আমার বিভিন্ন পোস্টে প্রাপ্ত অনেক মন্তব্যের জবাব এখনও না দিতে পারার কারনে প্রথমেই সহব্লগারদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। মন্তব্যের জবাব না দেয়াটা ব্লগীয় কালচারে খুব একটা শোভনীয় নয়। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আমার সাম্প্রতিক পোস্টগুলোতে প্রাপ্ত বিভিন্ন মন্তব্যের জবাব পর্যায় ক্রমে দেয়ার জন্য। আশাকরি, সকলে আমার এই অপারগতাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আমি গতকাল ফেসবুকে একটি লেখা প্রকাশ করেছিলাম। আমার এক ফেসবুকার বন্ধু ম্যাসেঞ্জারে নক দিয়ে জানতে চাইলেন, ফেসবুকের বিভিন্ন ইস্যুতে আমি নিরব কেন? আমি কেন আমার মতামত ব্যক্ত করতে পারছি না।
আমি অত্যন্ত অবাক হয়ে বললাম, দুনিয়ার হাজারো জ্ঞানী ও বিদ্যান মানুষ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ইস্যুতে নিজেদের গুরুত্বপূর্ন পর্যবেক্ষন তুলে ধরছেন, সেই হিসাবে আমি বালস্য বাল হরিদাস পাল আর আপনি কি না আমাকে জিজ্ঞেস করছেন - আমার মতামত কই? আপনাকে তো ভাই নির্বোধ ভাবতে মন চাইছে না।
তিনি আমাকে আশ্বস্ত করে বললেন, আরে ভাই, বন্ধু বা পরিচিত হিসাবে আপনার মতামতগুলো জানতে চাইছিলাম আর কি।
তাঁকে বললাম, দেখুন, আমি নিজে ব্যক্তি জীবনে এখন পর্যন্ত তেমন শক্ত নৈতিকতা অর্জন করতে পেরেছি বলে মনে হয় না। আমার এখনও প্রতিনিয়ত ভুল হয়, সত্যের সাথে মিথ্যে মিলাতে হয়, কথার বরখেলাপ হয় ইত্যাদি হাজারো দোষে দোষী। শুধু মাত্র আমার দ্বারা কারো কোন ক্ষতি হবে না - শ্রেফ এই বিশ্বাসটুকু আছে বিধায় হয়ত মাঝে মাঝে নিঃশ্বাস ফেলি ও মাঝে মাঝে নীতি নৈতিকতার গল্প শোনাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই ধরনের চারিত্রিক ত্রুটি নিয়ে ফেসবুকে নীতি নৈতিকতার কথা বলা কিংবা নীতি নৈতিকতার বরপুত্রে পরিনত হওয়া এক ধরনের প্রতারনার সামিল।
নিজে যেটা না, সেটা হতে চাওয়ার মধ্যে দোষের কিছু নেই। কিন্তু নিজে যা হতে পারি নি, সেটা হয়েছি বলে প্রচার করাটা দোষের ও প্রতারনার। ইদানিং ফেসবুকে নীতি নৈতিকতা নিয়ে লিখতে গেলে মনে হয়, ভাইরে নিজের সাথেই প্রতারনা করছি। তাই বিভিন্ন বিষয়ে চুপ আছি। চেষ্টা করছি অন্যের চোখে নিজেকে দেখে সংশোধন করার।
যাইহোক, সত্যি বলতে ফেসবুকে সিরিয়াস কোন বিষয়ে লেখা কিছুটা অর্থহীন। যার যে বিষয়ে জ্ঞান আছে, তিনি যত খানি না বুঝেন তার চেয়ে বেশি বুঝেন যার ঐ বিষয়ে কোন জ্ঞান নেই তিনি। ফেসবুক আপনাকে খুব দ্রুত জনপ্রিয় বানাবে আবার খুব দ্রুত ছুড়েও ফেলবে অর্থাৎ মানুষের জাজমেন্টাল সেন্স এখানে খুবই বিপদজনক অবস্থানে থাকে। একচুল এদিক সেদিক হলে আপনি ভিলেন থেকে হিরো আবার হিরো থেকে ভিলেন। তবে ফেসবুকে আপনি দেখতে পারবেন - বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা। দেখবেন এক ধরনের সাইকো, পার্ভাট বা বিকৃত মানসিকতার লোক বিভিন্ন নাটক, সিনেমা, অর্ধনগ্ন নায়িকার ছবির নিচে লিখে বেড়াচ্ছে - কে কে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো, হাত তুলো, কে কে মোহাম্মদ সাঃ কে ভালোবাসো, লাইক দিয়ে জানিয়ে যাও। পাকিস্থানের জাতীয় পশু নামক এই প্রানীগুলো, 'বাংলাদেশের তৌহিদি জনগন' নামক এক আজগুবি পরিচয় নিয়ে ফেসবুকে সারাদিন ঘাস খুঁজে বেড়ায়। এরা যারে তারে নাস্তিক বানায়, কাফের বানায় এবং সরকারী কোন নেতা বা সাংবাদিক বা কোন অভিনেতা অভিনেত্রী মারা গেলেই এরা ম্যা ম্যা শুরু করে গালাগালি শুরু করে। এদের ভাবখানা এমন যেন, আল্লাহপাক এদের সাথে আলোচনা করে কাউকে জান্নাত বা জাহান্নামের ফয়সালা করবেন, (নাউজুবিল্লাহ)। প্রায় একই ধরনের বিকৃত মানসিকতাকে পুঁজি করে একটা শ্রেনী মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ফেরী করার চেষ্টা করেছিলো। পর্ণগ্রাফিকে কাজে লাগিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিক্রি করার কি জঘন্য অপচেষ্টা। এই বিষয়ে বিস্তারিত বলার রুচিও নেই। আমি বিশ্বাস করি, এইদুটো শ্রেনীই মানসিকভাবে অসুস্থ এবং প্রায় একই শ্রেনী।
যাইহোক, গত কয়েকদিনে বেশ কিছু ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আমি আমার নিজস্ব অবস্থান থেকে ব্যাপারগুলোকে যেভাবে দেখছি, তা অল্প কথায় আপনারদের সাথেও শেয়ার করতে চাই।
সম্প্রতি চট্রগ্রামে পাঁচজন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই বিষয়ে আমাদের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ঐতিহ্য বজায় রেখে কুরুচিপূর্ন অযৌক্তিক বাকযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। এই ক্ষেত্রে আমার মতামতটি খুবই স্পষ্ট। সারের জন্য যদি কৃষকদের উপর গুলি চালানো জায়েজ হয়, তাহলে বেতনের দাবিতে শ্রমিকের উপরও গুলি চালানো জায়েজ। সারের দাবিতে যদি কৃষকের উপর গুলি চালানো অন্যায় হয়, তাহলে বেতনের দাবিতে শ্রমিকের উপরও গুলি চালানো অন্যায়।
তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, প্রতিবাদের মিছিলে যে রাষ্ট্র গুলি চালায় - সেই রাষ্ট্র ফ্যাসিস্ট। সেই রাষ্ট্র সাধারন জনগনের নয়।
রকমারী নামক একটি বই বিক্রির ওয়েবসাইটে ধর্মীয় লেখকদের লেখা বই বেশি বিক্রি হওয়াতে আমাদের প্রগতিশীল সমাজের অনেকেই ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। তাদের গাত্রদাহের পেছনে কোন যৌক্তিক কারন নেই। মুল কারনটি ঈর্ষা জনিত। কেন ইসলামিক লেখকদের বেশি বিক্রি হচ্ছে। অথচ বাজারে যদি সত্যিকারভাবে ইসলামিক আলেমদের লেখা বই বাজারে বিক্রি হতো তাহলে আমি খুশি হতাম। এই দেশের ধর্মান্ধ মানুষ ইসলামের উদারতা এবং আধুনিকতা সম্পর্কে জানতে পারতো।
কিন্তু যাদের বই বাজারে বিক্রি হয়েছে তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ আছে, দ্বিধা আছে। কিন্তু আপনি আমি কিচ্ছু করতে পারব না। আপনার আমার ক্ষুদ্ধ হওয়াতেও কিচ্ছু আসবে যাবে না। বর্তমানে এটাই বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র। গত কয়েক বছরে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর উপর যে অন্যায়ভাবে দমন পীড়ন চালানো হয়েছে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ধর্মকে যেভাবে অপব্যবহার করা হয়েছে, সেটার বাই প্রোডাক্ট হচ্ছে এই সকল জামাতি শক্তির উত্থান। দয়া করে ইসলামিক শক্তি উত্থান আর জামাতি শক্তির উত্থানকে এক দৃষ্টিতে দেখবেন না।
আজকের এক মিজানুর রহমান আজাহারী ব্যক্তি শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার চাইতে হাজারোগুন শক্তিশালি। আপনার মানতে কষ্ট হলেও, এটা বাস্তব। আপনার বাসার দারোয়ান, ড্রাইভার, কাজের বুয়া ইত্যাদির কাছে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার চাইতে এই ভদ্রলোক বহুগুন শ্রদ্ধার পাত্র। তাঁর ১০টি ওয়াজের মধ্যে ৯ টিই ওয়াজ ইসলামের বিভিন্ন নিয়ম নীতি সম্পর্কে বলা। বাকি একটি ওয়াজের মধ্যে সুক্ষভাবে মায়া কান্না কাদা হয় সাঈদী সাহেবের জন্য, বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধীদের জন্য। আমি আগে বুঝতে পারতাম না কেন আমাদের দেশের তথাকথিত আলেমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামি বা তৎকালিন ইসলামি নেতাদের অন্যায় আচরনকে স্বীকার করতে চান না বা তাদেরকে বিশ্বাসঘাতক, বেঈমান ভাবতে নারাজ। কিন্তু এক মামুনুল হক কান্ডে সব পরিষ্কার হয়ে গেছে। ভদ্রলোকের বিরুদ্ধে সকল তথ্য প্রমান থাকা স্বত্তেও আমাদের দেশের বহু মানুষ, আলেম, এমন কি অনেক ব্লগার এখনও বিশ্বাস করেন না যে তিনি অপরাধ করেছেন। অধিকাংশ যুক্তি হয় 'আমরা ভালো জানি না, আল্লাহ ভালো জানেন, না জেনে কারো সম্পর্কে কিছু বলা ঠিক না। তিনি অপরাধ করলে আল্লাহ শাস্তি দিবেন বা এইগুলো এডিটিং করা সহ ইত্যাদি আরো বহু নিকৃষ্ট টাইপের। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেছেন ১৯৭১ সালে প্রযুক্তি এত ভালো ছিলো না, নইলে ১৯৭১ এ মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্তদের ব্যাপারেও বলা হতো, এই সব কিছু ফটোশপ করা, এডিটিং করা।
কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে, এই দেশের জনগনের ভোটের অধিকার নেই, নাগরিক হিসাবে সুরক্ষা দিতে রাষ্ট্র ব্যর্থ, নিপীড়িত জনগন তাদের পাশে রাষ্ট্রকে পায় না, পায় আজাহারী সাহেবদের। বাজারের খাঁটি দুধ নাই, ফলে কেউ যদি এক বালতি দুধের মাঝে এক ফোঁটা প্রস্রাবও মেশায় - জনগন এটাই কিনে খাবে। তাই রকমারীর বেস্ট সেলার লিস্ট নিয়ে আফসোস করা, ক্ষোভ প্রকাশ করা অনৈতিক না হলেও তা হাস্যকর। আমাদের প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে - 'উপায় নাই গোলাম হোসেন' টাইপের।
আজকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখলাম, একজন ডাক্তার ও তিনজন প্রশাসনের ব্যক্তিদের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হবার নিয়ে লড়াই। এই লড়াই চোখে আঙুল দিয়ে প্রমান করে কোটা পদ্ধতির দুর্বলতার কথা, এটা প্রমান করে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিক্রি - কতটা লাভজনক। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন এই শিক্ষিত মানুষগুলো আমাদের দেশের সুর্যসন্তানদের অবদানকে? এই ধরনের মানুষদের কারনে কিছুদিন পর ট্রল হবে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের নিয়ে। জালিয়াতির সার্টিফিকেটের মাধ্যমে যিনি মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে, যারা হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান তাদের কিছুই হবে না সেই অপমানে, অধপতনে শুধু নিরবে কাঁদবে যারা প্রকৃত পক্ষে এই দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন, আত্মত্যাগ করেছিলেন। দেখা যাবে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান লজ্জায় বলবেন না নিজের মহান পিতা বা মাতার আত্মত্যাগের কথা, সাহসীকতার কথা। আপনাদের নির্লজ্জতায়, স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধ বেচার ধান্ধায় বিজয়ীর হাসি হাসবে, ভন্ড মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তিরা। সেদিন আপনি চেয়ে থাকবেন, কিচ্ছু করার থাকবে না। আল্লাহও ওয়াস্তে এই সব বন্ধ করুন।
পাশাপাশি, অনেকেই ডাক্তার ভুল না, পুলিশ ভুল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ভুলটা প্রথমত রাষ্ট্রের। এই রাষ্ট্র আমাদেরকে তার নাগরিক হিসাবে এখনও সম্মান দিতে পারে নাই। এই রাষ্ট্রে আমাদের সাধারন জনগনের কোন মুল্য নেই। নিয়ম, নীতি ও আইনের প্রতি কারো নুন্যতম শ্রদ্ধাবোধ নেই। জনগনের টাকায় যারা জনগনের সেবার দায়িত্বে আছেন, তারাই আজকে জনগনের মাথার উপরে চড়ে বসেছেন। আমি তো একজন সাধারন মানুষ, আজকে যদি আমাকে রাস্তায় অন্যায়ভাবে হেনেস্তা করা হয়, আমি কাকে ফোন দিবো, কে আমার প্রতি অন্যায়ের বিচার করবে? কোথায় গেলে আমি পাবো সুবিচার? আদালতে? মাননীয় স্পীকার! আমাদের আর নতুন করে হাইকোর্ট দেখার ইচ্ছে নেই।
দ্বিতীয়ত, ভুলটা সকলের। আমার ব্যক্তিগত বিবেচনায় ডাক্তার, পুলিশ আর ম্যাজিস্ট্রেট এই ত্রিমুখী ঘটনায় কেউই তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারে না। যেহেতু আমাদের কারো কোন জবাবদিহীতা নেই, তাই চলছে ক্ষমতার দাপট আর স্বেচ্চাচারিতা। আজকে আপনার পেশার কারো প্রতি অবিচার হয়েছে, অন্যায় হয়েছে - এটা শুনেই যদি আপনি প্রতিবাদে ফেটে পড়েন, ধর্মঘট ডাকেন তাহলে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য যখন কোন পরিবহন শ্রমিক বা মালিককে গ্রেফতার করা হয়, তখন তারা যে ধর্মঘট ডাকেন, রাস্তা ঘাট বন্ধ করে দেন, সেই শ্রেনীর সাথে আপনার শ্রেনীর কোন পার্থক্য নেই। আগে বুঝতে হবে ঘটনাটা কেন ঘটেছে, কার কি ভুমিকা ছিলো, তারপর সেখানে প্রতিবাদ, মিছিল ইত্যাদি।
আমার নিকট আত্মীয়দের মধ্যে দুইজন হাসপাতালে, একজন মারা গেছেন। এই করোনায় আমাদেরকে নিজেদেরকে নিজেদের প্রয়োজনে সর্তক হতে হবে। আপনি আমি যদি সর্তক না হই, তাহলে সরকার বা লকডাউন কিছুই করতে পারবে না।
সবাই ভালো থাকবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করবেন। আল্লাহ আমাদেরকে সবাইকে নিরাপদ রাখুন, এই প্রার্থনাই করি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ২:২৭