুলো আমি ছাড়া কেউ শুনেনি। আমাকে পড়া-লেখায় তাগাদা দেবার কেউ ছিল না। আমি নিজ দায়িত্বেই কাজটি এ পর্যন্ত করে আসছি। আজ একজন লোক পেলাম; যে আমাকে সামনে পরীক্ষা, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। আমার ফলাফল নিয়ে তিনি চিন্তিত বুঝা যাচ্ছে। বাচন ভঙ্গি আর দৈহিক ইঙ্গিত তেমন ভদ্রতা পূর্ণ মনে হল না। ‘যা’ শব্দটি অঙ্গ-ভঙ্গির উপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ ধারণ করে। যাকে নির্দেশটি দেয়া হয়, সেই বুঝতে পারে প্রকৃত অর্থ। আমার মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই ‘যাসনি’র পেছনে কোন উদ্দেশ্য আছে । উদ্দেশ্যটা কি তা বুঝতে পারছি না।
বিকেলে স্থানীয় বাজারে গিয়েছিলাম। বিরাট বাজার সকাল সন্ধ্যা দুই বেলা বসে। আমি যেতে চাইনি। দিলরুবাই আমাকে পাঠিয়েছে। জিলাপি বানানো হবে । গুড় দরকার। বাজারে দোকানের সামনে সুমির স্যার আর কিছু ছেলে আমাকে দেখে নিজেদের মধ্যে কি যেন বলছে। ফিরে আসার সময় ওরা তিন জন আমার আগে পিছে হাটছে। আমাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। একজন আমাকে ইচ্ছে করে ধাক্কাও দিয়েছে । অল্পের জন্য বাজারের ড্রেনের ময়লা পানিতে পড়া থেকে বেঁচে গেছি। কেন এমন করা হচ্ছে; হেতু খুঁজে পাচ্ছি না। বাসায় ফিরে এসে কাউকে ঘটনাটি বলিনি। খালা আমাকে বলতেন ‘আইব যত বেশী লুকিয়ে রাখা যায় ততই কল্যাণ’। যা কেউ জানে না ; তা জানিয়ে দিয়ে উপহাসের পাত্র হওয়া ঠিক হবে না । একজন বলেছিল, 'কালকে তোকে এখানে আবার দেখলে, মাথা নেড়া করে দেব'। ভয় হচ্ছে আমার।
বাসায় ফেরার পর সুমি আমাকে কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে।
কি হয়েছে?
আমি বলেছি; কিছুই না।
আমার বার বার মনে হয়েছে সুমির ইন্দ্রিয় একটা বেশী আছে। যা দিয়ে সে অনেক কিছু বুঝতে পারে। সে দিন হাসপাতালের ক্যাবিনে আমার গায়ে গন্ধ পেয়েছিল। আজ বলছে কি হয়েছে? সে নানান উপায় অবলম্বন করছে বের করার জন্য। আমি নিজেও যা জানি না। তাকে কিভাবে বলব? আমি কাঁথা গায়ে দিয়ে শুইয়ে পড়েছি। এত রাতে চলে যাবার কোন ব্যবস্থা নেই; না হয় চলে যেতাম। ভাবছি সকালে চলে যাব।
সুমি দিলরুবাকে ডেকে এনেছে। আমি শুইয়ে ছিলাম। দিলরুবা খাটের উপর বসে আমার কপালে হাত দিয়ে দেখছে। ঠাণ্ডা হাত। আমি সরিয়ে দিয়েছি; এর মধ্যেই দিলরুবা যেন, একটা ভাষা খুঁজে পেল। তার চেহারায় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে । আমাকে আর বিরক্ত করল না। যে দিলরুবার স্পর্শ পাওয়ার জন্য আমার হৃদয় ব্যাকুল হত; আজ আমি সেই পরশ ফিরিয়ে দিলাম। সুমি দরজার পাশে ঠাই দাঁড়িয়ে দেখছে। কারো মুখে কথা নেই। শব্দহীন ভাষায় চলছে পরিস্থিতি অনুধাবনের চেষ্টা। নীরবতার একটা ভাষা আছে; এর অর্থ এক একজনের কাছে একেক রকম। যাদের পরিস্থিতি অনুধাবন করার শক্তি আছে; তারা কিছুটা আঁচ করে নিতে পারেন। সুমির চেহারা মেঘে ঢেকে আছে। কি বুঝছে জানি না। নানী সবাইকে খেতে যাবার জন্য চেঁচামেচি করছে।
এই সুমি! আজ তোর পেটে কি পাত্থর বেধেছিস?
খাবি না?
ব্যস্ততার মধ্যেই লেখা। ভুল গুলো ধরিয়ে দিলে খুশি হবো।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




