পোল্যান্ডে ‘নিষিদ্ধ’ চে
ঠিক যেভাবে আইন করে নিষিদ্ধ হয়েছিলো লালঝান্ডা ওড়ানো, একই পথে এবার ‘চে’-র ছবিও নিষিদ্ধ হলো পোল্যান্ডে। এই ৮ই জুন রীতিমতো পোলিশ আইনে সংস্কার এনে নিষিদ্ধ হয়েছে চে। নোটিশ জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, গণতন্ত্রে যতো ন্যায্যই হোক না কেন, কোনও স্বাধীন মানুষ তাঁর স্বাধীন পছন্দের চে ছবি পোশাকে ব্যবহার করলে মোটা অঙ্কের জরিমানা থেকে জেল, সবই হতে পারে।
কুড়ি বছর আগে লেনিনের মূর্তি ভাঙার মধ্যে দিয়ে যে অভিযানের শুরু, তারই ইতি টানতে গত ১লা ডিসেম্বর পোল্যান্ডে নিষিদ্ধ হয়েছিলো লালঝান্ডা ওড়ানো। তাও করা হয়েছিলো রীতিমতো পোলিশ ফৌজদারি আইনের ২৫৬ধারা সংশোধন করে। এবার মার্কসবাদ অধ্যয়নের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে পোল্যান্ড সরকার।
যে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে চেয়েছিলেন চে, আজ দুনিয়াজুড়ে সেই পুঁজিবাদেরই বেআব্রু ভোগবাদের শিকার নিজেই। তাই মারাদোনা, মাইক টাইসনের শরীরের উল্কি থেকে ম্যাডোনার সিডি কভারে, স্মিরনফের ভোদকার বোতলের লেভেলে চে। আসলে চরম ভোগবাদ, বন্য প্রতিযোগিতার এই বিশ্বে মানুষ এখন খুঁজে বেড়ায় এমন এক নায়ককে— যাঁর আদর্শ, মূল্যবোধ অনুসরণ করার মতো। ঠিক যা বলেছিলো ‘টাইম’ পত্রিকা।
‘টাইম’ পত্রিকার বিচারে বিশ শতকের একশো জন সবচেয়ে ‘ইনফ্লুয়েন্সিয়াল’ মানুষের মধ্যে চে একজন। টাইম বলছে, ‘ যদিও কমিউনিজম তার দ্যুতি হারিয়েছে, তবু তিনি রয়ে গিয়েছেন বিদ্রোহের শক্তিশালী প্রতীক হিসাবে। তাঁর অমোঘ আবেদনে বিপ্লব এখনো হাতছানি দিয়ে ডাকে’। স্বাভাবিকভাবেই পোল্যান্ড সরকার ভয় পেয়েছে কিউবার আলোকচিত্রী আলবার্তো দিয়াজ গুতেরেইজ ওরফে কোর্দার তোলা চে-র ছবিতে। চে-র ছবিতে তাই ‘খুনের আদর্শ’ খুঁজে পেয়েছে মার্কিন তাঁবেদার পোল্যান্ড সরকার। আইন করে নিষিদ্ধ করেছে চে-র ছবি।
সাবেক গণতান্ত্রিক অথবা পূর্ব জার্মানির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ফিরে যাচ্ছেন বামপন্থী শিবিরে। গত সেপ্টেম্বরের শেষে জার্মানির সংসদে নিম্নকক্ষ বুন্দেসটাগের নির্বাচনে সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বিক্ষুব্ধ অংশ এবং পূর্ব জার্মানির প্রাক্তন কমিউনিস্টদের নিয়ে গঠিত লেফট পার্টি (ডি লিঙ্কে)-র আসন সংখ্যা ২২থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৬। ফিরে আসছে পুরানো প্রসঙ্গ — পরিকল্পিত অর্থনীতিতে কী কী ইতিবাচক ছিল। সমাজতন্ত্রে আস্থা হারিয়ে তাঁরা পেয়েছেন পুঁজিবাদের স্বাদ। এবং দুইয়ের অভিজ্ঞতার উপসংহার হলো, সমাজতন্ত্র — পুঁজিবাদের চেয়ে উন্নত। সঙ্কট ওয়াল স্ট্রিটে, আর বার্লিনের রাস্তায় হু হু করে বিকোচ্ছে মার্কসের ‘দাস ক্যাপিটাল’। বিক্রি বেড়েছে এক ধাক্কায় তিনগুণ। এমনকি জার্মানির অর্থমন্ত্রী পির স্টেইনবার্ক পর্যন্ত যথেষ্ট বিরক্তি আর হতাশার সঙ্গে স্বীকার করেছেন, ‘মার্কসের তত্ত্বের কিছু অংশ সত্যিই ততটা খারাপ নয়।’
‘বিলকুল চুপসে গিয়েছে কমলা বিপ্লবের বাহারি বেলুন।’ বিশ্ব পুঁজিবাদের ডাকসাইটে মুখপত্র দ্য ইকনমিস্টে অসহায় আর্তনাদ। ২০০৫এর এপ্রিল, সেদিন ৫৩শতাংশ ইউক্রেনিয় বলেছিলেন, তাঁদের দেশ চলেছে সঠিক রাস্তায়। এখন, ৮১শতাংশের স্থির বিশ্বাস, তাঁরা চলেছেন ভুল অভিমুখে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার বিশ্বায়িত সূচকে নিচের দিক থেকে সতেরো নম্বরে ইউক্রেন, রাশিয়া এবং বেলারুশের নিচে। ওয়াশিংটনের বাইপ্রোডাক্ট, কমলা বিপ্লবের ফসল ভিক্টর ইউসচেঙ্কো, যা মার্কিন স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থের জন্য গুরুতর আঘাত। মাত্র পাঁচ বছরেই মোহভঙ্গ। বিসর্জনের বাজনা। প্রথম রাউন্ডেই বিদায় ওয়াশিংটনের বিশ্বস্ত মিত্র। কমলা বিপ্লবের ‘আইকন’ ইউসচেঙ্কো পেয়েছেন সাকুল্যে ৫শতাংশ ভোট। স্পষ্ট প্রত্যাখ্যান। আর ২০০৪এর নির্বাচনে জয়ী হয়েও যিনি ওয়াশিংটনের নিঃশব্দ অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি হতে পারেননি, তৃতীয় রাউন্ডে পরাজিত হয়েছিলেন ইউসচেঙ্কোর কাছে, সেই ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ৩৬শতাংশ ভোট পেয়ে শীর্ষস্থানে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া ইউলিয়া তিমোশেঙ্কোর মুখোমুখি। তিমোশেঙ্কো এখন প্রধানমন্ত্রী, পেয়েছেন ২৫শতাংশ ভোট। এবং শেষে কমলা বিপ্লবের নমনীয় মুখ ‘কমলা রাজকন্যা’ তিমোশেঙ্কোকে হারিয়ে রাষ্ট্রপতি ইয়ানুকোভিচ। একসময়ে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ইয়ানুকোভিচকে দুনিয়া চেনে মস্কোপন্থী হিসেবে। ইয়ানুকোভিচের এই জয় ওয়াশিংটনের জন্য বড় ধাক্কা। কমলা জমানার অবসান পরিবর্তন ঘটাবে পূর্ব ইউরোপের ক্ষমতার ভারসাম্যে। আর শেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি সি পি আর এফ পেয়েছে ১৮শতাংশ ভোট। বহুদিন পর মস্কোর রাস্তায় আবার স্তালিন। লেনিন এখনও নায়ক বেলারুশে। সেদেশের গোয়েন্দা পুলিসের নাম এখনও কে জি বি।
আর তাই বেপরোয়া পোল্যান্ড। দক্ষিণপন্থী সিভিক প্ল্যাটফর্ম পার্টি থেকে বিরোধী দক্ষিণপন্থী ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি। লালঝান্ডা ওড়ানো নিয়ে সংশোধিত আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, লালঝাণ্ডাসহ কমিউনিস্ট প্রতীক ‘তৈরি করা, বিলি করা, বিক্রি করা, কেনা অথবা এগুলি নিয়ে মিছিল-মিটিং করা নিষিদ্ধ।’ লন্ডন থেকে প্রকাশিত টাইমস পত্রিকার উল্লাস, ‘অতএব, ভুলে যান ওয়ারশ শহরের প্রাণকেন্দ্র, একসময় যেখানে ছিল কমিউনিস্টদের সদর দপ্তর, এখন আর্থিক সংস্থার ঝাঁ চকচকে সদর দপ্তর — সেখানে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক গাওয়ার কথা।’
বার্লিনের ভাঙা প্রাচীরের ওপর দাঁড়িয়ে যেদিন ফুকুয়ামা ঘোষণা করেন, ‘ইতিহাসের অবসান, দ্বন্দ্বের স্থায়ী অবসান, অনন্ত শান্তির যুগ শুরু’, সেদিন থেকেই ন্যাটো এগিয়েছে মস্কোর দিকে। রাশিয়া সীমান্তে বাল্টিকের সমস্ত দেশকে এরমধ্যেই তারা এনে ফেলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোতে। বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরির সঙ্গে পোল্যান্ড — যারা একসময় ছিল সোভিয়েত ব্লকে, এখন তারাও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটো’র সদস্য।
সোভিয়েত ইউনিয়ন নেই। ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের পর পেরিয়ে গিয়েছে দেড় দশক।
তবু দস্তুরমতো রয়েছে নর্থ অতলান্তিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো)। এবং শুধু আছে না, ভেঙে দেওয়ার পরিবর্তে বেড়েই চলেছে। বেড়ে চলেছে তার চৌহুদ্দি, বেড়ে চলেছে তার সীমানা। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর ন্যাটো যখন তৈরি হয়েছিল, তখন তার প্রথম মহাসচিব ব্রিটিশ লর্ড ইজমে সংক্ষেপে এর প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন : ‘রুশদের বাইরে রাখা, মার্কিনীদের ভিতরে রাখা, এবং জার্মানদের দাবিয়ে রাখা’। ন্যাটো মানে — অপারেশন গ্লাদিও (ইতালিয় শব্দ, লাতিনে ‘গ্লাদিয়াসের’ অর্থ ‘তরবারি’), দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তার ইতালি অভিযানের জন্য। এটি ছিল (এবং সম্ভবত এখনও) ন্যাটো’র মদতে গোপনে ‘নেপথ্যে থাকার’ এক ডাকসাইটে কর্মসূচী। অন্যভাবে বললে, শুরু থেকেই ন্যাটো গণতন্ত্র বিস্তারের হাতিয়ার ছিল না, আসলে এর লক্ষ্য ছিল পশ্চিমের পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলির মাধ্যমে ইউরোপে ভূরাজনৈতিক আধিপত্যকে অটুট রাখা।
‘পোল্যান্ডের রাজনৈতিক আবহে কমিউনিস্টরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন না করলে, কমিউনিস্টদের প্রতি আবেগ এখনও প্রবল’, বলে ফেলেছে টাইমসও। আসলে ন্যাটোর কর্মসূচী বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই আজ পোল্যান্ডে চে-র ছবি, লালঝাণ্ডার ওপর নিষেধাজ্ঞা।
সংশোধিত বিলটি ইতোমধ্যেই পোলিশ সংসদের উচ্চকক্ষে পাস হয়ে গিয়েছে। যথারীতি বাজারী মিডিয়া তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে বলাতে শুরু করে দিয়েছে ‘সাম্যবাদ আর পুঁজিবাদ এক’।
লক্ষ্য করুন, এই পোল্যান্ডেই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছে পেন্টাগন। পোল্যান্ডের সঙ্গে আমেরিকার সামরিক চুক্তি পাকা। চুক্তি অনুযায়ী, মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হবে পোল্যান্ডের ওই ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে। যুক্তিতে আমেরিকা ইউরোপকে দেখাচ্ছে ইরানের জুজু। তেহেরান অবশ্য আগেই জানিয়ে দিয়েছে, ইউরোপে ক্ষেপণাস্ত্র হানার কোনও লক্ষ্য তাদের নেই। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পোল্যান্ড ও চেক রিপাবলিকে ক্ষেপনাস্ত্র ঘাঁটি বানানোর লক্ষ্য আদৌ ইরান নয়। প্রকৃত লক্ষ্য হচ্ছে রাশিয়া।
আসলে আমেরিকার শত্রু খোঁজার অভিযান জারি রয়েছে এখনও। যা বলেছিলেন বুশ, ‘হয় আপনি আমাদের সঙ্গে, নতুবা আমাদের বিরুদ্ধে’। ওয়াশিংটনের লক্ষ্য পরিষ্কার। গোটা বিশ্বে এক মেরু ব্যবস্থা কায়েম।
আর ওয়াশিংটনকে সন্তুষ্ট রাখতে পোল্যান্ড সরকারকে নিষিদ্ধ করতে হচ্ছে লাল পতাকাকে, চে গুয়েভারাকে। সেটাই স্বাভাবিক। আসলে চে কে নিয়ে আতঙ্ক যতো দিন, ততো দিন চে থাকবে দুনিয়াজুড়েই।
আলোচিত ব্লগ
দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া
১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মিশন: কাঁসার থালা–বাটি
বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।