somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাল্পনিক_ভালোবাসা
বহুদিন আগে কোন এক বারান্দায় শেষ বিকেলের আলোয় আলোকিত উড়ন্ত খোলা চুলের এক তীক্ষ্ণ হৃদয়হরনকারী দৃষ্টি সম্পন্ন তরুনীকে দেখে ভেবেছিলাম, আমি যাদুকর হব। মানুষ বশীকরণের যাদু শিখে, তাকে বশ করে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিব সারাটি জীবন।

ফিচারঃ রহস্যময় স্কাই কেভ বা আকাশের গুহা।

২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উত্তর মধ্য নেপালের তীব্বত এবং চায়না সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় একসময় মুসট্যাংগ (Mustang) নামক একটি রাজ্য ছিল যা পৃথিবীর অন্যতম দূর্গম এবং প্রাচীন স্থানগুলোর একটি। হিমালয় পর্বত এবং গ্রান্ড ক্যানিয়নের মত গভীর, পাহাড়ি গিরিখাতের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা ভয়ংকর স্রোতের কালী গান্দাকি নদী এই স্থানটিকে এক প্রকার প্রাকৃতিক ভাবেই পৃথিবী থেকে আড়াল করে রেখেছে। এখানে যে কোন মুহুর্তে কোন পূর্বাভাস না দিয়েই শুরু হয় প্রচন্ড ঝড়ো বাতাস এবং ধুলি ঝড় যা ঐ অঞ্চলে ভ্রমনের অন্যতম বড় বাধাও বটে।



উনিশ শতকের মাঝামাঝি কিছু বিজ্ঞানী এবং প্রত্নতত্ত্ববিদ এই ভয়ংকর বিপদজনক পাহাড়ী ঢালে প্রায় হাজার দশেক মানব সৃষ্ট গুহার সন্ধান পান।যার ভেতরে অনেক প্রাচীন বৌদ্ধ সাধুদের মৃতদেহ, নারী শিশুদের মমি, মূল্যবান তৈজসপত্র, পশুর কংকাল এবং প্রাচীন পান্ডুলিপির সন্ধান পাওয়া যায়। তবে কারা এই গুহা খনন করেছে, বা ঠিক কি উদ্দেশ্যে খুড়েছে তার ব্যাপারে কোন সঠিক তথ্য জানা যায় নি। এমন কি এই গুহা গুলোতে প্রবেশের ব্যাপারে পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। কিছু কিছু গুহা পাহাড়ের এমন সব স্থানে তৈরী করা হয়েছে, আপাত দৃষ্টিতে দেখে মনে হবে সেখানে উঠতে হলে পাখি হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। ফলে একটা সময়ে এই রহস্যময় পাহাড়ী গুহাগুলোর নাম হয়ে যায় আকাশের গুহা। বর্তমানে যা প্রত্নতাত্বিকদের কাছে রহস্যময় স্কাই কেভ হিসেবেই পরিচিত। এই স্কাইকেভগুলোকে পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রত্নতাত্বিক রহস্যের অন্যতম সেরা কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।



বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা এবং তার দর্শন, চিত্রকলা প্রভৃতি নিয়ে প্রায় সাতশ বছর আগে মুসট্যাংগ ছিল একটি ব্যস্ত জনপদ। সেই সময়ে লবন ছিল পৃথিবীর অন্যতম দামী পন্য। চার্লস র‍্যাম্বল নামের ফ্রান্সের জনৈক নৃতত্ব বিজ্ঞানী মতে, এই অঞ্চলটি ছিল তিব্বতের লবন খনিগুলো সাথে ভারতীয় উপমহাদেশের যাতায়াতের অন্যতম সহজ পথ। ধারনা করা হয়, এই বিপদজনক পাহাড়ী অঞ্চল দিয়েই লবন এবং অন্যান্য দামী পন্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা যাতায়াত করত। তিনি আরো বলেন, সতেরশ শতকের গোড়ার দিকে পার্শবর্তী রাজ্যগুলো মুসট্যাংগ এর এই একচেটিয়া উত্থানকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য নানারকম কূটপরিকল্পনা শুরু করে। এই পরিকল্পনা অংশ হিসেবে তারা মুসট্যাং এর উপর বিভিন্ন রকম বিধিনিষেধ এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে এই পথ দিয়ে ব্যবসা বানিজ্য, চলাচল বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে ভারতে লবনের বাজার বেশ সহজলভ্য হয়ে উঠে। ফলে ব্যবসায়ীরা মুসট্যাঙ্গের বদলে ভারতকেই বেছে নেয়। মানুষের চলাচল কমে যায়, অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের শিকার হয়ে মুসট্যাঙ্গের বিখ্যাত ধর্মীয় মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মান্ডালার মত


(মান্ডালাঃ হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের এক প্রকার বিশেষ আধ্যাতিক প্রতীক। ছবি সুত্রঃ উকিপিডিয়া)
বিখ্যাত কিছু পন্যের বাজারে খুব দ্রুত ধস নামে। অনেক মানুষের হাহাকারকে সঙ্গী করে গতানুগতিক ধারার অনেক আগেই এই বিখ্যাত জনপদটি একসময় হারিয়ে যায় চির রহস্যময় সুউচ্চ হিমালয় পর্বতের আড়ালে।



উনিশ শতকের মাঝামাঝি জার্মানের University of Cologne
এবং নেপালের একদল প্রত্নতত্ববিদ সেই হারিয়ে যাওয়া মুসটাঙ্গ জনপদে অভিযান চালায়। সেই অভিযানে প্রত্নতাত্বিকগন প্রায় দুইহাজার বছর পূর্বের বেশ উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক কিছু কংকাল এবং প্রাকৃতিকভাবে মমি হয়ে যাওয়া কিছু লাশের সন্ধান পান। এই মমিগুলোর প্রায় সবগুলোই সুন্দর তামার গয়না আচ্ছাদিত কাঠের বাক্সে রাখা। গুহায় এমন সব তৈজসপত্র, গহনা এবং কাচের পন্য পাওয়া গিয়েছে যা তৎকালীন সময়ে মুসট্যাঙ্গে প্রাপ্ত পন্যের মধ্যে পড়ে না। দুষ্প্রাপ্য এবং মূল্যবান এই সব গয়না ও অন্যান্য পন্যের প্রাচুর্য দেখে বুঝা যায় একটা সময় কতটা সমৃদ্ধশালী ছিল এই নগরী

প্যাট এথান্স ( Pete Athans )
নামের একজন পর্বতারোহী যিনি কিনা সাতবার এভারেস্টের চুড়ায় পা রেখেছিলেন তিনি যখন মুসট্যাংগ অভিযানে যান, ফিরে এসে বলেছিলেন, এটা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে স্মরনীয়, কঠিন এবং দূর্দান্ত একটি অভিজ্ঞতা। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, গুহাগুলোতে উঠার সহজ পথ কি হতে পারে? তিনি বলেছিলেন, আপনি পাখি হয়ে যান, পাখি হওয়া ছাড়া সবগুলো গুহায় যাওয়া আপনার আমার পক্ষে সম্ভব নয়। রুক্ষ পাথুরে দেয়াল গুলো অবস্থা অনেকটা আগুনের সামনে মোমবাতির মতই নড়বড়ে এবং ঝুরঝুরে। প্রতি পদে পদে পাহাড় ধ্বসের আশংকা। হ্যাঁ, এটা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত বিপদজনক একটা জায়গা। সাতবারের হিমালয় বিজয়ী যখন এই কথা বলবে তখন নিশ্চয় ধারনা করতে কষ্ট হয় না, জায়গাগুলো কত দূর্গম এবং বিপদজনক। ২০১১ সালে এই খেপাটে ভদ্রলোক নানা রকম অনুমুতির হেপা পার হয়ে অষ্টমবারের মত হিমালয়ে গিয়েছেন শুধু মাত্র এই গুহাগুলোতে প্রবেশের জন্য সাথে ছিল প্রত্নতাত্তিক এবং ফটোগ্রাফারদের একটা অনুসন্ধানী দল।


এই অভিযান চলাকালীন সময়ে এথেন্স এবং তার দল মুসট্যাংগ এর আরো গভীরে অন্য কিছু গুহার সন্ধান পান। কিন্তু গুহাগুলো এত দূর্গমস্থানে ছিল যে সেখানে পৌছানো তাদের জন্য প্রায় অসাধ্য ছিল। একে তো বিপদজনক পাহাড়ী খাড়া ঢাল তার উপর সেটার নিচ দিয়ে বয়ে চলছে তীব্র স্রোতের কালী গান্দাকি নদী। অনেক কষ্টে এবং ঝুঁকি নিয়ে সেই গুহাগুলোয় প্রবেশ করে তাদের চোখছানা বড়া হয়ে যায়। সারি সারি অনেকগুলো গুহার মাঝে একটি গুহায় তারা খুঁজে পান প্রায় ২৬ ফুট লম্বা একটি প্রাচীন মুর‍্যাল, ৪২টি দূর্লভ বৌদ্ধ সাধুদের ছবি এবং প্রায় ৮০০০ টি ক্যালিগ্রাফিক পান্ডুলিপি।





বিশেষজ্ঞরা ধারনা করছেন, এই ক্যালিগ্রাফিগুলো প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ বছর পুরানো। প্রাচীন ভাষায় লিখিত এই পান্ডুলিপিগুলোর এখন পর্যন্ত যে মানে উদ্ধার করা গিয়েছে তাতে মূলত জীবন দর্শন, অহিংসার বানী, ধ্যান, বৌদ্ধ ধর্মের আধ্যতিকতা এবং উপাসনার কথাই উঠে এসেছে এবং উল্লেখ্য করা হয়েছে এক শান্তিময় জগতের কথা। ১৯৩০ সালে জনৈক ব্রিটিশ লেখক জেমস হিলটন লস্ট হরাইজন(Lost Horizon) নামক একটা কল্প কাহিনী লিখেন। সেখানে তিনি পৃথিবীতে এক কল্পিত স্বর্গ উপত্যাকার কথা উল্লেখ্য করেছিলেন যার নাম দিয়েছিলেন সাঙ্গরি-লা। তার গল্পের সেই সাঙ্গরি-লার অবস্থান এই পৃথিবীতে অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে প্রাকৃতিক ভাবে লুকানো। এখন প্রিয় পাঠক আপনার মনে যদি প্রশ্ন জাগে, এই মুসট্যাংগ ই কি সেই লুকায়িত সাঙ্গরি-লার বাস্তব রুপ? তাহলে আপনার দিকে রহস্যময় হাসি দেয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই। আমি খুবই কম জানি।

এই গুহাগুলোতে বিজ্ঞানীরা যে প্রশ্নের উত্তর গুলো বার বার খুঁজেছেন তা হলো, কারা এই গুহা তৈরী করেছিল, কেন করেছিল এবং কিভাবে করেছিল? তারা কোথা থেকে এসেছিলেন এবং কিসের বিশ্বাসের ভিত্তিতে এমন জীবন যাত্রা বেছে নিয়েছিলেন। তাছাড়া যে সময়ে তারা এই পান্ডুলিপি লিখে রাখার পদ্ধত্তি আয়ত্ত করেছিলেন, সেই সময়ের তুলনায় তাদের পান্ডূলিপিগুলো লিখে রাখার পদ্ধতি বেশ রহস্যজনকও বটে।
পাহাড়ের অভ্যন্তরে এই গুহাগুলো অনেকটা যেন সুড়ঙ্গের মত।


(ছবি সূত্রঃ ন্যাশনাল জিওগ্রাফী এবং ইন্টারেন্ট।)

অনেকগুলো গুহা এসে একটা বড় হলরুমে মিলিত হয়েছে। খেয়াল না রাখলে এই গুহার গোলকধাঁধায় হারিয়ে যাওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। মুসট্যাংগ ট্রেইল ধরে দক্ষিন দিকে যেতে থাকলে একে বারে চাইনিজ বর্ডারের সাথেই সামডজংগ নামের একটা ছোট গ্রাম আছে। সেখানে তারা অন্য ধরনের আরো কিছু গুহার সন্ধান পায়। এই গুহাগুলো সৎকারের কাজে ব্যবহৃত হত। অর্থাৎ কেউ মারা গেলে বা যখন বুঝতেন যে তার মারা যাবার সময় হয়েছে তখন তিনি স্বেচ্ছায় সেই গুহায় অবস্থান নিতেন। গুহাগুলোর অবস্থান দেখার পর এথান্স এবং আর একজন আর্কিলোজিস্ট এ্যাল্ডেনডারফার (Aldenderfer) কিছুটা দমে গেলেন। কারন এই গুহাগুলোর অবস্থান আরো বেশি দূর্গম। কোন ভাবেই বেয়ে এই গুহাগুলোতে প্রবেশ সম্ভব নয়। অনেক বুদ্ধি খাঁটিয়ে তারা ঠিক করলেন তারা পর্বত বেয়ে অন্যপাশে যাবেন তারপর, পাহাড় থেকে দড়ির সাহায্যে নিচে নেমে আসবেন।


এই পরিকল্পনা করেই তারা রওনা হলেন, এইবার সাথে সাথী হলেন করি রিচার্ড (Cory Richards) নামের একজন ন্যাশনাল জিওগ্রাফীর ফটোগ্রাফার। তারা পরিকল্পনা মতই এগুলেন, কিন্তু বিপদজনক পাহাড়ী ঢাল বেয়ে নামতে রিচার্ড এর কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল। ফলে রশি বেয়ে নামার গতি কিছুটা স্লথ হয়ে যাচ্ছিল। এই আস্তে আস্তে নামাটাই শাপে বর হলো। হঠাৎ রিচার্ড চিৎকার দিয়ে এথান্স এবং এ্যাল্ডেনডারফারের দৃষ্টি আকর্ষন করে। রিচার্ড যেখানে ঝুলছিল তার ঠিক সামনেই পাথরের দেয়ালের গায়ে একটা গুহামুখের ভেতর দিয়ে একটা মানুষের মাথার খুলি দেখা যাচ্ছিল যা কিনা এথান্সের চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। প্রবল উত্তেজনাকে দমিয়ে রেখে তারা ভিতরে প্রবেশ করলেন এবং মুখোমুখি হলেন প্রবল বিস্ময়ের।


এখানে গুহাগুলো যেন এক একটা বড় একটা সুড়ংগ। একটার সাথে অন্যটার সংযোগও রয়েছে। এই ছড়িয়ে থাকার সুড়ংগ পথে এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি গোপন কুঠরি থেকেই তারা মুসট্যাংগ এর অন্যতম সেরা আবিষ্কার গুলো করেন। এর মধ্যে ছিল কয়েকটি বাক্সবন্দী মৃতদেহ এবং মূল্যবান তৈজসপত্র। ধারনা করা হয় এই গোপন কুঠরিগুলোতে ছিল সমাজের গুরুত্বপূর্ন এবং অন্যান্য ধর্মগুরুদের সমাধিস্থল। এই রকম প্রায় পাঁচটি কুঠরির সন্ধান পাওয়া যায়। এর মধ্যে সর্বশেষ কুঠরিটি ছিল বেশ রহস্যময়। এই কুঠরিতে মোট দুইটি মৃতদেহ পাওয়া যায়। একজন ছিল পূর্ন বয়স্ক পুরুষ মানুষ এবং অন্যজন ছিল একটা দশ বছরের বাচ্চার মৃতদেহ।


এর সাথে আরো ছিল ঘোড়া এবং ছাগলের খন্ডিত মাথা ও অন্যান্য মূল্যবান তৈজসপত্র। প্রাথমিক ভাবে সমাধিস্থলে এই ধরনের বাচ্চা ও নিদির্ষ্ট পশুর মৃতদেহ “বলি প্রদান” জাতীয় কোন প্রাচীন ধর্মীয় রীতির কথাই ভাবতে বাধ্য করে। তার উপর উক্ত সমাধিগুলোয় প্রাপ্ত মৃতদেহগুলোর শরীর পরীক্ষা করে দেয়া গিয়েছে, তাদের প্রতিটি শরীর ধারালো কোন কিছু দিয়ে ফালা ফালা করে কেটে রাখা হয়েছে। যা দেখে সকলের মনে প্রশ্ন জেগেছিল এখানে কি নরবলীর কোন প্রথা ছিল কিনা? যদিও নৃতত্ববিদরা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছেন ঐ সময়ে উক্ত অঞ্চলে এই ধরনের কোন প্রথা সেখানে ছিল না কিন্তু তারপরও সুনির্দিষ্ট করে তারা কিছুই বলতে পারেন নি।


(ছবি সূত্রঃ ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা ন্যাশনাল জিওগ্রাফীর ম্যাগাজিন থেকে)

পরবর্তী সময়ে তারা ঐ মৃতদেহগুলোকে পুনরায় পরীক্ষা করেন এবং নিশ্চিত হন যে ধারালো ছুরি দিয়ে মৃত্যুর পরই ঐ ব্যক্তিদের শরীর ফালি ফালি করে কাটা হয়েছে এবং তারপর হাত পা কেটে তাদেরকে বাক্সে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। ঐ বাক্সে যে মুখোস পাওয়া গিয়েছে সে গুলো ছিল মৃত্যু-মুখোস। ঐ সময়ে কোন গন্যমান্য ব্যক্তি মারা গেলে তার মুখ একটি সুসজ্জিত মুখোস দিয়ে ঢেকে দেয় হত- এটাই ছিল প্রচলিত রীতি। তবে একটি গোপন সমাধিস্থলে একটা বাচ্চা কিভাবে আসল সেটার ব্যাপারে কোন জবাব তারা দিতে পারেন নি।

অনেক বছর আগে কোন একটা বইতে প্রাচীন ভারতীয়দের “যক্ষ” বানানোর একটা প্রস্তুতির কথা শুনেছিলাম। মূলত ধনী ব্যক্তিরাই এই যক্ষ বানানোর ব্যাপারে আগ্রহী হতেন। একজন ধনী ব্যক্তি তার সকল মূলব্যান সামগ্রীকে মাটির নিচে একটা ঘরে জমিয়ে রাখতেন। তারপর কোন এক শুভ দিনে, একজন কুমার বাচ্চাকে ভালো করে খাইয়ে দাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে ঐ মাটির নিচের ঘরে রেখে বাইরে থেকে তালা মেরে দিয়ে আসতেন। বাচ্চাটা ঘুম থেকে উঠে দেখত, ঘুটঘূটে অন্ধকার। সে পাগলের মত চিৎকার করত, ভয় পেত। কিন্তু কেউই তার চিৎকার শুনতে পেত না এবং এক সময়ে তারা ঢলে পড়ত মৃত্যূর কবলে। প্রাচীন ভারতীয় সমাজে বিশ্বাস ছিল যক্ষের ধন কেউ চুরি করতে পারে না। যক্ষ সব আগলে রাখে। এখন যদি আমি প্রশ্ন করি আচ্ছা, মুসট্যাঙ্গের ঐ গুহার অধিবাসীদের মধ্যেও কি এমন কোন যক্ষ বানানোর রীতি রেয়াজ ছিল?? প্রশ্নটা কি খুব বেশি কল্পনাপ্রসুত হয়ে যাবে?

যাইহোক, পৃথিবীর অনেক রহস্যই এখনও সমাধান হয় নি। অনেক কিছুই আমরা জানি না। এই স্কাই কেভের বিষয়গুলো তেমন একটি রহস্য। এই গুহাগুলোর বিষয়ে অনেক যৌক্তিক প্রশ্নের জবাবই বিজ্ঞানীরা বের করতে পারেন নি। ফলে এই ব্যাপারগুলোকে কেন্দ্র করে রহস্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে সত্যি বলতে এই অঞ্চলটি তিব্বতের একেবারেই সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখানে তিব্বতীয় রহস্যময় আচার, ধর্মীয় রীতি এবং উপাসানার অনেক প্রভাব আছে। আর উন্নত বিশ্ব এখনও তিব্বতের অনেক রহস্যের সমাধান করতে পারেন নি। এই স্কাই কেভ নিয়ে নেটে যখন তথ্য খুজছিলাম তখন প্রাচীন তিব্বতের অনেক রহস্যময় কিছু গুজব মিথের ব্যাপারে বেশ ইন্টারেস্টিং কিছু তথ্য পেয়েছি। যেমন তিব্বতের সাধুদের শূন্যে ভাসার ক্ষমতা (লেভিটেশন ট্রিক ) এই সংক্রান্ত একটা ১ মিনিটের ভিডিও দেখুন।

যদিও এই লেভিটেশন সংক্রান্ত অনেক কৌশলের কথাই মানুষ জেনেছেন, তারপরও অনেকগুলো কৌশল এখন মানুষ জানে না। সাধুরা এই রহস্য উম্মোচন করেন নি। হাজার হাজার বছরে ধরে তারা এই কৌশল খাঁটিয়ে আসছেন, প্রভাব ও প্রতিপত্তি বিস্তার করতে। এখানে মূল রহস্য হচ্ছে, কয়েকশ বছর ধরে প্রচলিত এই কৌশল তারা কিভাবে রপ্ত করলেন? যাই হোক, এই সব সাধু এবং লেভিটেশন কৌশল নিয়ে চেষ্টা করছি আরো তথ্য অনুসন্ধান করার জন্য। পরিপূর্ন তথ্য হাতে পেলে আশা করছি সামনে কোন এক সময়ে তা ফিচার আকারে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পারব।
----------------------------------------------------------------------------------

তথ্যসূত্রঃ
১) রহস্যময় এই গুহা নিয়ে অনেক লেখালেখি এবং প্রামান্যচিত্র তৈরী হয়েছে। এই বিষয়ে ন্যাশনাল জিওগ্রাফী পত্রিকায় বেশ কয়েকটি ফিচার এসেছে এবং তাদের চ্যানেলে এই সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রামান্যচিত্র তারা প্রদর্শন করেছে। মূলত সেই সকল লেখা, তথ্যচিত্র এবং নেটে প্রাপ্ত অন্যান তথ্য অবলম্বনে এই ফিচারটি লেখার চেষ্টা করেছি। যারা এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চান এবং এই সংক্রান্ত মূল ফিচারটি পড়তে চান, তারা ন্যশনাল জিওগ্রাফীর অক্টোবর ২০১২ সংখ্যাটি ডাউনলোড করে পড়তে পারেন। অনুবাদগত কোন ভূল চোখে ধরা পড়লে সেটা জানিয়ে দিবেন, আমি সংশোধন করে নিব।

২) অধিকাংশ সব ছবি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ন্যাশনাল জিওগ্রাফী থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে

৩) এই ভিডিও গুলোও চাইলে দেখতে পারেন, এখানে প্যাট এথান্স এর ইন্টারভিউ এবং নেপালের স্কাই কেভ নিয়ে কিছু ডকুমেন্টারী আছে।




সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৪ ভোর ৬:৩১
৮৪টি মন্তব্য ৮২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×