একটি গানের রিভিউঃ ভোট ফর ঠোট
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
শুনেছি বুড়োমানুষের মাঝে মাঝে ভীমরতি ধরে। কিন্তু কখন ক্যামনে ধরে জানতাম না। কিন্তু কয়েকদিন আগে একটা মিউজিক ভিডিও দেখে বুঝলাম বুড়ো কখন ভীমরতিগ্রস্থ হয়।
বিষয়ভিত্তিক গান ছেড়ে যে কেন তিনি রঙচটা বিনোদনের দিকে ঝুকলেন সেটা বোধগম্য নয়। কয়েকদিন আগে SAtv তে একটা ইন্টারভিউয়ে তিনি বলেছিলেন, 'সঙ্গীতকে শুধু পেশা হিসেবে বা বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ভাবাটা ঠিক না। গানের মধ্যে অনেক কিছুই থাকে যেটা প্রার্থনা থেকে শুরু করে, পূজা থেকে শুরু করে, প্রতিবাদ, বিপ্লব, ভালোবাসা, প্রেম সবকিছুই থাকে। আমাদের মধ্য অনেকেই থাকে যাদের নিজের কোন মতবাদ থাকে না বলে গড়পড়তা গান গান এবং ঐসব গান জনপ্রিয়তা পায় বেশী।' হ্যা তার কথা ঠিক। তাকে আমরা গানের বানিজ্যিক স্রোতে গা ভাসাতে দেখিনি। তার অধিকাংশ গান তিনি নিজেই লিখে সুর করেন। একজন দেশপ্রেমিকের সুর ফুটে উঠেছে তার গানের মধ্যে। বিশ্বজিতকে নিয়ে তার গানের কথা জাতি আজীবন স্বরণ রাখবে। শাহবাগ আন্দোলনের তার সক্রিয়তার কথা এখনো কেউ ভোলেনি। ফেলানী হত্যাকান্ড নিয়েও তিনি কাজ করেছেন। সেই তিনি এভাবে পল্টি কিভাবে খেলেন ঠিক বোধগম্য নয়। পল্টি খাওয়ার কথা বলছি এই কারনে যে নায়লা নাইম এসময়ের বাঙালী মডেলিংকে একটা ট্রেন্ড থেকে টেনে এনে নগ্নতার সাথে মিলন ঘটানোর তালে আছেন। বলিউড মার্কা পোষাক-আশাক পরে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি ইতিমধ্যে বিতর্কের শীর্ষে চলে এসেছেন।
প্রীতমের এই গানটির উপস্থাপনা দেখলে মনে হয় তিনি নাইলা নাইমকে দিয়ে কাজ করানোর জন্যই গানটি লিখেছেন। এরকম একটা রগরগে গান তার কাছে থেকে ঠিক আশা করা যায় না।
মিউজিক ভিডিওটির প্রথমেই স্ক্রীনে ভেসে ওঠে লো কাট কালো গেঞ্জী পরা নাইলা নাইমের সদ্য রক্তে চুমুক দেয়া লালটুকটুকে ঠোট। এই ঠোটকে তিনি মার্কা হিসেবে নিয়ে একটা জোট করতে চাইছেন। এই দেশে আজ পর্যন্ত অনেক ধরনের জোট দেখেছি। কিন্তু ঠোটের জোট এই প্রথম। জোটের নাম প্রেমের মহাজোট।
ভিডিওটিতে নাইলাকে দেখা যায় একজন বীজগনিতের টিচার হিসেবে। হোয়াইট বোর্ডের একগাদা সূত্র নিয়ে তিনি চিন্তিত থাকা অবস্থায় সেখানে আবির্ভাব ঘটে প্রীতমের। তার আঙুলের ইশারায় নাইলা তার কোলে হুমড়ি খেইয়ে পড়েন। কিন্তু তখন তিনি আর অংকের ম্যাডাম নন। হয়ে গেছেন মিনি স্কার্ট পরা নার্স। নাকি ডাক্তার?? ডেন্টিস নাইলাকে এই গানের মধ্যেও এই রূপে উপস্থাপন করা থেকে বোঝা যায় তার চরিত্রটিকে বেশ গুরুত্বের সাথে নেয়ে হয়েছে। জানিনা তিনি তার চেম্বারে এই টাইপের পোষাক পরে কাজ করেন কিনা। এমনিতে লেডী ডেন্টিসদের নিয়ে আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতাও বেশী ভালো না।
গানখানি দেখতে দেখতে মাঝখানে একবার নাইলাকে শাড়ী পরা অবস্থায় দেখে অবাক হলাম। পুরো গানটিতে তার অঙ্গভঙ্গী এবং ড্রেসআপের সাথে শাড়ী পরা নাইলা কে বেশ খাপছাড়া লাগছিল। কিন্তু ঐ এক মূহুর্তের জন্যই। কারণ এই পরেই তিনি হাজির হন মারমুখী পুলিশের ভূমিকায়। তবে ঐ একই কথা, মিনিস্কার্ট পরা কালো ড্রেসের পুলিশ আমাদের দেশে যে কবে রাস্তায় নামবে আর আমরাও পুলিশনীর পাছায় প্রীতমের মতো লাঠির বাড়ী দিতে পারবো সেটা আমার জানা নেই। তবে আমি নিশ্চিত এই পুলিশ আমাদের থানায় আসলে দূর্নীতি কমার পরিবর্তে বেড়ে যাবে। কারণ সবাই এই পুলিশের হাতে ধরা খাবার জন্য ক্রাইম করা শুরু করবে।
যদিও প্রীতমের সমগ্র কেরিয়ারে এই গানটির মতো আলোচনা আর কোন গানে হয়নি। তাই বলতে হয় গানটি বানিজ্যিক ভাবে সফল। কিন্তু প্রীতমের ভাষায় এটি একটি রাজনৈতিক স্যাটায়ার গান। প্রীতম বলেন, অনেক গোবর মস্তিষ্কের মানুষ গানটি না শুনেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন এর ভিডিও দেখে। কিন্তু মন দিয়ে গানের কথাগুলো উপলব্ধি করার চেষ্টা করেন না। তারা জানেন না এটি একটি রাজনৈতিক গান। আর এই গানের কথা লেখার পেছনে পরোক্ষভাবে মূল উত্সাহদাতা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গত নির্বাচনে কিংবা তার আগের নির্বাচনে এরশাদ কোন জোটে যাবেন— সেটা নিয়ে আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে যে টানাপড়েন আর সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছিল তার ওপর ভিত্তি করেই গানটি লিখেছি। অথচ মাথা মোটা অনেক সমালোচক লুকিয়ে লুকিয়ে ভিডিওতে নায়লা নাঈমে দেখেন। আর আমাকে বলে ছি.. ছি.. ছি.., প্রীতম অনেক অশ্লীল।
কিন্তু কথা হচ্ছে এই মেসেজটি দিতে কি এই রগরগে মিউজিক ভিডিওটির খুব দরকার ছিল?? এইভাবে সানি লিওন মার্কা নাইলাকে দিয়ে তিনি মেসেজটি কেন দিতে চাইলেন??
আমি বাংলাদেশের ভোটার হবার পরে দুইটা নির্বাচন গ্যাছে মাগার একবারও ভোট দিতে পারিনাই। প্রথমটার কারণ সঙ্গত। দেশে ছিলাম না। আর এবার তো ভোট দেয়াই লাগেনি। তবে এবার ভাবছি প্রেমের মহাজোটে একটা ভোট দিবো। যেহেতু মার্কা আমাদের আবেদনময়ী নাইলা আপার টুকটুকে ঠোট সেহেতু ভোট তো একটা দিতেই হয়। কি বলেন???
নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষনার অপেক্ষায় থাকার ফাঁকে আসুন ভোটের প্রচারপত্রটা একটু দেখে নিই।
মার্কা যদি হয় তোর লাল টুকটুকে ঠোঁট
একা আমি দিতে রাজি - ১৬ কোটি ভোট
অবিশ্বাস, এর এই আকালে সবাই দেয় চোট
তোর আর আমার ঠোঁটই গড়বে প্রেমের মহাজোট
ঠোঁট বানাবে জোট বানাবে ঠোঁট বানাবে জোট
জোট বানাবে ঠোঁট বানাবে জোট বানাবে ঠোঁট।
নাহ্ থাক নির্বাচনী ইশতেহার এই বেশী পড়লে হাঁপানী উঠে যেতে পারে। তার চেয়ে আসুন যেটা নিয়ে কথা বলছি সেই মিউজিক ভিডিওতি দেখেই একটু বিনোদিত হই।
"শাহবাগ কলিং আবার একাত্তর" ছিল প্রীতমের লাস্ট এ্যালবাম। বিভিন্ন সামাজিক অন্যায়- অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রীতম কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও ব্লগারদের সাথে একাত্মা ঘোষনা করেন এবং তার ঐ এ্যালবামের সমুদয় লভ্যাংশ তিনি উৎসর্গ করেন গণজাগরণ মঞ্চের সমস্ত শহীদের পরিবারকে। সেই প্রীতমের এই ঠোটের বানিজ্য ঠিক হজম করা যায় না।
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ
গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।
... ...বাকিটুকু পড়ুন
৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…
১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন
মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট
মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'
নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ
আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন