২০১৩ সালে ব্লগার রিভিউ নামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। অনেক মেধাবী ব্লগার তখন ব্লগে লিখতেন, কিন্তু উপযুক্ত পাঠক পেতেন না। কারন আমাদের ব্লগীয় সমাজের একটা অদ্ভুত কালচার হলো আমরা নতুন ব্লগারদের ব্লগ খুব একটা পড়ি না। সেই পোস্টের পর নতুন ব্লগাররা অনেক পাঠক পেলেন এবং উৎসাহ নিয়ে আবারও ব্লগিং শুরু করলেন। সেই গ্রুপ থেকে আমরা এমন অনেক ব্লগার পেয়েছি যারা শুধু মাত্র ব্লগে অবদান রাখেন নি, জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন কাজেও তাঁরা অবদান রেখেছেন, খ্যাতি অর্জন করেছেন। এদের অনেকেরই বই প্রকাশিত হয়েছে, পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে।
সম্প্রতি এমন একটা পোস্টের ব্যাপারে কাজ করতে গিয়ে বেশ হতাশার মধ্যে আছি। মানসম্মত, বৈচিত্র্যময় লেখা খুঁজে পাওয়া কিছুটা দুরহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে ব্লগের উপর অন্যায় প্রতিবন্ধতা।
২০১৩ সালের পর বাংলা ব্লগের উপর একটা বিশাল ঝড় আসে। ব্লগ কি সেটা বুঝে বা না বুঝে প্রচুর মানুষ ব্লগার বিদ্বেষী হয়ে উঠে। ব্লগারদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার হয় ধর্ম বিরোধী হিসেবে। এই সুযোগে ভিন্ন চিন্তার অনেক ব্লগার ও লেখকদের হত্যা করা হয়। ব্লগে নিবন্ধনের হিড়িক পড়ে অনেক ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের কর্মী ও উৎসুক মানুষদের। আমরা সেই সময়টা সর্বোচ্চ সর্তকতায় মোকাবেলা করেছি। সেই ধারা এখনও কিছুটা বিদ্যমান।
নতুন ব্লগারদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তাদের শেখার সমস্যা। বর্তমানে ফেসবুকের মাধ্যমে সহজ যোগাযোগ এবং ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারনে ব্লগারদের একটা বড় অংশ ব্লগে অনুপস্থিত। পুরানো ব্লগাররা জানেন, ব্লগে একটা কোয়ালিটি পোস্ট দেয়ার জন্য কি পরিমান সময় দেয়া প্রয়োজন, ফলে মান সম্মত পোস্ট নিশ্চিত করার দোহাই দিয়ে তারাও ব্লগে তুলনামুলক কম আসেন। তাই নতুনরা তাদের দেখে কিছু শিখতে পারছেন না।
দ্বিতীয়ত, ব্লগে সাম্প্রতিক সময়ে পিঠ চাপড়াচাপড়ি টাইপ ব্লগিংকে বেশি উৎসাহ দেয়া হয়। এতে সমস্যা হচ্ছে উপযুক্ত সমালোচনার অভাবে অনেকেই সঠিক ফিডব্যাক পাচ্ছেন না ফলে নিজের লেখার মান বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না। যেমন একবার একজন লেখককে বললাম, আপনার লেখাটি ভালো তবে অহেতুক টেনে বড় না করলে আরো ভালো হতো। ভদ্রলোক আমাকে ইনবক্সে নক দিয়ে বিশাল লেকচার দিলেন। আবার একজনকে খুবই কঠোর ভাষায় সমালোচনা করলাম, তিনি রেগে গিয়ে বললেন - তার লেখা ভালো। আমরা কিছু বুঝি না। এই ধরনের সমালোচনা একজন লেখকের স্বত্তাকে মেরে ফেলে ইত্যাদি ইত্যাদি। বাস্তবতা হচ্ছে আমার লেখা পড়ে যখন পাবলিক ঢিল ছুড়বে, তখন সব ঢিলে যে আমি ব্যাথা পাবো না - তা কিন্তু নয়! দুই একটায় ব্যাথা অবশ্যই পাবো। এটাই রিয়েলিটি।
অনেকেই বলেন, সামহোয়্যারইন ব্লগে আগের মত লেখা নেই। কথা খুবই সত্য। অনেকেই বলেন, মান নিয়ন্ত্রনে কঠোর হতে। সকলের জানার সুবিধার্থে বলছি, আমরা আমাদের জায়গায় সর্বোচ্চ কঠোর, যেহেতু সামহোয়্যারইন ব্লগ একটি কমিউনিটি ব্লগে, এখানে পেশাদার লেখকও লিখবেন আবার একেবারে অপেশাদার শখের লেখকরাও লিখবেন। দুই পক্ষের মিথস্ক্রিয়া মানে দুই পক্ষের পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া কিংবা তথ্য বিনিময়ে একটি চমৎকার পরিবেশ তৈরী হবে, এটাই কমিউনিটি ব্লগের একটা অন্যতম উদ্দেশ্য।
যাইহোক, গতবারের মত এবারও আমি গত দুই বছরের প্রেক্ষাপট থেকে ব্লগারদের লেখার মান, বিষয়বস্তু, বৈচিত্রতা, ব্লগীয় যোগাযোগ, আচরন ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে কিছু ব্লগারদের তালিকা প্রস্তুত করেছি। আমার একটি নিজস্ব পর্যবেক্ষনের এই তালিকাটি পরবর্তীতে আরো আপডেট করা হবে। চলুন তাহলে নতুন এই সব ব্লগারদের সম্পর্কে জেনে নেই।
আখেনাটেন
ব্লগিং করছেন ৩ বছর ৮ মাস। তাঁর নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, 'মনটা যদি তুষারের মতো...' বর্তমান সময়ে যে কয় ব্লগারকে সব্যসাচী বলা যায়, তার মধ্যে আখেনাটেন অন্যতম। সুক্ষ রসবোধ, লেখার প্রাঞ্জলতা, বিষয়বস্তুর বৈচিত্রময়তায় তিনি এগিয়ে আছেন সমসাময়িক অনেকের চেয়ে। তাঁর লিখিত গল্পগুলোর গঠন তুলনামুলকভাবে ভালো তবে আরো কিছুটা কাজ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি অন্য যে সকল বিষয়ে তিনি লিখেছেন সেগুলো চমৎকার এবং বিষয়বস্তুর বৈচিত্রময়তা অনেক নতুন ব্লগারদের জন্য অনুকরনীয়।
ডঃ এম এ আলী
ব্লগিং করছেন ৩ বছর ৫ মাস। নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, সাহিত্য, সংস্কৃতি, কবিতা এবং সমসাময়িক সামাজিক বিষয়াদি নিয়ে গঠনমুলক লিখা লিখি ও মুক্ত আলোচনা করি। সত্যি বলতে, খুব অল্প সময়ে সামহোয়্যারইন ব্লগের একজন উজ্জলতম নক্ষত্রে পরিনত হয়েছেন ডাঃ আলী। নানান বিষয়ে তাঁর সুলিখিত ও সহজ পাঠ্য লেখাগুলো বাংলা ব্লগের জন্য অমুল্য সম্পদ। তাঁর প্রতি রইল আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং শ্রদ্ধা।
খায়রুল আহসান
ব্লগিং করছেন ৩ বছর ১০ মাস। নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, 'একজন সুখী মানুষ, স্রষ্টার অপার ক্ষমা ও করুণাধন্য, তাই স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।' তাঁর লেখার সবচেয়ে আকর্ষনীয় দিক হচ্ছে প্রাঞ্জলতা, সহজ বাক্য বিন্যাস। তাঁর মন্তব্যগুলো সাধারনত গৎবাঁধা নয় বরং একজন লেখকের জন্য আকর্ষনীয়ও বটে। ব্যক্তিগতভাবে উনার লেখাগুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে পছন্দ ক্যাডেট কলেজের স্মৃতি এবং ভ্রমনকাহিনী সমূহ।
জ্যোতির্ময় ধর
ব্লগিং করছেন প্রায় ৯ মাস। তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, নিভন্ত এই চুল্লীতে মা একটু আগুন দে , আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি বাঁচার আনন্দে। মুলত ইতিহাসের অজানা বিষয় নিয়ে তিনি দুর্দান্ত সব ব্লগ পোস্ট লিখে চলেছেন। এর মধ্যে এমন অনেক পোস্ট আছে যা হয়ত খোদ সরকারের কাছেও সংরক্ষিত নেই। সামহোয়্যারইন ব্লগকে লেখা প্রকাশের জন্য বেছে নেয়ায় তাঁকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।
ঠ্যঠা মফিজ
ব্লগিং করছেন ৩ বছর ১০ মাস। নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, কম বুঝি কিন্ত কিছু একটা নিয়ে বোঝার চেস্টা করি তাই যত পারি বই পড়ি। এটা চমৎকার ব্যাপার। ইদানিং যদিও বই পড়া প্রায় আমরা সকলেই ভুলে গিয়েছি। সাম্প্রতিক সময়ে যে কয়জন ব্লগার ফিচার লিখছেন, তারমধ্যে তিনি অন্যতম। শুরুতে তিনি তার লেখায় কোন রেফারেন্স যুক্ত করতেন না, ফলে অনেক লেখা নির্বাচিত পাতায় আসে নি। অবসর সময়ে উনার ব্লগ পড়ে অনেক কিছুই জানা সম্ভব। আমি আশা করি, সামনে তাঁর ব্লগিং আরো সমৃদ্ধ হবে।
মাহবুব আলী
ব্লগিং করছেন ৭ বছর ১১ মাস। সেই হিসাবে কোনভাবেই তাঁকে নতুন ব্লগার বলা যায় না। মাহবুব আলী মত একজন লেখকের যে ধরনের পাঠক প্রিয়তা পাওয়ার কথা ছিলো তা তিনি পান নি ৭ বছরের তুলনায় শুধু খুবই কম ব্লগীয় যোগাযোগের কারনে। আমি অনুরোধ করব, তিনি এই বিষয়ে আরো কিছুটা মনযোগী হবেন। তাঁর নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, জানতে চাই। ব্যক্তি জীবনে তিনি শিক্ষকতা পেশার সাথে যুক্ত। ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েকটি বই।
ভুয়া মফিজ
ব্লগিং করছেন ৩ বছর ১ মাস। নিজের সম্পর্কে তেমন কিছু লিখেন নি তিনি। ভ্রমন এবং দেশ বিদেশের নানা বিষয় নিয়ে লেখার পাশাপাশি জন গুরত্বপূর্ন অনেক বিষয় নিয়েও তিনি লিখেছেন। তাঁর ভ্রমন কাহিনীগুলো সুখপাঠ্য এবং ব্লগীয় যোগাযোগ খুবই চমৎকার।
পলক শাহরিয়ার
ব্লগিং করছেন প্রায় ৭ বছর। কিন্তু এই সাত বছরে যে ধরনের পাঠক প্রিয়তা বা ব্লগীয় যোগাযোগের প্রয়োজন ছিলো, সেটা তিনি করতে পারেন নি। তবে তাঁর লেখাগুলো নিঃসন্দেহে আপনার মনে কৌতুহল এবং ভালোলাগা তৈরী করবে। তিনি সহজাত প্রাঞ্জল লেখক। এটা একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় যা হয়ত তাঁর নিজেরও জানা নেই। আশা করব, তিনি ব্লগিং এ আরো বেশ মনযোগী হবেন।
দিশেহারা রাজপুত্র
ব্লগিং করছেন প্রায় ৪ বছর। তাঁর নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, বিস্কুটের টিন খুলে দিলে পৃথিবীতে জ্যোৎস্না নেমে আসে। এটা হয়ত তাঁর কোন কবিতার শিরোনাম। সমসাময়িক সময়ে ব্লগে যে কয় প্রতিভাবান কবি এসেছেন, তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। আমি এই ব্লগার সম্পর্কে বাড়তি কিছু তথ্য যোগ করতে চাই। প্রথমেই বলে রাখি, ব্লগ এবং ফেসবুকের কল্যানে - হালের কবি কিংবা কবিতা সম্পর্কে আমার মনোভাব খুব একটা ভদ্রোচিত নয়। বিশেষ করে বইমেলায় যে সকল নতুন কবিদের বই বের হয়েছে আমি তাদের কাছ থেকে দশ হাত দূরে থাকার চেষ্টা করি। আপনি হয়ত ভাবছেন, সেরেছে! ইনি বুঝি বিশাল সাহিত্যবোদ্ধা টাইপের কেউ। আজেবাজে কবিতা পড়েন না, খুবই বনেদী এবং রুচিশীল। ... থামুন মশাই। আমার মেধা এতটাই সীমিত যে, আমার পক্ষে কোন সাহিত্যবোদ্ধার চরিত্রেও অভিনয় করাও সম্ভব নয়। সেই আমি কোন এক শুক্রবারে একুশে বইমেলায় গিয়ে কেজি দশেক ধুলা খেয়ে যার বই কিনেছি, তিনি হচ্ছেন এই ব্লগার দিশেহারা রাজপুত্র। মজার ব্যাপার হচ্ছে, উনার সাথে আমার কালেভদ্রে দুই একবার কথা হয়েছে। এই পোস্টে হয়ত অপ্রাসঙ্গিক কিন্তু উনার একটি কবিতা আমি এখানে উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছি না।
‘অভাব’
বাবা ভাল আঁকতে পারতেন। তিনি একটা কাঠের সরোদ এঁকে দিলে আমরা সবাই মিলে গান শুনতাম। একবার ঈদে বাবা আমায় একটা জামা এঁকে দিয়েছিলেন। আমি সারাদিন সেই জামা গায় দিয়ে শহর ঘুরেছিলাম। মা একটা কাঁসার থালা এনে রাখলে বাবার আঁকার খাতায় তা পেরিয়ে যেত গোটা একটা শাদা পৃষ্ঠা।
মা ভাত রান্না করতে চোখের দামে চুলো কিনে আনলে বাবাও দরদ ভরে জ্যোৎস্নার মতো ভাত আঁকতেন।
আমার ক্ষুধা লাগলে বলতাম— বাবা, একটা ক্ষুধা আঁকুন। বাবা আমায় মায়ের মুখ এঁকে দিতেন।
আনমোনা
ব্লগিং এর বয়স ৬ মাস। নিজের সম্পর্কে লিখেছেন তিনি বইয়ের পোকা, বই পড়তে ভালোবাসেন। অনেকেই ব্লগে পাঠক হিসেবে থাকে, পরে লেখালেখি শুরু করে অনেকেই আবার নতুন করে সব কিছু শুরু করে। উনার শুরুটা ভালো হয়েছে। গত ছয়মাসের তুলনায় তিনি ব্লগে যথেষ্ট সময় দিয়েছেন, অনেক পরিচিত ব্লগারের চাইতে ভালো মানের লেখার চেষ্টা করেছেন। তার জন্য শুভকামনা।
আপেক্ষিক মানুষ
ব্লগিং করছেন ৩ বছর। নিজের সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, লেখক হওয়ার ক্ষুদ্র ইচ্ছা মাঝে মাঝেই মনের ভিতর সুড়সুড়ি দেয়। বলাবাহুল্য, এই সুড়সুড়ি তাঁর ক্ষেত্রে ভালোই কাজ করেছে। আশা করি, সামনে তিনি মানসম্মত ব্লগিং বৈচিত্রতা বজায় রাখবেন।
করুণাধারা
ব্লগিং করছেন প্রায় ২ বছরের কিছুটা বেশি সময়। নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, জীবন যখন শুকাইয়া যায় করুণাধায় এসো। উনার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হচ্ছে, তিনি খুব সহজেই যে কোন বিষয়ে পাঠককে দৃষ্টিপাত করাতে পারেন। তাঁর লেখালেখির বিষয় একঘেয়েমি পূর্ন নয় বরং বৈচিত্রময়। মেধাবী একজন ব্লগার হিসেবে যে ধরনের মুল্যায়ন তাঁর হবার কথা ছিলো, সেটা তিনি পান নি। আশা করি, ব্লগে তাঁর নতুন পথচলা শুরু হবে।
কাওসার চৌধুরী
ব্লগিং করছেন ১ বছর ৪ মাস। তিনি নিজের সম্পর্কে তেমন কিছু লিখেন নি। তবে অন্য সুত্রে জানা যায় তিনি মুলত প্রবন্ধ লেখাতেই বেশি আগ্রহী। তবে তিনি মাঝে মাঝে অন্য বিষয়েও লিখেন। গত বই মেলায় তাঁর একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। ব্লগীয় যোগাযোগে তিনি বেশ এগিয়ে আছেন। আমি মনে করি, যারা মানসম্মত এবং মৌলিক বিষয়ে লিখেন, তাদের পাঠক প্রিয়তা এবং পাঠক সংখ্যা বৃদ্ধি একটি লজিক্যাল সিকোয়েন্স! বাড়তি কিছুর প্রয়োজন নেই। এটা একটি সার্বজনীন ধারনা যা সকলের জন্যই প্রযোজ্য।
এছাড়া আরো যে কয়েকজন দৃষ্টি আকর্ষন করতে সমর্থ হয়েছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য, অপু দ্য গ্রেট, নাহিদ০৯, অর্ফিয়াসের বাঁশি, স্বপ্নের শঙ্খচিল, নভো নীল দীপ্তি, রিম সাবরিনা জাহান সরকার ও জুনায়েদ বি রাহমান। এদের ব্যাপারেও আমি বিস্তারিত লিখব। সময় স্বল্পতার জন্য আজকে এইটুকু পর্যন্ত আপডেট করলাম।
পাশাপাশি একজন বিশেষ ব্লগার সম্পর্কে বলতে চাই যিনি এই ব্লগে শত প্রতিকুলতা, অভিযোগ, আক্রমন মাথায় নিয়ে ব্লগিং করেছেন এবং নিজস্ব একটি ধারা তৈরী করেছেন। এই দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতায় তাঁর নিজস্ব বিচারবোধের একটি ধারা তৈরী হয়েছে, ক্ষেত্র বিশেষে অনেক সময় তা সত্য বলে প্রমানিতও হয়েছে। অনেক ব্লগার তাঁর অসম্ভব কট্টর এবং কঠিন সমালোচনাকে মাথায় রেখে নিজেদের লেখালেখি চালিয়েছেন। সত্যি বলতে, অনেকে তাঁর ভয়ে নিজেদের লেখার মান বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন, অনেকেই আবার বিরক্ত হয়ে লেখালেখি ছেড়ে দিয়েছেন। তবে দুঃখজনকভাবে ব্লগীয় যোগাযোগে তিনি অত্যন্ত আক্রমনাত্বক এবং ক্ষেত্র বিশেষে ব্যক্তি আক্রমনও করেন। যার ফলে তাঁকে অনেক শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত তিনি কোন না কোন শাস্তির শিকার হয়ে থাকেন। অযাচিত ব্যক্তি আক্রমন, একমুখী রাজনৈতিক সমালোচনা বাদ দিয়ে, যে কোন সমালোচনায় ক্ষেত্রে যদি আরো কিছুটা 'চিনি' যুক্ত করতে পারলে - লেখনির মানের দিক দিয়ে তিনি অনেক নামী দামী ব্লগার থেকে এগিয়ে থাকবেন। আলোচ্য এই ব্লগারের নাম - চাঁদগাজী।
উনার মত সুক্ষ রসসম্পন্ন ব্লগার খুব কমই আছে। ব্লগে নিয়মিত প্রশাসন থেকে চোখ রাখা হয়। মাঝে মাঝে সেই সব 'চোখ' থেকে আবার সরকারের নানারকম সাফল্যের বর্ণনা করে পোস্টও দেয়া হয়। সেই সব পোষ্টে ব্লগার চাঁদগাজীর মন্তব্যের কারনে আলোচ্য ব্যক্তিরা খুবই বিপদে থাকতেন। একবার তেমনি এক ফরমায়েসী পোষ্টের শিরোনাম ছিলো - দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
ব্লগার চাঁদগাজী সেই পোস্টে প্রথম মন্তব্য করেছিলেন - ভালো কথা, দেশ পুর্বে আগাক, পশ্চিমে আগাক, উত্তরে আগাক আমাদের সমস্যা নেই। শুধু দক্ষিন দিকে না আগালেই হলো। কারন সেদিকে বঙ্গোপসাগর।
বলা বাহুল্য এই কমেন্ট পড়ে পোস্টদাতা মাননীয় স্পীকার হয়ে পোস্টটি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
আরেকবার এক ব্লগার খুব ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক তথ্য যুক্ত করে প্রমান করার চেষ্টা করলেন মোনালিসার বাড়ি ফ্রান্সে ছিলো না। ঐ পোস্টে ব্লগার চাঁদগাজী কমেন্ট করলেন - মোনালিসার আসল বাড়ি ছিলো কুমিল্লায়। তিনি আমাদের কুমিল্লার মেয়ে!
পুরো অফিসসুদ্ধ আমরা কয়েক ঘন্টা হেসেছিলাম। যাইহোক, যেহেতু আমরা এখন থেকে অযাচিত বা অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তি আক্রমনের ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাই আশা করি ব্লগার চাঁদগাজী সহ সকলেই সর্তক হবেন। আশা করি, চাঁদগাজীর মত একটি জনপ্রিয় নিককে কোন কারনে নতুন নিক রেজিস্ট্রেশন করতে হবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে, সমালোচনা কারোই ভালো লাগে না, তাই কেউ সমালোচনা করলেই যদি কেউ বিরক্ত কিংবা ব্যক্তিগত আক্রমন মনে করেন, সেই ক্ষেত্রে আমাদের করনীয় খুব সীমিত। আমাদের উপর আপনাদের আস্থা রাখতে হবে, কোন সমালোচনা যৌক্তিক না অযৌক্তিক না সঠিকভাবে নির্নয় করার জন্য। অযৌক্তিক সমালোচনা করলে প্রথমবার মন্তব্য মুছে দেয়া হবে, দ্বিতীয়বারও মুছে দিয়ে সর্তক করা হবে, তৃতীয়বার জাস্ট ব্যান করা হবে।
আপনারাও চাইলে আপনাদের পছন্দের কোন ব্লগারের নাম এই পোস্টে উল্লেখ্য করতে পারেন। যা প্রয়োজনে আমি আপডেট করে দিবো।
সবাইকে ধন্যবাদ,
শুভ ব্লগিং!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ১২:৪৩