somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বব মার্লে, জন লেনন ও আরেকজন আজম খান।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা বিখ্যাত কথা প্রচলিত আছে, " যে দেশে লেজেন্ডদের মুল্যায়ন করা হয়না সে দেশে লেজেন্ডদের জন্মই হয়না"। কথাটার অর্থ খুব সহজ মনে হলেও এটা এত সহজ অর্থের কথা নয়। কথাটার মানে এরকম, যেখানে নিজের দেশের মানুষই আপনাকে লেজেন্ড মানছেনা সেখানে আপনি কিভাবে পৃথিবির লেজেন্ড হবেন? সব শুরু আগে ঘর থেকে হতে হয়। বব মার্লে, জন লেনন এদের নাম শুনেছেন নিশ্চই। এরা জনপ্রিয় গান দিয়ে বিশ্ব মাতিয়ে গেছেন একসময়। তাদের মত আরো অনেক জনপ্রিয় মিউজিসিয়ানরা একসময় পৃথিবি মাতিয়েছেন কিন্তু তাদের থেকে মানুষ বব মার্লে, জন লেনন এদের কেন বেশী মনে রেখেছে বলতে পারেন? আচ্ছে এক এক করে সংক্ষেপে বলছি।

বব মার্লে
" ওয়েলার্স" ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা বব মার্লে এর কথা আগে বলি। বব মার্লে ষাট ও সত্তরের দশকের কথা। তখন সে দেশে সাম্রাজ্যবাদ খেয়ে নিয়েছিল দেশটাকে। জোর জবরদস্তি, এক তরফা শাসন, বাক স্বাধিনতা, মানুষের মৌলিক অধিকার প্রায় বিলুপ্ত। দেশে শুরু হল আন্দোলন। কিন্তু কিছুতেই এর চুরান্ত পর্যায় আসছিলনা যথেষ্ট পরিমান লোকের ভাবে। আর এর প্রধান কারন ছিল ভয়। বব তখন শিখিয়েছিলেন কিভাবে গান দিয়ে মানুষকে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পরাতে হয়। বুঝিয়ে ছিল গান কিভাবে বুকের রক্ত রাজ পথে দিতে শেখায় অধিকার রক্ষার্থে। দেশে দেশে উত্তাল সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনে বিদ্রোহী মানুষের বুকে সাহস জুগিয়েছে এই শিল্পি। বলা চলে পরক্ষ ভাবেই জরিত ছিলেন এই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে। আর এটাই তার জনপ্রিয়তার মুল কারন। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মাত্র ৩৬ বছর বয়সে।

জন লেনন।
"দা বিটলস" ব্যন্ডের এই প্রতিষ্ঠাতার গানের কথা কিছু বলতে চাইনা। এ ইতিহাস সবার জানা। বলব অন্য ইতিহাস। ১৯৭২ সাল। ইংল্যান্ডের হাত থেকে নিজেদের স্বাধীন করতে মরিয়া আয়ারল্যান্ড। ফুফে উঠেছিল মানুষ। চলছিলো আন্দোলন। মুক্তির আন্দোলন। আর সেখানেই গুলি করা হয়েছিল। এইটাই সে "রক্তাক্ত রোববার" নামে পরিচিত সেই দিনটি। এ ঘটনাটা খুব নাড়া দিয়েছিল লেননের মনে। তখন জন্ম দিয়েছিলেন "ইমাজিন" ও "গিভ পিচ এ চান্স" এর মত দুটি বিখ্যাত গানের। লাল টি-শার্ট আর হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দারিয়ে পড়েছিলেন ইংল্যান্ডের রাস্তায়। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘'আয়ারল্যান্ডের জন্য, ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে''। লেখালিখি করেন বইতে, পত্রিকায়। প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন নানা ভাবে। এরকম সোঝা সাপ্টা উচিৎ কথা বলার কারনে লেননকে ব্রিটেন ছেরে চলে যেতে হয়েছিল। সে আমেরিকা চলে গেছিল। এর পর তিনি আমেরিকাতে ভেদাভেদ বিহিন মানবসমাজ গঠনে কাজ করতেন। তিনি বেশ সফলও হয়েছেন। এরপর তিনি ভিয়েতনামের যুদ্ধ বিরোধী প্রতিবাদের কারনে মার্কিনদের কাছে শত্রু স্বরূপ হয়ে যান। মার্কিনরা তাকে আমেরিকা ছেরে দিতে বলে। এভাবেই তিনি জুরে গেছিলেন মানুষের বুকে। আর শেষ মেষ তিনি তার ভক্ত মার্ক ডেভিড চ্যাপম্যানের গুলিতে মারা যান।

এরা দুজন পৃথিবি বখ্যাত কারন প্রথমে তাদের দেশের নাগরিকগন তাদের কর্মের যথাযথ মুল্যায়ন করেছেন। এর পর তারা উপমহাদেশ, মহাদেশ এবং একসময় পৃথিবি জুরে বিখ্যাত হয়েছেন। আগে নিজের দেশে মুল্যায়ন করে লিজেন্ড ভাবতে হয় পরে তারা নিজেরাই পৃথিবির কাছে লিজেন্ড হয়ে যায়। এই জিনিসটা বোঝানর জন্যই এই দুজনের গল্প বলা। আর এখন বলব এদের মতই বরং এদের চেয়ে বড় আমাদের দেশীও নক্ষত্র আজম খান এর গল্প।

আজম খান।
স্কুল, কলেজ পালিয়ে ছেলেটি ঘুরে বেরাতো গানের আড্ডায় আড্ডায়।গান গাওয়া আর ঘুরে বেরানই ছিল তার একমাত্র কাজ। দেখতেন দেশের পরিস্থিতি। ভাবতেন কিছু একটাকরা দরকার দেশের জন্য। ১৯৭০ সাল। শুরু হল তখন থেকেই পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ১৯৭১ সালে দেশের প্রতি ভালবাসার টানে যুদ্ধে যোগদান করলেন। তিনি গান গাইতেন আর সহযোদ্ধাদের অনুপ্রেরনা দিতেন গানের মাধ্যমে। শক্তি জোগাতেন বুকের মাঝে। তার গানে রক্ত টগবগ করত স্বাধীনতার নেসায় এমন কথা তার সকল সহযোদ্ধাদের মুখে শোনা গেছে বিভিন্ন সময়ে।তখন থেকেই দেখেছিলেন বাঙ্গালিরা [বর্তমান বাংলাদেশি এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান] কিভাবে পকিস্তানের [তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান] কাছে বঞ্চিত হচ্ছিল। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ গরিলা হামলা গুলর কথা আসলেই উঠে আসবে আজমখানের নাম। মনে ভালবাসা ছিল। বুখে সাহস ছিল আর একটা প্রতিজ্ঞা ছিল জীবন দিয়ে হলেও স্বাধীনতা আনব। স্বাধীনতা এসেছে। তাকে জীবন দিতে হয়নি। গাজী হয়ে ফিরে এসেছিলেন বীরের মত। যুদ্ধে বন্দুক হাতে তুলে নিয়েছিলেন আর স্বাধিনতার পর হাতে তুলে নিয়েছিলেন গিটার। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ব্যান্ড "উচ্চারন"। গাইতেন শান্তির গান। রেল লাইনের পারে মৃত ছেলেটির মাকে কাদতে দেখে তার ভেতরে আলোরন সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি এই নিয়েই গান বানালেন

‘রেল লাইনের ঐ বস্তিতে
জন্মেছিলো একটি ছেলে
মা তাঁর কাঁদে
ছেলেটি মরে গেছে
হায়রে হায় বাংলাদেশ!’


আর সেই গানেই জুরে বসে গেলে লক্ষ লক্ষ মানুষের মনে। এরকম আরো উপহার দিয়েছেন ২০ টিরও বেশী জনপ্রিয় গান। তিনি শুধু বাংলাদেশেই নয় ভারত, শ্রিলংকা, পাকিস্তান, নেপাল তথা এই উপমহাদেশেই বিখ্যাত ছিলেন। তিনি ততকালিন সময়েই আমেরিকা, জার্মানি, ইংল্যান্ড সহ বেশকিছু দেশে কনসার্টের ডাক পেয়েছিলেন। শুধু প্রবাসী বাঙ্গালিদের মন কারেননি, নজর কেরেছিলেন তাদেরও। এখন কথা হল যদি বব মার্লে আর লেনন তাদের কর্মে পৃথিবি বিখ্যাত এবং আমাদের কাছেই এত বিখ্যাত হতে পারে তবে এদের চেয়ে সার আজম খানের অবদান এবং যোগ্যতা কম কোথায়? বরং সবচেয়ে অবদান বেশী তিনিই রেখেছেন। বব মার্লে আর লেনন পরক্ষভাবে জরিত ছিলেন আন্দোলনে আর আজম খান জীবনের মায়া ত্যাগ করে নেমেছিলেন সক্রিয় যুদ্ধে। সুতরাং এ অযগ্যতা আমাদের। আমরা আমাদের সত্ত্বাকে মুল্যায়ন করতে শিখিনি। নিজের মেধা শক্তি দিয়ে পজালচনা করতে শিখিনি। নিজেদের ভিত্তিকে আক্রে ধরতে শিখিনি।আর এর কারন হল আমরা বিদেশীদের সব সময় আমাদের থেকে ভাল মনে করি, দামি মনে করি, আমাদের সকল কিছুর বিচার বা মান তাদের হাতে তুলে দেই। আর তারা অবশ্যই তাদের সত্তাকে বিজই করে। এভাবেই তারা নক্ষত্রের জন্ম দেয় আর আমরা নক্ষত্রের ধংস স্তুপ গড়ি। এজন্যই আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক লেজেন্ড তৈরি হতে পারেনা। আমরা যদি আমাদের সত্তাকে ভালবাসতাম, আক্রে রাখতাম তবে হয়ত শুধু আজম খান নয় আরো অনেক দেশিও নক্ষত্র পৃথিবি জুরে জ্বলত।

সময়ের দাবি!!!
নিজেদের সত্তাকে নিজেরা বিচার করতে শিখুন বরং সব সত্তাকে বিচার করার খমতা অরজনের চেষ্টা করুন। বিবেচনা শক্তি কাজে লাগান। তুলনা করুন নিজেদের গ্লোবাল পদ্ধতিতে। নিজেদের সত্তাকে ভালবেসে নিজেদের মত আক্রে ভালবাসুন। প্রয়োজনে একলা চল নীতিতে চলুন। দেখবেন আমাদের প্রজন্ম এর মুল্য না পেলেও তার পরের অথবা তার পরের প্রজন্ম এর মুল্য পাবেই। আজ আজোম খানের জন্মদিন। জন্মদিনের শুভেচ্ছা এই নক্ষত্রকে।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:০৪
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×