somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাল্পনিক_ভালোবাসা
বহুদিন আগে কোন এক বারান্দায় শেষ বিকেলের আলোয় আলোকিত উড়ন্ত খোলা চুলের এক তীক্ষ্ণ হৃদয়হরনকারী দৃষ্টি সম্পন্ন তরুনীকে দেখে ভেবেছিলাম, আমি যাদুকর হব। মানুষ বশীকরণের যাদু শিখে, তাকে বশ করে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিব সারাটি জীবন।

ভ্রমন পোষ্টঃ যার কেউ নাই, তার আছে সিলেট B-)

০১ লা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় পাঠক, সিলেট-ভ্রমন কাহিনী শুরু করার আগে একটি অন্যরকম বিড়ম্বনার গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। নিয়মিত লঞ্চে যাতায়াত করতে হয় - এমন অঞ্চলের জনৈক ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে লম্বা বাস জার্নি করতে গিয়েই এই বিড়ম্বনার সুত্রপাত। যার কথা বলছি, সেই ভদ্রলোকের বাড়ি বরিশালের পটুয়াখালীতে। পেশায় তিনি একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। তার সাথে এখন পর্যন্ত যে কয়বার আমাদের বাস জার্নির অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে প্রতিবারই তাকে লঞ্চ ভ্রমনের প্রস্তুতি নিয়ে বাসে উঠতে দেখা গেছে।
একবার বাসস্ট্যান্ডে পৌছে দেখি তিনি এক হাতে ব্যাগ আর অন্য হাতে কাঁথা নিয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, এই গরমকালে কাঁথা দিয়ে কি করবেন?
তিনি বললেন, ভোর রাতে ঠান্ডা লাগবে। নদীর বাতাস অনেক ঠান্ডা। বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, নদী!! এখানে নদী পাইলেন কই ? বাস কি নদী দিয়া চলে??
সাথে সাথে জিভে কামড় দিয়ে, দুকর্ন বিস্তৃতি হাসি হেসে বললেন, সর‍্যি ভাই। আসলে লঞ্চ জার্নির অভ্যাস তো। রাতের বেলা নদীর বাতাসে অনেক ঠান্ডা লাগে....
এরপর দেখা গেল তিনি কাঁথা সাইড ব্যাগে ঢুকিয়ে একটি প্রমান সাইজের 'গোলাপি' রঙের টাওয়াল বের করলেন। বাসে উঠেই জানালার পাশে একটা সিটে তাড়াতাড়ি টাওয়াল বিছিয়ে মুখে একটা সন্তুষ্টির হাসি ফুটিয়ে বললেন, যাক ভালো সিটটা নিয়া নিলাম।
আমি হতাশ হয়ে বললাম, ভাইরে!! এখানে সিট দখলের কিছু নাই তো! সবই আগে থেকে টিকিটে উল্লেখ্য করা থাকে। উঠেন এখান থেকে। আমাদের সিট একদম লাস্টে। তিনি কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর টাওয়াল গুটিয়ে পেছনের সিটে গিয়ে বসলেন।
এই ধরনের নানাবিধ সমস্যার মাঝে যে সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনার সৃষ্টি করেছে তা হলো, তার ঘন ঘন 'হালকা' হবার ইচ্ছা। চলতি পথে হাইওয়েতে কিছুক্ষন পর পর তিনি ড্রাইভারকে কাঁচুমাচু মুখে জিজ্ঞেস করেন, ভাই বাস থামানো যায় না?
প্রথমে মানবিক ব্যাপার হিসেবে ড্রাইভার সাড়া দিলেও একসময় বিরক্ত বললেন, ঐ মিয়া ঐ! একটু পর পর বাস থামাইতে কন ক্যা? একবারে সব কাম সাইরা উঠতে পারেন নাই??
তিনি খুবই নিরিহ গলায় ফিসফিস করে বললেন, ভাইয়া! এই চাপ আটকানোর অভ্যাস নাই তো। আমরা কখনও চাপ নিয়া বাড়িতে যাই না, লঞ্চে করতে করতে বাড়িত যাই। লঞ্চে কি সুন্দর সিস্টেম আছে। আমাদের বাড়ি.......
তারপর ড্রাইভার কি বলল, সেই সব দিকে আর না যাই। সবচেয়ে বড় কথা, ভদ্রলোক এখন বাস এবং লঞ্চের বেসিক পার্থ্যকের সাথে অভ্যস্ত হচ্ছেন। সচেতনতার অংশ হিসেবে তিনি বাস জার্নির প্রায় দুই ঘন্টা আগে থেকে কোন তরল জাতীয় পর্দাথ পান করেন না। সঙ্গগুনে তিনি চাপ হ্যান্ডেল করার অভুতপূর্ব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।


এবার যাওয়া যাক মুলকাহিনীতে
গত বৃহঃস্পতিবার যখন সহব্লগার মামুন ভাইয়ের জন্মদিন উপলক্ষে মাথার ঘাম হাতে ফেলে একটি শুভেচ্ছা বানীর সংকলন প্রকাশ করেছিলাম, তখন তিনি খুশিতে আবেগপ্রবন হয়ে বলেছিলেন, ওরে! ভাই আমার!! তোরা দূরে কেন? বুকে আয়! তোদেরকে ভরপেটে উদরপূর্তি করাবো।

আমিও যখন কিছুটা আবেগপ্রবন হয়ে বলতে যাচ্ছি, হ্যাঁ ভাইয়া আমরা আসছি- তখনই তিনি খিক খিক হাসি দিয়ে বললেন, ....কিন্তু সময়সীমা মধ্যরাত। এর পরে আসলে, আমি কিছু জানি না।

প্রিয় ব্লগারের এহেন শঠতার দৃষ্টান্তে আমি যখন নির্বাক তখনই মনে মনে বললাম, চৌধুরি সাহেব!! আপনি পাগল দেখেছেন কিন্তু পাগলের সেতু নাড়ানো দেখেন নি। আমরা আসছি। আপনাকে সেতুতে উঠিয়ে দেখেন কি নাড়ানটা নাড়াই!

আমি আর তেমন কিছু না বলে ফোন রেখে দিলাম। মুখে শুধু বললাম, ভাইয়া চেষ্টা করছি আসার জন্য। যদি আসতে পারি, তাহলে বিছানাকান্দি ঘুরতে যাব।

এইদিকে ঘড়িতে তখন বেলা তিনটা। আমরা অল্প যে দু’চারজন নিয়মিত শর্ট নোটিসে বিভিন্ন পাগলামি ট্রিপে যাই, তাদের কাছে প্রস্তাব রাখা মাত্রাই তারা আমার আস্থার প্রতিদান দিয়ে রাজি হয়ে গেলেন। ফলে সব কিছু গুছিয়ে যখন রওনা দিলাম তখন ঘড়িতে বাজে বিকাল ৫টা। সিদ্ধান্ত হলো, উত্তরার এনা পরিবহনের মাধ্যমে যাওয়া হবে। আমাদের দলের একজন সিনিয়র ভ্রাতা আছেন, যিনি এনা পরিবহনের ব্যাপারে খুবই দুর্বল। সিলেটে যাওয়ার জন্য ‘এনার’ চাইতে প্রিয় বাহন তাঁর কাছে আর কিছুই নেই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোন এক মেঘলা দিনে শেষ বিকেলের আলোর মত সুন্দর জনৈক তরুনী তার পাশের সিটে বসেই সিলেট যাত্রা করেছিল। ব্যাস সেই থেকে তাঁর কাছে সিলেট মানেই এনা!

কিন্তু এনা আমাদের প্রতি সদয় হলো না। বৃহস্পতিবার বলে বাড়তি যাত্রীর চাপ থাকায় কোন গাড়ীতে সিট খালি নেই। ফলে কিছুক্ষন সেই সিনিয়র ভ্রাতার মুন্ডুপাত করে উপযুক্তভাবে সিল মারার প্রতিশ্রুতি আদায় করে আমরা ট্রেনে করে রওনা দিলাম। তবে সিলেটে নয় কমলাপুর। কেননা পথে যে পরিমান ট্রাফিক জ্যাম, তাতে সিএনজি করে উত্তরা থেকে কমলাপুর যেতে নূন্যতম ৪ ঘন্টা লাগবে। প্রথমে ট্রেন তারপর সিএনজি করে যখন ২ ঘন্টা পর ফাইনালি আমরা সিলেটের বাসে উঠলাম তখন ঘড়িতে আটটা। বাসের নাম হানিফ। মনে একটাই আশা ৫ ঘন্টার পর আমরা ৩ ঘন্টায় পৌছে যাব। কিন্তু পথের জ্যামের কারনে হানিফও কথা রাখে নি। হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি সাথে ঝড়ো বাতাস যখন আমাদেরকে প্রিয় শহর সিলেট স্বাগতম জানালো তখন ঘড়িতে রাত আড়াইটা।

ইতিমধ্যে মামুন ভাই আমাদের আসার বিষয়টি টের পেয়েছেন। তিনি সহাস্যে ফোন দিয়ে বললেন, কাভা! আমার বাসার একটি রুমকে আমি এই মুহূর্তে অস্থায়ী পাগলাগারদ হিসেবে ঘোষনা করলাম। তাই ভুলেও কোন হোটেলে উঠবেন না। সরাসরি এখানেই চলে আসেন। কোনমতে রাতটা কাটিয়ে সকালে বিছানাকান্দি রওনা দিব।

তাই বাসায় ঢুকে কিছুক্ষন হাসাহাসি করে, বাসার লোকজনের ঘুমের চৌদ্দটা বাজিয়ে যখন নিজেরা ঘুমাতে গেলাম তখন বজ্রপাতের সাথে শুরু হলো বৃষ্টি। একটা সুন্দর ঠান্ডা আবহাওয়ায় পাতলা কাঁথা গায়ে দিতেই কিভাবে যেন দু চোখ বন্ধ হয়ে গেল।

সকালে ঘুম ভাঙ্গল খিচুড়ির গন্ধে। ভাবী আমাদের জন্য নাস্তা হিসেবে খিচুড়ি আর ভুনা গরুর গোস্ত রান্না করেছেন। দীর্ঘদিন পর আমি এত মজার কোন খিচুড়ি খেলাম আর সাতকরা দিয়ে রান্না করা সেই গরুর মাংসের উপমা কিভাবে দিব, আমার তা জানা নেই। খাওয়াদাওয়ার পর ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপ হাতে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দেখি আকাশ বেশ মুখ গোমড়া করে ঝিরঝির করে বৃষ্টি ঝরিয়ে যাচ্ছে। একটু দূরেই দেখা যাচ্ছে বৃষ্টি ভেজা গাঢ় সবুজ চা বাগান। অদ্ভুত ঘোর লাগা মনে মানতে বাধ্য হলাম, বৃষ্টিভেজা সিলেট পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর স্থানগুলো মধ্যে একটি।

কিন্তু মামুন ভাইয়ের তাড়া খেয়ে সেই ঘোর থেকে বের হয়ে আসতে হলো। আগে থেকে ভাড়া করে রাখা সিএনজি চলে এসেছে। আমাদের এখনকার গন্তব্য গোয়াইনঘাট উপজেলার ‘বিছনাকান্দি’ গ্রাম।

যাত্রা শুরু কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা বিমানবন্দর সড়কে উঠে পড়লাম। এখানে আমাদেরকে স্বাগত জানালো উপমহাদেশের প্রথম চা বাগান মালিনীছড়া। সেই চিরচেনা মোহিনীমাদক সম মালিনী চা বাগান বৃষ্টিতে ভিজে গাঢ় সবুজের রসে সিক্ত হয়ে আরো যেন আবেদনময়ী হয়ে উঠেছে। বুদ্ধ যদি সিলেটে জন্মাতেন তাহলে পূর্নিমা রাতে নয় এমন বৃষ্টিভেজা সকালে কোন এক চা বাগানের সৌন্দর্য দেখেই নিশ্চিত তিনি গৃহত্যাগী হতেন।

বিমানবন্দর সড়ক পার হয়ে যখন ভোলাগঞ্জ সড়কে উঠলাম তখনই সকল পিনিকের নির্মম অবসান ঘটল। রাস্তার ভয়াবহ করুন অবস্থা দেখে আমরা বুঝতে পারলাম না, কোন যানবাহন তো দূরে থাক, একজন মানুষ কিভাবে এই সড়ক হেঁটে পার হবে? কিন্তু আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে সিএনজি এই পথ ধরেই এগুতে থাকল। অসীম আতংক নিয়ে আমরা প্রতিক্ষনে ভাবছিলাম, এই বুঝি সিএনজিরটা বিভিন্ন নাটবল্টু খুলে যাবে অথবা কাত হয়ে কোন একটা গর্তে পড়ে যাবে। কিন্তু সিলেটের সিএনজিও প্রাণশক্তিরও প্রশংসা করতে হয়। শেষ পর্যন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে এসে সিএনজির সক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হলাম। আতংকের সাথে মুগ্ধতার এক অদ্ভুত অভিব্যক্তি নিয়ে আমরা প্রবেশ করলাম হাঁদারপাড়ের রাস্তায়।





ক্রমাগত বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে পানি প্রায় রাস্তা ছুঁই ছুঁই। সকালের ঝিরিঝিরি বৃষ্টি এখানে রুপ নিল প্রবল বর্ষনে। রাস্তার এক পাশে দিগন্ত বিস্তীর্ন বড় ঢেউয়ের হাওড় আর অন্যপাশে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত কিছু বাড়ি আবার কোথাও বা একদম ফাঁকা। এরই মধ্যে একটু পর পর পানি নিমজ্জিত গাছপালা। শুনলাম, এই গাছগুলো রাতারগুল রিজার্ভ ফরেস্টেরই অংশ। পাহাড়ি বৃষ্টিতে সাত সকাল গোসল করে যখন হাঁদার পাড়ে এসে পৌছলাম তখন ঘড়িতে প্রায় সাড়ে নয়টা। এক রাউন্ড চা পান করে যখন নৌকা ভাড়া করার জন্য অপেক্ষা করছি তখনই বৃষ্টি কিছুটা ধরে এলো আর সাথে সাথে চোখে পড়ল দূরে অবস্থিত মেঘাচ্ছন্ন পাহাড় আর ঝর্না। আকস্মিক এই পরিবর্তনে সবাই বিস্মিত হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ঐটাই কি স্বর্গ নাকি বিছানাকান্দি?



তারপর আসলে বর্ননার কিছু নেই, শুধু দেখুন। প্রবল বৃষ্টি থাকার কারনে ছবি তুলতে মহা বেগ পেতে হয়েছে। সত্যি বলতে সবাই সাথে এই সৌন্দর্য কিছুটা হলেও শেয়ার করতে চেয়েছি বলে ক্যামেরার মায়া একপ্রকার ত্যাগই করেছিলাম। তবে বাস্তবতা হচ্ছে সৌন্দর্য লিখে বা ছবি দেখিয়ে প্রকাশ করার ক্ষমতা আমাদেরকে দেয়া হয় নি। আমাদেরকে শুধু দেয়া হয়েছে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি দেখে অবাক বিস্ময়ে বিস্মিত হবার ক্ষমতা।



আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল পাংতুমাই ঝর্না। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামা অন্যতম সুন্দর একটা ঝর্না তবে একই সাথে এটা একটা নির্মম ঝর্নাও বটে। কেননা এই ঝর্নাটি শুরু হয়েছে ভারতীয় অংশে আর শেষ হয়েছে ঠিক নো ম্যান'স ল্যান্ডের সাথেই। ফলে বাংলাদেশী হিসেবে আপনি ঝর্নার ঠিক কাছে যেতে পারবেন না। দূর থেকেই আপনাকে দেখতে হবে। তবে অতীতে অনেকেই ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের সাথে কিছুটা আপোষ বা বাংলায় 'সিস্টেম' করে ঝর্নার কাছে গিয়েছেন। তবে এই ব্যাপারে উপস্থিত বুদ্ধি, বাস্তবতা এবং পরিস্থিতি মূল্যায়নের নূন্যতম জ্ঞান থাকা আবশ্যক।


বিএসএফ চেক পোষ্ট



কাছে গিয়ে ছুঁতে না পারার হতাশায় ভারত অতিক্রম করে ফেললাম। B-)দাদাদের ঝর্না এত জল দিচ্ছে, ভাবলাম যাই আমিও তাহলে কিছু দিয়ে আসি। পরে নিজেকে সামলে নিলাম এই ভেবে যে ঝর্না পানি তো এই দেশেই আসছে, আর পানি দিয়া কি হবে! :|



এরপর চললাম আমাদের দ্বিতীয় গন্তব্য লক্ষনছড়ার উদ্দেশ্য। এটাও একটি পাহাড়ি ঝর্না। যাবার পথে আবার শুরু হল প্রচন্ড বৃষ্টি।



লক্ষনছড়ার মূল আকর্ষন হলো এর যাবার পথটা। সরু খাল, দু'পাশে বাঁশের ঝাড়, ঘন গাছপালা ইত্যাদি সব মিলিয়ে একটা দারুন বন্য পরিবেশ।




খালের মাঝে বিভিন্ন স্থানে ছিল এমন সরু বাঁশের সাঁকো। যার নিচ দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে।


পথে ফুটে রয়েছে নাম না জানা অনেক বন্য ফুল।



এইভাবে বেশ কিছুক্ষন চলার পরে, আমরা যখন বুঝতে পারছি না, কোন দিকে যাচ্ছি তখনই ঠিক সামনে উদয় হলো বিশাল এক পাহাড় আর ছবির মত সুন্দর একটা গ্রাম। সত্যি বলতে, এমন একটা দৃশ্যের জন্য আমরা ঠিক প্রস্তুত ছিলাম না। গ্রামের একটা অংশ পড়েছে ভারতে আর একটা অংশ বাংলাদেশে।





দূরে দেখা যাচ্ছে লক্ষনছড়া।



ছড়াকে আরো কাছ থেকে দেখার জন্য আমরা গ্রামের ভেতর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করলাম। গ্রামবাসী খুবই আন্তরিক। তারা বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখতে যেমন বললেন, তেমনি কিছুটা সর্তকতা অবলম্বনও করতে বললেন। এই ফাঁকে আথিতিয়তার অংশ হিসেবে আমরা খেলাম পাতার বিড়ি।




এই পর্যায়ে ব্যাপক বর্ষন শুরু হওয়াতে আর ছবি তোলা সম্ভব হয় নি। আমরা দেরী না করে রওনা দিলাম বিছানাকান্দির উদ্দেশ্যে। বৃষ্টির মাঝে আমাদের নৌকা ছুটে চলেছে পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে। কিছুক্ষনের মধ্যে আমারা আবার মূল নদীতে চলে এলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই পৌছে যাব বিছানাকান্দি।





তারপর নদীর টাটকা মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে ফেরার পথ ধরলাম। ফিরে আসার সময় সিলেটের অভূতপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্যে অভিভুত হয়ে মনে যখন রোমান্টিকতার মেঘ একাকী বৃষ্টি ঝরাচ্ছে, তখন নিজেকে সান্তনা দিয়ে বললাম, 'থাক! মন খারাপ করিস না। যার কেউ নাই, তার আছে সিলেট'

বৃষ্টির সাথে অসামান্য ফাইট করে ছবিগুলো তুলেছেন ব্লগার আমিনুর ভাই। আর সামুর সাথে অসামান্য ফাইট করে পোষ্ট এবং ছবিগুলো আপডেট করেছি আমি স্বয়ং। ইচ্ছে থাকা স্বত্তেও আরো বেশ কিছু ছবি সংযুক্ত করে পারি নাই। এই পোষ্ট লিখতে গিয়ে যে পরিমান ধৈর্য পরীক্ষা এবং বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছি, তাতে আমার সেই বিখ্যাত কবিতার কথাই মনে পড়ছে, ভালোবাসা আমার হয়ে গেছে ঘাস, খেয়ে গেছে গরু, দিয়ে গেছে বাঁশ। B-):|/:)X(

----------------------------------------------------------------------------

কিভাবে যাবেন এবং কিছু ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষনঃ
১) এই অঞ্চলটিতে এখন ভ্রমনপিপাসু মানুষের ভীড় তেমন নাই। তাই জায়গাটা এখনও বেশ সুন্দর। যেদিন ভীড় বাড়বে, সেদিন জাফলং এর মত এই প্রাকৃতিক স্পটটির মৃত্যু ঘটবে। তাই নিজে বার বার যান, অন্য কে যেতে অনুৎসাহিত করুন।

২) এখানের পর্যটন সংশ্লিষ্ট মানুষগুলো ধান্দাবাজি এখনও সেভাবে আয়ত্ব করতে পারে নাই। তাই আপনি যদি শুধু বিছানাকান্দি যান সর্বোচ্চ ভাড়া দিবেন ৮০০ - ১০০০ টাকা। এর বেশি কোন ভাবেই না। যদি দেন, তাহলে বুঝবেন আপনি ঠকছেন। তবে দলে যদি লোকসংখ্যা বেশি হয় তাহলে বড় নৌকার ক্ষেত্রে ভাড়া কিছুটা এদিক সেদিক হতে পারে।

৩) এখানে মুলত তিনটা পয়েন্ট আছে। এক, পাংতুমাই ঝর্না, দুই, লক্ষনছড়া এবং তিন বিছানাকান্দি। উল্লেখ্য ঋতু ভেদে এই স্থানগুলোর সৌন্দর্য এক সময় এক রকম থাকে। আমরা যে সময় গিয়েছে, এই সময় প্রবল বৃষ্টি থাকাতে আমরা তিনটা স্পট নৌকা করে যেতে পেরেছি। বৃষ্টি কম হলে অন্য কোথাও গিয়ে আপনি তেমন বৈচিত্র দেখবেন না। এই ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় যদি বিছানাকান্দি থাকেন, সেটাই বেশি আনন্দ দিবে। তবে বর্ষা হলে তিনটা স্থানেই যাবেন। পয়সা উসুল হবে নিশ্চিত।

৪) লক্ষনছড়াতে যাওয়ার রাস্তাটি কেবল সবচাইতে বেশি উত্তেজনাময়। এছাড়া বর্ষা ছাড়া অন্য সময় সেখানে যাওয়াও কষ্ট এবং দেখারও কিছু নেই। যদি বর্ষায় যান, তাহলে অবশ্যই চেষ্টা করবেন, মাঝারি থেকে ছোট সাইজের নৌকা নিতে। বেশি বড় নৌকা হলে খাল দিয়ে নৌকা প্রবেশ করবে না।

৫) তিনটা স্পটে গেলে আপনার নূন্যতম সময় লাগবে ৪/৫ ঘন্টা। এই জন্য নৌকা ভাড়া পড়বে ১৫০০ - ২০০০ টাকা। আমরা দরদাম করে ১৬০০ টাকায় ৬ ঘন্টার জন্য নৌকা ভাড়া করেছিলাম।

৬) আল্লাহর ওয়াস্তে বিরিয়ানীর প্যাকেট, জুসের প্যাকেট, ইত্যাদি হাবিজাবি নদী এবং ঐ স্পট গুলোতে ফেলবেন না। নৌকাতেই রাখুন। একটু কষ্ট করে নামার সময় নামিয়ে অন্য কোথাও ফেলুন।

৭) সিলেট থেকে আসতে চাইলে সিএনজি আপডাউন পড়বে প্রায় ১২০০ - ১৩০০ টাকা। আর যদি লেগুনা রির্জাভ করে আসেন, তাহলে খরচ পড়বে ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা। আমার পারসোনাল সাজেশন, টাকা বেশি লাগলেও সিএনজিতে যান। এতে চারিদিক সুন্দর করে দেখার সুযোগ পাবেন।
৬৬টি মন্তব্য ৬৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×