somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন
বৃহত্তম বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রশিক্ষক আমি। একজন শৌখিন লেখকও বটে। শখের বশে কবিতাও লিখেছি এক সময়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও বিভাগীয় পত্রিকায় এবং ব্লগে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করি।

সূর্য সেন : আত্মপরিচয় ও ঐতিহ্য প্রেরণার অনুসন্ধান

২২ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(অনলাইন পত্রিকা সংস্করণ- জাগোনিউজ২৪ডটকমঃ Click This Link )

১৯৩০ সালের ১৮ থেকে ২২ এপ্রিল মাত্র একান্নজনের বিপ্লবী দল নিয়ে পাহাড়তলী ও দামপাড়া অস্ত্রাগার দখল এবং ঐতিহাসিক জালালাবাদ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন মাস্টারদা। তাঁর সেই আত্মত্যাগী বিপ্লবকে স্মরনে রেখে আমার এই শ্রদ্ধাঞ্জলী।

‘‘নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।” দেশ মাতৃকা আর মাটির টানে, স্বাধীন দেশের বাসনায় শােষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে যুগ যুগ ধরে দেশের সােনার সন্তানেরা অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন নিজের বুকের তাজা রক্ত। নিঃশেষে করেছেন দান সবুজ সতজ প্রাণ। ভেঙ্গেছেন কপাট, কেটেছেন ললাট। কৃতজ্ঞ করেছেন প্রজন্মের পর প্রজন্মকে। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির সাধনায় কালে কালে ঘটছে বহু বিদ্রােহ। ফরাজী আন্দোলন থেকে শুরু করে সিপাহী বিদ্রােহ, নীল চাষীদের নীল বিদ্রােহ, পাবনার কৃষক বিদ্রােহ, মাস্টাদার স্বদেশী আন্দোলনসহ ছােট বড় নানা অনেক বিদ্রােহ। একটি সুন্দর, সােনার বাংলার স্বপ্ন নিয়ে বৃটিশ বিরােধী এবং পাকিস্তানী হানাদার বিরােধী আন্দোলনে সুদীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাসের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে মাস্টারদা সূর্যসেনের চেতনার প্রতিফলন আমাদের মহান বিজয়।
কালজয়ী ঐতিহাসিক পুরুষ লাল-সবুজ পতাকার স্বপ্ন নির্মাতা স্বাধীন বাংলার প্রবাদ ব্যক্তিত্ব সর্বযুগের উদ্ভাসিত সৈণিক চট্টলার অহংকার তথা দক্ষিণ রাউজানের সূর্য সন্তান মাস্টারদা সূর্যসেন। মাস্টারদা বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে একজন বিপ্লবী হিসাবে আমাদের সামনে একটি প্রতিবাদী ভাষা। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে ‘চট্টগ্রাম বিদ্রোহ’ জাগ্রত গণচেতনার প্রতিফলন। গণবিদ্রোহের সমস্ত বৈশিষ্ট্যকে অঙ্গীকার করে ঘটছিল এর সূচনা। সকল বিপ্লবী এক নিশানের নীচে ছিল সমবেত। সকলের মূলমন্ত্রও ছিল এক। আর সূর্যসেনই সেই বিদ্রােহের সর্বাধিনায়ক।
১৯১৮ সালে সূর্যসেন নগেন সেন, অনুরপ সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, চারু বিকাশ দত্ত এই বিপ্লবী দলের উদ্বােধন করেন। ১৯২০ সালে সাম্যাশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বৈপ্লবিক প্রস্তুতির শুরু। ১৯২১ সালে এক দল যুবকদের নিয়ে সূর্যসেন অসহযােগ আন্দোলনে যােগদান করেন। এরপর ১৯২৮ সালে কংগ্রেসে যােগদান এবং পরবর্তীতে ১৯২৯ সালে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। রিপাবলিকান আর্মি গঠনের মধ্য দিয়ে ১৯৩০ সালের ১৮ থেকে ২২ এপ্রিল মাত্র একান্নজনের বিপ্লবী দল নিয়ে পাহাড়তলী ও দামপাড়া অস্ত্রাগার দখল এবং ঐতিহাসিক জালালাবাদ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন মাস্টারদা। চট্টগ্রামের ন্যাশনাল স্কুলের গণিতের শিক্ষক সূর্যসনের মুক্ত ও স্বাধীন ভারত ছিল একমাত্র আকাঙ্খা। তাইতাে আমরা দেখতে পাই বৃটিশদের এদেশ থেকে তাড়াবার জন্য মাস্টারদা প্রাণের বিনিময়ে একটি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ বিপ্লবী বাহিনী গড়ে তুলে ছিলেন। উপমহাদেশের স্বাধীনতার প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তােলনের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতার ঘােষণা উচ্চারিত হয়েছিল সর্বাধিনায়ক সূর্যসেনের কন্ঠ থেকে। চট্টগ্রামকে তিনদিন স্বাধীন রেখেছিলেন তিনি।

স্বার্থান্বেষী কিছু গোষ্ঠী মাস্টারদার স্বদেশী আন্দোলনকে আজাে সাম্রাজ্যবাদীতার দৃষ্টিকােণ থেকে সাম্যবাদী বলে নেতিবাচক আখ্যা দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর আত্মােত্যাগ, দেশ প্রেম, দেশজােড়া তাঁর ভাতৃত্ব বােধকে হিন্দুয়ানী আন্দােলন বলে ফলাও করে যাচ্ছে নিজ স্বার্থ চরিতার্থ্য। অথচ মাস্টারদার ডাকে, দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ব হয়ে মা ও মাটির সোঁদা গন্ধে মত্তো পেশীবহুল মুলসমানদের মধ্যেও তখন বিদ্রােহর আলাে জ্বলে উঠেছিলাে। সূর্যসেনের প্রথম দশজন সহকর্মীর অন্যতম বিপ্লবী আফসার উদ্দিন, চট্টগ্রামের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব শখ-ই- চাটগাঁম কাজম আলী মাস্টার, দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমােহন সেনগুপ্ত, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ, পাপাদিয়ার মীর আহমদ, আব্দুস সত্তার, লােকমান খান শেরওয়ানি, করালভাঙ্গার আব্দুল হক, কামাল উদ্দিন, শ্রীপুরের নূর আহমদ, পাঁজচখাইনের আমির হাসন, কদুর খিলের নওয়াব মিয়া, মিরসরাইর কবি ইব্রাহিম ও সৈয়দুল হক সক্রিয়ভাব বিপ্লবী দলে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মেয়েদের মধ্যে বিপ্লবী চেতনা জাগ্রত করেন বিপ্লব প্রেমিক অমর শহীদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার ও কল্পনা দত্ত। তাঁদের টানে অনেক মেয়েরাও এগিয়ে এসেছিলেন স্বতঃস্ফুর্তভাবে। বিশেষত কল্পনা দত্তের আর্কষণে অনেক মুসলিম মেয়ে অন্ধকার থেকে আলােকে এসেছিলেন যাদের মধ্যে আয়শা বাণুর নাম উল্লখযােগ্য। এছাড়াও বিপ্লবী নারী সাবিত্রী দেবী, ইন্দুমতী সিংহ, সুহাসিনী গাঙ্গুলি, কুন্দ্রপ্রভা সেনগুপ্তার নাম অনির্বাণ।

১৯৩৩ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি পটিয়া থানার গৈরালা গ্রামের আশ্রয় ঘাঁটিতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের আতঙ্ক মাস্টারদা সূর্যসেন ধৃত হন ব্রিটিশ বাহিনী দ্বারা। অতঃপর ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর যােদ্ধা, বাংলা স্বাধীনতার প্রথম স্বপ্ন দ্রষ্টা ফাঁসিতে আত্মাহুতি দেন। দেশের স্বাধীনতার বেদিমূলে যেসব দেশপ্রেমিক তাদর জীবন কােরবানি দিয়েছেন তাঁদের নাম রক্তাক্ষরে অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে লিখে রাখতে, সকল বিভেদ ভুলে একসাথে মুক্তির নেশায় কাজ করতে, প্রিয় সংগঠন রিপাবলিকান আর্মি যাতে বিভাজন না হয় তার অনুরােধ জানিয়ে বিদায় বানী রচনা করেছেন মাস্টার দা। ফাঁসির পর সূর্যসেনের লাশ তাঁর আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। মৃত্যুর পর লাশের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াও হয়নি। কােথায় কি করপছিল তা এখনও ঠিক জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্র মতে জানা যায়, বিট্রিশ ক্রুজার যুদ্ধজাহাজ ‘দি রিনাউন’ এ করে বঙ্গােপসাগরে পাথর বেঁধে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল শক্তিমান পুরুষ সুর্যসেনকে। কি দূর্ভাগা উত্তরসূরি আমরা। কি নির্মম ভাগ্য আমাদের। আমাদের পূর্বপুরুষ, মুক্তির অগ্রদূত, পথিকৃত, ভারত উপমহাদেশের অবিস্বংবাধিত নেতা, বাঙ্গালীর বাঙ্গালী সত্ত্বা সূর্যসেনের পায়ে সামান্য পুষ্পার্ঘ অপর্নের সৌভাগ্যটুকুও আমাদের নেই। অন্তত সঠিক তথ্য উদঘাটনের মধ্যে দিয়ে সামান্য স্বীকৃতিটুকুও আমরা দিতে পারছি না তাঁর অবদানকে, তাঁর আত্মত্যাগকে। এ আমাদের বড় ব্যর্থতা, বড় গ্লানি। নিশ্চিয় বিচক্ষণ মহাআত্মা সূর্যসেন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন আমরা আসলে বড্ড অহসায়। আমরা ক্ষমা প্রার্থী!

১৯৩০ সালের ১৮ ই এপ্রিল কালের প্রবাহে আজ সুদীর্ঘ অতীত। চট্টগ্রাম অভ্যুথান, সূর্যসেনের আত্মত্যাগ আজও আমাদের ভাবিত করে আত্মপরিচয় ও ঐতিহ্য প্রেরণার সন্ধানে, ইতিহাস চেতনার উদ্ভাবনে। পরাধীনতার হাত থেকে ভারতবাসীকে স্বাধীন করার সুতীব্র আকাঙ্খার প্রজ্বলিত যােদ্ধা সূর্যসেন বুকের যন্ত্রণাকে লাঘব করেছিলেন ফাসিঁর মঞ্চে গিয়ে। শ্রদ্ধাভরে আজ তাই স্মরণ করছি আমাদের সেই মহান বিপ্লবী নেতাকে। বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে জন্ম নিক মাস্টারদার প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হাজারো অগ্নি পুরুষ। সাম্রাজ্যবাদীতা, পরাধীনতার ছােবল থেকে মুক্তির সূর্যালোক উদ্ভাষিত হবে যুগে যুগে। আর সেসব যুদ্ধে, সংগ্রামে আর বিপ্লবে অনুপেরণা ও সাহস যুগিয়ে যাবে মাস্টারদা দিনের প্রথম সূর্য হয়ে। বিপ্লব দীর্ঘজীবি হােক, বন্দে মাতরম, সাম্রজ্যবাদ নিপাত যাক!

লেখকঃ কলামিষ্ট
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×