somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উন্নয়ন নাকি দুই হাজারেরও বেশী গাছ কেটে পেট পুরোন?

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুই হাজার তিনশোরও বেশী গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেগুলার বয়স একশো বছরেরও বেশী। সারা বাংলাদেশে এত প্রাচীন গাছ খুবই কম আছে। আর একসাথে এতগুলো শতবর্ষি গাছ আর কোথাও খুজে পাওয়া যাবেনা। বিশাল বিশাল আকাশ ছোয়া গাছগুলো কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভারতের সাথে যোগাযোগ এর জন্য চার লেন এর আধুনিক রাস্তা করার জন্য।

উন্নয়ন বলতে আসলে কি বোঝানো হয়? ঝকঝকে চকচকে ইট, টাইলস, গ্লাস, দামি লাইট? এগুলাই উন্নত? উন্নত মানেকি গাছ গাছালি কেটে পরিস্কার করে ফেলা? আমাদের সরকারি কর্মকর্তাগন উন্নত বলতে আসলে এটাই বুঝেন। যার মেধায় যতটুকু জোড় আরকি।

যশোর রোডের দুই হাজারেরও বেশী গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে শুধু মাত্র চার লেনের রোড করার জন্য। গাছগুলোর বয়স শতবর্ষর বেশী। যে গাছগুলো পরিবেশ রক্ষায় বিশাল ভুমিকা রেখে চলেছে। ফারাক্কা বাধের ফলে দেশের এই অঞ্চলে যে পরিমান পরিবেশ বিপর্যয় হওয়ার কথা ছিলো তার অনেকটাই ঠেকিয়ে দিয়েছে এই গাছগুলো। কোনো প্রোকার পরিবেশিক পরিক্ষা ও সমীক্ষা না করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে কি কারন?

এর চেয়ে বড় কথা এ রাস্তাটার সাথে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। বুক উচু করে সাক্ষি দেয় প্রতিটি ছোট, বড় ঘটনার। গাছগুলো হয়তো আজও সে রক্তের ঘ্রান পায়। অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও তৎকালিক সময়ের মানুষ যারা মুক্তিযুদ্ধ সচোক্ষে দেখেছেন তাদের বেশীরভাগই বেচে নেই। হয়তো আরও দশ বিশ বছর পর তারাও থাকবেনা। কিন্তু এই গাছগুলো সাক্ষি হয়ে থাকবে।

এই পথটা সে পথ যেখান দিয়ে হেটে হেটে লাখ লাখ মানুষ ভারতে গেছে আশ্রয়ের আশায়। এখান দিয়ে হেটে গেছে জীবন বাচানোর তাগিদে। হেটে যাওয়ার পথে এলোপাথাড়ি গুলির মাঝে কেউ দৌড়ে পালাতে পেড়েছে, কেউ গুলি খেয়ে মাটিতে শুয়ে বাচার আর্তনাদ করেছে। কেউ গুলি খাওয়া অবস্থায় টেনে টেনে হেটেছে। বেচে থাকার শেষ চেষ্টা করেছে। কারও মাথায় গুলি লেগে মগজ ছিটকে ছিলো এই পথটাতেই। হাজার রক্তের দাগ। হাজার লাশ।

এ পথ দিয়েই শরণার্থী শিবিরে পৌছে দেওয়া হতো খাদ্য, বস্ত্র, ঔষধ। এ পথ ধরেই পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে আসতো বিদেশী প্রতিনিধিরা। এই পথ দিয়েই চলাচল করে বিদেশি সাংবাদিকরা রিপোর্ট করতো।
এই রাস্তা নিয়েই কবিতা হয়েছে। মার্কিন বিখ্যাত কবি এ্যালেন গিন্সবার্গ এই রাস্তা দিয়ে এসে আমাদের দেশের তৎকালীন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তার তার বুক কেপেছে। এরপর দেশে ফিরেই এই নিয়েই কবিতা লিখেছেন। সে কিবতাকেই বিখ্যাত গায়ক বব ডিলান গানে রুপান্তরিত করে বাংলাদেশের পক্ষে কনসার্ট করে সারা বিশ্বর সমর্থন চেয়েছে আমাদের স্বাধীনতার জন্য। এ সব ঘটনার সাক্ষী এই গাছগুলো। আড়াইশত বছর থেকে সত্তর বছর বয়সী গাছ এখানে। আড়াইশতো বছরের গাছ আছে অনেক। বেশীরভাগই একশত সত্তর বছরের আগে। তখনকার জমিদার এর লাগানো গাছ। বৃটিশ আমল থেকে শুরু করে এখন পর্জন্ত হাজার হাজার ঘটনার সাক্ষী এই গাছগুলো।

আমি উন্নয়নের বিরোধী নই। কিন্তু এ কেমন উন্নয়ন? খুন কিভাবে উন্নয়ন হতে পারে? দুই হাজারেরও বেশী গাছ খুন করা হচ্ছে। শুধু মাত্র চার লেন এর রাস্তা করার জন্য। এ গাছগুলো না কেটে কি কোনো বিকল্প উপায় বের করা যেতনা? যেতোতো। কোলকাতায়তো করা হয়েছে। এক পাশের গাছগুলোকে তারা মাঝখানে রেখে আরেক পাশ দিয়ে নতুন রাস্তা করে দুই দুই চার লেনের রাস্তা করেছে। তবে আমাদের দেশে গাছগুলো কেনো কাটতে হবে? বরং আমাদেরতো উচিৎ ছিলো এই রাস্তার দুই পাশেই আলাদা নতুন দুটো রাস্তা করা। দুই দুই চার লাইনের রাস্তা। যাত্রিরা যাওয়া আসার সময় দুই পাশ থেকে এই রাস্তা ও গাছগুলোকে দেখতো। ইতিহাস জানতো।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুক্তিযুদ্ধ ও বড় ঘটনাগুলোর সাক্ষী এমন গাছগুলো কে তারা বিভিন্ন নাম দিয়ে যত্ন করে বাচিয়ে রাখছে। আর আমাদের দেশে কেনো কেটে ফেলা হচ্ছে? আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, তুরোস্ক, মিশর সহ অনেক দেশে কোথাও উইটনেস অন্য নাম দিয়ে রাখছে গাছগুলোর সাথে। মানুষকে জানার আগ্রহ জাগিয়ে তুলছে। যত্ন করে বাচিয়ে রাখতে চেষ্টা করছে। সেখানে আমাদের এখানে এমন কেনো হচ্ছে? ওনারাইতো সব কিছুতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গেথে দেন। তবে তারাই মুক্তিযুদ্ধের এমন স্মৃতিকে কেনো মুছে ফেলতে চাইছে? তবেকি তাদের এই চেতনা মুখে মুখে শুধু রাজনৈতিক ফয়দা ও ব্যাক্তিগত সুবিধা নেওয়ার জন্যই?

সাধারণ জনগনকে বলতে চাই গাছগুলো রক্ষায় এগিয়ে আসুন। গাছ আমাদের দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে চলেছে। ঝড়, বন্য, বৃষ্টি সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাচিয়ে রাখছে এ গাছগুলো। আজ এগুলো রক্ষা করতে না পারলে আগামীতে নিজের মাথা নিজে ফাটিয়ে ফেললেও লাভ হবেনা। যে যেভাবে পারুন প্রতিবাদ করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৫৬
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×