মিরপুরের দিকে একটা দাওয়াতে গিয়েছিলাম। একদম পাশেই চিড়িয়াখানা হওয়াতে ভাবলাম, স্ত্রী কন্যাকে নিয়ে একটু ঘুরে আসি। স্ত্রীকে বলতে সেও রাজি হয়ে গেলো। শুক্রবার বন্ধের দিন হওয়াতে রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা, কিন্তু চিড়িয়াখানা মুখি রাস্তায় কিছুটা বাড়তি ভীড় লক্ষ্য করা গেলো।
বহু বছর পর চিড়িয়াখানায় গেলাম। দেখলাম, অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। বানরের খাঁচার সামনে বেশ মজা পেলাম। কন্যাকে বললাম - দেখেছ মা! তোমার বন্ধুদের!
কন্যা কিছু বলার আগে পাশ থেকে স্ত্রী অবাক কন্ঠে বলে উঠল, মানে?
আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, মানে কিছু না।! চিড়িয়াখানায় ঢুকার সময় তোমার মেয়েকে এনলিস্ট করে ঢুকিয়েছি, নইলে বাদর চুরির অভিযোগে হাজতে যেতে হতো!
স্ত্রী কিছুটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন, ব্যাপার না! তোমাকে বের হতে দিলে, তোমার মেয়েকেও দিবে। বড়টা নিশ্চিন্তে বের হবে আর ছোটটাকে নিয়ে ঝামেলা হবে, তা তো হয় না।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে, বাঘের খাঁচায় রওনা দিলাম। ভাবলাম, বাঘ দেখে কিছুটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই! কিন্তু একটি জীর্নশীর্ন বৃদ্ধ বাঘ দেখে বড়ই হতাশ হলাম। আমার চেয়েও হতাশ হয়ে স্ত্রী বললেন, দেশে 'বাঘের' সংখ্যা আশংকাজনকহারে কমে যাচ্ছে।
আমি কিছুটা মিনমিনে কন্ঠে বললাম, আর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংসারে 'স্বামীদের' সংখ্যা।
স্ত্রীর ভ্রুকুটির উপেক্ষা করে সামনে সিংহের খাঁচার দিকে এগিয়ে গেলাম। দেখলাম বেশ কিছু 'শিক্ষিত' ছেলেপেলে সিংহের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে একটা ক্লান্ত বিষন্ন সিংহকে মাদার** বলে গালি দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করছে।
এক উল্লসিত 'প্রানী'কে কানে কানে বললাম, খাঁচার ভেতর ঢুইকা পারলে মাদার** বলেন। বেশি আনন্দ পাবেন। প্রাণীটি আমার দিকে চেয়ে কিছুক্ষন থমকে গেলো। তারপর বত্রিশ দাঁত বিকশিত একটি লাজুক হাসি উপহার দিয়ে আবার সিংহকে গালাগালি করার পর বুঝলাম, এই দো পেয়ে প্রানীটির নাম 'বলদ'।
চার পেয়ে বলদও অন্তত কৃষকের কাজে আসে। কিন্তু দো পেয়ে বলদ কোন কাজেই আসে না। এরা জাতির অভিশাপ। এই ধরনের বলদের উদ্দেশ্যে করে জনৈক ব্লগার বলেছিলেন, - এরা জাতির অক্সিজেন নষ্ট করছে।
এরপর চিড়িয়াখানার বিভিন্ন পশুর পাখির খাচা ঘুরে দেখলাম। বিভিন্ন জন্তুর খাঁচার সামনে গিয়ে বুঝলাম, ঢাকা চিড়িয়াখানায় আসলে বিভিন্ন নাস্তিক পশু আস্তিক পশুতে রুপান্তরিত হবে। কারন ঢাকা চিড়িয়াখানাই পশুদের হাবিয়া দোজগ। ইহা এমন এক আজব জায়গা! যেখানে আসল হিংস্র প্রাণীরা খাঁচার বাইরে বিচরন করে আর কথিত জন্তুরা ভয়ে খাঁচার ভিতরে ভয়ে অবস্থান করে।
মন খারাপ করে বের হয়ে আসার সময় শুনলাম, মিরপুর চিড়িয়াখানাকে বিশ্বমানের একটি আধুনিক চিড়িয়াখানা হিসেবে তৈরি করতে আমুল পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ভালো কথা। তবে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, চিড়িয়াখানা উপযোগী, বিশ্বমানের মানুষ বানানোর প্রজেক্ট আপনারা কবে হাতে নিবেন?
জানোয়ারদের, জানোয়ার দেখানোর কি মানে??
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৫:২৬