আপনারা ইতিমধ্যে জেনেছেন, সাভারে কি পরিমান হতাহত হয়েছে। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, প্রায় ২৫০০ মানুষকে। মৃতদের কথা বাদই দিলাম, কারন মৃতরা সকল হিসাবের উর্দ্ধে। আমাদের এখন চিন্তা করতে হবে যারা বেঁচে আছেন তাদের চিকিৎসা বা পূর্নবাসনের ব্যাপারে।
ইতিমধ্যেই অনেকে সাহায্য করছেন, কেউ বা সাহায্য করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। নিজেদের মানবিকতা প্রকাশের এটাই শ্রেষ্ঠ সময়। তবে এই উদ্যোগগুলো যদি সম্মিলিত আকারে করা যায় তাহলে সেটার প্রয়োগটা অনেক ভালো হয় এবং আমরা সকলেই সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।
মাঠ পর্যায়ে গিয়ে আহত শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গিয়েছে, অল্প কিছু বাদ দিয়ে অধিকাংশই প্রাথমিক সরকারী বা বেসরকারী সাহায্য পেয়েছেন। অন্তত এই ক্ষেত্রে কোন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি হয় নি। তবে মুল যে ক্ষতিপূরনের ব্যাপার আছে, সেটা অবশ্যই আমলা তান্ত্রিক জটিলতায় আবদ্ধ।
এই মানবিক সাহায্য কার্যক্রমকে সফল করা লক্ষ্যে আহত শ্রমিকদের একটা তালিকা আমরা মাঠ পর্যায়ে ঘুরে এবং অন্যান্য যে সকল সংগঠন কাজ করছে তাদের সাহায্যের ভিত্তিতে প্রস্তুত করেছি। প্রাথমিক ভাবে এই তালিকায় আছে প্রায় ১০৮ জনের নাম। এদের মধ্যে প্রায় ২৫ জন অতি অতি ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত হয়েছেন। এখানে উল্লেখ্যেও যে, এমন অনেক শ্রমিক আছেন যাদের হয়ত কোন অংগহানি হয়েছে, কিন্তু তাদের পারিবারিক অবস্থা খুব একটা খারাপ নয়। তারা ইতিমধ্যে সরকারী সাহায্য পেয়েছেন, বেসরকারী সাহায্যও পেয়েছেন। পরিবারে অন্য উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আছেন। যেহেতু আমাদের বাজেটের একটা ব্যাপার আছে, তাই এই ক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে অতি ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে বিবেচনা করছি না।
অনেক আহত শ্রমিক আছেন, যাদের হয়ত কোমড়ের হাড় ভেঙে গিয়েছে, এবং তাদের পক্ষে অন্তত আগামী ২ থেকে ৩ বছর কোন প্রকার কাজ করা সম্ভব নয় এবং তারাই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এই ক্ষেত্রে আমরা অতি ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে এদেরকেই বিবেচনা করেছি।
বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে গিয়ে আহত শ্রমিক এবং ডাক্তাদের সাথে কথা বলে জেনেছি, যারা সাহায্য করতে যাচ্ছেন, তারা মূলত যাদের অংগহানী হয়েছে, বা শরীরে বড় কোন ব্যান্ডেজ দেখতে পাচ্ছেন, তাদেরকেই তারা সাহায্য করছেন। এতে অনেক সময় অন্য যারা ক্ষতিগ্রস্ত আছেন তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। সুতরাং এদের প্রতি নজরা দেয়াটা আমাদের কর্তব্য।
এখন পর্যন্ত যারা নিখোঁজ আছেন তাদের একটি তালিকা করার কাজ আমরা হাতে নিয়েছিলাম, কিন্তু বিষয়টি অনেক সময় সাপেক্ষ এবং অনেক কিছু যাচাই বাছাই এর ব্যাপার আছে। আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি অনেক ফলস কেস ধরা পড়েছে, যারা মিথ্যে স্বজন হারার অভিযোগ করছেন। আমাদের যে সীমিত বাজেট তাতে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এই মূহুর্তে এই সব নিখোঁজ বা মৃত মানুষের তালিকা প্রস্তুত করাটা শুধু শুধু সময় ক্ষেপন হবে। তাই সেই তালিকা প্রস্তুত করার কাজ আপাতত আমরা বাদ দিয়েছি। আমি একটি এনজিওকে চিনি যারা নিখোঁজ শ্রমিকদের একটি তালিকা প্রস্তুত করছেন, যদি সব ঠিক থাকে তাহলে আগামী ৫ তারিখ সেই লিস্টটি আমার হাতে এসে পৌছাবে।
যারা মারা গিয়েছেন, তাদের মধ্যে আমরা বেশ কিছু পরিবারকে চিহ্নিত করেছি, যাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি নিহত হয়েছেন। আমরা যখন আমাদের মোট প্রাপ্ত অর্থের পরিমান নির্ধারন করতে পারব, তখন তার উপর ভিত্তি করে এই ধরনের কয়টি মৃতদের পরিবারকে আমরা সাহায্য করব সেটা নির্ধারন করা যাবে।
যে বিষয়ে সকলের মতামত চাইছিঃ
১) গড়ে ২০০০/৩০০০/৫০০০ টাকা দিয়ে নগদ চিকিৎসা সাহায্য প্রদান।
২) আমরা কি পূর্নবাসন সংক্রান্ত কোন পরিকল্পনায় যাব?
৩) যদি পূর্নবাসন সংক্রান্ত কোন পরিকল্পনায় যাই, তাহলে পুর্নবাসনের প্রক্রিয়াটা কি হতে পারে?
৪) পূর্নবাসনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বিবেচনায় কোন বিষয়টি নেয়া দরকার?
আমাদের প্রস্তাবসমূহঃ
ক) আমরা কি আহত এমন ১০ ব্যাক্তির সারাজীবনের দায়িত্ব নেব যারা আর কোনদিন কাজ করতে পারবেন না?
খ) নাকি সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন আহত শ্রমিককে আমরা কোন নির্দিষ্ট আয়ের ব্যবস্থা করে দিব। যেমন, একটা দোকান করে দেয়া, বা সেলাই মেশিন কিনে দেয়া অথবা কিছু পশুপালন সংক্রান্ত কোন সাহায্য। এতে করে তারা নতুন করে স্বর্নিভর ভাবে বাঁচতে পারবেন।
এখানে উল্লেখ্য আরেকটি বিষয়, যারা সাভার দূর্ঘটনায় অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন, বা যে কোন প্রকার পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন, তাদের জন্য সাভারের সিআরপি বিনামুল্যে বিভিন্ন প্রকার সাহায্য করছে এমনকি যাদের অঙ্গহানি হয়েছে তাদের প্রত্যেকেই বিনামূল্যে কৃত্তিম হাতপা সংযোজন এবং প্রয়োজনে পূর্নবাসনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, সেখান নগদ আর্থিক সাহায্যের করারও ব্যবস্থা আছে। কেউ চাইলে সেখানেও টাকা দিতে পারেন।
বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে এই সব আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার নামে একধরনের অপব্যবসা চলছে। এই সব হাসপাতালগুলোতে কিছুদিন চিকিৎসা করিয়ে ঘুরে ফিরে সেই সিআরপিতেই ঐ আহত শ্রমিকদেরকে পাঠানো হচ্ছে বা হবে বলে দেখা গিয়েছে। সেই ক্ষেত্রে যারা নিজ উদ্যোগে কাজ কাজ করছেন, তারা চাইলে তাদের জানামতে এই ধরনের আহত বা পঙ্গুত্ববরনকারী শ্রমিকদেরকে সিআরপিতে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারেন। তবে যেহেতু এখনও অনেক জায়গায় সরকারী বা প্রশাসন থেকে সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে, তাই বুঝে শুনে এবং সঠিক খোঁজ খবর নিয়ে আহত ব্যক্তিদেরকে সিআরপিতে ট্রান্সফার করতে হবে।
এই প্রস্তাবগুলোকে আপনারা উদহারন হিসেবে নিতে পারেন। মনে রাখবেন আমরা যাই করি না কেন, আমাদের সেটা দ্রুতই করা উচিত। তাই এই বিষয়ে আপনাদের সকলের মতামত চাচ্ছি। যদি নতুন কোন প্রস্তাব থাকে তাহলে সেটা আপনারা আমাদের সাথে শেয়ার করবেন। আমরা চাচ্ছি আগামী ৯ তারিখ থেকে এই সাহায্য কার্যক্রম বাস্তবায়িত করতে।
এখন আপনাদের মতামত দিন। সবার মতামতের ভিত্তিতে যা সবার বেশি সমর্থন পাবে, আমরা অতিদ্রুত সেটা বাস্তবায়ন করতে চাই। যত দ্রুত করা যাবে, সেটা আমাদের সকলের জন্যই ভালো।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৪ ভোর ৬:৩৫