somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন
বৃহত্তম বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রশিক্ষক আমি। একজন শৌখিন লেখকও বটে। শখের বশে কবিতাও লিখেছি এক সময়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও বিভাগীয় পত্রিকায় এবং ব্লগে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করি।

১১তম ব্লগ দিবস ও এতদুদ্দেশ্যে প্রকাশিত বিশেষ ম্যাগাজিনঃ কৃতজ্ঞতা সমাচার

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শোষিত সমাজ ব্যবস্থায় যারা বংশ পরম্পরায় পদবী ও শ্রেণী মর্যাদার যোগ্য হয় না, তারা কিন্তু অনেক ফোঁটা রক্ত ও ঘামের বিনিময়ে পদ ও মর্যাদা অর্জন করে। আত্মপরিচয় ও অস্তিত্বের সন্ধানে সেই সকল শ্রেণী সংগ্রামীদের মতো আমিও একজন। আমার নাম, পদবী ও সম্মান সম্পূর্ণ নিজের মেধা ও যোগ্যতায় প্রতিটা ফোঁটা রক্ত ও শ্রমের বিনিময়ে অর্জন করেছি। তাই, আমার এই অর্জিত সম্পদ আমার অহংকার, আমার কাছে অলংকার। সেই কিশোর বয়স থেকেই নিজস্ব একটা স্বত্তা ও অস্তিতের সন্ধানে ছিলাম। নামীদামী ভালো কোন প্রতিষ্ঠানেও পড়াশুনা করতে পারিনি। নিজের নামের সাথে ডাঃ, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যান্কার, বিশেষজ্ঞ, অথবা শেষে ist যোগ করতে না পারার বেদনা সবসময় কুরেকুরে খায়। ডক্টরেট শব্দটার প্রতি খুব আকর্ষণ কাজ করে এখনো। অনেক আঁতিপাতি আর হাতাহাতির পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় ভলান্টিয়ার হিসেবে বিবিএ পাড়াকালীন বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি শুরু করি। (বলা বাহুল্য যে, যদিও আমি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণী থেকে কবিতা ও গল্প লিখা শুরু করি। এরই মধ্যে দুঃখের সংবাদ হচ্ছে এই যে, আমার দুইটা পান্ডুলিপি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার মতো “ঊঁই পোকায় খেয়ে গেছে চিঠির বান্ডেল” হয়ে গেছে।) প্রথম প্রথম কোন পত্রিকাই সম্বোধনসূচক কিছুই লিখতো না আমার নামের বা লেখার শেষে। অনেক বছর পর নামের শেষে প্রাবন্ধিক পদবীটা যুক্ত হয়। খুব আনন্দিত হই যেদিন প্রথম এই প্রাতিষ্ঠানিক প্রাবন্ধিক খেতাবটা পাই। কিন্তু আমার অতৃপ্ত আত্মা এতে খুব বেশিদিন তৃপ্ত থাকতে পারেনি। একটা ist যোগ করার স্বপ্ন দেখতে থাকি। এই শ্রেণীসংগ্রামে নিজের একখানা পরিচয় ও পদবী শেষতক অর্জন করি ২০১৮ সালের ২৫ মে চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় একটা পত্রিকায় আমার লেখার নিচে ফুটপ্রিন্ট হিসেবে লিখা কলামিষ্ট শব্দে। এরপর একই বছর ১১ জুলাই ঢাকা থেকে প্রাকাশিত প্রথমসারির একটা অনলাইন নিউজপোর্টালে সমসাময়িক একটা কলামে কলামিষ্ট পরিচয় মেলে আমার। সেই থেকে এখনো লিখছি কলামিষ্ট হিসেবে। ব্লগার হিসেবে প্রথমআলো ব্লগ দিয়ে সুচনা। সামুতে আছি ৪ বছর ১ মাস হলো। সুতারাং ব্লগার হিসেবে সামান্য পরিচয়টাতো আছেই। (যদিও সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি ব্লগার পরিচয়টা নিয়ে)। ব্লগে বা লেখালিখিতে খুব একটা সক্রিয় থাকতে পারিনা ব্যক্তি জীবনে কর্মব্যস্ততার কারনে। শ্রমজীবি মানুষতো ভাই কর্ম করে খেতে হয়। বাবা-মা আর স্ত্রী-সন্তানসহ মোট ছয় জনের জন্য আমিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাছাড়া কোম্পানির দেশজুড়ে বিভিন্ন কারখানায় প্রতিমাসেই প্রায় সাপ্তাখানেক চট্টগ্রামের বাইরে থাকতে হয় বিভিন্ন মিটিং, প্রশিক্ষণকর্মশালা ও পরিদর্শনে। যাইহোক, এরইমাঝে হঠাৎ একদিন সামু খুলে দেখি জাদিদ ভাইয়ের ‘ব্লগ ডে’ উদযাপন নিয়ে একটা পোস্ট। খুব পুলকিত হই খবরটা পড়ে! আমি আদতে জানতাম না ‘ব্লগ ডে’ বলে কিছু আছে। আরো অবাক হয়েছি এই ভেবে যে, বাংলাদেশের মতো দেশে ‘ব্লগ ডে’র মতো একটা দিবস কিভাবে উদযাপিত হতে পারে! তাও আবার ১১তম ‘ব্লগ ডে’! What the...!

বই আকারে আমার লেখালেখি নিয়ে অনেক প্রচেষ্টা আছে। কিন্তু সফল হতে পারিনি কখনো। জাদিদ ভাইয়ের ঘোষণায় কাল বিলম্ব না করে তাৎক্ষণিক আমার লিখা “ব্যবচ্ছেদঃ একটি সমাজ” প্রবন্ধটি পাঠিয়ে দেই ‘ব্লগ ডে’ উপলক্ষে প্রকাশিত প্রথম ম্যাগাজিনে প্রকাশের আশা নিয়ে। মনে মনে খুব আশাবাদি ছিলাম এই ভেবে যে, বই আকারে জীবনের প্রথম লেখা জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারবো তো! অধিকন্তু ‘ব্লগ ডে’ তে যাবো কিনা দ্বিধায় ছিলাম। বউকে বলাতে তিনি হুন্কার দিয়ে উঠলেন আতন্কে। বুঝিয়ে বল্লাম যে, শুধু বইখানা হাতে নিয়ে শটকে পড়বো।

অবশেষে অনেক ব্যস্ততা নিয়ে চিটাগং থেকে অফিসের কাজে ঢাকায় যাই ২১ তারিখ। খুব টাইট শিডিউলে একদিন গুলশান, দুইদিন মুক্তারপুর মুন্সীগঞ্জ, একদিন গাজীপুর ও শেষদিন ২৫ তারিখ টঙ্গি অফিসের কাজ শেষ করে অনেক ভয়ে ভয়ে যাই পরীবাগ। আতন্কিত মনে বউ-বাচ্চার কথা ভাবছি বারবার। ঢুকেই অবাক হয়ে যাই উপস্থিতির সংখ্যা দেখে। শুনতে পাই মঞ্চে উপবিশষ্ট নয়ন বিন বাহারকে। তার মতো আমিও ব্লগার দেখতে যাই সেদিন পরীবাগে। আমি একটু অন্তর্মুখী প্রকৃতির মানুষ। তারপরও প্রথমেই নিজ থেকে পরিচয় হই এক রঙ্গা এক ঘুড়ির তুষার ভাইয়ের সাথে। কুশল বিনিময় করি এবং উনার কাছ থেকে বইয়ে প্রকাশিত লেখা সম্পর্কে জানতে পারি। জীবনে প্রথম লেখালেখির কোন প্লাটফর্মে লেখক হিসেবে নিজেকে কোথাও আবিস্কার করি। ভিতরে ভিতরে সমমনা স্বজনদের একসাথে দেখে ভালোই লাগছিল। তুষার ভাইয়ের কাছ থেকে সবার পরিচয় জানার চেষ্টা করছিলাম তখন। তারপর কথা হয় প্রচন্ড মেধাবী, ব্যস্ত ও আইকন জাদিদ ভাইয়ের সাথে। এরপর একে একে কথা হয় মাগুর ভাই, গিয়াস উদ্দিন লিটন ভাই, সামু পাগলা০০৩ ভাই, মুশফিক বুলবুল ভাই (ব্যান্কার), নীল সাধু ভাই, শিপু ভাই, স্বপ্নবাজ সৌরভ ভাই, চেয়ারম্যান ভাই, মাসুদ রানা’র স্ক্রিপ্ট লেখক ভাই, নয়ন বিন বাহার ভাই, নাম না জানা চিকন গোঁফওয়ালা ভাই ও শাকিল ভাইয়ের সাথে। অনেক কথা হয় জাদিদ ভাই, নয়ন-বিন বাহার ভাই, মাগুর ভাই, সামু পাগলা০০৩ ভাই ও বুলবুল ভাইয়ের সাথে। দূর থেকে চিনে নেই মোস্তফা কামাল ভাই, আরজুপনি আপা, রাবেয়া আপা ও শিমুল ভাবীকে। মনে মনে খুব খুঁজছিলাম চাঁদ গাজী ভাই, রাজীব নুর ভাই, প্রামাণিক ভাই, নুরু ভাই, ছবি আপা ও জনম দাসী নামের এক সময়কার এক ব্লগারকে। (জনম দাসী আপা ব্লগে আমার লিখা ‘দি ফাদার’ নামক একটি পোস্টে খুব মর্মষ্পর্শি মন্তব্য করেছিলেন)। এতোগুলো মোষ্ট ব্রিলিয়েন্ট আর ট্যালেন্টেড মহামানবদের মাঝে নিজেকে চুনোপুটি মনে হচ্ছিল। সময় স্বল্পতার কারণে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হলেই জাদিদ ভাইয়ের কাছ থেকে বই আর মগ হাতে বিদায় নিয়ে চলে আসি মনে মনে আপসোস নিয়ে। শেষ অব্দি থাকতে পারলে আরো ভালো লাগতো। বাইরে এসে বই খুলে জয়ের আনন্দে আমি বিহ্বল হলাম! অসংখ্য কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই জাদিদ ভাই, জানা আপা ও সমগ্র আয়োজক সদস্যকে যারা পর্দার আড়ালে ও সামনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সফল করেছেন এই আয়োজনকে। অন্তরের অন্তস্থল থেকে সাধুবাদ থাকলো সামু কর্তৃপক্ষের প্রতি ‘ব্লগ ডে’ উপলক্ষে প্রকাশিত প্রথম ম্যাগাজিনে আমাকে ও আমার লেখাকে অকৃপণ ও অকৃত্তিম জায়গা করে দেওয়ার জন্য। শোষিত ও নিষ্পেশিত সমাজ ব্যবস্থায় শ্রেণীসংগ্রামী পদ, পদবী ও মর্যাদাহীন আমি এক যোদ্ধা নতুন করে একটা পরিচয় ও প্লাটফর্ম খুঁজে পেলাম যা বংশ পরম্পরায় আমার পরবর্তী বংশধর মুকুট সদৃশ মাথায় করে বয়ে নিয়ে যেতে পারবে।

(বিঃদ্রঃ ব্লগে পারস্পরিক ব্যক্তি পর্যায়ে যোগাযোগ ও সম্পর্ক উন্নয়নে ‘ইন্সট্যান্ট ম্যাসেজিং’ সদৃশ কোন অপশন থাকলে অটুট বন্ধন স্থাপনে সহায়ক হতো।)

কৃতজ্ঞতায়ঃ রাহীম
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:১১
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×