somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুড়িয়ে দেওয়া রিক্সার চালকগুলো এবং বাঘের মলাটে কিছু কাপুরুষ মিচকা বিলাই।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গ্রাম এলাকায় কোনো একটা ক্রাইম হলে তা নিয়ে মহল্লায় শালিস বসে। সেখানে দোষী ও বাদীপক্ষর কথা শোনা হয়। সেখানে তাদের বিচারের জন্য যারা থাকেন তাদের মতবর বলা হয়। শালিস এর নিয়ম হলো দুই পক্ষের কথা শুনে বিষয়টা সত্য মিথ্যে বিবেচনা করে একটা সঠিক ও সৎ রায় দিয়ে দেওয়া। কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই যেটা হয় তা হলো, মাতবররা ক্ষমতা ও টাকার কাছে বিক্রি হয়ে উল্টা ভিক্টিমের উপরেই অবিচার করে ফ্যালে। হ্যা এরকম ঘটনা অহরহ হচ্ছে। এরকম মাতবর শহর গ্রাম সব জায়গাতেই আছে। শুধু তাদের নাম ভিন্ন।

আবার ধরুন কোনো এক প্রভাবশালী ব্যাক্তির কুকীর্তি নিয়ে আপনি কিছু বলতে গেলেন। আপনি পার পাবেননা। সে আপনার নামে দুই কটি টাকার মানহানি মামলা দিয়ে দিবে। তার হাজার হাজার কটি টাকার মান সম্মান থেকে আপনি দুই কটি টাকার সম্মান নষ্ট করে ফেলেছেন। কিন্তু আপনারতো দুই লাখ দেওয়ারও সামর্থ্য নেই। কি আর করবেন, জেল খাটুন। এরপর চুপ হয়ে থাকেন সারাজীবন।

এগুলো এক একটা শক্তিশালী সত্য। এই ব্যাপারগুলো থেকে সাফ বোঝা যায়, টাকা পয়সা বিচার, আইন, নিয়ম সব নিয়ন্ত্রণ করে। আইন সবার জন্য সমান নয়। যার টাকা নাই, ক্ষমতা নাই তার বিচার কঠিন হবে। যার টাকা আছে, ক্ষমতা আছে তার জন্য বিচার ব্যবস্থা বিশেষ বিবেচনা করে। টাকাওয়ালাদের জন্য সব কিছুতেই বিশেষ ব্যাবস্থা। সমস্ত আইন কানুন, সমস্ত নিয়ম নীতিতে টাকাওয়ালাদের জন্য একটা বিশেষ ব্যাবস্থা থাকে।

সতেরটি রিস্কা ভেঙে ফেলা হয়েছে। অবৈধভাবে উল্টো পথে চলে এমন কয়টি প্রাইভেট কার আপনারা ভাঙতে পেড়েছেন? বিশ্ববিদ্যালয় এর কয়টি গাড়ী উল্টো পথে যাওয়ার অপরাধে আপনারা ভাঙতে পেড়েছেন? কয়টা সচিবের গাড়ী ভেঙেছেন এ পর্জন্ত? ট্যাক্স ফাকি দিয়ে চলা কয়টা গাড়িতে টাচ করার সাহস করেছেন? আপনাদের আইনের নিরপেক্ষতা এখানে কাজ করছেনা কেনো?

তাদেরতো ক্ষমতা আছে না? রিস্কাওয়ালাদের নরম পেয়েছেন। তাই নিজের ক্ষমতার সদ্য ব্যবহার দেখিয়ে দিলেন। আপনি বুঝাতে চাইলেন আপনি একজন মহানায়ক। ক্ষমতাহীন গড়িবের ক্ষতি করে কোনো বীরত্ব অর্জন করা যায়না। বরং একটা নিচু জাতের মানুষিকতার প্রকাশ পায়। সাহস থাকে অবৈধভাবে চলা সচিব, পুলিশের লোকদের গাড়িতে একটা টাচ করে দেখান। দেখা যাবে আপনার বীরত্বের ধার কতটুকু।

আচ্ছা এই রিস্কাগুলো অবৈধ কেনো? বিদ্যুৎ অপচয় ঠেকাতে এই মোটরওয়ালা রিস্কাগুলোকে অবৈধ করা হয়েছে? এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি বিদ্যুৎ এর চিন্তাই করা হয় তবে "ইলেক্ট্রিক ইজি বাইক" আমদানি ও চলাচলে বৈধতা দেওয়া হয়েছে কেনো? ইলেক্ট্রিক ইজি বাইক চিনেছেন কি? সাধারণত মফস্বল ও জেলা শহরগুলোতে চলাচল করে। এটা "অটো" নামে পরিচিত। যদি বিদ্যুৎ অপচয়ের কথাই ভাবা হয় তবে এই "ইজি বাইক" আমদানি ও চলাচলে অবৈধ ঘোষণা করা হচ্ছেনা কেনো? আই পি এস আমদানি অবৈধ ঘোষণা করা হচ্ছেনা কেনো? বাসা বাড়িতে এসি নিষিদ্ধ করা হচ্ছেনা কেনো? বড়লোকের বিলাসিতার খেসারত গড়িব রিক্সাওয়ালারা কেনো দিবে?

এগুলোরও খুব সহজ উত্তর হলো, এগুলো থেকে ট্যাক্স পাওয়া যায়। এখানেও আরও একটা প্রশ্ন থেকে যায়। এই ট্যাক্সের টাকা দিয়ে কার জন্য কাজ করবেন? কার উপকারে আসবে এই ভ্যাট ট্যাক্সের টাকা? এই টাকা দিয়ে মেয়র, ম্যাজিস্ট্রেট বানিয়ে এই গড়িব রিস্কাওয়ালাদের রিস্কা গুড়িয়ে দেওয়ার জন্য এই ভ্যাট ট্যাক্স ব্যাবস্থা?

শহরে যে রিস্কাগুলো চলে সেগুলার কিছু কিছু চালকেরা ভাড়া নিয়ে চালান অন্য গ্যারেজ মালিকদের কাছ থেকে। আর কিছুর মালিক চালক নিজেই। গ্যারেজ মালিকদের কাছে আগে থেকেই খবর থাকে। তাদের অনেক লবিং থাকে। ম্যাজিস্ট্রেট আসার আগে তাদের কাছে এ খবর চলে আসে। তাই এই ঘটনাও ব্যতিক্রম হয়নি। তারা আগে থেকেই খবর পেয়ে রিস্কাগুলো অন্য কোথাও সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সাধারণ রিস্কা চালকদের এতো লবিং নেই। তাদের কেউ ম্যাজিস্ট্রেট আসার খোজ দেয়না। তাই বিপদটা তাদের ঘাড়েই পড়েছে।

কিন্তু এই বিপদের পরিধিটা যে কতো বড় তার কোনো ধারনা আছে তাদের, যারা এই রকম ন্যাকারজনক জনক ঘটনার সাথে জড়িতো? ইট কাঠের বহুতল ভবনের এসি রুমে থেকে হয়তো তাদের বিপদের পরিধি তারা অনুভব করতে পারেননা। কিন্তু যাদের এই বিপদের সম্মুখীন হতে হয়েছে তারা টের পাচ্ছে জীবিনটা কত ভঙ্কর হতে পারে।

ক্ষতিগ্রস্ত চালকেরা যে রিস্কাগুলো ক্রয় করেছেন এর পেছনে অনেক শক্ত, কঠিন ও স্যাক্রিফাইস এর গল্প আছে। তিল তিল করে জমিয়ে রাখা জীবনের শেষ সম্বল দিয়ে কেউ কেউ একটা রিক্সা ক্রয় করেছেন। এই রিক্সা দিয়ে সে আবারও টাকা জমাবে। সে টাকা দিয়ে মেয়ে বিয়ে দিবে। কেউ কেউ স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে রিক্সা ক্রয় করেছেন। এই রিক্সা দিয়ে টাকা কামাই করে স্ত্রীকে আবার গয়না কিনে দেবে। ছেলের চাকরি আর পড়াশোনা করাবে। কেউ কেউ কোনো এক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে রিক্সা কিনেছেন। রিক্সা চালিয়ে কিস্তি দিয়ে ঋণ শোধ করে দিবে। এই রিক্সা দিয়ে টাকা কামাই করে একটা ছোট ঘর দিবে। নিজের এক টুকরো জমি কিনবে। এগুলো এক একটা সপ্ন। তাদের জীবনে দেখা সর্বচ্চ সপ্ন। কিন্তু যখন ক্ষুদাই মিটতে চায়না তখন সপ্ন দেখার মত বিলাসিতার সময় ও সাহস কোথায়?

এই রিক্সা চালকরা যে সপ্নগুলো দেখেছিলো সব মূহুর্তেই ধুলিৎসাত হয়ে গেছে। এখন পেটের ক্ষুদার চিন্তাই আগে করতে হবে। এক একটা পরিবারে তিনজন থেকে সাতজন মানুষের ক্ষুধার ভাড় নিতে হয় একজন রিক্সা চালকের। যে রিক্সা দিয়ে এসব পরিবারের ক্ষুধার ভাড় মিটতো তা এখন কিভাবে হবে? এখন তারা এনজিওর ঋণ শোধের কথা ভাববে। নাকি খাওয়ার কথা ভাববে? রিক্সা হারিয়ে এখন কি করবে এই মানুষগুলা। কিভাবে তাদের খাওয়াবে? এই রিক্সা চালকদের জায়গায় আপনি হলে কি করতেন? কিছুই কাজ করতোনা মাথায় তাইনা? তাদেরও কাজ করছেনা। রিক্সা হারানোর পরের রাতগুলোতে ঘুম হচ্ছেনা তাদের। বুক ফাটিয়ে কাঁদছেন তারা। অথবা পাথর হয়ে গেছে কেউ কেউ।

গড়িব এর সাথে ক্ষমতা খাটিয়ে হিরোগিরি দেখানো সহজ। কিন্তু আপনাদের হিরোগিরিতে বিশাল খেসারত দিতে হয়েছে এই অসহায় মানুষগুলোকে। যদি বুকের পাটায় দম থাকে, যদি নিজেরে ভেতরে সাহস থাকে তবে একদিন অবৈধভাবে উল্টোপথে চলা, ট্যাক্স ফাকি দিয়ে চলা কোনো এক এমপি মন্ত্রির গাড়িতে টাচ করে দেখান। বুকের পাটায় দম থাকলে উল্টো পথে চলা কোনো এক সচিবের গাড়িতে টাচ করে দেখান। বুকের পাটায় দম থাকলে ইজি বাইক আমদানির বিরুদ্ধে দাঁড়ান। তাহলেই বোঝা যাবে, আপনি সত্যিকারের বীর নাকি বাঘের মলাটে ঢাকা কাপুরুষ মিচকা বিলাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৪৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×