somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ষণঃ মেয়েকে নিয়ে আয়সার বাবার আত্মহত্যা।

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পুরুষের ভেতরে নাকি দুটো মানুষ থাকে। বিবেক পুরুষ আর পশু পুরুষ। আর নারীদের ভেতরেও দুটি মানবী থাকে। মায়া মানবী আর ডাইনী। আপাততো দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে মানব এবং মানবী শ্রেনীর মধ্যে থেকে বিবেক পুরুষ এবং মায়া মানবী দুটোরই মৃত্যু ঘটেছে। নারীদের বিষয়ে পরে আলাপ করবো, আপাতত পশু পুরুষদের নিয়ে কথা বলি।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুক ঘাটছিলাম। একটা লিংক ভেসে উঠেছে নিউজ ফিডে। রিমা নামের পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। থতমত হয়ে গেলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেলো, সাথে মেজাজটাও।

ঢাকার বাইরে যেতে হবে। লং জার্নি। লং জার্নিতে পাশে পত্রিকা রাখার অভ্যাস। তাই একটা পত্রিকা কিনলাম। সেখানে একটা নিউজ দেখলাম যেখানে লেখা "চকলেটের লোভ দেখিয়ে, শিশু শ্রেনীর একটি মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে।" এবং তার বাবা যেনো এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করে সে ব্যাপারে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। থতমতোও খেলাম না এবার। এই সারপ্রাইজ এর লেভেলটা হয়তো থতমত খাওয়ারও উপরে। তখন মনেহলো আমি এমন একটি গ্রহে জন্মেছি যেখানে মানুষ নামে নিকৃষ্ট প্রানিরা বসবাস করে।

ধর্ষণের খবর শুনলে আমার অনেকের কথাই মনেপড়ে। পুজা, ফাতেমা, রুপা, তনুসহ অনেকের কথাই মনেপড়ে। কিন্তু সবচেয়ে বেশী মনেপড়ে আয়সা নামের মেয়েটির কথা। যার বাবা পিশাচদের অত্যাচারে বাধ্য হয়ে নিজের মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলো। চিনতে পেরেছেন আয়সাকে? ভুলে গেছেন তাইনা? ভুলে যাওয়ারই কথা। কত কত নতুন ইস্যুইতো এলো গেলো এর পরে। এতো মনে রাখার সময় কই। সব ভুলে গেছি আমরা। হারিয়ে গেছে সব ভোলানাথের গহ্বর তলে।

আয়শার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার আগে একটা বিষয় চিন্তা করুনতো। একটু চিন্তা করে বলুনতো, যদি আপনার আট বছরের মেয়ে অথবা বোনকে কেউ ধর্ষন করার পর এক হাজার টাকার বিনিময়ে সব ভুলে যেতে বলে, তবে কি ইচ্ছে হবে আপনার? কুপিয়ে টুকরো টুকরো করে কুকুর দিয়ে খাইয়ে দিতে ইচ্ছে হবেনা? আর কি বোঝানর কিছু আছে যে, কিভাবে একজন সন্ত্রাসী তৈরি হয়? তাও যদি কুপিয়ে মারতে না পারেন তবে কি করতে ইচ্ছে হবে আপনার?? মরে যেতে ইচ্ছে হবেনা?? তাই'ই হয়েছে হজরত আলি ও হালিমা বেগম দম্পতি ও তাদের মেয়ে আয়েশা'র সাথে।

গোসিঙ্গা ইউনিয়নের কর্ণপুর সিটপাড়া গ্রামের নিঃসন্তান হজরত আলী ও হালিমা বেগম দম্পতি ৮ বছর আগে তিন মাসের শিশু আয়েশাকে লালন-পালনের দায়িত্ব নেন। পেটের সন্তানের মতোই আদর-যত্ন আর স্নেহ ভালোবাসায় বড় হচ্ছিল আয়েশা। আট বছর একটি কুকুর পাললেও তার প্রতি সন্তানের মত মায়া হয়ে যায়। আর আয়শাতো সন্তানই। পড়ালেখা চলছিল হেরাপটকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীতে।

কুদ্দুস, ফারুক ও দুলাল নামে তিনজন লোক মেয়েটিকে স্কুলে যাওয়ার পথে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরে সন্ধ্যায় রক্তাক্ত অবস্থায় ফেরত দেওয়া হয় তাকে। মানুষের চেহারা ওয়ালা কুকুরগুলোর কাছে হয়তো রাস্তার কুকুরেরও রক্ষা নেই। আর সেখানে আয়সাতো মানুষ। ধর্ষণের হাত থেকে সেও রক্ষা পায়নি।

আয়শার বাবা এ বিষয়ে থানায় গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। এই ব্যাপারে তদন্ত করতে এস আই বাবুলকে দায়িত্ব দেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। আয়সার বাবা বিচার দেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এর কাছেও। কিন্তু যেখানে "মানি টক, উই লিসেন" প্রবাদ সত্যি হয় সে দেশে সঠিক বিচার? কোনো অভিযোগই টাকা আর ক্ষমতার সাথে পেরে উঠেনি।

হ্যা বিচার হয়েছিলো। তবে আয়শাকে যারা ধর্ষণ করেছিল তাদের নয়, বিচার হয়েছিল আয়শার বাবার। পুলিশ ও চেয়ারম্যান এর কাছে বিচার দেওয়ার অভিযোগে। আয়শার বাবাকে এক হাজার টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে সব ভুলে যেতে বলা হয়েছিল। যেখানে দুই কেজি গরুর মাংসও এক হাজার টাকার বেশী। এর চেয়ে বড় কথা কোন বাবা পারে টাকার কাছে নিজের মেয়ের সম্ভ্রম বিক্রি করতে? আয়শার বাবাও পারেনি। প্রত্যাখ্যান করেছিল তাদের এমন জঘন্য সমাধান। আর এতেই শুরু হলো তার প্রতি নির্যাতন। প্রশাসন থেকে হুমকি, আসামি পক্ষ থেকে মেরে ফেলার হুমকি, গরু চুরি করে নিয়া যাওয়া, ছাগল কৃষি ক্ষেতে গেছে বোলে রামদা চাপাতি নিয়া মহরা। মেয়েকে অপহরণ করে নেওয়ার হুমকি। সে ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে আর কতদিন বাচা? যখন দেখবেন সৃষ্টিকর্তা আপনাকে বিত্তবান করেননি বলে তার সৃষ্টি এই আশরাফুল মাখলুকাত এত জঘন্য হতে পারে। অপমান, মৃত্যুর ভয়, মেয়ে অপহরণ এর ভয়, প্রশাসনের অবিচার এগুলো সহ্য করে আপনি বেচে থাকতে পারবেন? কি করবেন খুজে পাবেননা তাইনা? আয়শার বাবাও কিছু খুজে না পেয়ে স্রষ্টার কাছে বিচার দিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাপিয়ে পড়েছে। সব শেষ। এই ভাল।

এই জন্যই মাঝে মাঝে সৃষ্টিকর্তাকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়, "অপরাধীর শাস্তি হয়না, শাস্তি হয় অপরাধের শিকার ব্যাক্তির, এ কেমন পদ্ধতি তোমার?"

আসুন আরেকটু ভাবুন। সবচেয়ে ভাল বুঝতে পারবেন গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষেরা। আপনি হয়তো সকালে কাজে যাওয়ার আগে নিজের সন্তানের মুখটা দেখে কপালে একটা চুমু এটে বের হন তাইনা? আবার কাজ শেষে বাসায় ফিরে সমস্ত খাটাখাটনির সার্থকতা খুজেন আপনার কলিজার টুকরোকে বুকে জড়িয়ে। জীবনের নিয়ে হাজার অভিযোগ নিয়েও বেচে থাকেন শুধু সন্তানের চেহারার মধ্যে শান্তি খুজে। নিজের জীবনের সখ আহ্লাদ ভুলে গেছেন যাতে করে কলিজার টুকরা একটু ভাল থাকে। প্রত্যেক মাসে নতুন শার্ট কেনা আপনি এখন এক শার্টেই বছর পার করে দেন তাইনা?


আয়সার বাবাও হয়ত সকালে কৃষি কাজে মাঠে যেত মেয়ের মুখ দেখে। আবার বাড়ি ফিরে মেয়ের মুখ দেখে সকল পরিশ্রমের শান্তি খুজতো। নিজেরা কম পরিধান করে আয়শার জন্য একটা নতুন জামা কিনে আনতো তারা। নিজের পুরোনো শার্টটা জোড়াতালি দিয়ে বলেছে এবছর চলে যাবে। শুধু নিজের মেয়েকে সুখি দেখতে চেয়েছে।

আয়শার বাবা তার মেয়েকে নিয়ে মরে গিয়ে বেচে গেছে। কিন্তু একা একা কিভাবে বেচে থাকবে আয়শার মা? ভেবেছেন? এক পরিবারের কেউই নেই সে ছাড়া। কি নিয়ে বাচবে? মানুষ বেচে থাকতে চায়। তাই তারা বেচে থাকার কারন খুজে। কি কারন আছে আয়শার মা'র বেচে থাকার মত? বেচে থাকার কারন না থাকলে মানুষ হয় মরে যায়, অথবা পাগল হয়ে যায়। জানিনা আয়শা নামের মেয়েটার মা'র কোনটা হয়েছে।

হালিমা বেগম হয়তো সকালে ঘুম থেকে উঠে চুলোয় পাতিল বসিয়ে দেন রান্নার জন্য। যাতেকরে স্বামী কাজে যাওয়ার আগে খেয়ে যেতে পারে, মেয়েটা খেয়ে স্কুলে যেতে পারে। পরক্ষনে যখন মনেপড়ে তারতো আসলে কেউ নেই, তখন কি করেন হালিমা বেগম? ভেবেছেন?

একটা ঈদ চলে গেছে। হালিমা বেগম সপ্ন দেখেছিলেন তার মেয়ে লাল টুকটুকে জামা আর নতুন জুতো পড়ে হাটছে, দৌরচ্ছে, হাসছে, খাচ্ছে, কথা বলছে। বুকের ভিতর কি সুখ। বুকের ভিতরে অনাবিল স্বর্গ। পরক্ষনেই সপ্ন ভেঙে গেছে নিশ্চই। তার মনেপড়েগেছে নিশ্চই যে, সব'তো কবেই শেষ। কি করার ছিলো তার? কিইবা করেছিলো সে? তার যায়গায় আপনি হলে কি করতেন? হয়ত সে কিছুই করেনি। অথবা বুক ফাটিয়ে কেঁদেছে। গড়াগড়ি করে কেঁদেছেন। সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার চেয়েছেন। আর সৃষ্টিকর্তার নীরব নিস্তব্ধতা দেখে ভেবেছেন, সৃষ্টিকর্তা হয়তো গরিবের বিচারের ভাড় নেননা।

অনেকেরই বিচার হয়নি। রিমা নামের এই মেয়েটির ধর্ষকদেরও হয়তো হবেনা। হয়তো বিচার হবেনা শিশু শ্রেনীতে পড়া ঐ দুধের শিশুর ধর্ষকদেরও যদি না তারা বিত্তবান হয়। হয়তো আইনি প্রকৃয়া করতে করতে বছরের পর বছর সময় চলে যাবে। শেষমেশ ধর্ষিতারা ক্লান্ত হয়ে যাবেন। বিচারের আশা বাদ দিয়ে সামনে এগুবেন। এরপর নতুন আয়সা, নতুন পুজা, নতুন ফাতেমা, নতুন তনু, নতুন রুপা, নতুন রিমা এবং নতুন কোনো দুধের শিশু ধর্ষিত হবে। শেষ বিচারের আশা শুধু সৃষ্টিকর্তার হাতেই ন্যস্ত করতে বাধ্য হবে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ধর্ষিতা ও তার পরিবারেরা। কারন যাদের নিজেদের বিচার করার ক্ষমতা আছে তারা সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার দেয়না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৫৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×